সবুজ অর্থনীতি কি-দারিদ্র দূরীকরণে সবুজ অর্থনীতির ভূমিকা
পরিবেশ ও অর্থনীতি টেকসই উন্নয়নের পরিপূরক এক যুগপৎ সঙ্গী। কিন্তু অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধির অন্ধ ছুটে চলায় তার থেকে ক্রমশই বিচ্ছিন্ন হচ্ছে
পরিবেশ।
পরিবেশহীন উন্নতির অলীক স্বপ্ন নিয়ে ছুটে চলা শ্রান্ত অর্থনীতি যেন হঠাৎই
মূল্যহীন ধরিত্রীবাসীর কাছে।
কেননা ধরিত্রীর সংকটকেই যেন তাড়িত করছে এ বিচ্ছিন্নতা। পৃথিবী জুড়েই পরিবেশ নিয়ে
বিরাজ করছে প্রবল উৎকণ্ঠা। প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে উদ্বেগ।
প্রশ্নঃ সবুজ অর্থনীতি কি? সবুজ অর্থনীতির বিভিন্ন দিক উল্লেখপূর্বক টেকসই
উন্নয়ন ও দারিদ্রদ্র্য দূরীকরণে এর ভূমিকা আলোচনা করুন। সবুজ অর্থনীতি বাস্তবায়নে
সীমাবদ্ধতা ও করণীয় কি? এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনা করুন।
সূচিপত্রঃ- সবুজ অর্থনীতি কি-দারিদ্রদ্র্য দূরীকরণে সবুজ অর্থনীতির ভূমিকা
ভুমিকাঃ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নামে প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহারে
গ্রিন হাউস গ্যাসের
ব্যাপক নিঃসরণসহ পরিবেশবিরোধী সব কর্মকাণ্ডে সৃষ্টি হয়েছে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি।
পৃথিবীর এ বিপন্নাবস্থা থেকে উত্তরণে 'সেভ আওয়ার প্লানেট' হৃদয় নিংড়ানো আহবান
থেকে উঠে এসেছে 'সবুজ অর্থনীতি'র ধারণা ও বাস্তবায়ন প্রেক্ষাপট। ক্রমশই জোরালো
হচ্ছে এতে সমঅন্তর্ভুক্তির আহ্বান।
সবুজ অর্থনীতিঃ
সবুজ অর্থনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Green Economy। সবুজ অর্থনীতির 'সবুজ' প্রত্যয়টি
পরিবেশের প্রতি নির্দেশ করে। এ অর্থে সবুজ অর্থনীতি বলতে বোঝায় পরিবেশ বান্ধব
অর্থনীতি।
এটি পরিবেশ ও অর্থনীতির মাঝে যোগসূত্র স্থাপন করে। অর্থাৎ অর্থনীতির সাথে
সম্পর্কিত সব সিদ্ধান্তই পরিবেশের অনুকূল থাকবে। পরিবেশের কোনো রূপ ক্ষতি না করে
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কার্যাবলি পরিচালনা সবুজ অর্থনীতির মূল কথা।
‘সবুজ অর্থনীতি’ হচ্ছে সেই অর্থনীতি, যার দ্বারা পরিবেশগত ঝুঁকি ও
বাস্তুতান্ত্রিক অভাব কমিয়ে মানবকল্যাণ ও সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠা করা যায়। সবুজ
অর্থনীতিতে সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহার, নিম্নকার্বন অর্থনীতি এবং সামাজিক
অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিত হবে।
সবুজ অর্থনীতির বিভিন্ন দিকঃ
কতগুলো দিককে কেন্দ্র করে সবুজ অর্থনীতির ধারণা পরিপুষ্ট লাভ করেছে। নিচে সবুজ
অর্থনীতির এসব দিকসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. সবুজ জ্বালানিঃ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অন্যতম খাত জ্বালানি।
প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা এবং খনিজ তেল জ্বালানির উৎস। ক্রমাগত ও অবিবেচনাপ্রসূত
ব্যবহারে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। উন্নয়নের অন্যতম উপায়
হিসেবে এর যথেচ্ছ ব্যবহার পরিবেশগত হুমকির একটি বড় কারণ। এর বিপরীতে সবুজ
জ্বালানির বা পরিবেশবান্ধব নগরায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে সবুজ
অর্থনীতি। সবুজ অর্থনীতির এ গুরুত্বপূর্ণ খাতটি সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস প্রকল্প,
বায়ুবিদ্যুৎ ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করে।
২. সবুজ কর্মসংস্থানঃ সবুজ কর্মসংস্থান বলতে পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ডের
ক্ষেত্রসমূহে বিশেষ করে নবায়নযোগ্য শক্তির বিস্তৃত ক্ষেত্রসমূহে কর্মসংস্থানকে
বুঝায়। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচুর ব্যবহার নিশ্চিতের মধ্যেই সবুজ কর্মসংস্থানের
প্রসার ও বিস্তৃতি নির্ভরশীল।
৩. সবুজ বিনিয়োগঃ সবুজ অর্থনীতির অন্যতম দিক হচ্ছে সবুজ বিনিয়োগ।
পরিবেশবান্ধব শিল্প, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পসমূহে বিনিয়োগই এর মূল কথা। সবুজ
বিনিয়োগ সব ধরনের ব্যবসায়কে পরিবেশের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে এবং অধিক
কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
৪. সবুজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ সবুজ অর্থনীতির আরেকটি প্রধান দিক হচ্ছে সবুজ
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। এটি চারটি R-কে বোঝায়- Reduce (দূষণ হ্রাস), Reuse
(পুনঃব্যবহার), Recycle (পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ) ও Recover (পুনঃআবরণ)। সবুজ অর্থনীতির
এ ফর্মুলা পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য
শক্তি ও পণ্য উৎপাদনেও সহায়ক।
৫. সবুজ পরিবহনঃ পরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না- এমন সব
পরিবহন বা চলাচল মাধ্যম যেমন বাস, ট্রাক, নৌজাহাজ ইত্যাদি সবুজ পরিবহনের উদাহরণ
যা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করে চলাচল করে। বাতাসে কার্বন তথা গ্রিনহাউস
গ্যাস নির্গমনের মাত্রা হ্রাস করা সবুজ অর্থনীতির এ দিকটার প্রধান লক্ষ্য।
৬. সবুজ কৃষিঃ সবুজ অর্থনীতির এ দিকটি মূলত ভূমি ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত।
জমির উর্বরতা ধরে রাখা এবং সাথে সাথে উর্বরতা বৃদ্ধিসহ স্বল্প ভূমিতে অধিক
পরিমাণে নিরাপদ ফসল উৎপাদন এর মূল কথা। এ ব্যবস্থা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব
সার ব্যবহার, শস্যের বহুমুখীকরণ, মিশ্র ফসল উৎপাদনসহ পরিবেশবান্ধব সব উৎপাদন ও
উৎপাদন ব্যবস্থার কথা বলে।
৭. নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনাঃ সবুজ অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নিরাপদ
পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়টি। নদ-নদী, জলাশয়ের পানি নানাবিধ দূষণের কবল থেকে মুক্ত
রাখার কর্মপরিকল্পনা এবং দূষিত পানিকে যথার্থ প্রক্রিয়ায় পরিশোধন করাসহ
ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি সংরক্ষণ করে তা ব্যবহারের কর্মকৌশল বাস্তবায়ন করে সুপেয় পানি
প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদানে সবুজ অর্থনীতির এ দিকটি গুরুত্বপূর্ণ।
টেকসই উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সবুজ অর্থনীতির ভূমিকাঃ
সুস্থ ও সুন্দর ধরণী গড়ার লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণ আজ সময়ের
দাবি। এক্ষেত্রে সবুজ অর্থনীতি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। নিচে এ সম্পর্কে
আলোচনা করা হলো:
(ক) টেকসই উন্নয়নে সবুজ অর্থনীতির ভূমিকাঃ
'উন্নয়ন' ধারণার ব্যাপক পরিবর্তন ধারার একটি দিক হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন। উন্নয়নের
স্থায়িত্ব ও পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়টি নিয়ে এ উন্নয়ন ধারণার উদ্ভব ও পথচলা। টেকসই
উন্নয়ন এমন উন্নয়ন, যেখানে বর্তমান প্রজন্মের ভোগের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের
প্রয়োজনীয় ভোগের সম্ভাব্যতা সীমিত হবে না। অর্থাৎ আন্তঃপ্রজন্ম সমতা এর মূল কথা।
আরো পড়ুনঃ MDG এর সফলতা ও ব্যর্থতা
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ- এ তিনটি হচ্ছে টেকসই
উন্নয়নের প্রধান স্তম্ভ। পরস্পর সম্পর্কিত ও আন্তঃনির্ভরশীল এ স্তম্ভগুলোর যুগপৎ
অগ্রযাত্রায় টেকসই উন্নয়ন সাধিত হয়।
টেকসই উন্নয়নের এ পথের একটি গুরুত্বপূর্ণ সঞ্চালক হচ্ছে 'সবুজ অর্থনীতি'। পরবর্তী
প্রজন্মের ভোগের অধিকারকে অক্ষুণ্ণ রাখতে টেকসই উন্নয়ন যেমন উন্নয়নের সাথে সাথে
পরিবেশ সংরক্ষণে জোর দেয়, তেমনি সবুজ অর্থনীতিও পরিবেশকে বাঁচিয়ে উন্নয়নের কথা
বলে। অর্থাৎ উন্নয়ন, তবে তা পরিবেশবান্ধব। সবুজ অর্থনীতিতে পরিবেশ অর্থনৈতিক
উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধি, ভ্যালু, ভারসাম্য রক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির সূচক যা
পরিবেশগত ঝুঁকি নিরসনের সাথে সাথে প্রবৃদ্ধিকে সমুন্নত রাখে। এককথায় ধরিত্রীকে
সংকটে না ফেলে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিকে অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম সবুজ অর্থনীতি।
(খ) দারিদ্র্য দূরীকরণে সবুজ অর্থনীতির ভূমিকাঃ
সবুজ অর্থনীতি পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রয়াস
চালায়। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পুঁজি রক্ষা ও উন্নয়ন সবুজ অর্থনীতির একটি প্রক্রিয়া।
এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে
নির্ভরশীল উপকূলীয় বা বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকার বিশাল অংশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ও
দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখে সবুজ অর্থনীতি।
আর মৎস্য, বনায়ন ও কৃষিসহ অন্যান্য খাতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ এর প্রধান উপায়। সবুজ
অর্থনীতিতে উন্নয়ন পরিবেশকে সাথে নিয়ে হওয়ায় উন্নয়নের অংশীদারিত্বে শামিল হতে
পারে সকল শ্রেণীর মানুষ, যা প্রান্তিক পর্যায়ের দারিদ্রদ্র্য দূরীকরণ বা হাসে
কার্যকর। এটি একই সাথে শহুরে ও গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসে সমতা বিধান করে।
সবুজ অর্থনীতি বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতাঃ
সবুজে ঘেরা সুন্দর ভবিষ্যৎ পৃথিবী গড়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হবে সবুজ অর্থনীতি- একথা
এখন অনেকটাই প্রমাণিত সত্য। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সবুজ অর্থনীতির সমবাস্তবায়নে
রয়েছে নানা প্রচ্ছন্ন বাধা। অঞ্চলভিত্তিক উপযোগিতা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।
তদুপরি উন্নত দেশগুলোর কথা ও কাজের বিস্তর ফারাক ও ভোগবাদী দর্শন সবুজ অর্থনীতির
প্রকৃত বাস্তবায়ন ও যাত্রা নিয়ে সীমাহীন সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। নিচে সবুজ
অর্থনীতি বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতাসমূহ আলোচনা করা হলো:
(১) ধনী দেশগুলোর শিল্পকারখানার মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ।
(২) বিভিন্ন সময়ে গৃহীত চুক্তির অবমাননা।
(৩) আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন।
(৪) ধনী দেশগুলোর ঐকমত্যের অভাব।
(৫) উন্নয়নশীল দেশের সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি না করা।
(৬) জনসচেতনতার অভাব ইত্যাদি।
সবুজ অর্থনীতির বাস্তবায়নে করণীয়ঃ
সবুজ অর্থনীতির বাস্তবায়নে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
(১) ধনী দেশগুলোকে সত্যিকারের সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
(২) সবার আগে দিতে হবে শর্তহীন প্রযুক্তি ও অর্থ সহায়তা, যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো
সমভাবে এতে অংশগ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ সবুজ অর্থনীতিতে সমঅন্তর্ভুক্তি বা সমতার
নিশ্চয়তা বিধান করা জরুরি।
(৩) কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা।
(৪) ধনী দেশগুলোর ঐকমত্যে পৌছা।
(৫) জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
(৬) বিভিন্ন সময়ে গৃহীত চুক্তির বাস্তবায়ন ইত্যাদি।
সবুজ অর্থনীতিতে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিঃ
পরিবেশ দূষণ কিংবা উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভূমিকা
নগণ্যমাত্রায় হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সম্ভাব্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর
মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ক্রমাগত
পরিবেশ
বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ধ্বংসসাধন দেশের অস্তিত্বের
জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। বিগত দশকগুলোর তুলনায় পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের
শূন্যতা বেড়েছে বহুগুণ। বন উজাড়করণ, বাস্তুসংস্থান ধ্বংস এবং জীববৈচিত্র্যের
ক্ষতি- এ শূন্যতাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
অল্প আয়তনের ছোট্ট বাংলাদেশের বিশাল জনসংখ্যা প্রাকৃতিক বনজসম্পদের ধ্বংস সাধন
করছে প্রতিনিয়ত। ফলশ্রুতিতে একটি দেশের জন্য সর্বনিম্ন ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার
প্রয়োজনীয়তা থেকে অনেক দূরে বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি দেশে কৃষি পণ্য উৎপাদন বাড়লেও
রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের অপব্যবহারে পানি দূষণের সাথে সাথে জমি মানের বা
উর্বরতার অবনমন ঘটছে। ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় এটি একই সাথে মানুষের নানা
স্বাস্থ্যগত সমস্যাকেও উস্কে দিয়েছে।
পানি দূষণজনিত কারণে পরিবেশগত বিপর্যয় অত্যন্ত বিস্তৃত ও গভীর। আর দরিদ্র শ্রেণীর
মানুষের উপরই এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে সর্বাধিক শিকার মেক্সিকোর বায়ু
দূষণের চেয়েও বেশি ঢাকার বায়ু দূষণ। পুরাতন যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ইট ভাটার
নির্গত ধোঁয়াসহ কলকারখানায় নির্গত বর্জ্য ঢাকার বায়ু দূষণের জন্য প্রধানভাবে
দায়ী। এছাড়া দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও
পরিবেশকে
দূষিত করছে বিভিন্ন উপায়ে।
সব মিলিয়ে পরিবেশের প্রতি নির্দয় ও বিরূপ আচরণে সবুজ সংকটের এক উচ্চ ঝুঁকির মুখে
দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। অপ্রিয় হলেও সত্য, মানুষের নির্বিচার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের
ফলেই এ সার্বিক সবুজ সংকট। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে খাতভিত্তিকভাবে যার
অবদানও উল্লেখযোগ্য। কিন্তু কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা উন্নতি দেশের টেকসই
উন্নয়ন নয়। প্রকৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
একটি আরেকটির পরিপূরক। তাই একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা উন্নয়ন, অন্যদিকে তার
সাথে পরিবেশ সংরক্ষণ- দুই-ই দেশের জন্য অপরিহার্য। এমন প্রেক্ষাপটে 'সবুজ
অর্থনীতি'ই হতে পারে যুগপৎ উন্নয়নের শ্রেষ্ঠ বিকল্প মাধ্যম। মধ্যম আয়ের দেশের পথে
আগুয়ান সবুজ সংকটে জর্জরিত দেশের জন্য বরং সবুজ অর্থনীতি এক অসাধারণ উপায়রূপে
আবির্ভূত হয়েছে। আর এ পথে এখন অনেকটাই ধাবিত বাংলাদেশ।
সবুজ অর্থনীতি কার্যক্রমে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রমঃ
সবুজ অর্থনীতি কার্যক্রমে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। নিচে
উল্লেখযোগ্য কিছু কার্যক্রম উল্লেখ করা হলো:
- পরিবেশবান্ধব প্রয়োজনীয় নীতিমালা, কৌশল, কর্মপরিকল্পনা, আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন ও জারি।
- নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষ আইন অনুমোদন।
- নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থার প্রসার, যেমন- সৌর বিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের দ্রুত সম্প্রসারণ কর্মসূচি।
- নবায়নযোগ্য জ্বালানির বাণিজ্যিক উৎপাদনের উপর থেকে পাঁচ বছরের জন্য আয়কর মওকুফকরণ।
- উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা কার্যক্রম।
- পরিবহনে তুলনামূলক কম দূষণকারী জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি।
- পৌর বর্জ্য থেকে কমপোস্ট বা জৈব সার তৈরির সিডিএম প্রকল্প চালু এবং ইতোমধ্যেই এর কার্বন ক্রেডিট লাভ।
- ইটভাটা থেকে সৃষ্ট মারাত্মক বায়ু দূষণের হ্রাসের লক্ষ্যে এগুলোকে পরিবেশবান্ধব উন্নত প্রযুক্তিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চালুকরণ।
- Polluters Pay Principle-এর আওতায় পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্তানুসারে শিল্পসমূহের দূষণ নিয়ন্ত্রণে এনফোর্সমেন্ট ও মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারকরণ।
- বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে Green Banking-এর নীতিমালা জারি ইত্যাদি।
উপসংহারঃ
পৃথিবীকে মনুষ্য বসবাসের উপযোগী করে তুলতে হলে সবুজ অর্থনীতির বিকল্প নেই। তাই
সবুজ অর্থনীতি বাস্তবায়নের পথে যেসব সমস্যা রয়েছে তার সমাধান করা জরুরি। উল্লেখ্য
যে, সবুজ অর্থনীতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেগুলোর
যথাযথ বাস্তবায়নও জরুরি।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url