দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান একটি আশীর্বাদ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের অবদান অনেক। বিজ্ঞানের মাধ্যমেই আমাদের জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে। তবে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাবে আমাদের যে শুধু কল্যাণ হয়েছে তাই নয়, বিজ্ঞানের আশীর্বাদের সাথে সাথে এর অভিশাপ ও দেখা দিয়েছে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
সম্পুর্ণরুপে এটি নির্ভর করে আমাদের ব্যবহারের উপর। তাই দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানকে খারাপ কাজে ব্যবহার না করে কিভাবে একে ব্যবহার করে মানব কল্যাণ করা যায় সে বিষয়ে আমাদের সবার সচেতন হওয়া উচিত।

সূচিপত্রঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

ভূমিকাঃ

আধুনিক যুগকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। এর অন্যতম কারণ বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্য ও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে এর নিবিড় সম্পর্ক। জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে বিজ্ঞান আমাদের দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়েছে। এ সকল আবিষ্কার মানুষের জীবনে এনেছে গতিময়তা, পৃথিবীকে এনেছে হাতের মুঠোয়। অভাবনীয়ভাবে জীবনকে করেছে সহজ ও সাবলীল। বিজ্ঞান সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছে। আধুনিক বিজ্ঞান শুধু শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই নয়, মানুষের জীবনযাত্রায়ও এনেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা প্রতিনিয়তই বিজ্ঞানের ব্যবহার করে চলেছি।

দৈনন্দিন জীবনে ভূমিকাঃ

আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে বিজ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত। আজ অবস্থা এমন যে, বিজ্ঞানের অবদানকে অস্বীকার করে আমরা একমুহূর্তও চলতে পারি না। প্রতিদিন সকালে ধোঁয়া ওঠা চায়ের সাথে সংবাদপত্র হাতে না পেলে পুরো পৃথিবী থেকেই যেন আমরা বিছিন্ন হয়ে যাই। টেলিভিশনের পর্দায় আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার জীবন্ত ভিডিও চিত্র দেখতে পাই।
টেলিফোনের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে মুহূর্তের মধ্যেই যোগাযোগ করতে পারি অন্য প্রান্তে। এছাড়া আধুনিক পৃথিবীর অগ্রগতিতে শিল্পবিপ্লবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এর পেছনেও বিজ্ঞানের অশেষ অবদান রয়েছে। কেননা, প্রযুক্তির উৎকর্ষ ব্যতীত শিল্পায়ন সম্ভব হতো না। তাছাড়া কৃষিকাজ, বাড়িঘর নির্মাণ, পরিধেয় বস্তু ও ঔষধপত্র তৈরি, খনিজ পদার্থ উত্তোলন ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের প্রয়োগ অনিবার্য।

বিজ্ঞানের আবিষ্কারসমূহঃ

বিজ্ঞান যেমন মানুষের জ্ঞান অন্বেষাকে নিবারণ করেছে, তেমনি আমাদের জীবনকেও করেছে অনেক সহজ ও গতিশীল। প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকি। মূলত এর সবই বিজ্ঞানের আবিষ্কার। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত এমন কিছু শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার নিচে তুলে ধরা হলো-

ছাপাখানাঃ

পুস্তক বা কোনো তথ্য ছাপার কথা বললেই সবার আগে মনে পড়ে ছাপাখানার কথা। পূর্বে বিভিন্ন ফাইল, পুস্তক হাতে লিখে প্রকাশ করা হতো। ১৪৪০ সালে জন গুটেনবার্গ সর্বপ্রথম ছাপাখানা আবিষ্কার করেন। ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই তাঁর এই আবিষ্কার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর গঠন আজকের মতো ছিল না। তবে এশিয়াতে প্রথম ছাপাখানার ব্যবহার শুরু হয় চীনে। কম্পিউটার আবিষ্কারের সাথে সাথে এর বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে ছাপাখানা কিন্তু আমাদের বাড়িতেই ব্যবহৃত হয়, যা প্রিন্টার হিসেবে পরিচিত।
বিদ্যুৎ বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া ইলেকট্রনিক সকল আবিষ্কার বিফলে যেত। কে প্রথম বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেছেন তা সঠিকভাবে বলা দুরূহ। মোটামুটিভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ সাল থেকে শুরু করে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন গবেষণার ফলে বিদ্যুৎব্যবস্থা আজকের অবস্থানে উন্নীত হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎসগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, পেট্রোলিয়াম, নিউক্লিয়ার শক্তি, সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তি অন্যতম।

মোবাইল ফোন বা স্মার্ট ফোনঃ

বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোন। বর্তমান যুগের প্রায় প্রতিটি মানুষের হাতেই স্মার্টফোন শোভা পাচ্ছে। প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা থেকে শুরু করে গেইম, হিসাব-নিকাশ, ইন্টারনেট ব্রাউজিংসহ নানা কাজে মোবাইল ব্যবহার করা হয়। বহুল ব্যবহৃত এই যন্ত্রটির আবিষ্কার কৌশল এসেছে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের আবিষ্কৃত টেলিফোন থেকে। সর্বপ্রথম তারবিহীন মোবাইল ফোন বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে। আর প্রথম মোবাইল ফোন বাজারজাতকারী কোম্পানি মটরোলা। বর্তমানে বিশ্বের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে।

বৈদ্যুতিক বাতিঃ

বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পর থেকেই মানুষ এর বহুবিধ ব্যবহার শুরু করে। রাতের অন্ধকার দূর করার স্বপ্নও সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু নয়। সে চেষ্টা থেকেই আমেরিকান বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন আবিষ্কার করেন বৈদ্যুতিক বাতি।
এর এক বছর পূর্বে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জোসেফ সন একই ধরনের বাতি আবিষ্কার করলেও তা ব্যবহার উপযোগী ছিল না। সর্বপ্রথম সফলভাবে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার শুরু হয় ১৮৭৯ সালে।

নয়াল সেন্দীছ কম্পিউটারঃ

যুগে যুগে যেসব বিখ্যাত আবিষ্কার মানুষের জীবনকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে তার মধ্যে কম্পিউটার অন্যতম। কম্পিউটার মানুষের জীবনযাত্রায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কম্পিউটারের আবিষ্কারক হাওয়ার্ড আইকেন। ডেস্কটপ কম্পিউটার সর্বপ্রথম মানুষের হাতে আসে ১৯৭৪ সালে। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে অ্যাডাম অসবর্ন ল্যাপটপ আবিষ্কার করেন। বর্তমানে শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা, অর্থনীতি, বিনোদনসহ জীবনযাত্রার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের অভূতপূর্ব অবদান রয়েছে।

টেলিভিশনঃ

বিনোদন জগতে বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার টেলিভিশন। এর আবিষ্কারক জন লগি বেয়ারড, ফিলো ফার্নসয়রথ এবং জরিকিন। সর্বপ্রথম টেলিভিশনের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয় ১৯৪০ সালে। এ যন্ত্রে শোনার পাশাপাশি দেখার সুবিধাও রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের তিন বিলিয়নেরও বেশি মানুষ টেলিভিশন ব্যবহার করে। আবিষ্কারের পর থেকে আজ অবধি টেলিভিশনের গঠনে নানা পরিবর্তন হচ্ছে। একসময়ের বারো ইঞ্চি লম্বা টিউবযুক্ত টেলিভিশন থেকে আজ আমরা বিশাল আকৃতির এলইডি টেলিভিশন দেখতে পাই।

বিমান: ১৯০৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর অরভিল এবং উইলভার রাইট মানুষের উড়ে বেড়ানোর সম্ভাব্যতা নিয়ে পরীক্ষা চালান। অবশেষে রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের চেষ্টায় ১৯১১ সালে অ্যারোপ্লেন আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে দ্রুতগামী যান হচ্ছে অ্যারোপ্লেন। পরবর্তীতে অ্যারোপ্লেনের নীতির ওপর ভিত্তি করেই জেট বিমান, রকেট ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে অসংখ্য যাত্রী বিমানে যাতায়াত করে।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবঃ

বর্তমানে যেকোনো প্রয়োজনে আমরা ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে থাকি। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ শব্দটি খুব পরিচিত। আর এই শব্দ তিনটির পূর্ণ রূপ হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব। ১৯৯০ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টিম বার্নার্স লি এটি আবিষ্কার করেন। বর্তমানে সারাবিশ্বে ৪.৫৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েভ ব্যবহার করে থাকে। এই শব্দ তিনটি দ্বারাই সকল ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে আর আমরা পেয়ে যাচ্ছি আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য।

এটিএমঃ

জরুরি কারণে বা ছুটির দিনে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা উত্তোলনের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো এটিএম বা অটোমেটেড টেলার মেশিন। বিজ্ঞানী লুথার জর্জ সিমজান এটি আবিষ্কার করেন। এখানে একটি পিন কোডের মাধ্যমে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এটি বহুলভাবে ব্যবহূত হচ্ছে।

ই-কমার্সঃ

বিজ্ঞানের আশীর্বাদে ব্যবসায়-বাণিজ্যেও এসেছে নতুন ধারা। ই-কমার্স তেমনি একটি বিষয়। এর মাধ্যমে মানুষ এখন ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারছে। বর্তমানে ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও মার্কেটিং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মানুষ বাজার বা শপিং মলে যাওয়ার চেয়ে অনেকক্ষেত্রে ই- কমার্সকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

গৃহস্থালি কাজে বিজ্ঞানঃ

আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের সংস্পর্শেই গৃহস্থালির কাজ সর্বদা সচল থাকে। দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজনে ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের জন্য বাড়িঘরেও মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলেছে। রান্নার কাজে প্রাকৃতিক গ্যাস, বৈদ্যুতিক হিটার প্রভৃতি ব্যবহার করা হচ্ছে।
এছাড়া বৈদ্যুতিক পাখা, বিজলি বাতি, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, ওয়াটার হিটার, প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, এয়ার কুলার প্রভৃতি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি গৃহের পরিবেশ বদলে দিয়েছে। মোটকথা, বিজ্ঞান গৃহস্থালি কাজকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলেছে।

শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞানের ভূমিকাঃ

শিক্ষাক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অবদান রয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে প্রজেক্টরের সাহায্যে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া ইন্টারনেটের আবিষ্কার শিক্ষাক্ষেত্রে এনেছে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন। যেকোনো তথ্য বর্তমানে গুগল অনুসন্ধানের মাধ্যমে অতি সহজেই শিক্ষার্থীদের হাতের নাগালে পৌঁছে যাচ্ছে। বর্তমানে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন শাখায় ও গবেষণামূলক কাজে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, নোটবুক, আইপ্যাড, ইন্টারনেট ব্রাউজিং প্রভৃতি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। এ সব কিছুই মূলত বিজ্ঞানের অবদান।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ

জটিলরোগের উপশমে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিত্যনতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে দুরারোগ্য অনেক ব্যাধিই এখন আর মানুষের জন্য ভয়ের কারণ নয়। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির কল্যাণে চশমা ব্যবহার করা ছাড়াই মানুষ আজ স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাচ্ছে। স্ট্রেপটোমাইসিন, পেনিসিলিন, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাফি প্রভৃতি আজ মৃত্যুপথযাত্রীকেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখছে। কর্নিয়া (অক্ষি গোলকের স্বচ্ছ আবরণ), বৃত্ত, অস্থিমজ্জা, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এবং যকৃতের মতো অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে চিকিৎসাবিজ্ঞান আজ সফল।

কর্মস্থল ও পরিবহণ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ

অফিস-আদালত প্রাঙ্গণ, কলকারখানা, শপিং মল, দোকানপাট প্রভৃতি স্থলে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান সৃষ্ট প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রিন্টার ও ফটোস্ট্যাট মেশিন এসব প্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তৈরি পোশাক শিল্প ও বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রমিকরা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সাহায্যে তাদের দৈনন্দিন নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করছে। বড়ো শপিং মলগুলোতে গ্রাহকদের নিরাপত্তা রক্ষা ও সুবিধার্থে সিসি ক্যামেরা, লিফট, এসকিউলেটর প্রভৃতি ব্যবহৃত হচ্ছে যা বিজ্ঞানের আবিষ্কার। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকর্তৃক আবিষ্কৃত উড়োজাহাজ ও জলযান প্রধান মাধ্যম। এছাড়া স্থানিক দূরত্ব অতিক্রমে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, লঞ্চ, স্টিমার প্রভৃতি যান আবিষ্কৃত হয়েছে। বেতার যন্ত্র, ভিডিও চ্যাট, মোবাইল ফোন প্রভৃতির মাধ্যমে যোগাযোগের স্থানিক দূরত্ব অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।

কৃষি ও শিল্পের প্রসারে বিজ্ঞানঃ

বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অনুর্বর জমিতেও সোনার ফসল ফলাচ্ছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং উনবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের সূচনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাচীন আমলের কাঠের লাঙলের পরিবর্তে বর্তমানে কৃষকদের হাতে এসেছে কলের লাঙল, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ইত্যাদি। সেচব্যবস্থায় ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত পাম্প।
এমনকি বর্তমানে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছেন। কৃষিতে পচা আবর্জনা ও গোবরের সাথে ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক রাসায়নিক সার। এছাড়া গবেষণার মাধ্যমে কৃষকদের হাতে উচ্চফলনশীল বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। বিজ্ঞানের সহায়তা ছাড়া ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হতো না।

বিজ্ঞানের অকল্যাণকর দিকসমূহঃ

কল্যাণকর দিকের পাশাপাশি বিজ্ঞানের কিছু অকল্যাণকর দিকও রয়েছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রগুলো যখন কাজ করতে শুরু করেছে তারপর থেকেই অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়ছে। দ্রুত শিল্পায়ন, যন্ত্রশিল্প কারখানা ইত্যাদি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করতে ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিনধ্য করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা এ দূষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে, যা জীবজগতের ওপর বিভিন্ন ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।

উপসংহারঃ

বিজ্ঞান মানুষকে করেছে স্বনির্ভর এবং স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক ক্ষমতাধর। বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও অবদানসমূহকে মানুষ কোন পথে ব্যয় করবে, তা নির্ভর করছে মানুষের ইচ্ছার ওপর। বিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়েছে মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে। তাই মানুষ যদি কেবল কল্যাণকর কাজে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে তবেই এর সার্থকতা প্রতিপন্ন হবে। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের হাত ধরে মানুষের জীবনযাত্রার মান আমাদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে যাবে- এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url