কুয়াকাটার ইতিহাস ও সংস্কৃতি-বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতের তালিকা
কুয়াকাটার অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত পটুয়াখালী জেলায়।
পটুয়াখালী জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও পর্যটনকেন্দ্র হচ্ছে কুয়াকাট। কুয়াকাটা
প্রধানত সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে
“সাগরকন্যা” হিসেবে পরিচিত।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৮ কিলোমিটার। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক পর্যটনকেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান
থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।
সুচিপত্রঃ- কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত-বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতের তালিকা
সাদা বালির সৈকত ও “সাগরকন্যা” নামে খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে
বঙ্গোপসাগরের সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায়। শীতকালে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে
প্রচুর অতিথি পাখি দেখা যায়। গঙ্গামতি নামে একটি সংরক্ষিত বন রয়েছে কুয়াকাটা
সমুদ্র সৈকতের পূর্ব দিকে। এই সংরক্ষিত বনটি এক সময় বৃহত্তর সুন্দরবনের অংশ ছিলো।
বর্তমানে এই বনটি সমুদ্রের ঢেউ এর ক্ষতির হাত থেকে কুয়াকাটার তীরকে রক্ষা করছে।
কুয়াকাটার অবস্থান
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার
অন্তর্গত কুয়াকাটা পৌরসভায় অবস্থিত। স্থলপথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দুরত্ব ৩৮০
কিলোমিটার এবং বরিশাল জেলা থেকে এর দুরুত্ব ১০৮ কিলোমিটার। পটুয়াখালী সদর থেকে
প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত অবস্থিত।
কুয়াকাটার জনসংখ্যার
২০১১ এর আদমশুমারি অনুযায়ী কুয়াকাটার মোট জনসংখ্যা ৯,০৭৭ জন এবং মোট পরিবার
সংখ্যা ২,০৬৫ টি।
কুয়াকাটার ইতিহাস
স্থানটির নাম কুয়াকাটা হওয়ার পেছনে একটি ইতিহাস রয়েছে। কুয়াকাটার ‘কুয়া’
শব্দটি এসেছে ‘কূপ’ শব্দ থেকে। ধারণা করা হয় ১৭৭৪ সালে বার্মা রাজা দ্বারা
রাখাইনরা তাদের জন্মভূমি আরাকান রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো। সেই সময় অনেক
রাখাইনরা গৃহহীন এবং বাস্তুচ্যুত হয়। নিজেদের প্রান বাঁচাতে তারা আরাকান রাজ্য
ত্যাগ করেন। আশ্রয়ের সন্ধানে তারা নৌকা নিয়ে সাগর পথে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি
জমায়। সাগর পথে আসতে আসতে তারা এক সময় কুয়াকাটার এই সাগর তীরে পৌঁছায়।
আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে তারা এখানেই বসতি স্থাপন করে। কিন্তু এই সমুদ্র তীরে
সুপেয় পানির অভাব ছিলো। পানির অভাব পুরণ করার জন্য তারা বেশি বেশি কুয়া কাটা
শুরু করে। এই কুয়াকাটার কারণেই তখন থেকে এই অঞ্চলটি কুয়াকাটা নামে পরিচিতি লাভ
করে। কুয়াকাটা নামকরণের এই ইতিহাসের সাথে আরাকানদের এদেশে আগমনের ইতিহাস জড়িত
রয়েছে।
কুয়াকাটার সংস্কৃতি
কুয়াকাটা হলো হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ
তীর্থস্থান। ‘রাস পূর্ণিমা’ এবং ‘মাঘী পূর্ণিমা’ উৎসব উৎযাপনের জন্য এই দুই
ধর্মের অনেক ভক্তরা এখানে উপস্থিত হন। এই উৎসব উৎযাপনের অংশ হিসেবে তীর্থযাত্রী
এবং ভক্তরা সাগরে পানিতে পবিত্র স্নান করেন ঐতিহ্যবাহী মেলায় অংশ নেন। সমুদ্র
সৈকতের পাশে রয়েছে ১০০ বছরের পুরানো একটি বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরে গৌতম বুদ্ধের
মূর্তি এবং ২ টি ২০০ বছরের পুরানো কূপ রয়েছে।
কুয়াকাটার বিভিন্ন স্থান
কুয়াকাটায় অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এসকল দর্শনীয় স্থান দেখতে প্রতিবছর দেশ
বিদেশের প্রচুর পর্যটক এখানে আসেন। নিম্নে এই শহর ও এর সন্নিকটবর্তী যেসব
দর্শনীয় স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ওেয়া হলঃ
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে যার নাম সর্বপ্রথমে আসে সেটি হলো কুয়াকাটা
সমুদ্র সৈকত। এইটি এমন একটি সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে একসাথে সূর্যোদয় এবং
সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের নৈসর্গিক এবং প্রকৃতিক
সৌন্দর্য প্রকৃতি প্রেমিদেরকে মুগ্ধ করে। কুয়কাটার অপর নাম “সাগরকন্যা”।
ফাতরার বন
সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম দিকে ‘ফাতরার বন’ নামে একটি ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে। এই বনটি
‘দ্বিতীয় সুন্দরবন’ নামে পরিচিত।
কুয়াকাটার ‘কুয়া’
কুয়াকাটার ‘কুয়া’ অন্যতম দর্শনীয় স্থান। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছেই রয়েছে
রাখাইন পল্লী। রাখাইন পল্লীর কেরানীপাড়ার প্রথমে রয়েছে একটি বৌদ্ধ বিহার এবং এই
বিহারের পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন ‘কুপ’।
সীমা বৌদ্ধ বিহার
কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে সীমা বৌদ্ধ বিহার একটি। কুয়াকাটার
প্রাচীন কুয়াটির সামনে একটি প্রাচীন সীমা বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। এই বিহারের মধ্যে
রয়েছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের অষ্ট ধাতু দিয়ে তৈরী ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি।
কেরানিপাড়া
সীমা বৌদ্ধ বিহারের সামনে রাখাইন আদিবাসীদের বসবাসের একটি পল্লী রয়েছে যার
নাম ‘কেরানিপাড়’।
আলীপুর-মহিপুর বন্দর
কুয়াকাটার আলীপুর-মহিপুর বন্দর মৎস্য ব্যবসার জন্য বেশ বিখ্যাত। আলীপুর-মহিপুর
বন্দর কুয়াকাটা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহার
‘মিশ্রিপাড়ায়’ নামে রাখাইন আদিবাসীদের একটি আবাসস্থল রয়েছে যা কুয়াকাটা সমুদ্র
সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই ‘মিশ্রিপাড়ায়’ একটি বৌদ্ধ
বিহার রয়েছে এবং এই বিহারে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি আছে।
গঙ্গামতির জঙ্গল
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূব দিকে গঙ্গামতির খালের পাশে গঙ্গামতি বা গজমতি নামে
একটি জঙ্গল রয়েছে।
বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতের তালিকা
বাংলাদেশ হলো একটি ব-দ্বীপ (Delta)। ভৌগোলিক ভাবে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের তীরে
অবস্থিত।বাংলাদেশের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য
উভই উপভোগ করা যায়।কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও বাংলাদেশে আরো অনেক সমুদ্র সৈকত
রয়েছে। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতের নাম ‘কক্সবাজার সমুদ্র
সৈকত’। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মোট দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। নিম্নে বাংলাদেশে
অবস্থিত সমুদ্র সৈকতের একটি তালিকা দেওয়া হলোঃ
চট্টগ্রাম বিভাগের সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ।
পতেঙ্গা।
ইনানী সমুদ্র সৈকত।
পারকি সমুদ্র সৈকত।
গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত।
মিনি কক্সবাজার, চাঁদপুর।
নিঝুম দ্বীপ।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত।
টেকনাফ সমুদ্র সৈকত।
বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত।
আকিলপুর সমুদ্র সৈকত।
কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকত।
খুলনা বিভাগের সমুদ্র সৈকত
মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত।
কটকা সমুদ্র সৈকত।
বরিশাল বিভাগের সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত।
তারুয়া সমুদ্র সৈকত।
লালদিয়া সমুদ্র সৈকত।
শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত।
আপনার সচরাচর জিজ্ঞাসা
কুয়াকাটা কিসের জন্য বিখ্যাত?
কুয়াকাটা প্রধানত সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও কুয়াকাটায় হিন্দু ও
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমুদ্র বন্দর
‘পায়রা সমুদ্রবন্দর’ এই জেলায় অবস্থিত।
কুয়াকাটা অপর নাম কি?
কুয়াকাটার অপর নাম ‘সাগরকন্যা’। শীতকালে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন দেশ
থেকে অতিথি পাখি উড়ে আসে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত কোথায় অবস্থিত?
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার
অন্তর্গত কুয়াকাটা পৌরসভায় অবস্থিত। স্থলপথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দুরত্ব
৩৮০ কিলোমিটার এবং বরিশাল জেলা থেকে এর দুরুত্ব ১০৮ কিলোমিটার। পটুয়াখালী
সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত অবস্থিত।
কুয়াকাটা দেখার মত কি কি আছে?
কুয়াকাটার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতের
পাশাপাশি এখানে রয়েছে শুঁটকিপল্লী, তিন নদীর মোহনা, ঝাউবন,লেবুর চর, লাল
কাঁকড়ার চর, গঙ্গামতির চর।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url