দুর্যোগ বলতে সাধারণভাবে মানুষের জীবন, সমাজ ও পরিবেশে সৃষ্ট অস্বাভাবিক অবস্থাকে
বুঝায় যা মানুষের ক্ষতিসাধন করে। দুর্যোগ কখনো হঠাৎ সৃষ্টি হয় আবার কখনো কখনো
ধীরে ধীরে এক বা একাধিক ঘটনা দুর্যোগের সৃষ্টি করে।
আবার একটি দুর্যোগ আরেকটি দুর্যোগের সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- ভূমিকম্প থেকে
সুনামির সৃষ্টি হয়, সুনামি থেকে বন্যা এবং বন্যা থেকে লবণাক্ততা।
সূচিপত্রঃ- দুর্যোগ কি-প্রকৃতি দুর্যোগের ধরণ ও প্রকৃতি
প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে একটি গুরুতর সমস্যা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ স্বল্প মেয়াদী
কিংবা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘটতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ব্যাপক মানবিক,
বস্তুগত, অর্থনৈতিক বা পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এই ক্ষতি কোন সমাজ বা
সম্প্রদায়ের পক্ষে নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করার মাধ্যমেও মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে
পড়ে।
দুর্যোগের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মৃত্যুর হার শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল
দেশগুলোতে ৯৫% এরও বেশি মৃত্যু হয় এবং প্রাকৃতিক বিপত্তির কারণে ২০ গুণ বেশি
(জিডিপির শতাংশ হিসাবে) ক্ষতি হয়।
দুর্যোগের ধরণ
(ক) প্রাকৃতিক দুর্যোগ (Natural disaster):
প্রাকৃতিকভাবে যে দুর্যোগ সৃষ্টি হয় তাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হয়। এ ধরনের
দুর্যোগের পিছনে মানুষের কোন অংশগ্রহণ বা হস্তক্ষেপ থাকে না। যেমন- ভূমিকম্প,
ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, শৈত্যপ্রবাহ প্রভৃতি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপকভাবে জীবন
ও সম্পদহানি ঘটায়।
(খ) মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ (Manmade disaster):
মানুষের অবহেলা, ভুলভ্রান্তি বা কোন অভিপ্রায়ের ফলে যে দুর্যোগের সৃষ্টি হয়
তাকে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ বলা হয়। যেমন- যুদ্ধ, রাসায়নিক দূষণ, খাদ্যে
বিষক্রিয়া, অগ্নিকাণ্ড প্রভৃতি।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধরণ ও প্রকৃতিঃ
বিশ্ববাসী প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। বিশ্বে যেসব প্রাকৃতিক
দুর্যোগের সৃষ্টি হয় সেগুলো হল: ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, আর্সেনিক,
লবণাক্ততা, নদীভাঙন, হিমবাহ, ভূমিধস, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, সৌর বিক্ষেপণ,
সুনামি, হিমঝড়, ঊষ্ণ প্রবাহ, দাবানল প্রভৃতি।
ঘূর্ণিঝড় (Cyclone):
পৃথিবীতে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগটি সবচেয়ে বেশি আঘাত হানে, সেটি হলো ঘূর্ণিঝড়।
ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রে উৎপত্তি লাভ করায় উপকূলবর্তী দেশ বা অঞ্চলসমূহে সবচেয়ে বেশি
আঘাত হানে।
প্রশান্ত মহাসাগর, উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে
ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে।
নিরক্ষরেখার কাছাকাছি উষ্ণ ও শীতল বায়ুর বিপরীতমুখী প্রবাহ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের
সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে ২৮ দিন পর্যন্ত ব্যাপ্তিলাভ
করে। বাংলাদেশে ১৯৭০ সালে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক
মানুষের প্রাণহানি ঘটায়। বিশ্বে সংঘটিত মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়সমূহের মধ্যে আইভ্যান
(১৯৯৭), বিটা (১৯৭৮), ডারমি (২০০০), লেবার ডে (১৯৩৫), ডামেই (২০০১), চার্লি
(২০০৪), ক্যাটরিনা (২০০৫), ফেলেক্সি (২০০৭) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশি আঘাত হানে।
ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন স্কেল ব্যবহার করা হয়, তন্মধ্যে
স্যাফির সিম্পসনের স্কেলটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। করিওলিস শক্তি ন্যূনতম থাকায়
নিরক্ষরেখার ০ ডিগ্রি থেকে ৫ ডিগ্রির মধ্যে কোন ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায়
না।নিরক্ষরেখার ১০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড়
আঘাত হানলে দুর্যোগের সৃষ্টি হলেও এটি পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে।
গড়ে পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, এর অধিকাংশই সমুদ্রে
মিলিয়ে যায়। বায়ুমণ্ডলের নিম্ন ও মধ্যস্তরে অধিক আর্দ্রতা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টিতে
সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কর্কট ও মকর ক্রান্তিরেখার কাছাকাছি সমুদ্রগুলিতে
গ্রীষ্মকালে বা গ্রীষ্মের শেষে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, অন্য কোথাও হয় না।
বন্যা (Flood):
কোনো অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি হলে নদ-নদী বা ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাব্যতা হারিয়ে ফেললে
অতিরিক্ত পানি সমুদ্রে গিয়ে নামার আগেই নদ-নদী কিংবা ড্রেন উপচে আশেপাশের
স্থলভাগ প্লাবিত করে ফেললে তাকে বন্যা বলে।
বিশ্বে নীল, হোয়াংহো, ইয়াংসি কিয়াং, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি অববাহিকার
বন্যা সংঘটিত হয় বেশি। বাংলাদেশে ১৯৭০, ১৯৮৮, ২০০৪ ও ২০০৭ সালে সাম্প্রতিক
সময়ের উল্লেখযোগ্য বন্যা সংঘটিত হয়।
খরা (Drought):
সাধারণত কৃষি ভূমিতে পানির অপর্যাপ্ত সরবরাহ থেকে খরার সৃষ্টি হয়। কৃষি ভূমিতে
দীর্ঘ সময় ধরে পানি সরবরাহের অপ্রতুলতা সৃষ্টি হলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফসল
উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়, যা সমাজে অপুষ্টি, দারিদ্র্য, রোগব্যাধি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত
প্রভৃতি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে দুর্যোগের সূত্রপাত ঘটায়।
বিশ্বের সর্বত্র খরা নামক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। তবে আফ্রিকার দেশসমূহে
এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
খরার কারণ হিসেবে সাধারণভাবে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবকে দায়ী করা হয়। তবে
বৃষ্টিপাত ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তির স্বল্পতা, অতিরিক্ত পতচারণ,
ভূগর্ভ হতে অতিরিক্ত পানি উত্তোলন, বন ধ্বংসকরণসহ বিভিন্ন বিষয়কে দায়ী করা হয়।
ভূমিকম্প (Earthquake):
ভূ-অভ্যন্তরের কম্পন ছাড়াও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, খনি বিস্ফোরণ,
আণবিক বিস্ফোরণ প্রভৃতি কারণেও ভূমিকম্প হয়ে থাকে। তবে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট
ভূমিকম্পে ধ্বংসের মাত্রা সর্বদা বেশি হয়। পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ভূমিকম্প সংঘটিত
হয়। নেপালে ২৫ এপ্রিল, ২০১৫ সালে ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে
প্রায় নয় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
বিশ্বে এ যাবতকালের সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে পর্তুগালের লিসবনে
১৭৭৫ সালে। রিখটার স্কেলে এর কম্পন মাত্রা ছিল ৮.৮। একবিংশ শতাব্দীতে সংঘটিত
প্রধান প্রধান ভূমিকম্পনগুলো হলো এল সালভাদর (২০০১), হিন্দুকুশ (২০০২), বাম
(২০০৩), সুমাত্রা আন্দামান (২০০৪), কাশ্মীর (২০০৫), জাভা (২০০৬), সলোমন
দ্বীপপুঞ্জ (২০০৭), গুয়েতেমালা (২০০৭), নেপাল (২০১৫) প্রভৃতি। বাংলাদেশে ১৮৯৭
সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
আর্সেনিক (Arsenic):
আর্সেনিক হল একটি ধাতব মৌল যা পানিতে দ্রবীভূত থাকলে সেই পানি ব্যবহার করা
বিপজ্জনক। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, সুইডেন,
ভিয়েতনাম, চীনসহ বিশ্বের অনেক দেশে আর্সেনিক একটি অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
পানি স্তর নিচে নেমে গেলে পানির সাথে আর্সেনিক যুক্ত হয়ে দূষণ ঘটায়। আর্সেনিক
প্রকৃতিতে পাওয়া যায় । আর্সেনিকের তিনটি রূপ রয়েছে। যথাঃ গামা, বিটা এবং আলফা।
বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬১টিতে আর্সেনিক দূষণের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মতে, “পানিতে নির্ধারিত মান অনুযায়ী ০.০১ পিপিএম
আর্সেনিকের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য। তবে যখন কোন এলাকার পানিতে ০.০১ পিপিএম এর চেয়ে
বেশি পরিমাণে আর্সেনিক থাকে তখন সেই এলাকার পানিকে আর্সেনিক দূষণযুক্ত বলে।” WHO
এর মতে আর্সেনিকের গ্রহণযোগ্য মাত্রা প্রতি লিটারে .০১ মি. গ্রা. কিন্তু
বাংলাদেশে রয়েছে ০.০৫ মি.।
লবণাক্ততা (Salinity):
সাধারণভাবে মাটি ও পানিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে
মাটি বা পানির লবণাক্ততা বলে । লবণাক্ততার ফলে ভূমি উর্বরতা হারায়। ফলে ফসল
উৎপাদন একদিকে যেমন সম্ভব হয় না; তেমনি লবণাক্ততা দীর্ঘমেয়াদি ফসল যেমন আম,
জাম, নারিকেল, মেহগনি প্রভৃতি ফলবান বৃক্ষের মৃত্যু ঘটায় । গবাদি পশু ঘাস ও
লতাপাতা না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়াও মিঠা পানিতে লবণাক্ততার ফলে মৎস্য ও অন্যান্য সেচ নির্ভর ফসল উৎপাদন
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্বোপরি মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হয়। সমুদ্র তীরবর্তী
ভূ-ভাগের দুই থেকে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণভাবে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহে লবণাক্ত অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা
দিয়েছে। সমুদ্রের জোয়ারের পানি উপকূলবর্তী ভূ-ভাগে প্রবেশ করে।
নদী ভাঙন (Riverbank Erosion):
নদী ভাঙন বলতে নদীর তীর বা পাড়ের ভাঙনকে বোঝায়। এর ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, কৃষি,
ভূমি, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের স্বপ্ন, আশা-ভরসা
সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়, মানুষ হয়ে পড়ে নিঃস্ব, অসহায়।
মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবন এবং পরিবেশের উপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে।
সাধারণত বর্ষা মৌসুমে নদীর তীর নরম হয়ে যায় এবং নদীতে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের
সৃষ্টি হয়। এ সময়ে নদীতে পলি জমা, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, অধিক হারে নৌযান চলাচল
প্রভৃতি কারণে নদী ভাঙনের ঘটনা ঘটে।
হিমবাহ (Avalanche):
সাধারণত পার্বত্যময় অঞ্চলে হিমবাহ নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়। পর্বতসমূহ
কোটি কোটি টন বরফ ধারণ করে। বরফ জমতে জমতে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছায় যখন
পর্বতসমূহ অতিরিক্ত বরফ ধারণ করতে পারে না।
ফলে বরফ পর্বত প্রাচীর বেয়ে নিচে নেমে আসে এবং দুর্যোগ সৃষ্টি করে। এছাড়া বরফের
জমাট বাঁধা প্রক্রিয়ার দুর্বলতা থেকেও হিমবাহের সৃষ্টি হয় ।
হিমবাহের বরফ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বাতাসের সাথে মিশে ধূলি মেঘের সৃষ্টি করে। ১৯৯৯
সালে ফ্রান্সে হিমবাহের সৃষ্টি হয়, যা পর্বতের প্রাচীর ধরে ঘণ্টায় ১০০
কিলোমিটার গতিবেগে প্রবাহিত হয় এবং ১ লক্ষ টন বরফ এভাবে নিচে নেমে আসে।হিমবাহের
গতি ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি হয়ে থাকে এবং ১ কোটি টন পর্যন্ত বরফের প্রবাহ
সৃষ্টি করতে পারে।
ভূমিধস (Land Slide):
সাধারণত উচ্চভূমি নিম্ন ভূমির দিকে ধসে পড়ে যে দুর্যোগের সৃষ্টি করে তাকেই
ভূমিধস বলে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, উচ্চভূমির মাটি কর্তন প্রভৃতি কারণে ভূমিধস সৃষ্টি
হয়। এর ফলে দ্রুতগতিতে উচ্চভূমির মাটি নিম্নভূমিতে চলে আসে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট,
বনভূমি ভূমিধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভূমিধস প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের মধ্যে অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে ধ্বংসাত্মক
ক্রিয়াকলাপ সংঘটিত করে। বাংলাদেশে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনা
ঘটে। এতে বহুসংখ্যক মানুষের মৃত্যু এবং ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আগ্নেগিরির অগ্ন্যুৎপাত (Volcanic cruption):
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মধ্য দিয়ে ভূ-ত্বকের অভ্যন্তর ভাগের উত্তপ্ত ও গলিত
লাভা এবং বিভিন্ন ধরনের গ্যাস বাইরে বের হয়ে আসে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের
ফলে তাৎক্ষণিকভাবে ঘরবাড়ি, বনভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ভস্মীভূত হয়ে যায়। উত্তপ্ত
ও গলিত লাভা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং এ থেকে জীবন ও সম্পদ
ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অগ্ন্যুৎপাত থেকে জলীয় বাষ্প (H2O), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), সালফার
ডাই-অক্সাইড (SO2), হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCI), হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HF) এবং ছাই
নিঃসৃত হয়। এ সমস্ত গ্যাস ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৬-৩২ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত ছড়িয়ে
পড়ে। বিশ্বে আগ্নেয়গিরিসমূহের মধ্যে আতাসিনাও করিয়াকঙ্কি (রাশিয়া),
ভিসুভিয়াস (ইতালি), মাননোয়া (যুক্তরাষ্ট্র), প্যালেরা (কলম্বিয়া), সাকুরাজিমা
(জাপান), মিরেপি (ইন্দোনেশিয়া), সানতরিনি (গ্রিস) প্রভৃতি বর্তমানে সক্রিয়।
সৌর বিক্ষেপণ (Solar Flare ):
সূর্য একটি নক্ষত্র হিসেবে বিপুল শক্তির অধিকারী। সূর্যের তাপমাত্রা অতিরিক্ত
বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন ধরনের রশ্মি নির্গত হয়। যেমন: এ (A), বি (B), সি (C), এম
(M) এবং এক্স (X)।
এসব রশ্মির মধ্যে এম এবং এক্স রশ্মি সবচেয়ে ক্ষতিকর, যা পৃথিবীপৃষ্ঠের কাছাকাছি
পৌঁছায় এবং পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। বিগত ৫০০ বছরের মধ্যে
সবচেয়ে ব্যাপক সৌর বিক্ষেপণের সৃষ্টি হয়- ১৮৫৯ সালে।
হিমঝড় (Blizzard):
হিমঝড় একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে শীতপ্রধান দেশসমূহে আঘাত হানে। হিমঝড়ে
তাপমাত্রা থাকে খুব কম, বাতাসের গতিবেগ থাকে বেশি এবং তুষার প্রবাহ সৃষ্টি করে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হিমঝড় সৃষ্টি হয়। কানাডার
হিমঝড় বলতে বোঝায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বা তার অধিক;
বায়ুমণ্ডলে ২৫° সেলসিয়াস (১৩° ফারেনহাইড) তাপমাত্রা থাকতে হবে এবং সৃষ্ট ঝড়
ন্যূনতম চার ঘণ্টা স্থায়ী হবে।
১৮৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত হিমঝড়ের কবলে ৪০০ ব্যক্তি হারায় এবং ২০০ জাহাজ
ডুবে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৯৬, ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে
উল্লেখযোগ্য হিমঝড় সংঘটিত হয়।
উষ্ণ প্রবাহ (Heat wave):
সাধারণত গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে উষ্ণ প্রবাহ বলা হয়।
সাধারণভাবে উষ্ণ প্রবাহ বলতে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বুঝায়, যা মানুষকে
অস্থিতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করে এবং এ অবস্থা ৫ দিন বা তার বেশি সময় বিদ্যমান
থাকে।
২০০৩ সালে সৃষ্ট উষ্ণ প্রবাহের ফলে ইউরোপে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উষ্ণ প্রবাহের সৃষ্টি হয়েছে।
বন ধ্বংসকরণ (Deforestation):
বন ধ্বংসকরণ মূলত একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের বনভূমির
পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। বনভূমির গাছ কেটে এর আয়তন কমিয়ে আনাকে বলা হয় বন
ধ্বংসকরণ। এর ফলে তাপমাত্রা বেড়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটছে। এ দুর্যোগ থেকে বাঁচতে
করণীয় —
বৃক্ষনিধন ও বনভূমি ধ্বংস রোধ করতে হবে।
বৃক্ষরোপণ তথা বনায়ন বৃদ্ধি করতে হবে।
মরুকরণ (Desertification):
সাধারণভাবে মরুকরণ বলতে বুঝায় চাষযোগ্য ভূমি শুষ্ক ও অনুর্বর ভূমিতে পরিণত
হওয়াকে। মানুষের কর্মকাণ্ডকেও এর জন্য দায়ী করা হয়। মরুকরণ একটি দীর্ঘমেয়াদি
প্রক্রিয়ার ফসল।
দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতিতে বিরাজমান বিরূপ অবস্থায় মরুকরণ প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এ প্রক্রিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি করে।
সুনামি (Tsunami):
সমুদ্র তলদেশে ভূ-কম্পনের ফলে উপরের জলভাগে প্রবল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়, একে সুনামি
বলে। কোনো বিশাল জলক্ষেত্রে, বিশেষ করে সমুদ্রে ভূমিকম্প সংঘটিত হলে সেখানটায়
ভুত্বকে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়, তার প্রভাবে উপরস্থিত জলক্ষেত্র ফুঁসে উঠে বিপুল
ঢেউয়ের সৃষ্টি করে। এই ঢেউ প্রবল বিক্রমে স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসে এবং
স্থলভাগে আছড়ে পড়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটায় । 'সুনামি' জাপানি শব্দ, এর অর্থ
ঢেউ।
টর্নেডোঃ
'টর্নেডো' শব্দটি বাংলা ভাষায় এসেছে ইংরেজি ভাষার tornado শব্দের মাধ্যমে, এই
শব্দটা এসেছে স্পেনিয় অপভ্রংশ 'ব্রোনাদা' থেকে যার অর্থ 'বজ্রসম্পন্ন ঝড়'।
টর্নেডোর আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি দৃশ্যমান
ঘনীভূত ফানেল আকৃতির হয়, যার চিকন অংশটি ভূ-পৃষ্ঠকে স্পর্শ করে এবং এটি প্রায়শই
বর্ষের মেঘ দ্বারা ঘিরে থাকে। টর্নেডো হল প্রচন্ডবেগে ঘূর্ণনরত একটি বায়ুস্তয়,
যা ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে একটি কিউমুলিফর্ম মেঘ থেকে ঝুলন্ত বা এর নিচে থাকে এবং
প্রায়শই একটি ফানেলাকৃতির মেঘ হিসেবে দৃশ্যমান থাকে।
সাইক্লোনঃ
সাইক্লোন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ কাইক্লোস (kyklos) থেকে যার অর্থ বৃত্ত বা
চাকা। এটা অনেক সময় সাপের বৃত্তাকার কুগুলী বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়। ১৮৪৮
খ্রিস্টাব্দে হেনরি পিডিংটন তার 'সেইলর'স হর্ন বুক ফর দি ল'অফ স্টর্মস' বইতে
প্রথম সাইক্লোন শব্দটি ব্যবহার করেন।
উষ্ণ মন্ডলের যে সকল সাগর অক্ষাংশের ৩০ ডিগ্রি উত্তরে ও অক্ষাংশের ৩০ ডিগ্রি
দক্ষিণে অবস্থিত, অর্থাৎ যেসব সাগর ৩০ ডিগ্রি উত্তর ও ৩০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে
অবস্থিত, সেসব সাগরেই বেশির ভাগ ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম হয়।বাংলাদেশে উষ্ণমণ্ডলীয়
অঞ্চল বলে এখানে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন' বেশি হয় এবং এই প্রকারের সাইক্লোন খুবই
ক্ষতিকারক।
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সাইক্লোন বিভিন্ন নামে পরিচিত
দেশের নাম
দুর্যোগের
বাংলাদেশ ও ভারতীয় অঞ্চলে
সাইকোন
জাপান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে
টাইফুন
ফিলিপাইন
বাগুইড বা বোগিও
অস্ট্রেলিয়ায় আমেরিকা ও আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে
হ্যারিকেন
ক্যারাবিয়ান অঞ্চল
জোয়ান
হারিকেনঃ
আটলান্টিক মহাসাগর এলাকা তথা আমেরিকার আশেপাশে ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ যখন
ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশি হয়, তখন জনগণকে এর ভয়াবহতা বুঝাতে হারিকেন শব্দটি
ব্যবহার করা হয়। মায়া দেবতা হুরাকান- যাকে বলা হত ঝড়দের দেবতা, তার নাম থেকেই
হারিকেন শব্দটি এসেছে।
টাইফুনঃ
প্রশান্ত মহাসাগর এলাকা তথা চীন, জাপানের আশেপাশে হারিকেন- এর পরিবর্তে টাইফুন
শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ধারণা করা হয় যে টাইফুন শব্দটি চীনা শব্দ টাই-ফেং থেকে
এসেছে যার অর্থ প্রচণ্ড বাতাস। অনেকে মনে করেন ফার্সি বা আরবি শব্দ তুফান থেকেও
টাইফুনু শব্দটি আসতে পারে।
সাইক্লোন, হারিকেন, টাইফুন অঞ্চলভেদে ঘূর্ণিঝড়েরই ভিন্ন ভিন্ন নাম।
সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোনও বলা হয়।
ঝড়ঃ
কোনো স্থানের বায়ুমণ্ডলে কোনো কারণে বায়ু গরম হয়ে গেলে তা উপরে উঠে যায় এবং
সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে আশপাশের বাতাস তীব্রবেগে ছুটতে শুরু করে। প্রচণ্ড গরমের
সময় কোনো স্থানে এরকম ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। সাধারণত এরকম ঝড়ের সাথে অনুষঙ্গ
হিসেবে উপস্থিত হয় স্থলঘূর্ণিঝড় বা টর্নেডো কিংবা বজ্রবিদ্যুৎ।
কালবৈশাখী ঝড়ঃ
উত্তর গোলার্ধের দেশ বাংলাদেশে সাধারণত বাংলা বৈশাখ মাসে (এপ্রিল-মে মাসে)
প্রচণ্ড গরমের সময় হঠাৎ করেই এ জাতীয় ঝড় হতে দেখা যায়, যার স্থানীয় নাম
কালবৈশাখী।
গ্রীষ্মকালের শেষ ভাগ এবং বর্ষাকালের প্রথম ভাগে অর্থাৎ প্রাকমৌসুমী বায়ু ঋতুতে
বাংলাদেশে কালবৈশাখী ঝড় হয়।
কালবৈশাখী ঝড়ের বৈশিষ্ট্যঃ-
এই ঝড় শুরু হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে বয়ে যায়।
এই ঝড় সবসময়ই বজ্রপাত এবং বৃষ্টিসমেত সংঘটিত হয়ে থাকে।
এই ঝড়ের সাথে শিলাবৃষ্টি ঘটে থাকে।
বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে সাধারণত এই ঝড় শেষ বিকেলে হয়ে থাকে, কারণ সাধারণত
ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ বায়ুমণ্ডলে ঐসময় বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়তে শুরু
করে।
সন্ধ্যাকালে এই ঝড়ের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
এই ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০-৬০ কিলোমিটার হয়ে থাকে, তবে ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে
ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারও অতিক্রম করতে পারে।
অন্যান্য গ্রহে ঘূর্ণিঝড়ঃ
ঘূর্ণিঝড় শুধু পৃথিবীতেই হয় না। এই জাতীয় ঝড় Jovian গ্রহগুলোতেও দেখা যায়।
যেমন- নেপচুনের ছোট ডার্ক স্পট, যা জাদুকরের চোখ (Wizard's Eye) হিসেবেও পরিচিত।
এই ডার্ক স্পটের ব্যাস সাধারণত গ্রেট ডার্ক স্পটের এক তৃতীয়াংশ। এটি দেখতে একটি
চোখের মত, তাই এটার নাম 'জাদুকরের চোখ'। মঙ্গলেও সাইকোনিক ঝড় দেখা যায় যার নাম
গ্রেট রেড স্পট।
সিডরঃ
সিডর (Sidr) সিংহলি শব্দ, যার অর্থ 'চোখ'। ঘূর্ণিঝড় সিডর (মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়
সিডর, ইংরেজিতে Very Severe Cyclonic Storm Sidr) হচ্ছে ২০০৭ সালে বঙ্গোপসাগর
এলাকায় সৃষ্ট একটি ঘূর্ণিঝড়। ২০০৭ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট
ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে এটি ৪র্থ নামকৃত ঘূর্ণিঝড়। এটির আরেকটি নাম ট্রপিক্যাল
সাইক্লোন ০৬বি (Tropical Cyclone 068)।
সিডরের বৈশিষ্ট্যঃ-
সিডর আঘাত হানে- ১৫ নভেম্বর, ২০০৭।
সিডরের বেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিমি/ঘণ্টা এবং ৩০৫ কিমি/ঘন্টা ।
সাফির-সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী একে ক্যাটেগরি-৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় আখ্যা দেয়া
হয়।
এ দুর্যোগে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়।
এল নিনোঃ
'এল নিনো' স্প্যানিশ শব্দ যার অর্থ 'বালক' এবং নির্দেশ করা হয় 'যীশুর ছেলে' বলে।
এল নিনো- হচ্ছে বায়ুমণ্ডলীয় এবং গ্রীষ্ম অঞ্চলের সমুদ্রগুলোর মাঝে পর্যায়বৃত্ত
পরিবর্তন। লা-নিনা: 'লা নিনা' স্প্যানিশ শব্দটির অর্থ হচ্ছে 'বালিকা'। লা-নিনা
হলো এল নিনোর সম্পূর্ণ বিপরীত।
লা-নিনাতে পেরু এবং চিলির পূর্ব উপকূলে মৎস্য প্রজাতি বিপুল পরিমাণে পাওয়া যায়।
কারণ, সেখানে সমুদ্রের তাপমাত্রা জলজ প্রাণীর জীবন ধারণের অনুকূলে থাকে । এল নিনো
হচ্ছে পর্যাবৃত্তের উষ্ণ পর্যায়, আর লা নিনা হচ্ছে শীতল পর্যায়।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
দুর্যোগ কি বা দুর্যোগ কাকে বলে?
দুর্যোগ বলতে সাধারণভাবে মানুষের জীবন, সমাজ ও পরিবেশে সৃষ্ট অস্বাভাবিক
অবস্থাকে বুঝায় যা মানুষের ক্ষতিসাধন করে। দুর্যোগ কখনো হঠাৎ সৃষ্টি হয়
আবার কখনো কখনো ধীরে ধীরে এক বা একাধিক ঘটনা দুর্যোগের সৃষ্টি করে। আবার একটি
দুর্যোগ আরেকটি দুর্যোগের সৃষ্টি করতে পারে।
দুর্যোগ কত প্রকার ও কি কি?
দুর্যোগ প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ (ক) প্রাকৃতিক দুর্যোগ (Natural disaster)
(খ) মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ (Manmade disaster) এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের প্রকৃতিক
দুর্যোগ রয়েছে। যেমনঃ
ঘূর্ণিঝড় ( Cyclone)
বন্যা (Flood)
খরা (Drought)
ভূমিকম্প (Earthquake)
নদী ভাঙন (Riverbank Erosion)
হিমবাহ (Avalanche)
ভূমিধস (Land Slide)
আগ্নেগিরির অগ্ন্যুৎপাত (Volcanic cruption)
সৌর বিক্ষেপণ (Solar Flare )
হিমঝড় (Blizzard)
উষ্ণ প্রবাহ (Heat wave)
বন ধ্বংসকরণ (Deforestation)
কালবৈশাখী ঝড় এল নিনো (El Nino)
জলোচ্ছ্বাস আর্সেনিক দূষণ সিঙ্কহোল ইত্যাদি।
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ কি?
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রধানত প্রাকৃতিক কারণে ঘটে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের
কারণ একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ুগত প্রভাব, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন তথা
সামগ্রিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান,
জলবায়ু, বায়ু প্রবাহ, ভূমির গঠন, নদী-নালা ইত্যাদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের
কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশের প্রধান দুর্যোগ কি?
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক ও বৃষ্টিবহুল দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক
দুর্যোগের মধ্যে প্রধান হলো বন্যা। এ দেশের মানুষের কাছে বন্যা যেমন ভয়াবহ
তেমনি অর্থনৈতিক অবস্থার উপর অপরিসীম প্রভাব ফেলে । প্রকৃতপক্ষে বায়লাদেশের
প্রেক্ষাপটে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়ে যদি মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতিসাধন
হয় তাহলেই বন্যা হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।
মানবসৃষ্ট দুর্যোগের প্রকারভেদ কি?
মানুষের অবহেলা, ভুলভ্রান্তি বা কোন অভিপ্রায়ের ফলে যে দুর্যোগের সৃষ্টি হয়
তাকে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ বলা হয়। যেমন- অপরাধ, অগ্নিসংযোগ, নাগরিক ব্যাধি,
সন্ত্রাস, জৈবিক/রাসায়নিক হুমকি, সাইবার-আক্রমণ, যুদ্ধ, রাসায়নিক দূষণ,
খাদ্যে বিষক্রিয়া, অগ্নিকাণ্ড প্রভৃতি।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url