খাদ্য ও পুষ্টি কাকে বলে-খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি

খাদ্য ও পুষ্টি মানব দেহের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সঠিক খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে মানব শরীর বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য সকলকেই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।
খাদ্য ও পুষ্টি কাকে বলে-খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি
শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে সকল ধরণের পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্য খেতে হবে।

সূচিপত্রঃ- খাদ্য ও পুষ্টি কাকে বলে-খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি

খাদ্য কাকে বলে?

মায়ের গর্ভে ভ্রুনের সঞ্চার, তারপর জন্ম, আর জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের শরীরে নানা রকমের পরিবর্তন ঘটে যার ফলে শরীরে বৃদ্ধি সাধন, কর্মক্ষমতা অর্জন, কর্মের জন্য শক্তিব্যয় আর শরীরে ক্ষয় পূরণ হয়। এছাড়াও শরীরকে নানাবিধ রোগ জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধক শক্তি সঞ্চয় করতে হয়।
খাদ্য ও পুষ্টি কাকে বলে-খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি
শরীরের এই সমস্ত প্রয়োজন মিটাবার জন্য alpha সব প্রয়োজনীয় জিনিস শরীরে সরবরাহ করতে হয় সেই সব জিনিষের সমষ্টিকেই খাদ্য বলা হয়। অতএব আমরা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। অল্প কথায় বলা যায় খাবারের কাজ হল শরীরের বৃদ্ধি সাধন আর যে কোন ক্ষতির ক্ষয় পূরণ করা, বিভিন্ন কাজের জন্য দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি যোগান, স্বাভাবিক কর্ম তৎপরতার জন্য শরীর কর্মক্ষম রাখা এবং নানাবিধ রোগের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিরোধ শক্তি সঞ্চয় করা।

খাবারের উপাদান

রাসায়নিক বিচারে খাবারকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয় অর্থাৎ ছয়টি উপাদানে বিভক্ত করা হয় যথাঃ আমিষ, শর্করা, স্নেহ বা চর্বি, ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, খনিজ লবণ এবং পানি। একই খাবারে খাদ্যের এই বিভিন্ন উপাদান থাকতে পারে। তবে কোন উপাদান বেশী পরিমাণে এবং কোন উপাদান খুব সামান্য পরিমাণে বিদ্যমান থাকে।

খাদ্যের প্রয়োজন

খাদ্যের এই উপাদান শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন মিটায়, যেমন, আমিষ জাতীয় উপাদান আমাদের দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন করে। শর্করা এবং স্নেহ জাতীয় উপাদান শরীরে কর্মক্ষমতার জন্য শক্তি যোগায়। এই শক্তির ইউনিটকে আমরা ক্যালরী বলি। ভিটামিন ও খনিজ লবণ আমাদের শরীরকে রোগমুক্ত রাখে। শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন মিটাতে যেমন বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান প্রয়োজন হয় তেমনি সুস্থ সবল স্বাস্থ্য গঠনে ও তা বজায় রাখার জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যের প্রয়োজন।

খাদ্যের শ্রেণী বিভাগ

আমরা প্রতিদিন যে সব খাদ্য গ্রহণ করি, পুষ্টিকর গুণ অনুযায়ী সেগুলোকে সাধারনতঃ তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ
১. শক্তিদায়ক খাবার
২. শরীর বৃদ্ধিকারক ও ক্ষয়পূরক খাবার
৩. রোগ প্রতিরোধক খাবার
শক্তিদায়ক খাবার
এই দলে শর্করা এবং স্নেহ উপাদান সমৃদ্ধ খাবার গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শর্করা জাতীয় শক্তিদায়ক খাবারঃ চাল, গম, ভুট্টা, বার্লি, চিনি, আলু, গুড়, মধু ইত্যাদি। স্নেহ জাতীয় শক্তিদায়ক খাবার: মাখন, রান্নার তেল, ঘি, প্রাণীজ চর্বি ইত্যাদি।
শরীর বৃদ্ধিকারক ও ক্ষয়পূরক খাবার
এইগুলি আমিষ উপাদান সমৃদ্ধ খাবার।
ক) প্রাণীজ আমিষ খাদ্যঃ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ও দুগ্ধজাত দ্রব্য ইত্যাদি।
খ) উদ্ভিজ আমিষ খাদ্যঃ সকল প্রকার ডাল, সোয়াবিন, বাদাম, সিমের বিচি ইত্যাদি।
রোগ প্রতিরোধক খাবার
ভিটামিন ও খনিজ লবণ উপাদান সমৃদ্ধ খাবার গুলি এই দলের অন্তর্ভুক্ত। সবুজ শাকসবজি এবং বিভিন্ন ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ বিদ্যমান। এ ছাড়া খাদ্য-শস্য, মাছ, ডিম, ও দুধে কিছু কিছু ভিটামিন ও খনিজ লবণ পাওয়া যায়। দেহের বিভিন্ন কাজ সুষ্ঠভাবে সমাধা করার জন্য অর্থাৎ দেহকে সুস্থ রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকারের ভিটামিনের প্রয়োজন।
এই ভিটামিনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ-
১) পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন- ভিটামিন বি কমপ্লেক্ম বি/১, বি/২, বি/৬.বি/১২, ভিটামিন সি ইত্যাদি।
২) তেলে দ্রবণীয় ভিটামিন যথা- ভিটামিন "এ", ভিটামিন "ডি" ভিটামিন "কে" ও ভিটামিন "ই"।
আমরা প্রায় সবাই বেশী পরিমানে ভাত খাই। সেই তুলনায় শাক- সবজি তরিতরকারী কম খাই। আমাদের উচিত ভাতের পরিমান কিছুটা কমিয়ে সবজির পরিমান বাড়ানো। আমাদের প্রত্যেকদিনের খাবারেই প্রায় আরেকটি খাদ্য দেখা যায়- তা হল ডাল। আমরা মুগ, মুসুরী, কলাই, বুট ইত্যাদি নানা ধরনের ডাল খাই। ডালে আমিষের ভাগ অনেকখানি এবং এর শক্তি চালের মতই।

ডাল খেয়ে আমরা মাছ মাংসের পরিবর্তে আমিষের ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করতে পারি। তবে অনেক সময় দেখা যায় যে, আমরা পরিমাণে খুব অল্প ডাল খাই। ভাতের সংগে যদি ডালের পরিমান একটু বাড়িয়ে দেয়া যায় তবে পরিবারের সবার জন্য পুষ্টির মান বেড়ে যায়। সস্তায় পুষ্টি খেতে হলে বেশী করে শাক-সবজি, ডাল ও মৌসুমী ফল খেতে বলুন। মাছ-মাংস ডিম ইত্যাদি প্রত্যেকদিন খাওয়া অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়।

যার জন্য কম দামী অথচ পুষ্টিতে ভরপুর শাক-সবজি তরকারী বেশী করে খাওয়া দরকার। শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমানে খনিজ লবণ ও ভিটামিন আছে। লাল শাক, কচু শাক, সাজনা শাক, পালং শাক, কলমি শাক, পুঁই শাক ইত্যাদি যথেষ্ট পাওয়া যায়। এই ধরনের গাঢ় সবুজ শাক পুষ্টির দিক থেকে অনেক উন্নত।
বাড়ন্ত শিশুদেরকে যথেষ্ট পরিমাণে খাবার খেতে দিনঃ
তাছাড়া আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে লাল শাক, মিষ্টি কুমড়া, কুমড়া, পটল, ঢেঁরস, বরবটি, করলা, মটরশুটি, শিম, ফুলকপি, বাধাকপি, শশা, বেগুন, আলু, গাজর ইত্যাদি নানা ধরনের তরিতরকারী পাওয়া যায়। এদের সবগুলোতেই যথেষ্ট ভিটামিন বর্তমান। তরকারীর স্বাদ বাড়াবার জন্য যেভাবে রান্না করা হয় তাহাতে বেশীর ভাগ খাবারের পুষ্টি মান কমে যায়।

অনেকক্ষন ধরে রান্না, চরচরি করে ভাজা ইত্যাদি কারণে খাদ্যের গুণ অনেকখানিই নষ্ট হয়ে যায়। তাহা ছাড়া অনেক শাক-সবজি ও তরকারীর বেশ কিছু অংশ ফেলে দেওয়া হয় যা পুষ্টি গুণে ভরপুর। আমাদের কিছু কিছু খাবারে অভ্যাস বদলালে খাবারের পুষ্টির মান অনেক গুণ বেড়ে যাবে এবং পুষ্টির অপচয় কম হবে। মৌসুমী ফল আমাদের দেশে প্রচুর পাওয়া যায় এবং গ্রামাঞ্চলে অনেক বাড়ীতেই এই সব মৌসুমী ফলের গাছ দেখা যায়।

নিয়মিত মৌসুমী ফল খেলে এবং বাচচাদের খেতে দিলে তবেই আমাদের শরীরে ভিটামিনের অভাব হবে না। আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, আমলকি, জলপাই, বেল, কাঁঠাল, কলা ইত্যাদি নানা রকম মৌসুমী ফল পাওয়া যায়। মৌসুমী ফলমূল বেশী করে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

পুষ্টি কাকে বলে ও উৎস

পুষ্টি হচেছ একটি গতিশীল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে খাদ্যের গুণগতমান, খাদ্য তৈরী প্রণালী, হজম, শোষণ ও বিপাক দ্বারা শরীরকে পুষ্ট করে।
পুষ্টির উৎস
প্রায় সব খাবারেই সব রকমের পুষ্টি উপাদান কম বা বেশী পরিমানে থাকে। যে সব খাবারে যে ধরণের পুষ্টি উপাদান বেশী পরিমাণে থাকে সে সব খাদ্যকেই সেই পুষ্টি উপাদানের উৎস বলা হয়। যেমন, চালে প্রায় সব ধরণের পুষ্টি উপাদানই রয়েছে। তবে যেহেতু এতে শ্বেতসার জাতীয় পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী সে কারণেই একে শ্বেতসারের উৎস বলা হয়ে থাকে।
আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় কাজকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
১. বাহ্যিক কাজ
২. আভ্যন্তরীণ কাজ
বাহ্যিক কাজঃ
বাহ্যিক কাজ হলো দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকতে হলে যে সব কাজ করতে হয়। যেমন-হাঁটা, শোয়া, বিশ্রাম, পড়া, কাপড় কাঁচা ইত্যাদি। যে কাজ করতে যতোবেশী দৈহিক পরিশ্রমের প্রয়োজন তাতে ততো বেশী শক্তির প্রয়োজন হয়। সে কারণেই শ্রমিকদের ক্যালরী চাহিদা বেশী।
অভ্যন্তরীণ কাজঃ
বাইরের কাজ ছাড়া দেহের ভিতরে অনবরত প্রাকৃতিক কিছু কাজ চলছে যেমন- শ্বাস-প্রশ্বাস, ইত্যাদি। এসব কাজের জন্য প্রতি ঘন্টায় প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ ক্যালরীর প্রয়োজন হয়।

ক্যালরী কি ও ক্যলরিীর উৎস

ক্যালরী হলো শক্তি মাপার একক। কাজ করার ক্ষমতাকে শক্তি বলা হয় এবং এই শক্তি মাপার এককই ক্যালরী। ক্যালরী ঘাটতি হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, ওজন কমে যায় এবং কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়।
ক্যালরীর উৎস
১. শ্বেতসার বা শর্করা: প্রতিগ্রামে ৪ ক্যালরী চাল, আটা, আলু, মিষ্টি আলু ইত্যাদি।
২. আমিষ: প্রতিগ্রামে ৪ ক্যালরী মাছ, মাংস, ডাল, ডিম, সয়াবিন ডাল ইত্যাদি।
৩. স্নেহ বা চর্বিযুক্ত: প্রতিগ্রামে ৯ ক্যালরী সয়াবীন তেল, সূর্যমূখীর তেল, ঘি, মাখন, চর্বি ইত্যাদি।

পুষ্টি উপাদান হিসেবে পানির কাজ

আমাদের দেহের প্রায় শতকরা ৬০ ভাগই পানি। কোন মানুষ দৈনিক যেসব খাবার খেয়ে থাকে সেসব খাবারের পুষ্টি উপাদান দেহে দ্রবীভূত হয়ে দেহের কাজে লাগাবার জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশী। দেহের অপ্রয়োজনীয় পদার্থ পানির মাধ্যমেই নিষ্কাশিত হয়ে থাকে।

পানি সম্পর্কে সতর্কতা

পানি পান করা বা ব্যবহার সম্পর্কে বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন না করলে পানি বাহিত সংক্রামক রোগ যেমন কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় এসব হতে পারে।
  • টিউবওয়েল বা ফুটানো পানি পান ও ব্যবহার করা উচিত।
  • পানির উৎসের কাছে কখনই পায়খানা বা মলমূত্র ত্যাগ করার স্থান স্থাপন করা উচিত নয়।
  • অন্ততঃ ২০ ফুট দূরত্বে পায়খানা স্থাপন করা উচিত। পানিতে আবর্জনা বা ময়লা ফেলা ঠিক নয়।
  • পানি আর্সেনিক মুক্ত কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
  • একজন লোকের দৈনিক কতটুকু পানি পান করা আবশ্যক
  • একজন স্বাভাবিক সুস্থ লোকের দৈনিক কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করতে হবে।
তথ্যসুত্রঃ (পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক) সহায়িকা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url