জলাতঙ্ক কি-জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি কি ও প্রতিকার

জলাতঙ্ক শুধু একটি রোগের নাম নয় এটি একটি ভয়েরও নাম। জলাতঙ্ক নাম শুনলেই আমরা অনেকেই ভয় পাই। ভয় পাওয়ার সত্বেও আমাদের অনেকেরই এই জলাতঙ্কের রোগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট এবং পরিষ্কার ধারণা নেই। সাধারণ রোগ সম্পর্কে আমাদের প্রাথমিক ধারণা থাকা উচিত।
জলাতঙ্ক কি-জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
তাই আমরা আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে জলাতঙ্ক কি, জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ এবং জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার, জলাতঙ্কের চিকিৎসা ও জলাতঙ্ক রোগের প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেস্টা করবো। শুধু জলাতঙ্ক নয় যে কোন রোগ সম্পর্কে আমাদের প্রাথমিক ও পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। যাতে করে আমরা খুব সহজে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারি।

সূচিপত্রঃ- জলাতঙ্ক কি-জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ভুমিকাঃ

জলাতঙ্ক রোগের কারণে সারা বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন এবং প্রতিবছর প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও মৃত্যুর হার কম নয়। বাংলাদেশেও প্রতিবছর গড়ে 40 থেকে 50 জন শুধু জলাতঙ্ক রোগের মারা যান। জলাতঙ্ক যেহেতু পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায় সেহেতু গবাদি পশুর মধ্যে আক্রান্তের হার অনেক বেশি।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার গবাদি পশু জলাতঙ্কে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। GARC ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর র‌্যাবিস কন্ট্রোল’ এর উদ্যোগে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোড প্রতিরোধের জন্যে প্রতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন। জলাতঙ্ক দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- জলাতঙ্ক: “ভয় নয়-সত্য জানুন।”

জলাতঙ্ক কিঃ

জলাতঙ্ক শব্দের ইংরেজি হল Rabies. জলাতঙ্ক একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। এটি প্রধানত জুনোটিক রোগ। যে রোগ প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায় তাকে জুনোটিক রোগ বলে। Rabis Virus এক ধরনের Neurotropic Virus যার মাধ্যমে এই রোগটি হয়ে থাকে।
এই রোগটি সাধারণত গৃহপালিত পশু প্রাণী এবং পণ্য পশু প্রাণীদের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে। এই Rabis Virus এ আক্রান্ত প্রাণীর লালা রসের সংস্পর্শে বা প্রাণীগুলোর কামড়ানো অথবা আঁচরের শিকার হওয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়ায়। এন্টারটিকা ব্যতীত পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জলাতঙ্ক রোগ দেখা যায়।

জলাতঙ্ক রোগের কারণঃ

জলাতঙ্ক রোগটি উন্মাদ পশু বা প্রাণীর কামরের কারণে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসটি মূলত পশু প্রাণীর লালা রসে পাওয়া যায়। বিশেষ করে খামারে পালিত প্রাণী যেমন- গরু, ছাগল, ভেড়া, কুকুর, খরগোশ এবং বন্যপ্রাণীর মধ্যে বাদুড়, শিয়াল এবং হায়েনারা আক্রান্ত হলে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। গৃহপালিত পশু যদি মানুষের কোন ক্ষতস্থান চাটে তাহলেও এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে মানুষের মাথা এবং ঘাড়ের ক্ষতগুলো খুব বিপদজনক কারণ এ জায়গা থেকে ভাইরাসটি খুব দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে।

লক্ষণ ও উপসর্গঃ

রেবিস ভাইরাস মানুষের দেহের প্রবেশের পর ২ থেকে ১৬ সপ্তাহ বা তার বেশি সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। এই সুপ্ত অবস্থা কামড়ানোর স্থানের উপর নির্ভর করে। যত দ্রুত এই ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্কে পৌঁছাবে তত দ্রুত মানুষ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কুকুর কামড়ালে নির্দ্দিষ্ট কয়েক দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হয় না। জলাতঙ্কের জীবানু ২ থেকে ১৬ সপ্তাহ বা তার বেশি সমং সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তাই মানুষের শরীরের উপর দিকে কামড়ালে সুপ্তকাল কম হয় এবং নিচের দিকে বিশেষ করে পায়ের দিকে কামড়ালে সুপ্তকাল বেশি থাকে।
জলাতঙ্ক কি-জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রাথমিক পর্যায়ে সামান্য লক্ষণ যেমন-ক্ষুধামন্দা, জ্বর, কামরানোর স্থানে অনুভূতির পরিবর্তন যেমন- ঝিমঝিম চিনচিন ইত্যাদি হয়। আক্রান্তের কিছুদিন পরে ঝিমুনি, অনিশ্চয়তা, অত্যধিক উত্তেজনা, লালা রসের ক্ষরণ বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। উপসর্গ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে লক্ষণীয় হলো পানি পান করা পা ঢুক গেলার সময় Diaphragm, Respiratory Muscle এর সংকোচনের জন্য তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
পানি পান করার সময় Diaphragm ও অন্যান্য Inspiratory Muscle এর তীব্র সংকোচন ও ব্যথার জন্য রোগীর মধ্যে পানি ভীতি বা জলাতঙ্ক তৈরি হয়। এবং এই অবস্থাকেই ইংরেজিতে বলা হয় Hydrophobia (হাইড্রোফোবিয়া)। এছাড়াও রোগীর মধ্যে ভ্রম, হ্যালুসিনেশন, শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করার অক্ষমতা, পাগলামি সহ চেতনা শূন্যতা দেখা দিতে পারে।

রোগের বিস্তারঃ

রেবিস ভাইরাস মূলত পশু প্রাণীর লালা রস, আঁচড় এবং কামড়ানোর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে।কোন প্রাণীর রেবিস ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাণীটির ভাইরাল এনসেফালাইটিস হয়। যার ফলে প্রাণীটি হিংস্র এবং আক্রমণাত্মক হয় এবং সামান্য কিছুতেই মানুষদেরকে কামড় দেয়। এ সকল প্রাণীদেরকে Rabid Animal (রেবিড প্রাণী) বলা হয়।

এই ভাইরাস শুধুমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণীদেরকেই আক্রান্ত করে থাকে। তবে সব স্তন্যপায়ী প্রাণী মানুষের সংক্রমণের জন্য দায়ী নয়। খুব সামান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর কারণেই মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে কুকুর অন্যতম। কুকুরের মাধ্যমে সবচাইতে বেশি জলাতঙ্ক রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও শেয়াল গবাদি পশু ঘোড়া ভোঁদড় বিড়াল বাদুড় উল্লেখযোগ্য।

যেসব প্রাণীর তীক্ষ্ণদাত রয়েছে যেমন ইদুর কাঠবিড়ালি খরগোশ মুশিক ইত্যাদি প্রাণীর মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয় না। মানুষ থেকে মানুষে এই ভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা কম। তবে বিশেষ করে মানুষ থেকে অন্য মানুষকে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ানো সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির বীর্য কিংবা আক্রান্ত নারীর যোনির তরলে এই ভাইরাস থাকতে পারে তাই যৌন মিলনের মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়ানো সম্ভাবনা রয়েছে।

Pathogenesis (মানব শরীরে যেভাবে বংশবৃদ্ধি করে):

আমরা জানি জলাতঙ্ক রোগ র্যাবিশ ভাইরাসে আক্রান্ত পশু প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে। এই ভাইরাস প্রধানত কামড়ের স্থানে নিজেদের বংশবৃদ্ধি শুরু করে। এই ভাইরাস প্রথমে সংবেদী স্নায়ুতন্ত্র গুলোকে আক্রান্ত করে অ্যাক্সনের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যায়। সাধারণত স্নায়ুর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় কোন প্রকার ইমিউন রিএকশন হয় না হলেও খুব কম।
এই ভাইরাস সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে পৌঁছানোর পরে সেখানে বংশবৃদ্ধি পড়তে থাকে এবং প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র দিয়ে লালা গ্রন্থিসহ বিভিন্ন অঙ্গে এসে অবস্থান করে। এবং লালা গ্রন্থি থেকে ভাইরাসটি লালারসে প্রবেশ করে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও রোগীর অন্য মানুষকে কামড়ানোর মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। এই ভাইরাসটি স্নায়ুতন্ত্রের নিউরণ কে ধ্বংস করে ফলে এনসেফ্যালাইটিস হতে পারে।

ইনকিউবেশন (উন্মেষ পর্যায়):

এ রোগের লক্ষণগুলো হঠাৎ করে প্রকাশ পায় না। এটির একটি ইনকিউবেটেশন পর্যায় রয়েছে। এই ভাইরাস লক্ষণ বা উপসর্গগুলো প্রকাশের আগে মানুষের শরীরে সুপ্ত অবস্থায় বসবাস করে। প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর মধ্যে জ্বর, কামড় স্থানে খিচুনি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি দেখা দেয়। আংশিক পক্ষঘাত, অনিদ্রা, বিভ্রান্তি এগুলো জলাতঙ্কের লক্ষণ হতে পারে। জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে এরোফোবিয়া দেখা দিতে পারে।
ইনকিউবেশন পর্যায় গুলো নিচে বর্ণনা করা হলোঃপ্রোড্রোমাল (পূর্ব লক্ষণ)
পূর্ব লক্ষণ গুলোর মধ্যে বমি বমি ভাব শীত লাগা ঠান্ডা এবং জ্বর হতে পারে। মাংসপেশীতে ব্যথা সহ অসহিষ্ণুতা দেখা দিতে পারে। সাধারণত এই উপসর্গগুলোকে সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়।

নিউরোলজিক পর্যায় বা অবস্থা
সময় বাড়ার সাথে সাথে উপসর্গগুলো তীব্র হতে থাকে। রোগীর প্রচন্ড জ্বর অসংলগ্নতা দেখা দেওয়া এমনকি রোগী আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় রোগীর তড়কা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবং রোগীর (হাইপারভেন্টিলেশন) বা প্রচুর লালা ঝরে।

শেষ পর্যায়
এ পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি ভোগ গেলার সময় ডায়াফ্রাম রেস্টপিরেটরি মাসল এবং কণ্ঠনালী মাসল সংকোচনের ফলে প্রচন্ড ব্যথা হয়। যে কারণে রোগী পানি পান করতে ভয় পায়। এমনকি পানি দেখলেও ভয় পায় এবং প্যানিক এটাকে ভুগতে পারে। ধীরে ধীরে আক্রান্ত ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গের কাজ করার ক্ষমতা কমে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। এমনকি রোগী কোমাতেও চলে যেতে পারে। এ অবস্থায় রোগী কে বাঁচানোর জন্য অবশ্যই চিকিৎসা প্রয়োজন। সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না দিলে কিছুদিনের মধ্যেই রোগী মারা যেতে পারে।

ডায়াগনোসিস (রোগ নির্ণয়):

চিকিৎসকরা সাধারণত রোগের ইতিহাস ও উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করে থাকেন চিকিৎসকরা প্রয়োজনে কর্নিয়াল ইম্প্রেশন স্মিয়ার ও স্কিন বায়োপসি থেকে র‍্যাপিড ইমিউনোফ্লুরেসেন্ট টেকনিকের মাধ্যমে অ্যান্টিজেন শনাক্ত করে থাকেন।

চিকিৎসাঃ

এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অনিবার্য। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই রোগী মারা যায়। যে কোন এন্টিভাইরাল ওষুধ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে অক্ষম। শুধুমাত্র উপশমূলক সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়। তবে বর্তমানে এই রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। রেবিস ভাইরাসে আক্রান্ত প্রাণীর কামড়ের স্বল্প সময়ের মধ্যে টিকা গ্রহণ করলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ক্ষতস্থানে যা করা যাবে নাঃ

আমাদের মধ্যে অনেকেই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। জলাতঙ্ক হলে আমাদের মধ্যে অনেকেই ঘরোয়া বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা প্রদান করে থাকে। যেগুলো আসলে বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আমাদের একটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত যে বিভিন্ন ধরনের ঝাড় ফুক, পানি পড়া বাটি পড়া, চিনি পড়া, পান পড়া এই সকল জিনিস মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে না।
ক্ষতস্থান কাটা ব্যান্ডেজ করা বা শোষণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এর ফলে ইনফেকশন হতে পারে। রোগীর মত পা বেঁধে রাখা যাবে না। ক্ষতস্থানে ইলেকট্রিক শক বা আইস ব্যবহার করা যাবে না। কোন দরবেশ ওঝা বা কবিরাজের শরণাপন্ন না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

যে সকল প্রাণীর কামড়ে ভ্যাকসিন অপ্রয়োজনীয়

সাধারণত তীক্ষ্ণ দাঁত বিশিষ্ট প্রাণী যেমন ইঁদুর খরগোশ কাঠবিড়ালি গুইসাপ ইত্যাদি প্রাণী কামড়ালে ভ্যাকসিনের প্রয়োজন নেই। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিটেনাস ভ্যাকসিন প্রয়োজন হতে পারে।

বিশেষ অবস্থায় ভ্যাকসিন নিতে সমস্যা হবে কিঃ

সাধারণত গর্ব অবস্থায়, মাতৃদুগ্ধ দান কালে, অন্যান্য অসুস্থতায় ছোট বাচ্চা বা বৃদ্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ অবস্থায় জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জলাতঙ্ক প্রতিরোধঃ

এই রোগের একমাত্র প্রতিরোধক হলো সঠিক সময়ে টিকা গ্রহণ। আমাদের দেশে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর ‍ রেবিস ভাইরাসের ভ্যাকসিন রয়েছে। টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে বা প্রতিরোধমূলক টিকা গ্রহণ করাকে প্রি-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস এবং আক্রান্ত হওয়ার পরে বা প্রতিষেধক মূলক টিকা গ্রহণ করাকে পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস বলে।

জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধকঃ

জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক হলো সঠিক সময়ে টিকা গ্রহন করা। জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে অনেকরকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে। টিকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হলো হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন(HDCV)। অন্যান্য টিকার মধ্যে রয়েছে পিউরিফাইড চিক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, ডাক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন ইত্যাদি।

প্রি-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিসঃ

সাধারণত যেসব মানুষ পশু প্রাণীর মধ্যে অবস্থান করেন বিশেষ করে পশু চিকিৎসক, চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের দেখাশোনাকারী, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজন বা ওই এলাকায় ভ্রমণকারী ব্যক্তি এবং যারা বাড়িতে কুকুর পোষেন তাদের ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক টিকা প্রদান করা হয়।

পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিসঃ

যেহেতু এই ভাইরাস মানুষের দেহে অনেক দিন সুপ্ত অবস্থায় থাকে তাই মানুষের দেহে ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস হিসেবে রুটিন মাফিক ব্যবহার করা হয়। তবে এই টিকা আক্রান্ত হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে প্রদান করলেও কক্স হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিসের মধ্যে টিকা ও হিউম্যান রেবিজ ইমিউনোগ্লোবিউলিন(RIG) গ্রহণ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিনের সাধারণত পাঁচটি ডোজ ০,৩,৭,১৪ ও ২৮ তম দিনে দেওয়া হয়। তবে ৯০তম দিনে আরেকটি বুস্টার ডোজ দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। তবে RIG শুধুমাত্র প্রথমদিনে একবার দেওয়া হয়। RIG প্রধানত ক্ষতস্থানে বেশি দেওয়া হয় এবং বাকি অংশ মাংস মাংসপেশিতে দিতে হয়।

টিকার মধ্যে নিষ্ক্রয় রেবিজ ভাইরাস থাকে। অপরপক্ষে, ইমিউনোগ্লোবিউলিন হলো অ্যান্টিণবডি। দুটি ইনজেকশন প্রদানের ক্ষেত্রে দূরত্ব বজায় রাখতে হয় যাতে করে RIG এর মধ্যে থাকা এন্টিবডি টিকার ভেতরে নিষ্ক্রিয় রেবিস ভাইরাস কে নষ্ট করে টিকার কার্যকারিতা নষ্ট করতে না পারে।

লক্ষণীয় বিষয়ঃ

যদি কোন মানুষকে কামড়ানো প্রাণীটিকে ধরা সম্ভব হয় তাহলে তাকে ১০ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে। যদি প্রাণীটির মধ্যে রেবিস ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে প্রাণীটিকে মেরে ফেলতে হবে। আর যদি প্রাণীটির মধ্যে রেবিস ভাইরাসের কোন লক্ষণ প্রকাশ না পাই সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির রেবিস ভ্যাকসিন গ্রহণের প্রয়োজন হয় না।

উপসংহারঃ

যেকোনো প্রকার রোগই মানুষের জন্য ভয়ের কারণ। কিন্তু ভয় না পেয়ে সে রোগ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। জলাতঙ্ক রোগ কোন ভয়ের কারণ নয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে মানুষের প্রাণ বাঁচতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url