কৃষি ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
কৃষি একটি দেশের মেরুদন্ড এবং এটি দেশের খাদ্য ঘাড়তি পূরণ করে দেশের অর্থনৈতিক
সমৃদ্ধি আনতে ব্যপক ভূমিকা রাখে। জলবায়ু পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। চলমান
বিশ্বে জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন একটি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। বর্তমানে জলবায়ু
পরিবর্তনের ফলে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যাকে বৈশ্বিক উষ্ণতা
বলা হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে গ্রীনহাউজ ইফেক্ট বলা হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতার
কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যেমন-অতি বৃষ্টি, অনা বৃষ্টি, ক্ষরা, জলোচ্ছ্বাস,ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস ইত্যাদি।
ফলাফল স্বরুপ জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে প্রতি বছর কোটি
কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। চলমান বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট জলবায়ু
পরিবর্তনের ফলে সমগ্র বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মারাত্মক ও বিরূপ
প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে
এবং আবহাওয়ার মৌসুমি ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হচ্ছে।
সূচিপত্রঃ কৃষি ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
ভুমিকাঃ
কৃষি ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচাইতে বেশি লক্ষ করা যায়। ফলে কৃষি
প্রধান দেশগুলোর অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গত ১০০ বছরে পৃথিবীতে কার্বন
ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ২৩%, নাইট্রাস অক্সাইড এর পরিমাণ বড়েছে ১৯ % এবং
মিথেনের পরিমাণ বেড়েছে শতভাগ। পৃথিবীতে আমাদেরকে সকল প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম
করে বেঁচে থাকতে হয়। এই পরিবর্তনের ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী সবচাইতে বেশি ক্ষতির
সম্মুখীন হয়।
ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ যেটি হিমালয় ও বঙ্গোপসাগরের মধ্যে অবস্থিত।
সমুদ্র তীরবর্তী ভৌগোলিক অবস্থান, মাত্রাতিরক্ত জনসংখ্যা, আর্থসামাজিক অবকাঠামো,
অপ্রতুল প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এর ওপর অধিক নির্ভরশীলতা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের সকল
খাত বিশেষ করে কৃষি উৎপাদন, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, , প্রাকৃতিক পরিবেশসহ
জনকল্যানমূলক সব সেবাখাত এবং খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন (Climate change) কিঃ
কোন একটি এলাকা বা অঞ্চলের ৩০ থেকে ৪০ বছরের আবহাওয়ার অবস্থাকে জলবায়ু বলে। তবে
এই গড় জলবায়ুর অবস্থা দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের ব্যাপ্তি কয়েক যুগ
থেকে কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত হতে পারে তাকে জলবায়ু পরিবর্তন (Climate change)
বলে। গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকের পরিবর্তনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে থাকে। নিয়ামক
গুলো হলো- জৈব প্রক্রিয়াসমূহ, পৃথিবী কর্তৃক গৃহীত সৌর বিকিরণের পরিবর্তন,
ভূত্বক গঠনের পাততত্ত্ব (plate tectonics), আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ইত্যাদি।
জলবায়ু পরিবর্তনের অপর নাম “বিশ্ব উষ্ণতা বা বিশ্ব উষ্ণায়ন”। বর্তমানে সামাজিক
ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন বলতে মানুষের দ্বারা সৃষ্ট জলবায়ুর
পরিবর্তনকে বোঝায়।
কৃষি ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবঃ
কৃষি ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক। তাই কৃষি প্রধান দেশগুলোর
অর্থনীতি হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহ বিশ্ব
উষ্ণায়ন পাল্টে দিচ্ছে আবহাওয়ার ধরন এবং ঋতু বৈচিত্র্য। বাংলাদেশের গড় বার্ষিক
তাপমাত্রা গত ১৪ বছরে (১৯৮৫-১৯৯৮) মে মাসে এক সেন্টি. এবং নভেম্বর মাসে ০.৫ সে.
বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনাপানি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০
কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতে প্রবেশ করেছে।
২০০০ সালে একটি গবেষণার রিপোর্টে প্রকাশিত হয় যে কক্সবাজার উপকূলে বছরে ৭.৮ মিমি.
হারে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে
দেখা যায় যে আগামী ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মি. উঁচু বৃদ্ধি
পেতে পারে, যার ফলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১৮.৩ অংশ নিমজ্জিত হতে পারে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্র মতে রাজশাহীর উচ্চ বরেন্দ্র অঞ্চলে ১৯৯১
সালে পানির স্তর ছিল ৪৮ ফুট, ২০০০ সালে তা নেমে ৬২ ফুট এবং ২০০৭ সনে তা নেমে যায়
৯৩.৩৪ ফুটে।
আরো পড়ুনঃ
জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা
স্বাভাবিক বন্যায় দেশের মোট আয়তনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়।বর্তমানে
বন্যার সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৭ সনের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী
সাইক্লোন সিডর আক্রমণ করার মাত্র দুই বছরের মধ্যে শক্তিশালী সাইক্লোন নার্গিস ও
আইলা এবং ২০১৩ সনে মে মাসে মহাসেন (আংশিক) আঘাত হেনে কৃষিকে বিপর্যস্ত করে তোলে।
কৃষিতে তাপমাত্রার প্রভাবঃ
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ধানের ফলন কমে যায়এবং গমের রোগের
আক্রমণ বাড়ে। যদি বাংলাদেশের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায় তাহলে
ভবিষ্যতে গম চাষ করা সম্ভব হবে না। ধান গাছের কুশি থেকে ফুল ফোটার সময় তাপমাত্রা
৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি হলে এবং অতি নিম্ন তাপে (২০ ডিগ্রি
সেলসিয়াসের নিচে) শীষে ধানের সংখ্যা কমে যেতে পারে।
যদি ধানের ফুল ফোটা বা পরাদায়নের সময় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে থোড় অবস্থার
চেয়ে চিটার সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। বাতাসের তাপমাত্রা ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের
পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে ধান গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে, ধান গাছ হলুদ
বর্ণ ধারণ করে এবং ধানের চারা দুর্বল হয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ফসলে এবং
বিভিন্ন উদ্ভিদে পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে দানা শস্যেসহ বিভিন্ন ফসলে মিলিবাগ, এফিড (শোষক পোকা) ও
ব্যাকটেরিয়া (জীবাণু গঠিত রোগ) ও ছত্রাকজনিত রোগ এর আক্রমণ হার বাড়ছে।
অতিরিক্ত তাপ এবং আর্দ্রতা গাছের ছত্রাক রোগ বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যদি
বোরো মৌসুমে রাতে ঠান্ডা ও কুয়াশা পড়ে ও ধানের পাতায় পানি জমে থাকে এবং দিনে গরম
পড়ে অর্থাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যায় তাহলে ব্লাইট রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। অধিক
আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে শীথ ব্লাইট রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
কৃষিতে উষ্ণতা বৃদ্ধি, উষ্ণ ও শৈত্যপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাবঃ
সাম্প্রতি বাংলাদেশে তাপমাত্রা না বাড়লেও উষ্ণ ও শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা বেড়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের শীতকালের ব্যাপ্তি ও তীব্রতা উভয়ই কমেছে। বিশেষ করে রবি
মৌসুমে ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধির ব্যাহত হওয়ার ফলে ফলন কমে আসছে। এ ছাড়া শীত
মৌসুমে উষ্ণ প্রবাহ দেখা দেওয়ার ফলে বেশি সংবেদনশীল ফসল যেমন গমের ফলন খুব কম
হচ্ছে এবং গম উৎপাদন একটি অলাভজনক ফসলে পরিণত হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উপায়
হঠাৎ তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ফলে সরিষা, মসুর, ছোলা ইত্যাদি ফসলের ওপর বিরূপ প্রভাব
পড়ে এবং ফসলের পরাগায়ন ব্যাহত হয়। শৈত প্রবাহের সময় কুয়াশাচ্ছন্ন দীর্ঘস্থায়ী
হলে অনেক ফসল বিশেষ করে গমের (পলিনেশন) পরাগায়ন ও (ফার্টিলাইজেশন) গর্ভধারণ ভালো
হয় না,পোকামাকড়ের উপদ্র বেড়ে যায় এবং ফসল আংশিক বা সম্পন্ন চিটায় পরিণত হয়।
উষ্ণতা বাড়ার ফলে গাছের প্রস্বেদন হার বেড়ে যায়। শৈত্যপ্রবাহের ফলে আমের মুকুল
নষ্ট হয় ও নারিকেলের ফলধারণ ক্ষমতা ব্যাহত হয়।
কৃষিতে খরার প্রভাবঃ
কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকাতে বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবনের মাত্রা বেড়ে গেলে
খরা দেখা দেয়। কৃষি ক্ষেত্রে খরা বলতে আবহাওয়ার নিয়ামক যেমন- বৃষ্টিপাত,
তাপমাত্রা, বাতাসের আদ্রতা, বাষ্পীভবন ইত্যাদির হ্রাস বৃদ্ধি কে বোঝানো হয়।
আবহাওয়ার এই নিয়ামক গুলোর হ্রাস বৃদ্ধির কারণে ফসলের জীবন চক্রের যে কোন
অবস্থায় পানির অভাবে জৈবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। কৃষিতে খরা একটি প্রচলিতপ্রাকৃতিকদুর্যোগ।
খরায় আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশের প্রায় ৮৩ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমি খরায় আক্রান্ত হয়ে থাকে ৬০ শতাংশ
জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়। খরো মৌসুমে খরা পীড়িত অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়
এবং খাল, বিল, কুয়া ইত্যাদি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে ব্যবহার্য পানির অভাব ঘটে।
নদীতে পানি প্রবাহের হ্রাস ঘটে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায় এবং মাটির
আর্দ্রতায় ঘাটতি দেখা দেয়।
এ ছাড়া খরার ফলে আউশ ও বোরো ধান, পাট, ডাল ও তেল ফসল, আলু, শীতকালীন সবজি এবং
আখের চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত, আগস্ট মাসের অপরিমিত বৃষ্টি রোপা-আমন চাষকে
বাধাগ্রস্ত করে। সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসের কম বৃষ্টিপাত রোপা-আমন ধানের উৎপাদন
কমিয়ে দেয় এবং ডাল ও আলু ফসলের চাষকে প্রলম্বিত করে। অতিরিক্ত খরার ফলে কাঁঠাল
লিচু কলা ইত্যাদি ফলের গাছ মারা যায়। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নদী নাব্যতা হ্রাসের
ফলে গাছের প্রসাধনের হার বেড়ে যায় এবং সুপেয় পানির অভাব দেখা দেয়।
কৃষিতে বন্যার প্রভাবঃ
গত ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৭ সালের বন্যাকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়
যে বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভয়াবহ বন্যার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৪০০০ বর্গকিলোমিটার ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১৪০০
বর্গকিলোমিটার এলাকা আকস্মিক বন্যার শিকার হচ্ছে। মৌসুমী বন্যার ফলে উপকূলীয়
অঞ্চল খুব একটা ক্ষতির সম্মুখীন হয় না। কিন্তু জোয়ার ভাটা জনিত বন্যায়
উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দেখা যায়।
যেমন জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ফলে পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। ফলে ফসলি জমি
চাষের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে নীলফামারী সিলেট নেত্রকোনা সুনামগঞ্জ
ইত্যাদি জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা যায়। যার ফলে প্রতিবছর পরিপক্ক ফসল কাটার আগেই
হাজার হাজার একর পাকা ধান আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হয় এবং চাষীরা আর্থিকভাবে
ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ পানি সম্পদের সমৃদ্ধ হওয়ার পরেও জলবায়ু
পরিবর্তনের ফলে অতি বৃষ্টি অনাবৃষ্টি বন্যা ও জলবদ্ধতার প্রকোপ ক্রমাগত বেড়ে
চলেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ১.৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি প্রতি বছর বন্যা কবলিত হয়।
বাংলাদেশের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৩০০ মিমি এবং অঞ্চল ভেদে তা ১২০০ মিমি
হয়ে থাকে। (দক্ষিণ-পশ্চিম) থেকে ৫০০০ মিমি (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০-১৫
শতাংশ এবং ২০৭৫ সালের মধ্যে প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও লোনা পানির প্রভাবঃ
বাংলাদেশের কৃষি খেতে লোনা পানির অনুপ্রবেশের ফলে কৃষি ক্ষেত্র মারাত্মকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ১৯৭৩ সালে ১৫ লাখ হেক্টর জমি মৃদু লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়, যা
১৯৯৭ সালে বেড়ে ২৫ লাখ হেক্টেরে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে লবণাক্ততায় আক্রান্ত জমির
পরিমাণ ৩০ লাখ হেক্টর। উজান থেকে পানি প্রবাহে বাধা এবং কম বৃষ্টিপাতের কারনে
উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট উপকূলীয়
অঞ্চলের প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ১০.৫০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন
মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়েছে।
কৃষিতে নদীভাঙন ও ভূমিক্ষয়ের প্রভাবঃ
বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরিপের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ১,২০০ কিমি.
নদীতীর ভেঙে গেছে এবং আরও ৫০০ কিমি.ভাঙনের সম্মুখীন। স্যাটেলাইট চিত্র থেকে দেখা
যায়, ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ১,০৬,৩০০ হেক্টর নদী তীরের ভাঙনের বিপরীতে মাত্র
১৯,০০ হেক্টর নতুন ভূমি গঠন হয়েছে। যদি জলবায়ু পরিবর্তন চলমান থাকে তাহলে
ভবিষ্যতে ভাঙ্গা গড়ার এ ভারসাম্য আরো প্রকট হতে পারে।
শেষকথাঃ
বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। কিন্তু মানুষের কর্মকাণ্ড জলবায়ু
পরিবর্তনকে ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত ও প্রভাবিত করছে। ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি
পাচ্ছে এবং বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহের আবহাওয়ার ধর্ম ও ঋতু বৈচিত্র্য
পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে।জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কৃষিকে রক্ষা করা
বা ঝুঁকি কমানোর জন্য এবং বিরূপ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিশেষ
অভিযোজন কৌশল রক্ত করা উচিত।
অন্যথায় দুর্যোগের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য দুর্যোগ মুক্ত সময়ে শস্য
বহুমুখীকরণ ও ফসলের নিবিড়তা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে কৃষি ক্ষেত্রকে রক্ষার জন্য সর্ব
স্তরের জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা একান্ত প্রয়োজন।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url