ভিটামিন কাকে বলে- ভিটামিন কত প্রকার ও কি কি


ভিটামিন অনেক রকমের হয়ে থাকে। তার মধ্যে অনেকগুলোই স্বাভাবিকভাবে খাবার থেকে পাওয়া যায়। শরীরের কোন মারাত্মক অসুবিধা না হলে সেগুলোর অভাব হয় না। কিছু ভিটামিন আছে যেগুলোর অভাব সচরাচর দেখা যায়, ফলে শরীরে সেগুলোর ঘাটতিজনিত অপুষ্টি বা রোগ দেখা যায়।
ভিটামিন বা খাদ্য প্রাণ কি- ভিটামিন কত প্রকার ও কি কি
তাই খাবার গ্রহনে সে সকল ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার যাতে থাকে তার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।

সূচিপত্রঃ- ভিটামিন বা খাদ্য প্রাণ কি- ভিটামিন কত প্রকার ও কি কি

ভিটামিন বা খাদ্য প্রাণ কি

আমাদের শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ সঠিকভাবে করার জন্য এবং রোগ জীবাণুর হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্য কতগুলো খাদ্য উপাদান প্রয়োজন। এগুলোকে খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন বলা হয়। দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ভিটামিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শরীরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভিটামিন সহায়ককারী হিসাবে কাজ করে।

ভিটামিন বা খাদ্য প্রাণ কত প্রকার

খাদ্যপ্রাণ (ভিটামিন) প্রধানত দুই প্রকার। যেমন-
চর্বিতে দ্রবনীয় ও পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন
(১) চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন (Fat soluble Vitamins)
  • ভিটামিন- এ (A)
  • ভিটামিন- ডি (D)
  • ভিটামিন-ই (E)
  • ভিটামিন- কে (K)
(২) পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন (Water soluble Vitamins)
(ক) ভিটামিন-"বি" কমপ্লেক্স
  • থায়ামিন-(বি)
  • রাইবোফ্লেভিন- (বি২)
  • নিকোটিনিক এসিড/ নিয়াসিন (বি৩)
  • প্যানটোথেনিক এসিড (বি৫)
  • পাইরিডক্সিন- (বি৬)
  • ফলিক এসিড (বি৭)
  • সায়ানো কোবালামিন ( বি১২)
(খ) ভিটামিন-সি (Ascorbic acid)

শরীরে ভিটামিন “এ” -র কাজ

১. চোখের দৃষ্টিকে ঠিক রাখে।
২. শরীরের চামড়া মসৃণ রাখে।
৩. ঘন ঘন সর্দি কাশি থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
৪. চোখের রডস্ (স্বল্প আলোতে দেখার জন্য) তৈরীতে সাহায্য করে।
৫. আবরণী কলার বৃদ্ধি ও পরস্পরের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনী বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৬. রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।

ভিটামিন “এ” -র উৎস

(ক) অধিক পরিমাণে বিদ্যমানঃ সামুদ্রিক মাছের তেল (যেমন কডলিবার অয়েল), যকৃত।
(খ) স্বাভাবিক পরিমাণে বিদ্যমানঃ ঘি, মাখন, ডিম, গাজর, সবুজ শাক-সবজি ও পাকা হলুদ রংয়ের ফল।
(গ) মোটামুটি পরিমাণে বিদ্যমানঃ দুধ।
ভিটামিন 'এ' র দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণঃ
(১) এক বছরের নীচে শিশুদেরঃ ৪০০ মিলিগ্রাম।
(২) এক বছরের উপরের শিশুদেরঃ ২৫০-৬০০ মিলিগ্রাম।
(৩) পূর্ণ বয়সেরঃ ৬০০-৭৫০ মিলিগ্রাম
(৪) স্তনদানকারী মায়েদেরঃ ১১৫০ মিলিগ্রাম এর উপরে।
(৫) কিশোর-কিশোরীঃ ৩০০-৬০০ মিলিগ্রাম।

ভিটামিন “এ” র অভাব জনিত সমস্যা

(১) শরীরে ভিটামিন “এ” -র অভাবজনিত অবস্থায় প্রথম যে সমস্যা দেখা যায় তা হলো রাত কানা বা Nigh Blindness। রাত কানা রোগে মৃদু আলোতে দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটে। ফলে শুধু রাতেই নয় দিনের বেলাতেও আবদ্ধ অন্ধকারাচছন্ন ঘরে দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটে। শরীরে যদি ভিটামিন 'এ'র অভাবজনিত সমস্যা চলতেই থাকে তবে আস্তে আস্তে চোখের কনজাংটিভা ও কর্নিয়া (অক্ষিগোলকের বহিরাবরণ) শুকিয়ে যায় এবং অনেক সময় ক্ষতের সৃষ্টি করে অন্ধত্বের সৃষ্টি করে।
(২) চর্ম শুস্ক ও খোঁসযুক্ত হয় ও অমসৃণ হয়ে যায়।
(৩) ভিটামিন “এ” র অভাবে ডায়রিয়া, হাম, জলবসন্ত, নিউমোনিয়া সহ অন্যান্য সংক্রামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
(8) শারিরীক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে।
(৫) জননকোষের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়।
(৬) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

যারা ভিটামিন "এ"র অভাবে ভোগে

৬ বছরের নীচে শিশুরা ও গর্ভবতী মায়েরাই ভিটামিন 'এ'র অভাবজনিত সমস্যায় বেশী ভোগে।
যে সমস্ত শিশু ডায়রিয়া, হাম, জলবসন্ত ও মারাত্মক সংক্রামক ব্যধিসহ অপুষ্টিতে ভোগে তারাই সাধারণত ভিটামিন 'এ'র অভাবজনিত সমস্যায় পতিত হয়।
উপরোক্ত রোগে আক্রান্ত শিশুদের ও গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধ খাবার ও বাড়তি ভিটামিন 'এ' দেয়া বাঞ্চনীয়। ৬ বৎসরের নীচে সকল শিশুদের ও গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন 'এ' খাওয়ানোর নির্দেশ রয়েছে।
(ক) ৬ থেকে ১২ মাসের শিশুদের: ১ লাখ IU (আন্তর্জাতিক ইউনিট) মুখে
(খ) ১২ মাসের উপরে শিশুদের: ২ লাখ IU মুখে ৬ মাস পর পর ৬ বছর বয়স পর্যন্ত।
স্তন্যদানকারী মায়েদেরঃ শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর ২৮ দিনের মধ্যে ২ লাখ IU (তাহলে মায়ের দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ নিঃসৃত হয় ফলে শিশু ভিটামিন 'এ'র অভাবজনিত সমস্যায় ভোগে না।)

ভিটামিনের পুষ্টিকর খাবার

দামী খাবার সস্তা খাবার
সরু চালের ভাত, পাউরুটি, বিস্কুট মোটা চালের ভাত, আটার রুটি, গোল আলু, মিষ্টি আলু
বড় মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ডাল (মুগ, মুসুরী, কলাই), ছোট মাছ (মলা, কেচকি, টেংড়া) সীমেরবীচি/সীম, বরবটি, চীনা বাদাম
দুধ, ডিম, পনির, কলিজা লাউ শাক, মুলা শাক লাল শাক, পুঁই শাক, সাজনা শাক, সাজনা
আংগুর, আপেল, বেদানা, কমলা পেয়ারা, টমেটো, পেঁপে, জাম্বুরা, আমলকি, কাঁঠাল, কলা
ঘি তেল
তথ্যসুত্রঃ (পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক) সহায়িকা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url