পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও পেঁপের পুষ্টিগুন

পেঁপে আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত ফল। পেঁপে হলো প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ, সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একটি ফল। এটি এমন একটি জিনিস যেটি ফল বা সবজি উভয় হিসেবেই খাওয়া যায়। এই ফলটি কাঁচা পাকা দুই ভাবেই খাওয়া যায়।

এই ফলটি খুব সহজেই হাতের কাছেই পাওয়া যায় দাম ও কম থাকে। পাকা পেঁপে খেতে সুমিষ্ট আর স্বাদে অতুলনীয়।

পেঁপে স্বাস্থ্যকর খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম। সাধারণত কাঁচা এবং পাকা দুই অবস্থাতে পেঁপে খাওয়া যায়। কাচা অবস্থায় সবজি হিসেবে এবং পাকা ফল হিসেবে খাওয়া যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা একে সুপার ফুড হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। আমাদের দেশে প্রায় সারা বছরই পেঁপে পাওয়া যায়। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করা, হজমে সাহায্য করা, পেটের সমস্যা দূর করতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে পেঁপে অনেক উপকারী।

পেপের গুনাগুন এবং উপকারিতা অপরিসীম। পেঁপেতে প্রচুর পরিমানে এনটিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। ত্বক ভালো রাখতে এবং ওজন কমাতে পেঁপে খাওয়া প্রয়োজন। পেঁপে আমরা দুই ভাবে খেতে পারি,কাঁচা এবং পাকা।

কাঁচা পেঁপে সালাদ বা তরকারি হিসেবে এবং পাকা পেঁপে ফল হিসেবে খাওয়া যায়। পেঁপেতে পেপেইন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা আমিষকে সহজেই হজম করতে সাহায্য করে এবং পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে। পেঁপের অন্যান্য গুনাগুন ও উপকারিতা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম যা খাবার হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও পেপেতে ফাইবার রয়েছে। যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তারা কাঁচা অথবা পাকা পেঁপে খেতে পারেন। হজমের জন্য কাঁচা এবং পাকা পেঁপে দুটো উপকারী।

ওজন কমাতে পেঁপে অনেকাংশে কাজ করে থাকে। যারা অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তারা অবশ্যই নিয়মিত পেতে খাবেন। পেঁপেতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে এবং আশের পরিমাণ বেশি থাকে যার কারণে খুব সহজেই পেপে খেলে ওজন কমানো সম্ভব।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় পেঁপেঃ

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পেঁপে সাহায্য করে থাকে পেটে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই। এই ভিটামিন গুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের অনেক সমস্যা দূরীভূত করে। পেঁপেতে থাকা ভিটামিন সি ত্বক, চুল ও মাড়ির জন্য খুবই উপকারী। পেঁপেতে বিদ্যমান ভিটামিন এ চোখের জন্য অনেকে উপকারী।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যারোটিনের উৎসঃ

পেঁপেতে শরীরের জন্য খুবই উপকারী উপাদান যেমন- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ফ্লেভানয়েড, লুটেইন, ক্রিপ্টোক্সান্থিন ইত্যাদি প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। ক্যারোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুস ও অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকির হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

পেঁপে এমন একটি ফল যাতে কোন কোলেস্টেরল থাকেনা। পেঁপে একটি ফাইবার, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল। এসকল উপাদান ধমনীতে কোলেস্টেরল জমতে বাধা প্রদান করে। আপনার কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অন্যান্য কোলেস্টেরল যুক্ত খাবারের পরিবর্তে পেঁপে খেতে পারেন। পেঁপে শরীরের কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

পেঁপে ত্বকের জন্য উপকারীঃ ত্বকের জন্য পেঁপে অনেক উপকারী। পেঁপে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে।

পেঁপে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পেপেতে চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিসের রোগীরা খুব সহজেই পেঁপে খেতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিস নাই তারা প্রতিদিন তাদের খাবারের তালিকায় পেতে রাখতে পারেন।

পেঁপেতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-৬ থাকে। এছাড়াও পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ফলেট নামের একটি উপকারি ভিটামিন থকে। নিয়মিত পেঁপে খেলে শরীরের ভিটামিন বি এর অভাব পুরণ করা যায়।

আমরা জানি শরীরের হাড় মজবুত করতে ক্যালসিয়াম খুব প্রয়োজন। পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে যা শরীরের হাড় মজবুত করে। এছাড়াও আর্থারাইটিস, অস্টিও আর্থারাইটিস দূর করতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে পেঁপেঃ

পেঁপে ক্যানসেল ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পেঁপেতে বিদ্যমান বিটা ক্যারোটিন উপাদান কোলন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

পেঁপে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পেঁপে শরীরে জমে থাকা সোডিয়াম দূর করে যা হৃদপিণ্ড রোগের জন্য দায়ী। ভাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা নির্দ্বিধায় পেঁপে খেতে পারেন।

একটি স্বাস্থ্যসম্মত এবং সুস্বাদু ফল। কাঁচা এবং পাকা দুই অবস্থাতে পেঁপে খাওয়া যায়। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে এবং পাকা পেঁপে ফল হিসেবে খাওয়া যায়। কাঁচা পেপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এনটিঅক্সিডেন্ট। তাই নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক থাকে। আর সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক থাকলেই হার্ট অ্যাটাক এবং ব্রেইন স্ট্রোকের মতো ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

সকালবেলা খালি পেটে কাঁচা পেঁপে চিবিয়ে খেতে পারেন এতে করে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। অনেকেই কাঁচা পেঁপে ভর্তা করে ভাতের সাথেও খেয়ে থাকেন। আরো যদি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয়ে থাকে তাহলে কাঁচা পেঁপে তার জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত সকালে কাঁচা পেঁপে খেলে চোখের জন্য অনেক উপকার হয়। মুখের বিভিন্ন দাগ দূর করতেও কাঁচা পেঁপের ভূমিকা রয়েছে। তাই সবার নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে তাহলে শরীর অনেকটা সুস্থ থাকবে।

পেঁপে সাধারণত কাঁচা এবং পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। পেঁপে সিদ্ধ খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত পেঁপে সিদ্ধ করে খেলে পেটের গ্যাসের সমস্যা দূরীভূত হয়। যদি কারো পেটের হজমে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে নিয়মিত পেঁপে সিদ্ধ হওয়া উচিত। পেপেতে রয়েছে হজমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম। তাই যারা পেটের সমস্যা বা হজমের সমস্যায় ভুগছেন তারা পেঁপে সিদ্ধ খেতে পারেন। এর ফলে পেটের অনেক উপকার হয়।

পাকা পেঁপে খেতে অনেক সুমিষ্ট এবং স্বাস্থ্যকর। পাকা পেপে খেলে আমাদের অনেক উপকার হয় বিশেষ করে আমাদের হজমে পাকা পেঁপে ভুমিকা পালন করে।

পাকা পেঁপে খেলে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি। তাই আমরা নিয়মিত ফাঁকা পেতে খাব। এজন্য পাকা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানলে আমরা স্বাস্থ্য সচেতন হতে পারব।

পেঁপে খেলে সাধারণত গ্যাসের সমস্যা কমে যায়। তবে সাধারণত ভরা পেটে পাকা পেপে খাওয়াটা ভালো। তাই পেঁপে গ্যাসের সমস্যা দূর করার জন্য একটা মহা ঔষধ। বিষে ভরা বলে থাকেন পেঁপে ক্ষুধা বৃদ্ধির পাশাপাশি পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। সেই সাথে পেঁপে গ্যাস অম্বলের সমস্যা কমিয়ে থাকে।

পেঁপের উপকারী দিকের পাশাপাশি এর কিছুটা ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। অতিরিক্ত পেঁপে খেলে খাদ্যনালীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই প্রতিদিন এক কাপের বেশি পেপে খাওয়া উচিত নয়।

শরীরকে সুস্থ রাখতে পেঁপের উপকারিতা অনেক। শ্বাস- প্রশ্বাসের রোগ প্রতিরোধ করতে পেঁপের ভুমিকা রয়েছে। নিয়মিত পেঁপে খেলে শ্বাস- প্রশ্বাসের সমস্যা দুর হয়। দাঁতের যন্ত্রণার ক্ষেত্রে পেঁপে খেলে যন্ত্রনা কমে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাঁরা পাকা পেঁপের বদলে কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। কারণ পাকা পেঁপে খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। পেঁপে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তাই আমাদের খাবারে তালিকায় অবশ্যই পেপে রাখা উচিত।