মিশরকে নীলনদের দান বলা হয়। (Egypt is the gift of the Nile)। প্রাক রাজবংশীয়দের
আদি বসবাস ছিলো নীলনদের উপত্যকার উত্তর অংশে। এই প্রাক রাজবংশীয়রা মূলত এই
অঞ্চলকে শাসন করতো।তাদের শাসনামল থেকে শুরু করে, খ্রিস্টপূর্ব ৩০ অব্দে রোম
কর্তৃক মিশর বিজয় পর্যন্ত সময়কালকে প্রাচীন মিশর বলা হয়ে থাকে। এবং এর ইতিহাসকে
প্রাচীন মিশরের ইতিহাস বা মিশরীয় ইতিহাসবলা হয়।
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দে মিশরের একটি অঞ্চল ছিলো উচ্চ এবং অন্যটি ছিলো
নিম্ন। এই দুইটি অঞ্চল একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে ফারাও রাজারা রাজত্ব শুরু করে। সেই
সময়ের ক্ষমতাধর ও শক্তিশালী গ্রীক সম্রাট আলেকজান্ডার মিশর দখল করেন। এই দখলের
মাধ্যমেই মিশরে মেসিডোনীয় রাজত্বের সূত্রপাত ঘটে।
সুচিপত্রঃ- মিশরীয় সভ্যতা - মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাস - প্রাচীন মিশরীয়
সভ্যতা
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা (Ancient Civilization of Egypt)
ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অর্ধেক মিশরে নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। মিশরের
নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নীলনদের উপত্যকায়। তাই বিখ্যাত গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডটাস
মিশরকে বলেছেন “নীলনদের দান” (Gift of the Nile)। ৫০০০-৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
পর্যন্ত সময়কে মিশরের প্রাক-রাজবংশীয় যুগ বলা হয়। এ সময় মিশর কোন একক রাষ্ট্র
ছিল না।
সম্পূর্ণ মিশর ছোট ছোট নগর রাষ্ট্রের বিভক্ত ছিল। এ সকল ছোট ছোট নগর
রাষ্ট্রগুলোকে “নোমা’ বলা হতো। 'মেনেস' নামের এক রাজা ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে
সমগ্র মিশরকে একত্রিত করে একটি নগর রাষ্ট্রে পরিণত করেন। এবং দক্ষিণ মিশরের
'মেম্ফিস' কে মিশরের রাজধানী করা হয়। এভাবে মিশরে রাজবংশের শাসন শুরু হয়।
মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাস
প্রাচীনকাল থেকে মিশরীয়দের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মূল হাতিয়ার হল নীলনদ।
মিশরের এই অঞ্চলের অধিবাসীদের কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নতি এবং কেন্দ্রীভূত সমাজ
ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে নীলনদের উর্বর প্লাবন সমভূমি। যা মানব সভ্যতার
ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ধারণা করা হয়, প্লেইস্টোসিন যুগের শেষের দিকে অর্থাৎ বারো লক্ষ বছর আগে আধুনিক
শিকারি-সংগ্রাহক মানুষেরা এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছিল। প্রধানত এর কারণে এই
অঞ্চলের অধিবাসীরা নীলনদকে কেন্দ্র করে ঘন জনবসতি গড়ে তুলেছিল।
ধর্ম
ফারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ বহুদেবতার পরিবর্তে একমাত্র সূর্যদেবতার আরাধনার কথা
প্রচার করেন। সূর্যদেবতার নাম দেওয়া হয় 'এটন'। দেবতার নামের সাথে মিল রেখে তিনি
নিজের নাম রাখেন 'ইখনাটন'। এভাবে ইখনাটন সভ্যতার ইতিহাসে সর্বপ্রথম ঈশ্বরের ধারণা
দেন।
স্থাপত্য ও ভাস্কর্য
প্রাচীন মিশরের রাজাদের বলা হত 'ফারাও' (Pharaoh)। মিশরীয়রা মৃত্যুর পর আরেকটি
জীবনের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসী ছিল। সে জীবনেও রাজা হবেন ফারাও। ফারাও রাজাদের
মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য তৈরি করা হয় পিরামিড। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন
কীর্তিস্তস্থ পিরামিড ।
মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিড হচ্ছে ফারাও খুফুর পিরামিড। খুফুর পিরামিড গড়ে
উঠেছিল তের একর জায়গা জুড়ে এর উচ্চতা ছিল প্রায় সাড়ে চারশত ফুট।
মিশরীয় ভাস্করদের সবচেয়ে বড় গৌরব ‘স্ফিংস' তৈরিতে । বহুখণ্ড পাথরের গায়ে
ফুটিয়ে তোলা হতো এ ভাস্কর্য। স্ফিংসের দেহ সিংহের আকৃতির, আর মাথা ছিল
ফারাওয়ের। ফারাওদের আভিজাত্য শক্তির প্রতীক ছিল এ মূর্তি।
ফারাও তুতেনখামেন খ্রিস্টপূর্ব ১৩৩৩ ১৩২৪ অব্দে মিশরে রাজত্ব করেন। ১৯২২ সালে
হাওয়ার্ড কার্টার তুতেনখামেনে সমাধি আবিষ্কার করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলেন।
লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন
মিশরীয়রা একটি লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে প্রথম দিকে ছবি এঁকে এঁকে মিশরীয়রা মনের
ভাব প্রকাশ করত। এক একটি ছবি ছিল এক একটি অক্ষরের প্রতীক। অক্ষরভিত্তিক মিশরীয় এ
চিত্রলিপিকে বলা হয় 'হায়ারোগ্লিফিক' (Hieroglyphics) গ্রিক শব্দ
“হায়ারোগ্লিফিক' অর্থ পবিত্রলিপি।
'প্যাপিরাস' নামক এক ধরনের নল গাছের বাকল দিয়ে তারা সাদা রঙের কাগজও তৈরি করত।
বিজ্ঞান
মিশরীয়রা সর্বপ্রথম ১২ মাসে ১ বছর, ৩০ দিনে ১ মাস এই গণনারীতি চালু করেন। যেহেতু
ফারাও মৃত্যুর পর পরকালে রাজা হবেন সেহেতু তাঁর মৃতদেহকে পচন থেকে রক্ষার জন্য
মিশরীয় বিজ্ঞানীরা মমি তৈরি করতে শেখেন।
সভ্যতার পতন
মিশরীয় সভ্যতার বিশতম রাজবংশের শেষ সম্রাট ছি লেন একাদশ রামসিস। তার সময়ে মিশরে
গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়।
তারপর ১০৮০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মিশরের থিবস শহরের প্রধান ধর্মযাজক মিশরের সিংহাসন
দখল করে নেয়। ৫২৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পারস্য রাজশক্তি মিশর দখল করে এবং এর মধ্য
দিয়ে মিশরীয় সভ্যতার অবসান ঘটে।
৩৩২ খ্রীস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার মিশর অধিকার করলে, মিশরে টলেমি নামক রাজ বংশ
প্রতিষ্ঠিত হয়৷
সচরাচর জিজ্ঞাসা
মিশরীয় সভ্যতা বলতে কি বুঝ?
মিশরীয় সভ্যতা প্রধানত উত্তর আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের একটি প্রাচীন সভ্যতা।
নীল নদের উপত্যকার নিম্নভূমি অঞ্চলকে কন্দ্রে করে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫০ অব্দে প্রথম ফারাও রাজার অধীনে উচ্চ ও নিম্ন মিশরকে
একীকরণের মাধ্যমে এই সভ্যতা এক সুসংহত রূপ লাভ করে।
মিশরীয় সভ্যতার সূর্য অস্তমিত হয় কত খ্রিস্টপূর্বাব্দে?
৫২৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পারস্য কতৃক মিশর দখল করে নেয়র মাধ্যরেম প্রাচীন
মিশরের সভ্যতার সূর্য অস্তমিত হয় ।
মিশরের বয়স কত বছর?
সঠিকভাবে মিশরের বয়স নিরুপন করা সম্ভব নয়। তবে আনুমানিক ৩০০০
খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরের ঊর্ধ্ব ও নিম্ন অঞ্চলটি একীভূত হয়ে মিশরে জন্ম
হয়। মিশরের ইতিহাসের প্রথম ২৫০০ বছরের প্রায় পুরো সময়কালটাই (২৯২৫
খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত) স্থানীয় রাজা ও রাণীরা
দেশটি শাসন করেন।
মিশরের অপর নাম কি?
মিশরের প্রাচীন নাম কেমেট ( Kemet)। ‘ Kemet’ অর্থ কালো মাটি। মরুভূমির দেশ
মিশরকে নীল নদের দান বলা হয়, কারণ প্রতি বছর বন্যায় নদীর দুই কূল ছাপিয়ে
মিশরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হত।
মিশরের কতটি পিরামিড রয়েছে?
মিশরে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৭৫টি পিরামিড রয়েছে। সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষনীয়
পিরামিডটি হচ্ছে গিজা'র পিরামিড যা খুফু'র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url