‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’ কী?- বিশ্ব উষ্ণায়ন এর কারণ
বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে প্রথমত পৃথিবীর তাপমাত্রার বৃদ্ধিকে বোঝানো
হয়। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীবাসীর দুশ্চিন্তার পরিমাণও বেড়েছে।
বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়ন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। একুশ শতকের শুরু থেকে
পৃথিবীবাসীর জীবন বিজ্ঞান কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞান আমাদের মধ্যে
শ্বাস-প্রশ্বাসের মত জড়িয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞান যেমন উন্নত হয়েছে সেই সাথে
পরিবেশ
বিপর্যয়ের কারণ গুলো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানের নিয়ন্ত্রণহীন প্রয়োগ
এবং অপরিসীম ভোগ এবং স্বাচ্ছন্দের জন্য বিশ্ব পরিবেশ আজ গভীর সংকটের সম্মুখে
দাঁড়িয়েছে। মানুষ যতই সভ্য হচ্ছে পরিবেশের উপর তার খারাপ প্রভাব বৃদ্ধি
পাচ্ছে।
সূচিপত্রঃ- বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে - বিশ্ব উষ্ণায়ন এর কারণ কি কি
ভূমিকা
পৃথিবীর গড় জলবায়ুর তাপমাত্রার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলা
হয়। আমরা জানি যে সূর্যের আলো ভুপৃষ্ঠে পড়ার ফলে পৃথিবী উত্তপ্ত হয়। এই
আলোকরশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গ হিসেবে পৃথিবীতে আপতিত হয়। সূর্য থেকে আসা এই
আলোকরশ্মি পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত হয়ে দীর্ঘ তরঙ্গ রূপে আবারো মহাশূন্যে ফিরে
যায়। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের ফলে এবং মানুষের অপরিকল্পিত কার্যকলাপের কারণে
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই গ্রীন হাউজ গ্যাস গুলোর কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হওয়া সূর্যের আলো
বায়ুমন্ডলে ফিরে যেতে পারে না। এই গ্রিন হাউজ গ্যাস গুলো সূর্যালো শোষণ করার
ফলে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।পৃথিবীর স্বাভাবিক
তাপমাত্রার চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত এবং অস্বাভাবিক তাপমাত্রার এই বৃদ্ধিকে
বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা Global Warming নাম দিয়েছেন।
‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’ কী?
বিশ্ব উষ্ণায়নকে পৃথিবীর চারপাশে ভূমির গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি হিসাবে
সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ৫৭ ডিগ্রি
ফারেনহাইট। ১৮০০-এর শেষের দিক থেকে গড় তাপমাত্রা প্রায় ০.৫ থেকে ১.৫
ফারেনহাইট ডিগ্রি (০.৩ থেকে ০.৮ সেলসিয়াস ডিগ্রি) বেড়েছে। এই উষ্ণতা বৃদ্ধির
কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা একমত নন। কেউ কেউ বলে যে উষ্ণতা বৃদ্ধির
প্রবণতা একটি প্রাকৃতিক ঘটনা।
তারা বলছেন, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। সূর্যের
চারপাশে পৃথিবীর বিপ্লবের পথে পরিবর্তন বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ হতে পারে।
কক্ষপথের ভিন্নতা গ্রহের পৃষ্ঠে সূর্যালোক কীভাবে বিতরণ করা হয় তা পরিবর্তন
করে। কিন্তু, প্রমাণ পাওয়া যায় যে মানুষের অনিয়ন্ত্রিত এবং পরিকল্পনাহীন
কার্যকলাপই জলবায়ুর এই অস্বাভাবিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী।
বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্যাস গুলোর নামঃ
গ্রিন হাউজ গ্যাস গুলোর মধ্যে কার্বন-ডাইঅক্সাইড, ওজন, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরো
কার্বন ই প্রধান। শিল্প বিপ্লবের পূর্বে ১৭৫০ সালে বাতাসে কার্বন ডাই
অক্সাইডের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৮০ ppm. বর্তমানে এই পরিমাণ বেড়ে ৩৮২ ppm. এর ও
বেশি হয়েছে। গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড এর পরেই মিথেন
গ্যাসের অবস্থান। মিথেন গ্যাসের পরিমান প্রায় ১৩%।
বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণঃ
জীবাশ্ম জ্বালানি, শিল্প এবং কৃষি প্রক্রিয়ার কারণে মানব, প্রাকৃতিক এবং
অন্যান্য গ্যাস নির্গমনের কারণে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং
ইস্যুতে গ্রিনহাউস প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূর্য থেকে
পাওয়া শক্তি পৃথিবীর পৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং ফলস্বরূপ তাপ শক্তি আবার মহাকাশে
বিকিরণ করে।
গ্রীনহাউস গ্যাসগুলি তাপ ধরে রাখতে এবং গ্রহকে উত্তপ্ত করার জন্য এই বহির্গামী
শক্তির কিছু অংশ আটকে রাখে। এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া না থাকলে বৈশ্বিক
তাপমাত্রা এখনকার তুলনায় অনেক কম হতো। সমস্যাটি হল এই মূল্যবান এবং
প্রয়োজনীয় গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে তৈরি হয় এবং আরও বেশি পরিমানে
তাপ আটকে যায়।
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারঃ
কলকারখানা, যানবাহন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে
জ্বালানি হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। ডিজেল, পেট্রোল, কয়লা এবং
পেট্রোলিয়াম জাতীয় বিভিন্ন হাইড্রো কার্বন পোড়ানোর ফলে বায়ুতে কার্বন ডাই
অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড প্রভৃতি ক্ষতিকারক গ্যাস প্রচুর
পরিমাণে বায়ুমন্ডলে মিশে যাচ্ছে। ফলে বায়ুমন্ডলে এ সকল গ্রীনহাউস গ্যাসের
পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অবাধে বৃক্ষ নিধোণঃ
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও চারযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে
মানুষ জীবিকার জন্য বন জঙ্গল উজাড় করে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়াচ্ছে। এছাড়া
ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র তৈরির জন্য মানুষ বন জঙ্গল কেটে উজাড় করছে। ফলে পৃথিবীর
বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণকারী গাছপালার সংখ্যা দিন দিন কমে
যাচ্ছে।
গাছপালা হলো পৃথিবীর জলবায়ুর ধারক এবং রক্ষক। নগরায়নের সম্প্রসারণ, জ্বালানি
কাঠের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদির কারণে মানুষ অবাধে বনভূমি ছেদন করছে। ফলে বায়ুতে
কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
CFC এর অবাধ ব্যবহারঃ
সি এফ সি হল একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক পণ্য যেমন
রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, ইলেকট্রনিক্স শিল্প এবং রং উৎপাদনের ক্ষেত্রে
প্রচুর পরিমাণে এই সিএফসি গ্যাস ব্যবহৃত হয়। যার ফলে বাতাসে এই গ্যাসের
পরিমাণও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওজোন স্তরে ক্ষত সৃষ্টিঃ
ক্লোরোফ্লোরােকার্বন (CFCi1, CFC12) বা ফ্রেয়ন একটি বিশেষ যৌগ, যা ওজোন
স্তর নষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ। এই সি এফ সি গ্যাস ফ্রিজ,এয়ার কন্ডিশনার, রং,
শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, সুগন্ধি শিল্প, কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রের থেকে
নির্গত হয়। বায়ুমন্ডলে সিএফসি গ্যাসের বৃদ্ধি, স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ওজন স্তরে
ক্ষত সৃষ্টি করছে যার ফলে জলবায়ুতে খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে।
দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়নের বৃদ্ধিঃ
বর্তমানে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে নগরায়ন ও শিল্পায়ন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফলে শিল্প ও কল কারখানার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সকল শিল্প ও
কলকারখানা থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে কার্বন এবং দূষিত বর্জ্য পদার্থ নির্গত
হচ্ছে। যার ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
নাইট্রাস অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড,নাইট্রোজেন অক্সাইড সালফাররে কণা উৎপাদন বৃদ্ধিঃ
কৃষি ক্ষেত্রে ফসলের ফলন বৃদ্ধির জন্য রাসায়নিক সারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
যানবাহন, প্লাস্টিক এবং নাইলন এর শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো
ধোঁয়া, ট্যানারি বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ, জেট বিমান, রকেট উৎক্ষেপণ এবং অগ্নি
নির্বাপক প্রভৃতি যন্ত্র থেকে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই
অক্সাইড, কার্বন-মনোক্সাইড এবং সালফারের কণা প্রচুর পরিমাণে নির্গত হয়।
বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য এ সকল গ্যাস প্রধানত দায়ী।
মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধিঃ
পর্যাপ্ত ডাম্পিং ব্যবস্থা না করে শহরের আবর্জনা গুলোকে এক জায়গায় স্কোপ করে
রাখার ফলে সেগুলো পড়তে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এছাড়াও যে সকল
পুকুরের আশেপাশে প্রচুর কাজ হয়েছে সে সকল গাছের পাতা পুকুরে পড়ে পতনের
মাধ্যমে অত্যধিক মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বাড়ানোর জন্য এই
মিথেন গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবাদি পশুপালনঃ
গবাদি পশু পালন বৃদ্ধি বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ। গৃহপালিত পশু
যেমন, গরু, পাগল, মহিষ, ভেড়া ইত্যাদি প্রাণীরা মিথেন গ্যাস উৎপাদনে ভূমিকা
রাখে। এ সকল প্রাণী খাবার হজম করার সময় প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন
করে থাকে।
জলীয় বাষ্প (H2O) :
বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম প্রাকৃতিক কারণ হলো জলীয় বাষ্প বৃদ্ধি পাওয়া।
বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং
জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমে গেলে উষ্ণতা হ্রাস পায়। অর্থাৎ বায়ুমন্ডলের জলীয়
বাষ্প উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ
বেড়ে গেলে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ বায়ুমন্ডলে যেতে বাধা প্রদান করে। ফলে
উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে
গ্রিনহাউস ইফেক্ট এর ফলে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলীয়বাষ্পের পরিমাণ
বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ উইপোকাঃ
শুনতে অবাক মনে হলেও এ কথা সত্য যে বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে উইপোকার ভূমিকা
রয়েছে।
উইপোকা (Termites):
ঘরের বই পুস্তক ও কাঠের আসবাবপত্র খেয়ে ধ্বংসকারী এই প্রাণীটি বিশ্ব
উষ্ণায়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, বিশ্ব উষ্ণায়ন
বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রকৃতিতে উইপ্রোকার সংখ্যারও বৃদ্ধি হয়েছে। আমরা জানি
উইপোকা কাঠ খেয়ে জীবনধারণ করে। খাবারের খোঁজে উইপোকারা মাটি খাওয়া
শুরু করেছে। যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে আবহাওয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে
উইপোকা দ্রুত কাঠ খাওয়া শুরু করে। এমনকি, প্রতি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
উষ্ণতা বৃদ্ধিতে উইপোকার কাঠ খাওয়ার ক্ষমতা ৭ গুণ বৃদ্ধি পায়।
বৈজ্ঞানিক তত্ত্বঃ
দিন বাড়ার সাথে সাথে পৃথিবীর তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা
যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য
প্রাণীদের পাশাপাশি ছোট আকারের প্রাণীরাও এক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখছে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে
সীমাহীন উদ্বেগ রয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায় পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত মোট ৫ টি মহাবিধ্বংসী
ঘটনা ঘটেছে যাদের পঞ্চম স্থানে ছিল ডাইনোসরদের সমাপ্তি। প্রায় ৬৫.৫
মিলিয়ন বছর আগে, পৃথিবীর সঙ্গে একটি বিশাল গ্রহের সংঘর্ষের ফলে এই
হলোকাস্টের (আগুনে সম্পূর্ণ ধ্বংস) সৃষ্টি হয়েছিল যার ফলে পৃথিবী থেকে
ডাইনোসরদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গিয়েছিল। তবে ভবিষ্যতে পৃথিবী যে মানুষের
কারণে ধ্বংস হবে না এইটা অনিশ্চিত নয়।
উইপোকার কাঠ খাওয়ার সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়ার সম্পর্কঃ
গাছপালা হলো পরিবেশের বন্ধু। বিশ্ব উষ্ণায়ন বা বৈশ্বিক কার্বন চক্র
নিয়ন্ত্রণে রাখতে গাছপালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবুজ গাছপালা
নিজেদের খাদ্য তৈরি করার সময় বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে যার
ফলে বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গাছপালার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে গাছের অনেক অংশ পচে যেতে শুরু করে।
সর্বপ্রথমে এই উইপোকা গুলো পচা জায়গাতে খাওয়া শুরু করে। যার ফলে
কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাস গুলো এক ধরনের
গ্রিনহাউস গ্যাস যেগুলো বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে
দিচ্ছে। যার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে উইপোকার সংখ্যাও বৃদ্ধি
পাচ্ছে এবং তাদের কাট খাওয়ার গতিতেও বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এবং বৈশ্বিক
উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে তার সরাসরি প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের গবেষণা করার সময় আরো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য
খুঁজে পেয়েছেন। তারা বলেছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে উইপোকার
সংখ্যাও বাড়বে এবং তারা বিশ্বের প্রতিটি কোনায় পৌঁছে যাবে। সায়েন্স
জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় প্রথমবারের মতো উষ্ণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ
করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৩৩ টি জায়গায় শতাধিক বিজ্ঞানী কাঠ নিয়ে
গবেষণা করেছেন।
আগাম সর্তকতাঃ
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে যে ভয়ংকর পরিণতি হবে তার আগাম সতর্ক বার্তা
শুনিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের ধারণা ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের থেকে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ
পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। আবার ২০৩০
খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে।
এর ফলে ২০৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মেরু প্রদেশে ৮০ শতাংশ বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রের
জলস্তর বেড়ে যাবে। আর সমুদ্রের জলস্তর ১মিটারের বেশি উঁচু হলেই উপকূলবর্তী
বিস্তীর্ণ অঞ্চল চিরতরে সমুদ্রের পানির তলায় চলে যাবে। এর ফলে বাড়বে সুনামি ও
নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
উপসংহারঃ
সভ্যতার বিকাশের ফলে মানুষ যতই উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাচ্ছে ততই মানুষের দ্বারা
পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের
তাপমাত্রা বৃদ্ধির নামই হচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা global warming . গ্লোবাল
ওয়ার্মিং বিশ্বের একটি বড় সমস্যা। তাই বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার
এখনই সময়। অন্যথায় এটি সবকিছু এবং সবাইকে প্রভাবিত করবে।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url