চুলের যত্ন নেওয়ার ঘরোয়া উপায়

লম্বা চুল অনেকেরই স্বপ্ন। সবাই চুলকে লম্বা, ঘন ও কালো করতে চাই। চুলের যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে বনলতা সেনের কথা মনে পড়ে। “ চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নেশা।” চুলের যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই আগ্রহ দেখায় না।
চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়
 চুল হল সৌন্দর্যের একটি প্রতীক। চুলের যত্ন নেয়া কঠিন কোন কাজ নয়। প্রচলিত একটি কথা আছে, ‘রাতের শোভা চন্দ্র-তারা, নারীর শোভা চুল।’ আবার চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক মানুষই বেশ সতর্ক।

সূচিপত্রঃ- চুলের যত্ন

ভুমিকাঃ

চুল হলো সৌন্দর্যের প্রতীক। সুন্দর চুল একজন ব্যক্তিকে সুন্দর রূপে উপস্থাপন করে। তুমি কি সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে চুলের যত্ন গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু আমাদের অনেকেরই চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা রয়েছে। চুলকে সুস্থ সবল, উজ্জ্বল, কোমল রাখতে আজকে আমরা বেশ কিছু উপায় সম্পর্কে জানব।
চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি নিয়মমাফিক চলাফেরা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, এবং শরীরের সাথে শুট করে এরকম প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত।

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়াঃ

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার শুধু চুল সুস্থ রাখার জন্যই প্রয়োজনীয় নয় শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন। চুলের যত্ন নেওয়ার পূর্বে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অপরিহার্য। পুষ্টিকর খাবার আপনার শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি চুল কেউ সুস্থ এবং সজীব রাখে।
ডিমঃ
ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং বায়োটিন রয়েছে। চুলকে রুক্ষ এবং শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রোটিন ও বায়োটিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দুইটি উপাদান ছাড়াও ডিমে রয়েছে জিংক ও সেলেনিয়াম যা চুলকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়
অতিরিক্ত চুল ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিমের উপস্থিত থাকা নিশ্চিত করুন।
বেরি বা জামঃ
চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে বেরি বা জ্যাম খুব কার্যকরী। চুলকে বৃদ্ধি করতে স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ধরনের ফলমূল ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এ সকল ফলে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুল পড়া রোধে এবং খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এক কাপ ট্রাবারিতে প্রায় ১৪৪ গ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও ফ্রী র‍্যাডিকেল থেকে ত্বককে রক্ষা করতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
পালং শাকঃ
পালং শাক আমরা সবাই চিনি। কিন্তু অনেকেই এই পালং শাক পছন্দ করি না। কিন্তু এই পালং শাক হল অনেক ভিটামিনের আধার। এই পালংশাকে ফোলেট, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এ সকল পুষ্টি উপাদান আপনার চুলকে লম্বা করতে সাহায্য করে। ভিটামিন কি আপনার শরীরে সিবামের উপাদান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
শরীরে শিবামের উপাদান বৃদ্ধি পেলে মাথার ত্বক সুস্থ এবং সতেজ থাকে। ৩০ গ্রাম পালং শাকে যে পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে তা একজন ব্যক্তির দৈনিক চাহিদার ৫৪ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আইরন চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তৈলাক্ত মাছঃ
চর্বিযুক্ত মাংসের চেয়ে তৈলাক্ত মাছ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এই ফ্যাটি এসিড চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও তৈলাক্ত মাছে প্রোটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি৩, ভিটামিন বি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় স্যামন, রুই, কাতলাসহ ছোট-বড় সব ধরনের মাছ অন্তর্ভুক্ত করুন।
মিষ্টি আলুঃ
মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। মানব শরীর এই বিটা ক্যারোটিনকে ভেঙে ভিটামিন এতে রূপান্তরিত করে। ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। তাই খাদ্য তালিকায় মিষ্টি আলু রাখার চেষ্টা করুন।
বীজঃ
বিভিন্ন ফলের বিচি এবং বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, জিংক ও সেলেনিয়াম পাওয়া যায়। এ সকল উপাদান চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলের পুষ্টি যোগায়। মটরশুঁটি, শিমের বিচিসহ এ জাতীয় খাবারেওপ্রচুর পরিমাণেপুষ্টি উপাদান রয়েছে।এছাড়াও এ সকল বিচি এবং বীজ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এর দারুন উৎস।এ সকল উপাদান চুল ভেঙে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।
মাংসঃ
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে নিয়মিত পরিমান মত মাংস খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক। মাংস হলো প্রোটিনের আঁধার। প্রোটিন চুলকে শক্ত ও মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও চুলের ফলিকল ভালো রাখতে মানুষের জুড়ি নেই।
বাদামঃ
চুলকে সুস্থ রাখার জন্য এবং চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য চীনাবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি সব ধরনের বাদাম বেশ কার্যকরী। বাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, জিংক এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। নিয়মিত পরিমাণমতো বাদাম খেলে চুল ভালো থাকার পাশাপাশি হার্ট ভালো থাকে। এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম কাঠবাদাম মানুষের দৈনিক চর্বি চাহিদা ৩৭ শতাংশ পূরণ করতে পারে।
পেঁয়াজের রসের ব্যবহারঃ
চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস কার্যকরী। পেঁয়াজের রস চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।। যাদের অতিরিক্ত চুল ঝরে পড়ে তারা পেঁয়াজের রস বা পেঁয়াজ ভালো ভাবে বেটে চুলে এবং মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। এভাবে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে তারপরে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার চুল কালো এবং ঘন হবে।
মেথি পেস্টঃ
চুলের যত্ন নেয়ার জন্য মেথি পেস্ট এর ব্যবহার অনেক। মেথিতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, আয়রন, ম্যাংগানিজ, কপার, ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। এছাড়াও বায়োটিন, ফোলেট, সেলেনিয়াম, জিংক এর একটি ভালো উৎস। সকল উপাদান চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার পাশাপাশি খুশকি থেকে রক্ষা করে।বিশেষ করে মেথি চুল পড়া বন্ধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। পরিমাণ মতো মেথি পরিমাণ মতো পানিতে ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন।
সকালে মেথি টি ভালোভাবে ছেঁকে নিন। মিটি মেশানো পানি ফেলে দিবেন না। ছেকে নেওয়া ম্যাথেটি ভালোভাবে পেটে পেস্ট করে মাথার চুল এবং ত্বকে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এখন মেথির থেকে নেওয়া পানি চুলে তেলের মত মালিশ করুন। এবং পরে সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। এতে আপনার চুল ঝকঝকে, সিল্কি এবং কোমল হবে। এভাবে মেথি পেস্ট সপ্তাহে অন্তত একদিন ব্যবহার করুন। ফলে আপনার চুলের গোড়া শক্ত, চুল পড়া বন্ধ হবে এবং নতুন চুল গজাবে।
অ্যালোভেরার ব্যবহারঃ
অ্যালোভেরার প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুন রয়েছে। চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে এলোভেরার ব্যবহার ব্যাপক। অ্যালোভেরা চুলকে কোমল, সতেজ এবং ঝলমলে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এলোভেরা মাথার খুশকি, চুল ঝরে পড়া, চুলের রুক্ষতা, চুলের শুষ্কতা এবং এলার্জির দূর করে থাকে। যাদের মাথায় চুলের পরিমাণ কম তারা অ্যালোভেরার জেল কে ভালোমতো ফেটে পেট বানিয়ে মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন।

এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যারা হেয়ার প্যাক ব্যবহার করেন যেমন মেহেদির হেয়ার ব প্যাক তারা হেয়ার ব্যাকে সঙ্গে এলোভেরা জেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল, নারিকেল তেল এবং অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট করে হালকা গরম করে মাথায় লাগাতে পারেন। এতে আপনার চুল ঝরঝরে, মসৃণ এবং সিল্কি হবে।
জাফরান হেয়ার অয়েল ব্যবহারঃ
চুলকে শক্ত এবং মজবুত রাখতে জাফরান হেয়ার অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এই তেলের সাথে পরিমাণ মতো নারিকেল এবং অলিভ অয়েল তেল মিশিয়ে চুল এবং মাথার ত্বকে মালিশ করুন। ফলে আপনার চুলের গোড়া শক্ত হবে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
হট অয়েল ম্যাসাজঃ
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং চুলকে ঝরঝরে রাখতে হট ওয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন। তেল কুসুম গরম করে চুল এবং মাথার ত্বকে লাগান এবং ভালোভাবে মালিশ করুন।

চুলের যত্নে হেয়ার প্যাকের ব্যবহারঃ

ফুলের যত্নে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের হেয়ার প্যাক বেশ কার্যকরী। তবে সকল ধরনের হেয়ার প্যাক সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। সকল প্রোডাক্ট সবার জন্য শতভাগ কার্যকরী হয় না। যেটি আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত সেটি ব্যবহার করুন।
ডিমের হেয়ার প্যাকঃ
ডিমের সাথে দুধ, লেবুর রস এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করলে চুল সিল্কি এবং ঝরঝরে থাকে। হেয়ার প্যাক বানানোর জন্য একটি ডিমের সাথে এক কাপ দুধ, দুই টেবিল চামচ মত লেবুর রস এবং দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে ভালো করে ফেটে নিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি তুলে এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে মাখিয়ে মালিশ করুন। এরপর তোয়ালে দিয়ে ২০ মিনিট মতো মাথা মুড়িয়ে রাখো। তারপরে সাবান অথবা শ্যাম্পু দিয়ে চুল এবং মাথার ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটবে।
কলার হেয়ার মাস্ক বা কলা থেরাপিঃ
কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, প্রাকৃতিক তেল ও ভিটামিন রয়েছে। এ সকল উপাদান চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, 1 টেবিল চামচ নারিকেল তেল, এবং এক টেবিল চামচ মধু এর সাথে দুইটি কলা ভালোভাবে ফেটে পেস্ট বানিয়ে নিন। প্রয়োজনে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে প্যাক বানিয়ে নিন। প্যাকটি চুল এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করে কিছুক্ষণ পর প্রথম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কলার এই হেয়ার মাস্ক ব্যবহারের ফলে আপনার চুল সতেজ হবে, চুল ভেঙ্গে যাওয়া বা ঝড়ে পড়া থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়াও খুশকি দূর করে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কলার হেয়ার প্যাক বেশ কার্যকর।
টক দইয়ের হেয়ার মাস্কঃ
চুলের যত্ন নেয়ার জন্য টক দই এর ব্যবহার ব্যাপক। টক দই চুলকে কোমল এবং ঝকঝকে রাখতে সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ মধু এবং এক টেবিল চামচ আপেল ফিডার ভিনেগার এর সাথে এক কাপ টক দই মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটে পেস্ট বানিয়ে নিন। পেস্টটি মাথার চুল এবং ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ম্যাসাজ করে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবং সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
কারি পাতা ও নারকেল তেলের হেয়ার মাস্কঃ
যাদের চুল পূর্বে সুন্দর ঝকঝকে ছিল কিন্তু বর্তমানে নেই। তাদের চুলের হারিয়ে যাওয়া সেই সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে কারি পাতা ও নারিকেল তেলের ব্যবহার ফলদায়ক হবে। কারি পাতা এবং নারিকেল তেলের মিশ্রণ চুলকে কালো করে এবং অকালে চুল ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করে। ১০-১২ দশটি কারি পাতার সাথে দুই টেবিল চামচ নারিকেল তেল ভালোভাবে বেটে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি মাথার চুল এবং ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুইবার এইভাবে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য এই মিশ্রণটি ব্যাপক কার্যকর।
ক্যাস্টর অয়েলের মাস্কঃ
ক্যাস্টার ওয়েলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। এই প্রোটিন খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ক্যাস্টার ওয়েলে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান আছে। চুলের রুক্ষতা দূর এবং চুলকে আরো প্রাণবন্ত করতে সাহায্য করে। ক্যাস্টর অয়েলের সাথে ডিম মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে যাদের চুল কোঁকড়ানো এবং আঁকাবাঁকা তারা এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

এই প্যাকটি আপনার চুল সোজা করতেও সাহায্য করে। ত্বকের পিএইচ লেভেলেরঠিক রাখার পাশাপাশি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে এটি। ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই হাতে গ্লাভস পড়ে নিতে হবে। কয়েক ফোটা ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে মাথার চুল এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করুন। এরপর চিরুনি দিয়ে ভালোভাবে আঁচড়িয়ে নিন। এবং টাওয়েল বা হেয়ার ক্যাপ দিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে দুই ঘন্টা মত অপেক্ষা করুন। তারপর সাবান, শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
ভিটামিন ই ক্যাপের ব্যবহারঃ
চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে ভিটামিন ই ক্যাপ এর ব্যবহার সর্বজন স্বীকৃত। ভিটামিন ই তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমানোর সাথে সাথে চুল পড়া বন্ধ করে। ভিটামিন ই ক্যাপসুলে বিদ্যমান টকো ফেরোল চুলকে লম্বা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ক্যাপসুলে এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে।

যা মাথার স্ক্যাল্প বা ত্বককে সুস্থ রাখে। দুইটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর সাথে এক টেবিল চামচ আমন্ড তেল, এক টেবিল চামচ নারকেল তেল, এক চা-চামচ ক্যাস্টর অয়েল এবং কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে মাথায় মালিশ করুন। এইভাবে সারারাত রেখে দিন। পরের দিন সকালে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুইবার এই প্যাকটি ব্যবহার করুন।

চুলের যত্নে অন্যান্য পরিচর্যাঃ

পরিষ্কার পরিছন্ন তাই ঈমানের অঙ্গ। চুলকে ভালো এবং সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই চুল এবং মাথার ত্বককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শুধু বিভিন্ন ধরনের হেয়ার প্যাক বা খাবার খেলেই চুল এবং মাথার ত্বক ভালো থাকে না। এক্ষেত্রে প্রয়োজন নিয়মিত পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন থাকা।
ভালো ব্রাশ বা চিরুনি ব্যবহারঃ
চুলের যত্ন নেয়ার জন্য, চুলকে সুস্থ রাখতে হলে ভালো ব্রাশ বা চিরুনি ব্যবহার করা উচিত। ভালো চিরুনি ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল ঠিক থাকে।

চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়
যাদের অতিরিক্ত চুল পড়ে অথবা চুলে জট লাগে তারা মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। এর ফলে আপনার চুল পড়া কমে যাবে। চুলের যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে প্যাডল ব্রাশের চিরুনি, পিন ব্রাশ, কুইল ব্রাশ, বোর ব্রিশল ব্রাশের চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন।
নিয়মিত চুলে তেল দেওয়াঃ
চুলকে শাইনি এবং উজ্জ্বল রাখতে তেলের ব্যবহার অনস্বীকার্য। মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে খুশকি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। চুলকে সুস্থ রাখতে সপ্তাহে দুই তিন দিন নিয়মিত তেল ব্যবহার করুন। তবে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করবেন না। অতিরিক্ত তেলের ব্যবহার খুশকির কারণ হতে পারে।
ভালো বালিশ ব্যবহার করাঃ
চুল এবং চুলের ত্বক ভালো রাখতে হেয়ার এক্সপার্টরা সিল্কের বালিশ কাভার ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সুতি কাপড়ের বালিশের কাভারে শুইলে ঘর্ষণের ফলে চুল নষ্ট হতে পারে। সিল্ক এবং সার্টিনের বালিশ কাভার ব্যবহার করলে চুল এবং কাভারের মধ্যে ঘর্ষণ কম হয় ফলে চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
সঠিক উপায়ে বেণি করাঃ
চুলের যত্ন নেয়ার জন্য চুলের বেনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়
ঘুমানোর আগে শক্ত করে চুলের বেনি করবেন না। অনেকেই এই কাজটি করে থাকেন। যার ফলে চুল ভেঙ্গে যাওয়া বা ধরে পড়া আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া শক্ত করে বেনি করলে চুল  কোঁকড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চুল শুকানোঃ
ভেজা চুল শুকানোর ক্ষেত্রে সূর্যের আলো বা হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। প্রকৃতির বাতাস বা ফ্যানের বাতাসে চুল শুকান।
হেয়ার স্ট্রেইটনার বেশি বেশি ব্যবহার না করাঃ
যারা চুলকে সোজা করার জন্য হেয়ার স্ট্রেটনার ব্যবহার করেন তাদের চুল ঝরে পড়া বা ভেঙ্গে পরা সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ চুলকে সোজা করার জন্য সেখানে হিট দেওয়া হয়।
চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়
এই হিটের জন্য চুলের আর্দ্রতা কমে যায় ফলে চুল ঝরে পড়া বা ভেঙ্গে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। অথবা চুল শুষ্ক হয়ে চুলের মাথা ফেটে যেতে পারে। চুলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এগুলো ব্যবহারের ফলে অকালে চুল ঝরে যেতে পারে।
হেয়ার প্রোডাক্ট ঘন ঘন পরিবর্তন না করাঃ
চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘন ঘন হেয়ার প্রোডাক্ট পরিবর্তন না করাই উত্তম। চুলকে সুস্থ রাখার জন্য যেসব শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ও প্যাক উপকারী অথবা আপনার চুলে শুট করে সে সকল পণ্যই ব্যবহার করুন। তবে একটানা দীর্ঘদিন একই পণ্য ব্যবহার করবেন না। কারণ বয়স, আবহাওয়া, হরমোন ইত্যাদির সাথে ত্বক এবং চুলেরও পরিবর্তন হয়। মাঝে মাঝে অন্যান্য ব্রান্ডের শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে ঘন ঘন পরিবর্তন করবেন না। ঘনঘন পণ্য পরিবর্তনের ফলে আপনার চুলে কিউটিকল এর সমস্যা হতে পারে।
কন্ডিশনার ব্যবহার করাঃ
যাদের চুল লম্বা এবং ঘন কিন্তু চুল রুক্ষ, প্রাণহীন, শুষ্ক তারা কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। তবে কন্ডিশনার ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেবেন। শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর কন্ডিশনার লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুলের জন্য ভালো শ্যাম্পুঃ
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন রকমের শ্যাম্পু রয়েছে। এ ধরনের সকল শ্যাম্পু চুলের জন্য উপকারী নয়। এ ধরনের শ্যাম্পুতে সোডিয়াম ক্লোরাইড, পলিথিলিন গ্লাইকল, ডাইথেনোসেমিন অথবা ট্রাইএথোলেনিনের মতো ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে যেগুলো চুলের ক্ষতির অন্যতম কারণ। যে সকল শ্যাম্পুতে অ্যামোনিয়াম লরেথ সালফেট এবং সোডিয়াম লরেথ সালফেট রয়েছে সে সকল শ্যাম্পু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এছাড়াও এ সকল শ্যাম্পুতে প্যারাবিন, ফরমালডিহাইড নামক উপাদান থাকে যা চুলের জন্য ক্ষতিকর। প্রয়োজনে ভালো দামের ভালো ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। তবে কমদামী শ্যাম্পুগুলোতে এ ধরনের উপাদান কম থাকে।

রুক্ষ চুলের যত্নঃ

রুক্ষ এবং শুষ্ক চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে নারিকেল তেলের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপ এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন ব্যবহার করুন। চুলের রুক্ষতা দূর করার জন্য উপরের বর্ণিত বিভিন্ন প্যাক, থেরাপি এবং অন্যান্য উপকরণের মধ্যে থেকে আপনার যেটি পছন্দ হয় সেটি ব্যবহার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url