গ্রিন হাউস ইফেক্টের প্রভাব-গ্রিন হাউস ইফেক্ট প্রতিকারের উপায়

সমুদ্র তীরবর্তী দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর গ্রিন হাউস ইফেক্ট এর প্রভাব ব্যাপক। গ্রীন হাউজ ইফেক্ট এর প্রভাব প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের ওপর গ্রিনহাউস ইফেক্টের প্রভাব ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর প্রভাব বৃদ্ধির ফলে একসময় মানবজাতি সহ উদ্ভিদ প্রাণী বিলীন হয়ে যেতে পারে।
গ্রিন হাউস ইফেক্টের প্রভাব-গ্রিন হাউস ইফেক্ট প্রতিকারের উপায়
তাই আমাদের সকলকেই গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরী। আজকে আমরা বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে গ্রিন হাউস ইফেক্ট এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।

সূচিপত্রঃ- গ্রিন হাউস ইফেক্টের প্রভাব-গ্রিন হাউস ইফেক্ট প্রতিকারের উপায়

ভুমিকাঃ

গ্রীন হাউজ ইফেক্ট এর প্রভাব নিয়ে বিশ্বের বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে চিহ্নিত। বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই বিষয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তেমন কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ (NASA)-র গবেষণাগারে গডগার্ড ইন্সটিটিউট এর আবহাওয়া বিজ্ঞানী জিম হেনসেন নিযুক্ত ছিলেন।
১৯৮৮-র ২৪শে জুন মাসে ওয়াশিংটন ডিসি তে শক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদ কমিটিতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন যে, "গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার প্রভাব নিশ্চিতভাবেই যে ক্রিয়াশীল সেটা প্রমাণ করার মত যথেষ্ট লক্ষণ এখন দৃষ্টিগ্রাহ্য।" তিনি যখন এই ঘোষণা দেন তখনই যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ায় থেকে মন টানা এবং টেক্সাস থেকে উত্তর ডাকোটা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ কর্তৃক ধরা পীড়িত অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়।

খরার জন্য ওই অঞ্চলের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকে গ্রীন হাউজ প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য, তথ্য, উপাত্ত উপস্থাপন করেন। উন্নত বিশ্বের প্রায় সব বেশি গ্রীন হাউজ ইফেক্টের ভয়াবহ প্রভাব নিয়ে চিন্তিত হলেও বাংলাদেশের তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা বা সচেতনতামূলক কোন কর্মসূচি গ্রহণ করতে লক্ষ্য করা যায়নি।

বাংলাদেশে গ্রিন হাউস ইফেক্টের প্রভাবঃ

গ্রিন হাউস ইফেক্ট শুধু বাংলাদেশ নয় বরং সমগ্র বিশ্বের জন্যই এক ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনছে।পৃথিবীতে গ্রীন হাউজ ইফেক্ট এর প্রভাব মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে পৃথিবীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১.৭৭° ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উপনীত হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পরিবেশ বিজ্ঞানীগণ আশঙ্কা করছেন আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ পৌঁছাতে পারে।
গ্রিন হাউস ইফেক্টের প্রভাব-গ্রিন হাউস ইফেক্ট প্রতিকারের উপায়
গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে মেরু অঞ্চল গুলোতে কোটি কোটি বছর ধরে জমে থাকা বরফগুলো গলতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে হিমালয় সহ অন্যান্য পর্বত শৃঙ্গের জমে থাকা বরফগুলো গলতে শুরু করেছে। পর্বত শৃঙ্গ থেকে এই বরফ গলা পানি গুলো নদীর মাধ্যমে সমুদ্রে এসে জমা হচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য সমুদ্র উপকূলীয় দেশগুলো ভয়াবহ পরিণতির শিকার হতে পারে। বা সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানীগণ আশঙ্কা করছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ সহ প্রভৃতি দেশের মতো সমতল দেশগুলোর বিশাল অঞ্চল চিরতরে পানির নিচে তলিয়ে যাবে।

এছাড়া সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির কারণে পৃথিবীর মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। ফলে মানুষ ত্বকের ক্যান্সার সহ অন্ধত্ব এবং বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন বনাঞ্চলে দাবানল সৃষ্টি হতে পারে। সবুজ গাছপালা, বনভূমি, বন জঙ্গল পূজার হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে। সমুদ্রস্রোত পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

অতি বৃষ্টি, বন্যা, অনা-বৃষ্টি, খরা, এসিড বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হতে পারে। ফলে পৃথিবীবাসীর জীবন ও জীবিকা বিপন্ন হতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে গ্রীন হাউজ ইফেক্ট এর প্রভাবে গোটা বিশ্ব ধ্বংসের দিকে ধাবিত হতে থাকবে।বাংলাদেশে গ্রিন হাউস ইফেক্টের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো নিচে চিহ্নিত করা হলো :

বঙ্গোপসাগরের উচ্চতা বৃদ্ধিঃ

গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর ফলে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং পানি সম্প্রসারিত হয়ে পানির আয়তন ও পরিধিকে বাড়িয়ে দিবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে হিমালয় সহ অন্যান্য পর্বত শৃঙ্গে জমে থাকা বরফগুলো গলে যাবে, এবং গলে যাওয়া পানি গুলো নদীপথে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে এসে সমুদ্রে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফগুলো গলে যাবে। সেই পানিগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাকে বাড়িয়ে দিবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রতিবছর বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির হার ৭ মিলিমিটার। কিন্তু এই তুলনায় ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার ৫ থেকে ৬ মিলিমিটার/বছর। অর্থাৎ প্রতিবছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পরিমাণ ১-২ মিমি/বছর। বরিশাল জেলা সমগ্র থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এবং সমদোপ্রিষ্ঠ থেকে বরিশাল জেলার উচ্চতা ৩ মিটার। তাই সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা যদি বছরে তিন মিলিমিটার বৃদ্ধি পায় তবে ১০০০ বছর পরে বরিশাল শহর সমুদ্রে গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য উপকূলবর্তী দ্বীপ ও এলাকাসমূহ পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সুন্দরবনের অস্তিত্বও হুমকির সম্মুখীন হবে।

ভূ-পৃষ্ঠের নিচু এলাকায় বন্যা হতে পারেঃ

গ্রিনহাউস ইফেক্ট এর প্রভাবে বায়ুমন্ডল ও ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বা তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে এবং উপকূলীয় দ্বীপ শহর বনাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যাবে। দুঃখজনক হল সত্য যে, পরিবেশ বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, অতি শীঘ্রই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।

আর এই ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বন্যা কবলিত হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এমনকি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের মোট ভূ-ভাগের ১৭ শতাংশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে। যার ফলে দেশের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অতিবৃষ্টিঃ

গ্রীন হাউস ইফেক্টের অন্যতম ক্ষতিকর প্রভাব হলো অতিথি বৃষ্টি। গ্রিনহাউজ ইফেক্ট এর ফলে জলবায়ুতে পরিবর্তন আসবে। জলবায়ু পরিবর্তন হলে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেলে বর্ষাকালে নদনদীর পানির প্রবাহর মাত্রাও বেড়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি ঋতুতে কম বেশি বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা যায়। এইভাবে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেতে থাকলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে।

প্রাকৃতিক সম্পদের ধ্বংস সাধনঃ

গ্রিনহাউস ইফেক্ট এর ক্ষতিকর প্রভাবে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সুন্দরবনকে বাংলাদেশের ফুসফুস বলা হয়। সেই সাথে সুন্দরবন হলো প্রাকৃতিক সম্পদের ভরপুর একটি বনাঞ্চল। গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর ক্ষতিকর প্রভাবে এই অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ সুন্দরবন মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
ভূবিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, সমদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা যদি এক মিটার বা ৩.৩৩ ফুট বৃদ্ধি পায় তাহলে সুন্দরবনের প্রায় ৭০ শতাংশ সমগ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। সুতরাং গ্রিনহাউস ইফেক্ট এর প্রভাব বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর প্রভাবে দেশের বনজ সম্পদ ধ্বংস হবে এবং বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির বিলুপ্ত হবে।

উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাস্তুসংস্থান ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের মাত্রা আরো ঘনীভূত হবে। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৫% চাষযোগ্য জমিয়ে রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এই চাষযোগ্য জমিগুলোতে লোনা পানির অনুপ্রবেশ ঘটবে এবং জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাবে।

ফলে এ সকল জমিতে ফসল উৎপাদন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফলশ্রুতিতে দেশের প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ মানুষ এর জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, নোয়াখালী, নোয়াখালী, বরগুনা প্রভৃতি জেলার কৃষি জমিতে সহজেই লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটবে।

ফলে এ সকল জেলার চাষযোগ্য কৃষি জমি কৃষি কাজের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। সাধু পানের উৎস বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ফলে সাধু পানিতে অবস্থিত মৎস্য সম্পদেরও বিলুপ্তি ঘটবে। এইভাবে গ্রিনহাউস ইফেক্ট এর ক্ষতিকর প্রভাব এবং এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশের মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনবে।

মরুভূমির সৃষ্টিঃ

গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর প্রভাবে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে ভূপৃষ্ঠে প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ হ্রাস পাবে। ভূপৃষ্ঠে পানি না থাকায় সমগ্র বনাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে ইতোমধ্যে মরুভূমির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার ফলে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বর্তমানে শীতকালে বাংলাদেশের প্রায় ৩৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা খরার কবলে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই খরার ব্যাপ্তি আরো বেড়ে যেতে পারে। এবং ভবিষ্যতে খরা কবলিত এলাকা ২২,০০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া যে সকল এলাকায় আমন মৌসুমে মাঝারি খরার প্রকোপ দেখা দেয় সেসকল এলাকা চরম খরা প্রবলিত হতে পারে।
গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর প্রভাবে বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন রকম ক্ষতিকর গ্যাসের মাত্রা ও পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ক্ষতিকর অক্সাইড গুলো বৃষ্টির পানির সাথে মিশে এসিড বৃষ্টি হিসেবে ভূপৃষ্ঠে পতিত হবে। যার ফলে ভূপৃষ্ঠের উর্বরতা হ্রাস পাবে এবং বনাঞ্চলে এসিড বৃষ্টির কারণে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাবে, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণের বিলুপ্তি ঘটবে। বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য বিনষ্ট হবে এবং পরিবেশ বিপর্যয় আরও ত্বরান্বিত হবে।

ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ বৃদ্ধিঃ

গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর প্রভাবে বায়ুমন্ডল এবং ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠছে। সমুদ্রপৃষ্ঠে নিম্নচাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ওটি বন্যা ও দীর্ঘমেয়াদী বন্যা সামুদ্রিক জলসার ও ঘূর্ণিঝড়ের পাদুর্ভাব ঘন ঘন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে ‘সিডর’, ‘আইলা’, ‘মহাসেন’, ‘মোখা’, সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা সমূহে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে।

মানুষসহ অনেক পশুপাখি ও প্রাণী মৃত্যু ঘটেছে। সে সাথে দেশের প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের ধ্বংস হওয়ার অন্যতম কারণ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশের শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। ১৯৮৮ সালের দুই মাস ব্যাপী এই বন্যায় দেশের প্রায় ৫৩ টি জেলায় প্লাবিত হয়েছিল। ১৯৯১ সালে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের ফলে ভয়াবহ বন্যা সংঘটিত হয়েছিল। ইতিহাসের সবচাইতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ১৯৯৮ সালের এই বন্যার মেয়াদ ছিল প্রায় তিন মাস।

আবহাওয়াগত বিপর্যয়ঃ

গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মরুভূমি বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিয়েছে। ফলে বিশাল অঞ্চল ভবিষ্যতে অনর্গড় নিষ্ফলা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঋতু চক্রেও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ফলে শীতকালে তীব্র শীত এবং গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড দাবদাহের সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রীষ্মের মৌসুমে শীত এবং শীতকালে অপ্রত্যাশিত বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

২০০৪ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ধীরে ধীরে নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলীয় অঞ্চলের একটি বাংলাদেশের আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে যা কৃষিসহ আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে।

গ্রিন হাউস ইফেক্ট প্রতিকারের উপায়ঃ

শুধু বাংলাদেশ নয় বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য গ্রীনহাউজ ইফেক্ট একটি বড় সংকট এবং ভয়ের নাম। গ্রীন হাউজ ইফেক্ট রোদে নিম্নে বর্ণিত কাজগুলো করা যেতে পারে-
১. মানব জাতি ও পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে বৃক্ষ রোপনের কোন বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও এবং সামাজিক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গুলো কেউ এগিয়ে আসতে হবে। উপকূলবর্তী জেলাসমূহে অধিক হারে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। কারণ একমাত্র বৃক্ষই প্রকৃতি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে।
২. অনতিবিলম্বে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করতে হবে। কারণ, বৃক্ষ তথা বন জঙ্গল আমাদেরকে ঝড় এবং জল চাষের হাত থেকে রক্ষা করে এবং প্রকৃতিকে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
৩. যে সকল গ্যাস বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে সে সকল গ্যাসের নির্গমন বন্ধ করতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহন বন্ধ করতে হবে। বড় বড় শিল্প কারখানা থেকে কালো ধোঁয়ার নির্গমন যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে।
৪. গ্যাসের চুলা ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামালী অপ্রয়োজনে খোলা রাখা যাবে না। সব ধরনের অপচয় বন্ধ করতে হবে।
৫. সকল যানবাহনের ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন এগুলো ব্যবহারের পরিবর্তে পিএনজি ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৬. শিল্পকারখানায় জ্বালানির সাশ্রয় করতে হবে।
৭. পচা, ডোবা ও মজা পুকুরে মাছ চাষ করতে হবে। কারণ পচা পানিতে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
৮. কৃষি ক্ষেত্রে পদ্ধতির পরিবর্তন আনতে হবে। কৃষি জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বিধি করতে হবে। পাশাপাশি কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
৯. শিল্পবর্জ্য পুনরায় বিশুদ্ধকরণ রিসাইক্লিং এর ব্যবস্থা নিতে হবে।
১০. পরিবেশ দূষণ রোধে সরকার ও দেশের সকল শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

উপসংহারঃ

বর্তমানে গ্রিন হাউস ইফেক্ট একটি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে। মানব জাতিকে বেঁচে থাকতে হলে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ তৈরীর লক্ষ্যে এই গ্রিনহাউস ইফেক্ট কে প্রতিরোধ করা বাধ্যতামূলক। গ্রীন হাউস ইফেক্ট কে প্রতিরোধ করার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে এবং সবাইকে নিয়ে স্থান থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সমাজের সচেতনতামূলক কর্ম সূচি গ্রহণ করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url