ছাদ বাগান কাকে বলে-ছাদ বাগান করার পরিকল্পনা
প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য গাছপালার ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু আধুনিক শিল্পায়নের
যুগে দিন দিন গাছপালার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন দেখা
দিয়েছে। সৃষ্টির আদিকাল থেকে কৃষি, মানুষের সাথে অতপ্রত ভাবে জড়িত। জলবায়ু
পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে এই কৃষি ক্ষেত্রের ওপর লক্ষ্য করা যায়।
বিশ্বব্যাপী নগরায়নের ফলে শহরগুলোতে কৃষি (ছাদ বাগান) নামে এক নতুন শব্দ আমাদের
শব্দভাণ্ডারে যুক্ত হয়েছে। শহরে কৃষির শুরুটা সৌখিনতা থেকে। অধিকাংশে ব্যাপক
বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব না হলেও ধীরে ধীরে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে এটি
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছাদ বাগানের
গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। আজকের এই প্রবন্ধে হাত বাগান কি হাট বাগানের ইতিহাস
নিয়ে আলোচনা করব।
সূচিপত্রঃ-ছাদ বাগান কাকে বলে - ছাদ বাগান করার পরিকল্পনা
ভুমিকাঃ
সভ্যতার বিকাশের ফলে ইট কাঠের শহর গুলো থেকে সবুজের সমরহ দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু মানুষ তার শিকড় কে সহজে ভুলতে পারে না। সবুজে শ্যামলে ভরা গ্রাম বাংলায়
বেড়ে ওঠা মানুষদের একটা অংশ সবুজকে আবাসস্থলে ধরে রাখতে চায়। সৌখিন মানুষেরা
একান্তই নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজের বাড়ির ছাদে ছাদ বাগান তৈরি
করছেন।
এই ছাদবাগান শুধু সৌখিনতায় আটকে নেই। বর্তমানে এই ছাদ বাগান পরিবারের পুষ্টির
চাহিদা পূরণ, পারিবারিক বিনোদন এবং অবসর সময় কাটানোর এক মিলন মেলায় পরিণত
হয়েছে। বাংলাদেশের শহরগুলোতে কৃষি ব্যবস্থার এই সৌখিন পদক্ষেপ এক সামাজিক
আন্দোলনের রূপ নিয়েছে।
ছাদ বাগান কাকে বলেঃ
যেমন বই পুস্তকের ভাষায় ছাদ বাগানের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যায়নি তেমন এর কোন
সুনির্দিষ্ট মডেল ও এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। তবে পাকা বাড়ির খালি ছাদে অথবা
বেলকনিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ফুল, ফল, শাকসবজির বাগান গড়ে তোলাকে ছাদে বাগান বলা
হয়। মালিকের নিজের ইচ্ছায় বাড়ির ছাদে টব, বড় বড় ড্রাম ট্রে, কিংবা মাচা তৈরী
করে রোপন করা হয় বিভিন্ন ধরনের ফল ফুল ও সবজির বা চারা।
বর্তমানে কেউ কেউ ছাদের আকার ও সহনশীলতার দিক লক্ষ্য রেখে ভিন্ন ধরনের স্থায়ী
কাঠামো নির্মাণ করে ছাদ বাগান তৈরি করছেন। তবে এলোমেলো ও অপরিকল্পিত ছাদ বাগান
শুধু সময়, অর্থ অপচয় করায় না। সেই সাথে ভবনেরও ক্ষতি করে। তাই কিছু মৌলিক বিষয়ের
প্রতি লক্ষ্য রেখে ছাদ বাগান গড়ে তোলা প্রয়োজন।
ছাদ বাগানের ইাতহাস
ছাদে বাগান কোনো নতুন ধারণা নয়। প্রাচীন সভ্যতায় ছাদ বাগানের ইতিহাস চোখে পড়ে।
খ্রিস্টের জন্মের পূর্বে মেসোপটেমিয়া ও পারস্যের ঝুঁকুরাক নামের পিরামিড আকৃতির
উঁচু পাথরের উপর ছোট গাছ লাগানো ও বাগান তৈরির স্থান নির্ধারণ করা নিদর্শন পাওয়া
যায়। ইতালির পম্পে নগরীর কাছে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রোমান ভিলায় বাগান করার
জন্য একটি নির্দিষ্ট ছাদ তৈরি করা হয়েছিল।১১ শতকের পুরনো কায়রো শহরে বহুতল ভবন,
কোনটি প্রায় ১৪ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল।
সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে এই ভবন গুলোর ছাদে বাগান স্থাপন করা হয়েছিল। সেঁচ কাজের
জন্য প্রাণী শক্তি ব্যবহার করে চাকা ঘুরিয়ে পুলি দিয়ে নিজ থেকে উপরে পানি তোলা
হতো। ধারণা করা হয়, নেবুচাঁদ নেজার তার স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য ব্যাবিলনে
ঝুলন্ত বাগান তৈরি করেছিলেন। বর্তমানে ঐতিহাসিকভাবে এই উদ্যানের কোন অস্তিত্ব
পাওয়া না গেলেও তৎকালে, বর্তমান ইরাকের মসুল শহরের কাছে আরেক ঝুলন্ত উদ্যানের
নিদর্শন পাওয়া যায়।
ছাদ বাগান করার পরিকল্পনাঃ
যেকোনো কাজ করার পূর্বে অবশ্যই পরিকল্পনা থাকা বাধ্যতামূলক। তাই হাত বাগান করার
পূর্বে প্রথমেই ছাদের আয়তন অনুসারে কাগজে-কলমে একটি খসড়া ম্যাপ করে বিভিন্ন
স্থাপনা ও কলামগুলো চিহ্নিত করতে হবে। রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী কোন গাছ কোথায়
রাখবেন তা চিহ্নিত করতে হবে। বড় ও ভারী গাছ গুলো ছাদের বীম বা কলামের নিকটবর্তী
স্থানে রাখতে হবে। নিচ দিয়ে আলো, বাতাস চলাচল এবং ছাদ যেন স্যাঁতসেঁতে না হয় সে
জন্য টপ অথবা ড্রামগুলো রিং বা ইটের ওপরে স্থাপন করতে হবে। নেট ফিনিশিংয়ের
মাধ্যমেও ছাদের ড্যাম্প প্রতিরোধ করা যায়। বীজ বা চারা রোপনের জন্য ড্রাম,
সিমেন্ট বা মাটির টব, স্টিল বা প্লাস্টিক ট্রে সংগ্রহ করতে হবে।
ছোট ছোট চারা রোপনের জন্য বাসা বাড়ির ভেঙ্গে যাওয়া বালতি, তেলের বোতল সহ
অন্যান্য বোতল ব্যবহার করতে পারেন। উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা থেকে এ সকল অপব্যবহৃত
জিনিস বাগানে ব্যবহার করলে এটিও একটি নতুন নান্দনিকতার পরিচয় বহন করতে পারে।
ছাদের সুবিধা মতো স্থানে স্থায়ী বেড (ছাদ ও বেডে মাঝে ফাঁকা রাখতে হবে) স্থাপন
করতে পারেন।
এসব বেডে মূলত শাক সবজি চাষ করা যায়। স্থায়ী বেড তৈরি করতে না চাইলে পুরনো
চৌবাচ্চা, বাথ ট্যাব বা জাহাজের লাইফ বোট রাখার বয়ার খোলও বেট হিসেবে ব্যবহার
করতে পারেন। যেহেতু ছাদ বাগান অল্প জায়গায় গড়ে তোলা হয় তাই এর যত্নের দিকে
অবশ্যই নজর রাখতে হবে।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখতে হবে। যেমন- সিকেচার, কোদাল,
কাচি, ঝরনা, বালতি, করাত, খুরপি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি। চারা রোপনের আগে চারার
উচ্চতা, শিকড়ের প্রকৃতি, আবহাওয়া, খরাসহিষ্ণুতা সহ বিভিন্ন বিষয় খেয়াল রাখতে
হবে।
উপসংহারঃ
শহরায়নের ফলে শহরের মানুষদের প্রকৃতির সাথে মেশার সুযোগ অনেক কম। তাই প্রকৃতির
সাথে সংযুক্ত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম ছাদ বাগান। মানুষ একসময় বনে জঙ্গলে বাস কর।
সভ্যতার বিকাশে এবং শহরায়নের ফলে মানুষ এখন ইট, বালি, সিমেন্ট ও কাঠের শহরে
বসবাস করছে। শহরের মানুষের কাছে প্রকৃতির সৌন্দর্য, মনোরম পরিবেশ ও প্রকৃতির মাঝে
হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে ছাদ বাগান।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url