ন্যানো টেকনোলজি কি - ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা ও অসুবিধা

বর্তমান বিশ্বে ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা অপরিসীম। ন্যানো টেকনোলজি হচ্ছে বিজ্ঞানের সেই শাখা যেখানে ১০০ ন্যানোমিটার(nm) বা এর ছোট অণু, পরমাণু নিয়ে কাজ করা হয়। বর্তমানে ন্যানোটেকনোলজির এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। ১ nm বলতে এখানে ১মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বুঝায়।
ন্যানো টেকনোলজি কি - ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা ও অসুবিধা
এই অতিক্ষুদ্র Particle নিয়ে Study করাই Nano-Technology. এই টেকনোলজির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ছোট Particle এর Surface to volume অনুপাত অন্যান্য Particle থেকে বেশি যার ফলে Particle গুলো বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করে বা এরা নানা বিক্রিয়ার গতিও বৃদ্ধি করে। যেমন- কিছু ন্যানো পার্টিকেল ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে আবার কিছু কিছু Nano-medicine হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ন্যানো কি

ন্যানো (Nano) শব্দটির আভিধানিক অর্থ (Dwarf). যার অর্থ ( বামন বা জাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ)। ন্যানো (Nano) শব্দটি গ্রিক শব্দ ন্যানোস (Nanos) থেকে এসেছে। ন্যানো হচ্ছে একটি পরিমাপের একক। এটি কতটা ছোট তা কল্পনা করা কঠিন।
১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে ১ ন্যানো মিটার বলা হয়।
অর্থাৎ 1 nm = 10-9 m।
এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল:
এক ইঞ্চিতে 25,400,000 ন্যানোমিটার রয়েছে।
সংবাদপত্রের একটি পাতা প্রায় 100,000 ন্যানোমিটার পুরু।
তুলনামূলক স্কেলে, একটি মার্বেল যদি ন্যানোমিটার হয়, তবে পৃথিবীর আকার হবে এক মিটার।

ন্যানো টেকনোলজি কি?

ন্যানোমিটার (1 থেকে 100 ন্যানোমিটার) স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলোকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে।
অন্যভাবে বলা যায়- ন্যানো টেকনোলজি এমন একটি বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি যা সাধারণত ১ থেকে ১00 ন্যানোমিটার স্কেলে পরিচালিত হয়ে থাকে।
ন্যানো টেকনোলজিঃ পারমানবিক ও আনবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরী করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞানকে ন্যানো টেকনোলজি বলে।
ন্যানো টেকনোলজি হচ্ছে বিজ্ঞানের সেই শাখা যেখানে ১০০ ন্যানোমিটার (nm) বা এর ছোট অণু, পরমাণু নিয়ে কাজ করা হয়। বর্তমানে ন্যানোটেকনোলজির এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। ১ nm বলতে এখানে ১মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বুঝায়। এই অতিক্ষুদ্র Particle নিয়ে Study করাই Nano-Technology.
যেমন- এই Nano-Technology এর ফলে প্রতিটি টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার এর IC (Integrated Circuit) এ অতি ক্ষুদ্র জায়গায় কোটি কোটি Circuit Connection করা সম্ভব হয়েছে। যা ক্রমাগত Electrical যন্ত্রপাতির দক্ষতা ও গতি বাড়িয়েছে। বর্তমানে যোগাযোগ ও প্রযুক্তি থেকে শুরু করে শিল্পকারাখানা, চিকিৎসা, পরিবেশ রক্ষায়, শনাক্তকরণে, ম্যাটেরিয়াল তৈরিতে সব জায়গায়ই এই ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে।

ন্যানো টেকনোলজির জনক

আমেরিকার বিখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) ১৯৫৯ সালে তার “There’s Plenty of Room at the Bottom” আলোচনায় সর্বপ্রথম ন্যানো টেকনোলজি সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তাই রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) কে ন্যানো টেকনোলজির জনক বলা হয়।

ন্যানো টেকনোলজির পদ্ধতি

ন্যানো-টেকনোলজির ক্ষেত্রে দুটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। একটি হচ্ছে উপর থেকে নিচে (Top - Down) অপরটি হচ্ছে নীচ থেকে উপর (Bottom - Top)।
টপ - ডাউন (Top - Down)
এই পদ্ধতিতে কোন বড় জিনিসকে কেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেয়া হয়। যাতে পারমাণবিক স্তরের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা।
বটম - আপ (Bottom - Up)
এই পদ্ধতিতে আণবিক নীতির দ্বারা রাসায়নিকভাবে আণবিক উপাদানগুলোর নিজেদেরকে একত্রি করণের মাধমে বিভিন্ন উপকরণ এবং ডিভাইসগুলো তৈরি করা হয়। অর্থাৎ ক্ষুদ্র আকারের জিনিস দিয়ে বড় আকারের জিনিস তৈরি করা হয়। বর্তমানে আমাদের ইলেক্ট্রনিক্স হল, টপ-ডাউন প্রযুক্তি।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝানো যেতে পারে। মনে করুন, আপনার একটা বিশেষ ধরনের DNA এর প্রয়োজন। সুতরাং বটম - আপ (Bottom - Up) প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই DNA এর ছোট ছোট উপাদান গুলিকে মিশ্রণ করে কাঙ্ক্ষিত DNA টি তৈরি করা হবে। তবে নানোপ্রযুক্তিতে শুধু মাত্র টপ - ডাউন (Top - Down) প্রযুক্তিই নয়, বরং বটম - আপ (Bottom - Up) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই দুটির সংমিশ্রণ করা হয়।

ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ

  • মহাকাশের নানান যন্ত্রপাতি তৈরীতে।
  • জ্বালানি তৈরীতে।
  • ঔষধ ও কসমেটিকস তৈরীতে।
  • কম্পিউটার হার্ডওয়ার তৈরীতে।
  • ন্যানো রোবট তৈরী।
  • বস্ত্র শিল্প।
  • ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি।

ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা ও অসুবিধা

সুবিধাঃ
  • ন্যানো টেকনোলজি প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদিত ঔষধ “স্মার্ট ড্রাগ” ব্যবহার করে দ্রুত আরগ্য লাভ করা যায়।
  • খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেজিং এর সিলভার তৈরীর কাজে।
  • টেকসই, স্থায়ী ও আকারে ছোট পণ্য তৈরী
  • ন্যানো ট্রান্সজিস্টর, ন্যানো ডায়োড, প্লাজমা ডিসপ্লে ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ইলেকট্রনিক শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।
  • ন্যানো প্রযুক্তি দ্বারা তৈরী ব্যাটারী, ফুয়েল সেল, সোলার সেল ইত্যাদির মাধ্যেমে সৌরশক্তিকে অধিকতর কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে।
  • ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে ব্যাটারি, সোলার প্যানেলের মতো ডিভাইসের আকার কমিয়ে আরও ছোট ও কার্যকর করা যায়।
  • ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে স্বাস্থ্য খাতে ন্যানো রোবট তৈরি এবং সেই রোবটটিকে শরীরের ব্যাকটেরিয়া এলাকায় পাঠিয়ে ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করা যাবে।
  • ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন- টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল, বাল্ব ইত্যাদির পর্দা আরও উন্নত করা যেতে পারে।
অসুবিধাঃ
  • অতিরিক্ত ব্যয়বহুল।
  • ন্যানোপার্টিকেল মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
  • ন্যানো টেকনোলজির কফির দাম বেশি যার কারণে কফির মাধ্যমে নতুন কিছু তৈরি করতে খরচ বেশি হবে।
  • আমরা জানি যে পারমাণবিক অস্ত্র কতটা ক্ষতিকর, ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে এই পারমাণবিক অস্ত্রগুলিকে আরও ক্ষতিকারক করা যেতে পারে।
  • ন্যানো টেকনোলজি অত্যন্ত সুক্ষ স্তরে থাকার কারণে, এটি বুঝতে এবং অধ্যয়নের জন্য অনেক নির্ভুলতা এবং আরও সময় প্রয়োজন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ

ন্যানো টেকনোলজি এমন একটি প্রযুক্তি যা প্রায় সব ক্ষেত্রেই উপযোগী প্রমাণিত হতে চলেছে কারণ এ গবেষণা ন্যানো আকারের অণু এবং পরমাণুর স্তরে করা হয়।
ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহারের ফলে কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ পরিবর্তন হতে পারে। যেমন-
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেঃ
বর্তমানে, উন্নত স্বাস্থ্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ বর্তমান বিভিন্ন উদ্ভাবন আমাদের শরীরের যে কোনও অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, এমন পরিস্থিতিতে ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে ন্যানো রোবট তৈরি করা যেতে পারে যা সেই ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় কাজ করতে পারে। যরি ফলে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার ব্যাকটেরিয়াকে নির্মূল করবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।
কৃষিক্ষেত্রেঃ
কৃষিক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজির অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফলপ্রসু হতে চলেছে। ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে একটি পদার্থের অণু এবং পরমাণুর স্তরে পরিবর্তন এনে অত্যন্ত কার্যকরী সার প্রস্তুত করা যায়, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।
শিল্প খাতেঃ
শিল্প খাতে ন্যানো টেকনোলজির অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প এলাকায় বিদ্যমান কারখানাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যার ফলে কারখানা থেকে অত্যন্ত বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়, যা পরিবেশকে দূষিত করে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত পদার্থের অণু ও পরমাণুর স্তরে পরিবর্তন এনে কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসকে স্বাভাবিক গ্যাসে রূপান্তরিত করে বায়ুমণ্ডলকে দূষিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
ইলেকট্রনিক ক্ষেত্রেঃ
সেই দিনটা খুব বেশি দূরে নয় যেদিন আপনার মোবাইলটি কাজ করবে কম্পিউটারের মত। (বর্তমানেই এই ধরনের কিছু মোবাইল বাজারে এসেছে)। এছাড়া রয়েছে কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক। এই হার্ডডিস্কের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা দিন দিন বড়ছে। এই হার্ডডিস্কেও ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানো-টেকনলজি। এখন বাজারে ৪ টেরাবাইটের হার্ডডিস্ক পাওয়া যাচ্ছে। অথচ এই ব্যাপারটা আজ হতে ১০ বছর আগেও ছিল কল্পনার বাহিরে।

উপসংহার

চিকিৎসাবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স, শক্তি উৎপাদনসহ বহু ক্ষেত্রে ন্যানো-প্রযুক্তির ব্যবহার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। অপর পক্ষে, পরিবেশের উপর এর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব নিয়েও সংশয় রয়েছে। এরপরেও পৃথিবীর বহু দেশে ন্যানো-প্রযুক্তি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলমান।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url