IQ বা বুদ্ধাংক নির্ণয়ের সূত্র - বুদ্ধ্যাঙ্ক নির্ণয়ের পদ্ধতি
প্রিয় পাঠক আগের পোষ্টটিতে আই কিউ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একজন মানুষের মানসিক ক্ষমতা বিকাশের জন্য তার শৈশব ও বাল্যকাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শৈশব ও বাল্যকালে একজন শিশুর চিন্তার বিকাশ ঘটে এবং সাথে সাথে বুদ্ধির মাত্রা বাড়তে থাকে। আমাদের জ্ঞানের বিকাশ চিন্তা ও ভাষার ওপর নির্ভরশীল।
একজন মানুষের সর্বাঙ্গিনী বিকাশের জন্য ভাষার ওপর সম্পন্ন দক্ষতা অর্জন খুব
গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই আর্টিকেলে আইকিউ বা বুদ্ধাংক নির্ণয়ের সূত্র এবং
বুদ্ধাংক নির্ণয়ের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
সূচিপত্রঃ- IQ বা বুদ্ধাংক নির্ণয়ের সূত্র - বুদ্ধ্যাঙ্ক নির্ণয়ের পদ্ধতি
ভূমিকাঃ
আইকিউ টেস্ট থেকে যা ফলাফল পাওয়া যায় তা নিঃসন্দেহে মানুষের বুদ্ধিমত্তা
সম্পর্কে ধারণা দেয়। অনেক বিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানী রায় কয়েক দশক ধরে
গবেষণারমাধ্যমে আইকিউ পরীক্ষার ওপর বিভিন্ন হ্যান্ড বক্স ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ
করেন।
নোটঃ বাংলা আই কিউ প্রশ্ন ও উত্তর পড়তে মেনু থেকে মানসিক দক্ষতা ও গানিতিক
যুক্তি অংশ পড়ুন।
এসকল প্রকাশনা থেকে পাওয়া যায় যে, একজন শিশুর সাবালক হওয়ার পর বয়স বৃদ্ধির
সাথে সাথে আইকিউ হ্রাস পায়। গবেষকরা আরও উল্লেখ করেন যে, এই ঘটনার স্কিন
ইফেক্ট এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে এবং এটি বয়স জনিত প্রভাবের চেয়ে দলগত
প্রভাবেরই অংশবিশেষ।
IQ বা বুদ্ধাংক নির্ণয়ের সূত্রঃ
পরবর্তীতে ১৯১৬ সালে আমেরিকার ট্রানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টারম্যান,
বিনেঁ আই কিউ এর ধারণা দেন এবং পরিমাপ করার জন্য একটি সূত্র প্রকাশ করেন।
I Q = (ব্যক্তির মানুষিক বয়স/প্রকৃত বয়স)X১০০
বুদ্ধ্যাঙ্ক নির্ণয়ের পদ্ধতি (Determining of IQ):
প্রকৃত বয়স (Chronological Age) এবং মানসিক বয়স (Mental Age) এ দুটির
আনুপাতিক সম্বন্ধ হলো বুদ্ধ্যাঙ্ক। মানসিক বয়স, (Mental Age) কে ‘প্রকৃত
বয়স’, (Chronological Age) দিয়ে ভাগ করে ঐ ভাগফলকে ১০০ দিয়ে গুণ করলে যে
সংখ্যা পাওয়া যায় তাকে কোনো ছেলে বা মেয়ের বুদ্ধির পরিমাণ বা বুদ্ধ্যাঙ্ক
Intelligence Quotient বা Iq) বলে।
ধরা যাক,
একটি ছেলের বয়স ১০ বছর। সে ১০ বছরের উপযোগী প্রশ্নের উত্তর দিতে সমর্থ হল।
এক্ষেত্রে ছেলেটির প্রকৃত বয়স ১০ ও মানসিক বয়সও ১০।
তাহলে তার বুদ্ধাঙ্ক (আই কিউ) হবে = মানুষিক বয়স (MA) / প্রকৃত বয়স (CA) x
১০০বা, ১০/১০X১০০
=১০০
এ ফলাফল থেকে বোঝা যায় ছেলেটি সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন ।
আবার,
কোনো একটি ছেলের প্রকৃত বয়স ৮ কিন্তু সে ৬ বছরের উপযুক্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে
সমর্থ হলো। অর্থাৎ তার মানসিক বয়স ৬।
তাহলে বুদ্ধ্যাঙ্ক (আই কিউ) হবে = মানুষিক বয়স (MA) / প্রকৃত বয়স (CA) x ১০০বা, ৬/৮X১০০
=৭৫
এ ফলাফল থেকে বোঝা যায় ছেলেটি জড়বুদ্ধিসম্পন্ন।
আবার,
কোনো একটি ছেলের প্রকৃত বয়স ৮ কিন্তু সে ১২ বছরের উপযুক্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে
সমর্থ হলো। অর্থাৎ তার মানসিক বয়স ১২।
তাহলে বুদ্ধ্যাঙ্ক (আই কিউ) হবে = মানুষিক বয়স (MA) / প্রকৃত বয়স (CA) x ১০০বা, ১২/৮X১০০
=১৫০
এ ফলাফল থেকে বোঝা যায় ছেলেটি অধিক বুদ্ধিসম্পন্ন, যেহেতু বুদ্ধি অভীক্ষকদের
ধারণা মতে ১৬ বছরের পর ব্যক্তির মানসিক বয়স আর বৃদ্ধি পায় না, অথচ তার প্রকৃত
বয়স বাড়তে থাকে, সেহেতু সাধারণ নিয়মানুযায়ী যদি প্রাপ্ত বয়স্কদের
বুদ্ধ্যাঙ্ক নির্ধারণ করা হয় তাহলে তার বুদ্ধ্যাঙ্ক ক্রমশ কমতে থাকবে।
অর্থাৎ ৪০ বছর বয়সে একজন ব্যক্তির বুদ্ধ্যাঙ্ক তার ২০ বছর বয়সের
বুদ্ধ্যাঙ্কের অর্ধেক হবে। এক্ষেত্রে তাই প্রকৃত ফলাফল লাভে ভিন্ন পন্থা
অবলম্বন করা হয়। এতে তাদের প্রকৃত বয়সের কোনো পরিবর্তন না করে সকল ক্ষেত্রেই
তা ১৬ ধরা হয়। অর্থাৎ একজন প্রাপ্তবয়স্কের যার প্রকৃত বয়স ১৬ বছর বা তার
ঊর্ধ্বে তার বুধ্যাঙ্ক হবে- মানুষিক বয়স (MA) / ১৬ x ১০০
বুদ্ধ্যাঙ্কের ভিত্তিতে বুদ্ধির স্তর বিন্যাসঃ
বুদ্ধ্যাক্ষের মাত্রা = ব্যক্তির ধরন২০ বা তার থেকে কম = জড়বুদ্ধিসম্পন্ন
২০ থেকে ৩৫ পর্যন্ত = মন্দবুদ্ধিসম্পন্ন
৩৬ থেকে ৪৯ পর্যন্ত = ক্ষীণবুদ্ধিসম্পন্ন
৫০ থেকে ৬৯ পর্যন্ত = পিছিয়ে পড়া
৭০ থেকে ৭৯ পর্যন্ত = সীমারেখাসম্পন্ন
৮০ থেকে ৮৯ পর্যন্ত = স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন
৯০ থেকে ১১০ পর্যন্ত = স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন
১১১ থেকে ১১৯ পর্যন্ত = বুদ্ধিমান
১২০ থেকে ১২৯ পর্যন্ত = মেধাসম্পন্ন
১৩০ ও তার ঊর্ধ্বে = প্রতিভাবান
(উল্লিখিত শ্রেণী বিন্যাসটি বিখ্যাত মনোবিন টারম্যান ও মেরিল-এর সাম্প্রতিক
সংস্করণ অনুযায়ী পরিবেশিত)
বুদ্ধির পরিমাপ (Measurement of Intelligence)
যদি কোন ব্যক্তি (Binet–Simon test)-র কোনো নির্দিষ্ট বয়সের উপযোগী করে তৈরি
প্রশ্ন-অভীক্ষার সবকয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে সমর্থ হয় তাতেও বলা যাবে না সে
ব্যক্তি কতটুকু বুদ্ধিমান- সে কি সাধারণ বুদ্ধিমান, না স্বল্পবুদ্ধিমান, না
অধিক বুদ্ধিমান। এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে সে ব্যক্তির বুদ্ধির বিকাশকে তার
সমবয়স্ক অন্যান্য ব্যক্তির বুদ্ধির বিকাশের সঙ্গে তুলনা করা প্রয়োজন।
বুদ্ধ্যাঙ্কের অপরিবর্তনশীলতা (Constancy of Iq)
মনোবিজ্ঞান মনে করেন বুদ্ধাংক পরিবর্তনশীল নয়। মনের উন্নতি সত্ত্বেও ব্যক্তির
বুদ্ধাংক তার সারা জীবন মোটামুটি একই থাকে। যতটুকু বৃদ্ধি পায় বা হ্রাস পায়
তা বিশেষ উল্লেখযোগ্য নয়। যে বয়সে বুদ্ধাঙ্ক পরিমাপ প্রয়োগ হয় সেই বয়সের
সম্পর্কে সেটি অপরিবর্তনীয় থাকে। অর্থাৎ বুদ্ধ্যাঙ্ক যে বয়সের পরিমাপক সব
সময়েই সেই বয়সের পরিমাপক হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বুদ্ধ্যাঙ্ক
উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। এর কারণ হিসেবে দৈহিক অসুস্থতা, পরিবেশের
প্রতিকূল প্রভাব, শিক্ষার অভাব, ভয়, ক্রোধ বা অন্য কোনো মানসিক আবেগের
আবির্ভাবকে চিহ্নিত করা হয়।
বুদ্ধিমত্তার বৃদ্ধি ও হ্রাস (Developing and diminish of Iq)
জন্মের পর থেকেই শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ খুব দ্রুত গতিতে ঘটে। তিন বছর বয়সের
মধ্যে পূর্ণ বয়স্ক মস্তিষ্কের ভাগ গঠিত হয়ে যায়। শিশুদের মানসিক বয়স ১৩
থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত দ্রুত বাড়ে। এরপরই বৃদ্ধির হার কমতে থাকে। ১৫ থেকে ১৮/২০
বছর বয়সে মানসিক বয়স পূর্ণতার কাছাকাছি পৌঁছায় । এরপর এ বৃদ্ধির গতি একেবারে
কমে যায়। ২৫-২৬-এর দিকে তা পূর্ণতা পায়। যৌবন আর প্রৌঢ় বয়সে পূর্ণ মানসিক
বয়স বজায় থাকে। বার্ধক্যে পা দেয়ার সময় থেকেই তা কমতে শুরু করে।
বুদ্ধিমাত্রা উন্নয়নে অনুশীলন (Practice for developing of Iq)
মানসিক বয়স বুদ্ধিমাত্রার প্রধান একটি উপাদান। মানসিক বয়সের দুটি উপাদান আছে।
একটি জন্মগত বুদ্ধি ও অপরটি বংশগতি। সংস্কৃতি, শিক্ষা, গ্রাম ও শহরভেদে জীবিকা,
সামাজিক ও অর্থনৈতিক মান ইত্যাদির প্রেক্ষিতে অর্জিত হয় অভিজ্ঞতা। শিক্ষার
মাধ্যমে যদি এ অভিজ্ঞতার মান বৃদ্ধি করা যায় তবে বুদ্ধিমাত্রা অবশ্যই বাড়বে।
ইন্দ্রিয়ের ত্রুটি দূর করতে পারলেও বুদ্ধিমাত্রা বাড়বে। মানসিকভাবে
পীড়াদায়ক অন্যান্য প্রতিকূল অবস্থা দূর করলেও বুদ্ধিমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
অধিক অনুশীলনের মাধ্যমে মানসিক দ্রুতগতি আনতে পারলে বুদ্ধিমাত্রার মানের উন্নতি
ঘটবে।
উপসংহারঃ
আইকিউ টেস্ট এর মাধ্যমে একজন মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা
পাওয়া গেলেও তার আবেগ সামাজিকতা মানসিক চাপ নেওয়ার ক্ষমতা চারিত্রিক গুণাবলী
স্বকীয়তা উদ্ভাবনী ক্ষমতা সচেতনতা আধ্যাত্মিক বোধ ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রেই
আইকিউ টেস্টের প্রভাব পড়ে না। তবে একজন মানুষের বাস্তব জীবনে উপস্থিত বুদ্ধি,
অর্জিত জ্ঞান ও যুক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা সম্পর্কে জানার জন্য আই কিউ প্রযোজ্য।
আবার অনেক ক্ষেত্রে এই বুদ্ধাংক নির্ণয় একজন ব্যক্তির শিক্ষাক্ষেত্র ও
কর্মজীবনের সাফল্যের পূর্বাভাস দিতে পারে। তবে সেটি কতটুকু কার্যকর তা নিয়ে
অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে। বলা যায়, একজন মানুষের বুদ্ধাংক যাচাইয়ের জন্য আই কিউ
টেস্ট একটি আংশিক মাধ্যম, তবে কখনোই একমাত্র মাধ্যম নয়।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url