ছাদ বাগান করার পদ্ধতি - ছাদ বাগানে জন্য মাটি তৈরির সহজ কৌশল
বর্তমানে ছাদ বাগান শহরের মানুষের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ছাদ বাগানের শুরুটা ছিল সৌখিনতা থেকে। বর্তমানে শহরে ফুল ফল ও সবজির পারিবারিক বাগান শুধু সৌখিনতা বা পারিবারিক প্রয়োজন নয়, পরিবেশ রক্ষা ও নগরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে অনেক দেশেই বাড়ির ছাদ, বারান্দা, ফুটপাত, সরকারি খাস জমি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতিটি পর্যায়ে উদ্যান ফসল ও বাহারি ফুলের গাছের সমন্বয়ে তৈরি করা হচ্ছে সবুজ নগরায়ন।
আমাদের দেশেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধীরে ধীরে ছাদ বাগানের মাধ্যমে শহরে সবুজায়ন শুরু হয়েছে। কোন প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নয় বরং একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ছাদ বাগানের সূচনা। আজকের এই প্রবন্ধে হাত বাগান করার পদ্ধতি ও ছাদ বাগানের মাটি তৈরির সহজ কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করবো।
সূচিপত্রঃ- ছাদ বাগান করার পদ্ধতি - ছাদ বাগানে জন্য মাটি তৈরির সহজ কৌশল
ভুমিকাঃ
দ্রুত নগরায়নের ফলে দিন দিন চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। শহরে গাছ লাগানোর
মত পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাই শখের বসেই হোক কিংবা পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের
জন্যই হোক শহরের মানুষের কাছে তাদের বিকল্প কিছু নেই।
ছাদ বাগান শুরু করার পূর্বে অবশ্যই ছাদ বাগান তৈরির জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। কি
জন্য ছাদে গাছ লাগানোর পদ্ধতি ছাদে বাগান করার উপযোগী ভালো জাতের কাজ নির্বাচন
এবং পরিচর্যা ও ছাদ বাগানে জন্য মাটি তৈরীর কৌশল জানা প্রয়োজন।
ছাদ বাগনের সুফলঃ
শহরে ছাদ বাগানের ফলে শহরের তাপমাত্রা কয় ডিগ্রী পর্যন্ত কমতে পারে। আমাদের শহরে
মাটির অস্তিত্ব দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অপরপক্ষের ইস্পাতের কাঠামো ও কাঁচে মোড়ানো
বহুতল ভবনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক ভবনের টেকসই স্থাপনার
জন্য হালকা কিন্তু শক্তিশালী ধাতব পাত ফাইবার ও গ্লাস এবং বাসাবাড়িতে জানালায়
কাজ ব্যবহার করা হচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ
ছাদ বাগান করার পরিকল্পনা
ফলে এইসব ধাত এবং কাছে সূর্যের আলো প্রতিফলনের মাধ্যমে তাপ উৎপন্ন হচ্ছে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য অত্র এলাকাটির হিট আইল্যান্ড বা তাপ দ্বীপে পরিণত হচ্ছে।
ভবনের ছাদে বাগান স্থাপন করা হলে বাগানের গাছ খ্রিস্ট দেশের তাপ শুষে নেবে এবং
গাছ থেকে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় ত্যাগ করা জলীয় বাষ্প নির্দিষ্ট স্থানের
তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে।
ছাদ বাগান করার পূর্বে যে বিষয়গুলো জানা জরুরিঃ
ছাদে মাটি ধারণ ক্ষমতাঃ
বাড়ির ছাদের গুনাগুন অনুযায়ী সাত বাগানের পরিকল্পনা করতে হবে। মাটির ওজন কম
নয়। আপনি যদি বড় বাগান বা বড় গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেন তাহলে অনেক মাটির
প্রয়োজন হবে এবং এই মাটির ওজন কম হবে না। তাছাড়া নিয়মিত পানি দেওয়ার ফলে মাটি
ঘিরে ওজন আরো বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে আপনার বাড়ির ছাদে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
এমনকি ছাদ ভেঙে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। তাই হাত বাগান করার পূর্বে অবশ্যই তাদের
মাটি ধারন ক্ষমতা জেনে রাখুন।
সূর্যের অবস্থানঃ
উদ্ভিদকুলের বেঁচে থাকার জন্য সূর্যালোক অপরিহার্য। তাই বাগানের নকশা তৈরির
পূর্বে তাদের কোন দিক থেকে সূর্যালোক আসে বাড়িতে গেলে কোন দিকে সরে যায় সে
বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেহেতু ছাদে সারাদিন সূর্যের আলো পতিত হয় তাই সবজির
চাষ করা এর সুবিধা জনক হতে পারে। আশেপাশের বিল্ডিং এর উচ্চতা, রেলিং এর অবস্থানের
কারণে বাগানে ছায়া পড়তে পারে। তাই ছাদের উপর সারাদিনে সূর্যের রশ্মি কত সময়
ধরে পতিত হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
বাতাসের দিকঃ
সাধারণত ছাদের উপর বাতাসের প্রভাব একটু বেশি থাকে। পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল প্রতিটি
উদ্ভিদের জন্যই উপকারী। তবে অতিরিক্ত বাতাস গাছের আদ্রতা কমিয়ে দিতে পারে।
এছাড়াও ঝড়ো বাতাসে গাছ নিয়ে পড়তে পারে। তাই বাতাসের বেগ বেশি থাকলে গাছকে
রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাঃ
বাগানের মাটি থেকে শেষের অতিরিক্ত পানি তাদের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া আগাছা
জন্মানো বা পানির জন্য মেয়েদের পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সাত
বাগানের ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা রাখতে হবে।
মাটি দেওয়াঃ
ছাদ বাগানে দুইটি উপায়ে গাছ লাগানো যেতে পারে। একটি হল পাত্র বা টবের মাধ্যমে।
অন্যটি ছাদ কে পানিরোধী করে সরাসরি মাটি দিয়ে। সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে মাটি
যেন হালকা হওয়ার পাশাপাশি পানি ধারণ ক্ষমতা থাকে।
ছাদ বাগানের জন্য মাটি তৈরির সহজ কৌশলঃ
ছাদ বাগানে টবের জন্য মাটি তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সঠিকভাবে মাটি
তৈরি করতে পারলে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় এতে ফলনও ভালো হয়।
(১) দোআঁশ মাটিঃ
যে কোন ফসলের জন্য দোআঁশ মাটি সবথেকে উপযুক্ত। তবে আপনার মাটি যদি এটেল (শক্ত
মাটি) হয়ে থাকে তাহলে বালি মাটি মেশাতে হবে। আর বালি মাটি হয়ে থাকলে তাতে এটেল
মাটি মিশাতে হবে। অর্থাৎ দোআঁশ মাটিতে পরিণত করতে হবে। মাটি ঝুরঝুরে হলেই বুঝবেন
এটি দোআঁশ।
(২) জৈব সার মিশানোঃ
দোআঁশ মাটির ক্ষেত্রে জৈব সার মেশানো প্রয়োজন। স্বাভাবিক মাটির সাথে চার ভাগের
এক ভাগ জৈব সার মিশাতে হবে। যার ফলে মাটিতে অবস্থিত জীবাণু সক্রিয় হবে। এটেল বা
বালি মাটি ক্ষেত্রেএই পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। জৈব সার হিসেবে আর্মি কম্পোস্ট বা
কেঁচোর সার ভালো হতে পারে বাড়ীতে তৈরি আবর্জনা পচা সার বা পচা গোবর সারও দিতে
পারেন।
(৩) রাসায়নিক সার মিশানোঃ
ছাদের জন্য হাফ ড্রাম এবং মাটির জন্য (২.০ ফুট × ২.০ ফুট × ১.৫ ফুট) আকারের
গর্তের ক্ষেত্রে। হাফ ড্রামে প্রায় ১২০-১৫০ কেজি (৩-৪ বস্তা প্রায়) মাটি ধরে।
উভয়ক্ষেত্রে মাটির সাথে ৩০-৫০ কেজি জৈব সার, ১২০-১৫০ গ্রাম (৩-৪ মুঠ প্রায়)
টিএসপি, ৮০-১০০ গ্রাম (২-৩ মুঠ প্রায়) পটাশ, ৪০-৫০ গ্রাম (১.০-১.৫ মুঠ প্রায়)
জিপসাম, ১০-১৫ গ্রাম (১.৫- ২.০ চা চামচ প্রায়) করে বোরণ ও দস্তা সার ভালোভাবে
মিশিয়ে ১৫ দিন ঢেকে রাখবেন। পনের দিন পর পুনরায় মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে কয়েকঘন্টা
খোলা রেখে চারা রোপণ করবেন।
(৪) মাটি শোধন করাঃ
মাটি তৈরীর সময় মাটি শোধনের কাজ করে নেওয়া যেতে পারে। এজন্য উপরোক্ত পরিমাণ
মাটির সাথে ১০ গ্রাম (১.০-১.৫ চা চামচ) হারে দানাদার কীটনাশক এবং কার্বেন্ডাজিম
গ্রুপের ছত্রাকনাশক মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। যার ফলে নেমাটোডা বা কৃমি এবং ছত্রাক
দমন করা সম্ভব হবে।
উপসংহারঃ
নগর জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে এক মুহূর্তের জন্য আপনাকে সতেজ রাখতে পারে ছাদ
বাগানের নির্মল পরিবেশ। যাদের স্বাদ নেই তারা বেলকুনিতেও বাগান করতে পারেন।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url