জীববিজ্ঞানের শাখা কয়টি ও কি কি
জীব বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা অ্যারিস্টটল, সক্রেটিস, থিওফ্রাসটাস এবং
এরকম আরো অনেক প্রাচীন মনীষী আছেন যাদের অবদান দেখতে পাই। আজকালকার মনীষীদের
বেলায় কিন্তু এটা সম্ভব নয়। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন সম্ভব নয়। এর কারণ হল
প্রাচীনযুগে জ্ঞানের পরিসীমা ছিল অত্যন্ত সীমিত। জ্ঞান সাধনায় নিয়োজিতদের সংখ্যাও
ছিল কম।
বর্তমানে জ্ঞানের পরিধি বহুগুণ বেড়েছে । একাধিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা তাই আর সম্ভব
নয়। আমাদের জানার এবং বোঝার সুবিধার জন্য আমাদের সঞ্চিত জ্ঞান সমগ্রকে আমরাই ভাগ
করেছি নানাভাবে। এ ভাবেই সৃষ্টি হয়েছে বিজ্ঞান, সাহিত্য, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান
এরকম আরো অনেক শাখাপ্রশাখার। মানুষের জ্ঞান সামগ্রিকভাবে অখণ্ড। শেখার ও বুঝবার
সুবিধার জন্য একে নানাভাবে ভাগ করা হয়েছে।
আলোচ্য বিষয়ঃ
আপনারা নিশ্চয় জানেন বিজ্ঞানের জ্ঞান খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন
বিষয়ে প্রচুর গবেষকদের গবেষণার ফলে তা বুদ্ধি হচ্ছে। অনেকের মতে বিজ্ঞান বিষয়ের
জ্ঞান প্রতি ৮ বছরে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন বিষয়ের সৃষ্টি
হচ্ছে। এ বিশাল জ্ঞানভান্ডার কারো পক্ষেই একা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তাই গবেষকদের
দেখা যায় তারা বিশেষ কোন এক দিক নিয়েই গবেষণা করছেন।
জীববিজ্ঞানের প্রধান শাখা
বিজ্ঞানের সমগ্রজ্ঞানকে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন সময়ে নানা রকমভাবে ভাগ করেছেন।
বিজ্ঞানের 'জ্ঞান যত বাড়ছে এর শাখাপ্রশাখার বিভক্তিও তত বাড়ছে। বিজ্ঞানের প্রধান
শাখা দুটি। যথা-
(১) জড় বিজ্ঞান
(২) জীববিজ্ঞান
জড় বিজ্ঞান কাকে বলে
জড়বিজ্ঞানের আরেক নাম ভৌতবিজ্ঞান। জীব বিজ্ঞানের যে শাখায় জীবনহীন জড় পদার্থের
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, ক্রিয়াবিক্রিয়া, বহুরূপতা এবং এরকম আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা
এবং পরীক্ষণ করা হয় তাকে জড় বিজ্ঞান বলে।
জীববিজ্ঞান কাকে বলে
জীববিজ্ঞানের আলোচনা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা যাদের জীবন আছে তাদেরকে নিয়ে। জীব
বিজ্ঞানের যে শাখায় জীবন আছে এমন পদার্থের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, ক্রিয়াবিক্রিয়া,
বহুরূপতা এবং এরকম আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং পরীক্ষণ করা হয় তাকে জীব
বিজ্ঞান বলে। জীব বিজ্ঞানের ইংরেজি হচ্ছে Biology। Biology এর বাংলা পরিভাষা
জীববিজ্ঞান। Biology শব্দটি এসেছে দুটি গ্রীক শব্দ ‘bios’ এবং ‘logos ’ থেকে।
‘bios’ অর্থ জীবন এবং ‘logos’ অর্থ জ্ঞান।
ভাইরাস কাকে বলে-ভাইরাসের গঠন ও বৈশিষ্ট্য
পড়ুনজীববিজ্ঞানের জনক
অ্যারিস্টটলকে জীববিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
জীবের ধরণ অনুযায়ী জীববিজ্ঞানের শাখা
প্রকৃতিতে আমরা দুই ধরণের জীবন বা জীব দেখতে পাই। একটি উদ্ভিদ এবং অপরটি প্রাণী।
তাই জীরের ধরণ অনুযায়ী জীববিজ্ঞানকে দুটি শাখায় ভাগ করা হয়েছে- উদ্ভিদবিজ্ঞান
(Botany) এবং প্রাণিবিজ্ঞান (Zoology)।
উদ্ভিদবিজ্ঞান (Botany)
জীব বিজ্ঞানের যে শাখায় উদ্ভিদ বা গাছপালার বৈশিষ্ট্য এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে
তাত্ত্বিক আলোচনা এবং গবেষণা করা হয় তাকে উদ্ভিদবিজ্ঞান (Botany) বলে।
প্রাণিবিজ্ঞান (Zoology)
জীব বিজ্ঞানের যে শাখায় প্রাণীদের সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং গবেষণা করা হয় তাকে
প্রাণিবিজ্ঞান (Zoology) বলে। বর্তমান কালকে জীববিজ্ঞানের কাল বলা যায়। কারণ এ
সময়ে জীববিজ্ঞানের জ্ঞান এত ব্যাপকভাবে বেড়েছে যা অন্য কোন সময়ে হয় নি।
ভৌত জীববিজ্ঞান ও ফলিত জীববিজ্ঞান
উপরে বর্ণিত শাখাগুলো হল জীববিজ্ঞানের মৌলিক শাখা। ক্রমে ক্রমেই জীব বিজ্ঞানের
মৌলিক শাখার জ্ঞানকে বিজ্ঞানীগণ মানব কল্যাণে কাজে লাগাতে শুরু করল। যার ফলে
সৃষ্টি হল জীববিজ্ঞানের ভৌত জীববিজ্ঞান (Physical Biology) এবং ফলিত জীববিজ্ঞান
(Applied Biology) শাখার।
ভৌত জীববিজ্ঞান (Physical Biology)
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় তত্ত্বীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করা হয় তাকে ভৌত
জীববিজ্ঞান (Physical Biology) বলে। ভৌত জীববিজ্ঞানে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা
হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল-
অঙ্গসংস্থান (Morphology): মরফোলজি (Morphology) বা অভাসংস্থানবিদ্যাঃ জীব
বিজ্ঞানের যে শাখায় জীবের বাঁহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে
মরফোলজি (Morphology) বলে। দেহের বাহ্যিক বর্ণনার বিষয়কে বহিঃঅঙ্গসংস্থান
(External Morphology) এবং দেহের অভ্যন্তরীণ বর্ণনার বিষয়কে অন্তঃঅঙ্গসংস্থান
(Internal Morphology) বলা হয়। অভ্যন্তরীণ গঠন বিষয়কে এনাটমি (Anatomy) বলা হয়।
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা বা ট্যাক্সোনমি (Taxonomy): জীববিজ্ঞানের যে শাখায়
জীবদের সনাক্তকরণ, নামকরণ ও বিভিন্ন দল-উপদঙ্গল বিভক্তিকরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়
তাকে ট্যাক্সোনমি (Taxonomy) বা শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যা বলে।
শারীরবিদ্যা (Physiology): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবদেহের বৃদ্ধি, শ্বসন,
রেচন, সালোকসংশ্লেষণ ইত্যাদি নানা ধরণের জৈবনিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়
তাকে ফিজিওলজি (Physiology) বা শারীরবিদ্যা বলে।
হিস্টোলজি (Histology): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবদেহের টিস্যুসমূহের গঠন,
বিন্যাস এবং কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে হিস্টোলজি (Histology) বলে।
ভ্ৰূণবিদ্যা (Embryology): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবদেহের জনন কোষের
উৎপত্তি, নিষিক্ত জাইগোট থেকে ভ্রূণের সৃষ্টি, গঠন, পরিস্ফুটন, বিকাশ প্রভৃতি
নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ভ্ৰূণবিদ্যা (Embryology) বলে।
কোষবিদ্যা (Cytology):
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবদেহের কোষের গঠন, কার্যাবলি ও বিভাজন সম্পর্কে
যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে কোষবিদ্যা (Cytology) বলে।
বংশগতিবিদ্যা বা জেনেটিক্স (Genetics): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবের
বৈশিষ্ট্য কিভাবে মাতাপিতা থেকে সন্তানের মাঝে যায় এবং কিভাবে তা নিয়ন্ত্রণ ও
উন্নয়ন করা যায় এগুলো আলোচনা ও গবেষণা করা হয় তাকে জেনেটিক্স (Genetics) বা
বংশগতিবিদ্যা বলে।
বিবর্তনবিদ্যা (Evolution): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবের উৎপত্তি ও
ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে ইভোলিউশন (Evolution) বা অভিব্যক্ত বলে।
বাস্তুবিদ্যা (Ecology): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় কোন জীব বা জীব
সম্প্রদায়ের উপর তার চারপাশের পরিবেশের প্রভাব এবং আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা
হয় তাকে ইকোলজি (Ecology) বা বাস্তুবিদ্যা বলে।
এন্ডোক্রাইনোলজি (Endocrinology): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবদেহে হরমোনের
(hormone) কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে এন্ডোক্রাইনোলজি (Endocrinology)
বলে।
জীবভূগোল (Biogeography):
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখায় জীবের বিস্তৃতি এবং
অভিযোজন সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে জীবভূগোল (Biogeography) বলে।
ফলিত জীববিজ্ঞান (Applied Biology)
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবন-সংশ্লিষ্ট প্রায়োগিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও
গবেষণা করা হয় তাকে ফলিত জীববিজ্ঞান (Applied Biology) বলে। ফলিত জীববিজ্ঞানে যে
বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল-
জীবাশ্মবিজ্ঞান (Palaeontology): প্রাগৈতিহাসিক মসয়ের জীবের বিবরণ এবং
জীবাশ্ম সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে জীবাশ্মবিজ্ঞান বলে।
জীবপরিসংখ্যানবিদ্যা (Biostatistics): যে শাখায় জীবের পরিসংখ্যান নিয়ে
আলোচনা করা হয় তাকে জীব-পরিসংখ্যানবিদ্যা বলে।
পরজীবীবিদ্যা (Parasitology): জীব বিজ্ঞানের এই শাখায় জীবের পরজীবিতা,
পরজীবী জীবের জীবনপ্রণালী এবং রোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
মৎস্যবিজ্ঞান (Fisheries): মৎস্যবিজ্ঞান শাখায় মাছ, মাছের উৎপাদন, মৎস্য
সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
কীটতত্ত্ব (Entomology): জীব বিজ্ঞানের এই শাখায় কীটপতঙ্গের জীবন,
উপকারিতা, অপকারিতা, ক্ষয়ক্ষতি, দমন ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
অণুজীববিজ্ঞান (Microbiology): ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, আণুবীক্ষণিক ছত্রাক
এবং অন্যান্য অণুজীব সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে অণুজীববিজ্ঞান বলে।
কৃষিবিজ্ঞান (Agriculture): এই শাখায় কৃষিবিষয়ক সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা
করা হয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞান (Medical Science): চিকিৎসা বিজ্ঞান শাখায় মানবদেহ, রোগ,
চিকিৎসা ইত্যাদি সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
জিনপ্রযুক্তি (Genetic Engineering): যে শাখায় জিনপ্রযুক্তি ও এর ব্যবহার
সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে জিনপ্রযুক্তি বিজ্ঞান বলে।
প্রাণরসায়ন (Biochemistry): জীবের প্রাণরাসায়নিক কার্যপ্রণালি, রোগ
ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে প্রাণরসায়ন বলে।
পরিবেশ বিজ্ঞান (Environmental Science): যে শাখায় পরিবেশ সম্পর্কে
আলোচনা করা হয় তাকে পরিবেশ বিজ্ঞান বলে।
সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান (Marine Biology): যে শাখায় সামুদ্রিক জীব নিয়ে
আলোচনা করা হয় তাকে সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান বলে।
বনবিজ্ঞান (Forestry): বন, বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণ সম্পর্কিত
বিজ্ঞানকে বনবিজ্ঞান বলে।
জীবপ্রযুক্তি (Biotechnology): মানব এবং পরিবেশের কল্যাণে জীব ব্যবহারের
প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে জীবপ্রযুক্তি বিজ্ঞান বলে।
ফার্মেসি (Pharmacy): যে শাখায় ঔষধশিল্প, ঔষধের প্রয়োগ, ব্যবহার,
মাত্রা ও প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ফার্মেসি বলে।
বন্য প্রাণিবিদ্যা (wildlife): যে শাখায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও
ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা করা হয় তাকে বন্য প্রাণিবিদ্যা বলে।
বায়োইনফরমেটিকস্ (Bioinformatics): যে শাখায় কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর
জীববিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা ও গবেষণা করা হয় তাকে বায়োইনফরমেটিকস্ বলে। যেমন-
ক্যান্সার বিশ্লেষণ বিষয়ক বিজ্ঞান।
এছাড়াও পোকাদমন, পশুপালন, প্রজননবিদ্যা (Breeding) এগুলো হল জীববিজ্ঞানের কয়েকটি
উল্লেখযোগ্য ফলিত জীববিজ্ঞানের শাখা।
জীববিজ্ঞনের অন্যান্য শাখা
পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে। সাধারণত একজাতীয় উদ্ভিদ বা প্রাণীকে
এক একটি দলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কোন্ বিশেষ দলের জীব নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করা
হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে জীববিজ্ঞানের কিছু বিশেষ শাখার সৃষ্টি হয়েছে; যেমন-
ফাইকোলজিঃ এই শাখায় কেবল শৈবাল সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়।
মাইকোলজিঃ এই শাখায় শুধুমাত্র ছত্রাক সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়।
ভাইরোলজিঃ এই শাখায় শুধুমাত্র ভাইরাস সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়।
ব্যাক্টেরিওলজিঃ এই শাখায় শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়।
হেলমিনথোলজিঃ এই শাখায় শুধুমাত্র কৃমি সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়।
উপরে উল্লিখিত বিভাগগুলোর প্রতিটির মধ্যে আরো অনেক উপবিভাগ বা শাখাপ্রশাখা আছে।
আগেই বলা হয়েছে জীববিজ্ঞানে গবেষণা এখন ব্যাপকভাবে হচ্ছে। যার ফলে এর শাখা
প্রশাখাও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url