সফটওয়্যার কাকে বলে - সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি

সফটওয়্যার ব্যতীত ইন্টারনেট, কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোন কল্পনা করা যায়না। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফটওয়্যারের ব্যবহার রয়েছে। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়। কম্পিউটারকে ইনটারনেট ও তথ্য প্রযুক্তির মেরুদন্ড বলা হয়। কম্পিউটার আবিষ্কারের ফলে আজ অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে। আমরা অনেকেই কম্পিউটার দেখেছি এবং ব্যবহারও করি।
সফটওয়্যার কাকে বলে - সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি
কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না এই কম্পিউটার চলার পেছনে কোন জিনিসটি কাজ করে। আমরা সফটওয়্যার এর নামও শুনেছি। এর আগের আর্টিকেলে আমরা কম্পিউটার কি, কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম, কম্পিউটাররে প্রকরেভেদ সম্পর্কে জেনেছি। আজকরে আর্টিকেলে কম্পিউটার সফটওয়্যার কিংবা কাকে বলে, কম্পিউটার সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

সূচিপত্রঃ- সফটওয়্যার কাকে বলে - সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি

ভুমিকা

কম্পিউটারের কাজ করার দক্ষতা ও ক্ষমতা এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তার জন্য আমরা দিন দিন কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। বর্তমানে কম্পিউটার ছাড়া আমাদের একটি দিনও অতিবাহিত হয় না। যেহেতু কম্পিউটার এর কোন প্রাণ (জীবন) নেই সেহেতু কম্পিউটার একা একা কোন কাজ করতে পারে না। কম্পিউটার মূলত ব্যবহার করেন নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে থাকে। আর কম্পিউটারের কাজ করার পেছনে এই শক্তির নাম হচ্ছে সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর নির্দেশ অনুযায়ী ফলাফল তৈরি করে ব্যবহারকারী সামনে উপস্থাপন করে।

সফটওয়্যার কাকে বলে

সফটওয়্যার হলো এক ধরনের অদৃশ্য শক্তি। সফটওয়্যারকে স্পর্শ করা যায় না। সফটওয়্যার হল কম্পিউটারের ভাষায় সুশৃংখল ও ধারাবাহিকভাবে লিখিত কতগুলো নির্দেশনার সমষ্টি যার মাধ্যমে কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের জটিল সমস্যার সমাধান করে এবং বিভিন্ন রকমের কার্যসম্পাদন করে। কম্পিউটার সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে এবং হার্ডওয়ারকে কার্যক্ষম করে। সফটওয়্যার ব্যতীত হার্ডওয়ার অর্থহীন।

হার্ডওয়ার (Hardware) কি

হার্ডওয়ার হচ্ছে কম্পিউটারের সেই সকল জিনিস যেগুলোকে স্পর্শ করা যায় বা ধরা যায়। অর্থাৎ যেগুলোর বাহ্যিক অস্তিত্ব আছে। যেমন-সিপিইউ, কিবোর্ড, মনিটর, মাউস, প্রিন্টার ওয়েব ক্যামেরা, ইত্যাদি। সফটওয়্যার ছাড়া হার্ডওয়ার কোন কাজ করতে পারে না।

সফটওয়্যারের প্রকারভেদ (Classification of Software)

কাজের প্রকৃতি বা ফাংশন অনুযায়ী কম্পিউটার সফটওয়্যার দুই প্রকার। যথা-
(১) সিস্টেম সফটওয়্যার (System Software)
(২) ব্যবহারিক সফটওয়্যার (Application Software)

সিস্টেম সফটওয়্যার

সিস্টেম সফটওয়্যার হল অনেকগুলো প্রোগ্রামের সমষ্টি। যার মাধ্যমে কম্পিউটার অন্যান্য সফটওয়্যার ও হার্ডওয়ারকে নিয়ন্ত্রণ কার্যকরী এবং তত্ত্বাবধান করে। অর্থাৎ যে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে একটি কম্পিউটার চালু হয় এবং অন্য সকল সফটওয়্যার কাজ করার জন্য ক্ষমতা লাভ করে। সিস্টেম সফটওয়্যার ব্যতীত কম্পিউটার পরিচালনা করা অসম্ভব।
আধুনিক কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের সিস্টেম সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়। যথা-
(ক) অপারেটিং সিস্টেম (Operating System সংক্ষেপে OS)
(খ) ডিভাইস ড্রাইভার বা সফটওয়্যার ড্রাইভার (Device Driver or Software Driver)
(গ) ইউটিলিটি প্রোগ্রাম (Utility Program)
অপারেটিং সিস্টেম
Operate অর্থ পরিচালনা করা। অপারেটিং সিস্টেম অর্থ যে সিস্টেম বা পদ্ধতি কোন কিছু পরিচালনা করে। অপারেটিং সিস্টেম হল অনেকগুলো সিস্টেম বা program এর সমষ্টি। যা কম্পিউটারের হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যার কে নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করে এবং অন্যান্য সফটওয়্যার পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ ও কার্যকরী করতে কর্মক্ষম ও সাহায্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মটর রিসার্চ ল্যাবরেটরী ১৯৫১ সালে সর্বপ্রথম আইবিএম কর্পোরেশনের জন্য অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করে। এই অপারেটিং কম্পিউটারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। পিসি বা পার্সোনাল কম্পিউটারের ১৯৭১ সাল থেকে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি ছিল CP/M অপারেটিং সিস্টেম।
ডিভাইস ড্রাইভার বা সফটওয়্যার ড্রাইভার
কম্পিউটার সম্পর্কিত অন্যান্য ডিভাইস কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করতে সেই ডিভাইসে কিছু ড্রাইভার সফটওয়্যার প্রয়োজন। কম্পিউটারের হাই লেভেল প্রোগ্রাম যা হার্ডওয়ার ডিভাইস গুলোর সাথে উভোমুখি যোগাযোগ স্থাপন করে উভয় ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে। এবং তার সমর্থকে কাজে লাগায়। যেমন একটি নতুন প্রিন্টার কে কম্পিউটারের সাহায্যে প্রিন্ট করতে হলে প্রথমে কম্পিউটারে ওই প্রিন্টারের ডিভাইস ড্রাইভার সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হয়।
ইউটিলিটি প্রোগ্রাম
যে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে কম্পিউটারকে রক্ষণাবেক্ষণ, ভাইরাস থেকে সুরক্ষা, বিশ্লেষণ, ডাটা ও প্রোগ্রামের ব্যাকআপ রাখা, মুছে যাওয়া ডাটা রিকভার করা সহ বিভিন্ন প্রকার কাজের সুবিধা প্রদান করে তাকে ইউটিলিটি প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার বলে।
যেমন-
ডিস্ক ডিফ্রাগমেন্টেশন (Disk Defragmentation)
লাইব্রেরি প্রোগ্রাম (Library program)
ফাইল হ্যান্ডেলার (File Handler )
লিংকার প্রোগ্রাম (Linker Program)
অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার (Anti-virus software)
সর্ট-মার্ক্স প্রোগ্রাম (Sort - Merge Program) • লাইব্রেরি প্রোগ্রাম (Library Program)

ব্যবহারিক বা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার

নির্দিষ্ট কাজের জন্য যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় তাকে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর প্রয়োজনে নির্দিষ্ট একটি কাজ বা সমস্যাকে সমাধানের জন্য যে সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয় তাকে ব্যবহারিক বা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলা হয়।
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার দুই প্রকার। যথা-
(ক) কাস্টমাইজড বা ব্যবহারকারী লিখিত প্রোগ্রাম (Customized Software)
(খ) প্যাকেজ সফটওয়্যার প্রোগ্রাম (Package Software)
কাস্টমাইজড প্রোগ্রাম
কোন একটি ব্যক্তি অথবা কোন প্রতিষ্ঠান তার নিজের প্রয়োজনে এক বা একাধিক সমস্যা সমাধানের জন্য কোন দক্ষ প্রোগ্রামার দিয়ে যে সফটওয়্যারটি তৈরি করান তাকে কাস্টমাইজড সফটওয়্যার বলে।যেমন- কোন একটি কোম্পানির মালিক তা সকল হিসাব নিকাশ করার জন্য একটি অ্যাকাউন্ট সফটওয়্যার তৈরি করুন। এই অ্যাকাউন্ট সফটওয়্যারটি প্রতিষ্ঠানের কাস্টমাইজড একাউন্টিং সফটওয়্যার। আবার কোন ফার্মেসির মালিক তার ঔষধের হিসাব রাখার জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করালেন এটিও কাস্টমাইজড সফটওয়্যার।
প্যাকেজ সফটওয়্যার
একসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কাজ করার জন্য বাজারে যে সকল সফটওয়্যার কিনতে পাওয়া যায় তাকে প্যাকেজ সফটওয়্যার বলে। বড় বড় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ক্রেতাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে প্যাকেজ সফটওয়্যার তৈরি করে থাকে। এ সকল সফটওয়্যারে কোন রূপ পরিবর্তন, সংযোজন বা সংকোচনে ব্যবহারকারীর কোন হাত থাকে না।

উপসংহার

সুপ্রিয় পাঠক আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা কম্পিউটার সফটওয়্যার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সকলেরই কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url