বিশ্বগ্রামের ধারণা
মানুষ সরাসরি কথা বলে, চিঠি-পত্র লিখে, বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গী প্রদর্শন করে, টেলিফোন, মোবাইল বা অন্য কোন ডিটিজাল ডিভাইস ইত্যাদির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করে বার্তা পাঠায়।
যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষ পরিবেশের অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানের (যেমন-মানুষ বা কম্পিউটার) সাথে তার মনের ভাব প্রকাশ করে এবং প্রয়োজনীয় ডেটা ও তথ্য আদান-প্রদান করে। যোগাযোগের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Communication যা ল্যাটিন শব্দ "commünicare" থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো “to share" বা ভাগাভাগি করা। এখানে ভাগাভাগি বলতে ডেটা বা তথ্যকে ভাগাভাগি বুঝানো হয়েছে। উইকিপিডিয়া অনুসারে- Communication is the act of conveying intended meanings from one entity or group to another through the use of mutually understood signs and semiotic rules."1
অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুসারে যোগাযোগ হলো-" the imparting or exchanging of information by speaking. writing, or using some other medium" যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রেরক (Sender) কোন মাধ্যমের
(Medium) সাহায্যে কোন বার্তা (Message) প্রাপকের (Receiver) কাছে পাঠায়। প্রাপক তা গ্রহণ করে প্রেরককে ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়া জানায়। এই প্রক্রিয়ায় প্রেরক বা প্রাপক এক বা একাধিক হতে পারে। যোগাযোগ বিভিন্ন ধরনের (Types) হতে পারে। যথা-
> যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে দ্বিতীয় অধ্যায়ের ডেটা কমিউনিকেশনের উপাদান অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেি
১। মৌখিক বা বাচনিক (Verbal) যোগাযোগ- • মুখোমুখি (Face to face) অথবা টেলিফোন, মোবাইল বা স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেটের ভিওআইপি সফটওয়্যার যেমন-
স্কাইপি (Skype), ভাইবার (Viber) ইত্যাি ব্যবহার করে কথা বলা।
•স ব্যবহার করে কথা রেকর্ড
করা, কথা রেকর্ড করে টেলিফোনের উত্তর দেওয়ার ব্যবস্থা, ভয়েস মেইল ইত্যাদি।
• টেলিকম্পফারেন্সিং ও ভিডিও কনফারেন্সিং।
• রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি।
(Non-Verbal)
২। চনিক (Non-verbal) যোগাযোগ- অবাচনিক যোগাযোগ হলো মুখের কথা ব্যতীত বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গীর সাহায্যে ভাব প্রকাশ ও তথ্য আদান-প্রদান করা। যেমন-মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি, চোখের বা হাতের ইশারা ইত্যাদি।
৩। লিখিত (Written) যোগাযোগ-
লিখিত যোগাযোগ হলো হাতে লেখা বা ডিজিটাল ফরমেটের ডকুমেন্ট (Documents), চিঠি-পত্র (Letters) ইত্যাদি।
এগুলোর জন্য ই-মেইল (e-mail), ওয়েব পেইজ (Web page), ফ্যাক্সিমিলি বা ফ্যাক্স (Fax), এসএমএস (Short
Message Services), সংবাদপত্র ইত্যাদি। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দ্রুততম যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো ইলেকট্রনিক যোগাযোগ মাধ্যম। সারা বিশ্বে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির ফলে মানুষ মূহুর্তের মধ্যেই টেলিফোন, মোবাইল বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন জায়গায় যোগাযোগ করতে পারে। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে যোগাযোগের জন্য অনেকগুলি মাধ্যম রয়েছে, তার মধ্যে নিম্নে কয়েকটি জনপ্রিয় মাধ্যমের ব্যবহার উল্লেখ করা হলো-
১.২.১ ইলেকট্রনিক মেইল (Electronic Maily ইলেকট্রনিক মেইল বা ই-মেইল হলো একজন বার্তা লেখকের কাছ থেকে এক বা একাধিক
প্রাপকের কাছে কোন বার্তা বা ডিজিটাল মেসেজ বিনিময় করার নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।
উইকিপিডিয়া অনুসারে Electronic mail or e-mail is a method of exchanging
digital messages from an author to one or more recipients." সনাতন ডাক ব্যবস্থার পরিবর্তে মানুষ এখন ডিজিটাল ডাক ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। ডিজিটাল ডাক ব্যবস্থার অন্যতম একটি উদাহরণ হলো ইলেকট্রনিক মেইল যাকে সংক্ষেপে ই-মেইল বলা হয়। ইহা একটি আন্তর্জাতিক ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ও বিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যম। ই-মেইলের মাধ্যমে প্রেরিত তথ্যে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হয়। প্রেরিত তথ্য প্রাপকের অনুপস্থিতেই কম্পিউটার টার্মিনালের মাধ্যমে প্রাপকের হিসাবে জমা হয়। যোগাযোগের জন্য ই-মেইল এমন একটি ডাক ব্যবস্থা যা সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের সমন্বয়ে গঠিত এবং ইহা বিদ্যুৎ গতিতে নির্ভুলভাবে তথ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম। বর্তমানে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোনের সাহায্যে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যেকোন জায়গা থেকেই ই-মেইল করা যায় বা ই-মেইল গ্রহণ করা যায়। কাজেই ই-মেইল সার্ভিস ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন (১) ইন্টারনেট সংযোগ বিশিষ্ট একটি কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন, (২) ই-মেইলে বার্তা তৈরি, ই-মেইল প্রেরণ ও গ্রহণ করার একটি সফটওয়্যার এবং (৩) প্রেরক ও প্রাপকের ই-মেইল ঠিকানা। ই-মেইল ঠিকানার দুটি অংশ থাকে। প্রথম অংশটি ব্যবহারকারীর পরিচিতি এবং দ্বিতীয় অংশটি হলো ডোমেইন নেইম। যেমন- mujib@shikkha.com এখানে mujib হলো ব্যবহারকারীর পরিচিতি এবং shikkha.com হলো ব্যবহারকারীর ডোমেইনের নাম। কিছু প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে ই-মেইল সেবা প্রদান করে। যেমন- yahoo.com, gmail.com ইত্যাদি। প্রথম ইমেইল আবিষ্কারকের নাম নিয়ে মতবিরোধ আছে। ১৯৭৪ সালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী শিতা আইয়ডুৱাই (Shiva Ayyadurai) সর্বপ্রথম ইমেইল আবিষ্কার করেন বলে দাবী করেন।
* চতুর্থ অধ্যায়ে (ওয়েব ডিজাইন পরিচিতি) ডোমেইন নেইম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
উল্লেখ্য তার দাবীর স্বপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৮৪ সালের ইস্যুকৃত কপিরাইট সনদ রয়েছে। তবে অনেকে রেমন্ড উি (Raymond Tomlinson) কে ইমেইলের জনক মনে করেন। তিনি ১৯৭২ সালে সর্বপ্রথম আরপানেট ব্যবহার করে পা ইমেইল প্রেরণ করেন। এই মেইলে তিনি "@" চিহ্ন ব্যবহার করেন।
ই-মেইলের সুবিধা-
১। ডাক তুলনায় ই-মেইল অত্যন্ত দ্রুত গতির এবং তুলনামূলক খরচ অত্যন্ত কম।
২। গ্রাহকের সুবিধাজনক সময়ে অথবা সার্বক্ষণিকভাবে অর্থাৎ যে কোন সময়ে ই-মেইল প্রেরণ বা গ্রহণ করা যায়।
৩। ই-মেইল বহুজনের কাছে একসঙ্গে প্রেরণ করা যায়। ৪। প্রেরক বা গ্রাহক চাইলে ই-মেইল অনেকদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।
ই-মেইলের অসুবিধা-
১। ই-মেইল গ্রহণ বা প্রেরণের জন্য ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয়।
২। ই-মেইলের সাথে স্প্যাম ও ভাইরাস ফাইল সংযুক্তি (অ্যাটাচমেন্ট) হিসেবে আসতে পারে। ফলে কম্পিউটা সিস্টেমের ক্ষতি হতে পারে। ৩। ইমেইল ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে গেলে তা ক্ষতিকর বা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার হতে পারে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
১.২.২ টেলিকনফারেন্সিং (Teleccelerancing)
টেলিকনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন সভা, সেমিনার বা দলবদ্ধভাবে যোগাযোগ করা যায়। ভিন্ন ভৌগলিক দূরত্বে কিছু ব্যক্তি অবস্থান করে টেলিযোগাযোগ সিস্টেমের মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে কোন সভা অথবা সেমিনার অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়াকে বলা হয় টেলিকনফারেন্সিং।
উইকিপিডিয়া অনুসারে seleconference or teleseminar is the. live exchange and mass articulation of information among several persons and machines remote from one another but linked by a telecommunications system"
বিশ্বের যে কোন জায়গা থেকে যেকোন ব্যক্তিই টেলিফোন মাধ্যম ব্যবহার করে টেলিকনফারেন্স করতে পারে। এই ব্যবস্থ সভায় অংশগ্রহণকারীরা কী বোর্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কম্পিউটারে তাদের বক্তব্য বা জবাব পাঠায়। বিভিন্ন ধরনের টেলিকনফারেন্সিং ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন-পাবলিক কনফারেন্স, ক্লোজড কনফারেন্স এবং রিড অনলি কনফারেন্স। পাবলিক কনফারেন্স সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেহ এই কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করতে পারে। ক্লোজড কনফারেন্স সবার জন্য উন্মুক্ত নয়, পাসওয়ার্ড প্রটেকটেড। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড দিয়ে এই কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করা যায়। টেলিকনফারেন্সিং সফটওয়্যার ব্যবস্থার মাধ্যমে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ আজ দূরে অবস্থান করেও একে অপরের কাছাকাছি থাকতে পারছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল (Alexander Graham Bell) ১৮৭৬ সালে সর্বপ্রথ টেলিফোন আবিষ্কারের পর থেকেই এর আরো অধিক উন্নয়ন অব্যহত থাকে।
১.২.৩ ভিডিও কনফারেন্সিং (Video Conferencing)
১৯২০ সালে জন লজি বেয়ার্ড (John Logie Baird) ও 'এটি এন্ড টি'র বেল ল্যাব (AT&T Bell Labs) সর্বপ্রথম ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম উন্নয়ন করেন এবং ১৯২৭ সালে তা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেন। তখন থেকে অদ্যবদি এর উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ১৯৬৮ সালে ডগ এঙ্গেলবার্ট (Doug Engelbart) সর্বপ্রথম কম্পিউটার এবং ভিডিও কনফারেন্সিংকে সমন্বিত করে পূর্ণাঙ্গভাবে উভমূখী যোগাযোগ প্রক্রিয়া হিসাবে ইন্টারনেটের সাথে সম্পৃক্ত করেন। কমিউনিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুই বা ততোধিক ভৌগলিক অবস্থানে অডিও এবং ভিডিও এর যুগপৎ উভমুখী স্থানান্তর করার প্রক্রিয়াকে ভিডিও কনফারেন্সিং বলে। টেলিকনফারেন্সিং এর মতোই ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারীরা কথোপকথন করতে পারে। অধিকন্ত ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থায় মনিটর বা পর্দায় অংশগ্রহণকারীরা পরস্পরের সম্মুখীন হয়ে একে অন্যকে দেখে কথোপকথনে অংশগ্রহণ করে। এটি একটি ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বা এক দেশ হতে অন্য দেশে যে কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিং করতে পারে। আমাদের দেশের লোকজন এখন স্কাইপি (Skype) বা ইয়াহু মেসেঞ্জার ব্যবহার করে খুব সহজেই ভিডিও কনফারেন্সিং করে থাকেন। কম্পিউটার কেন্দ্রীক ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য যে উপকরণগুলো প্রয়োজন হয় তা হলো-ওয়েব ক্যামেরা, ভিডিও ক্যাপচার কার্ড, সাউন্ড কার্ড, স্পীকার, মাইক্রোফোন, মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার, মডেম, টেলিফোন লাইন/ইন্টারনেট সংযোগ ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইত্যাদি। তবে স্মার্ট ফোনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সংযোগ ও সফটওয়্যার ছাড়া তেমন কিছুর প্রয়োজন হয় না। প্রফেশনাল ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমের জন্য বিশেষায়িত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার পাওয়া যায়। এগুলো যে সকল প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন তাদের মধ্যে সিসকো, পলিকম, বুজিপ, রেডভিশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ওয়েব কনফারেন্সিং সফটওয়্যার পরিচিতি ওয়েব কনফারেন্সিং বলতে ইন্টারনেট বা ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়ের (www) প্লাটফর্মে বিভিন্ন মিডিয়া (অডিও, ভিডিও অথবা উভয়) ব্যবহার করে ওয়েব সেমিনার বা ওয়েবাইনারস (webinars), ওয়েরকাস্ট এবং ওয়েব মিটিংসহ বিভিন্ন ধরণের অনলাইন কনফারেন্সিং এবং সহযোগী পরিষেবাকে বুঝানো হয়। ওয়েব কনফারেন্সিং সফটওয়্যারে সাধারণত ভিডিও কনফারেন্সিং, অডিও কনফারেন্সিং, ভিন্ন ভৌগলিক দূরত্বে অবস্থান করে সভা করার উপাদানসম্বলিত সফটওয়্যার অথবা ভার্চুয়াল মিটিং প্লাটফর্ম ও এর সহযোগী বিভিন্ন সরজ্ঞাম সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত থাকে। ভিডিও কনফারেন্সিং সফ্টওয়্যার উপস্থিতিদের দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও মুখোমুখি সাক্ষাত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, অন্যদিকে অডিও কনফারেন্সিং সফ্টওয়্যার সাধারণ টেলিফোনের তুলনায় কম ব্যয়ে ফোন করা বা টেলিকনফারেনন্সিং করার সক্ষমতা তৈরি করে। ওয়েব কনফারেন্সিংয়ের সহযোগী বিভিন্ন সরঞ্জাম সফটওয়্যারের মধ্যে ভার্চুয়্যাল হোয়াইট বোর্ড, ফাইল ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা, অভ্যন্তরীণ বার্তাপ্রেরণ, ইন-মিটিং চ্যাট রুম এবং মিটিং রেকর্ডিং টুলসগুলো অন্যতম।
করোনা (COVID-১৯) মহামারীর আগে ব্যবসা এবং গ্রাহক বাজার জুড়ে এই পণ্যগুলির চাহিদা বাড়ছিল। ২০২০ সালের শুরুর দিকে এই রোগের বিস্তার কমাতে কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করা প্রয়োজন দেখা দেয়। এই নতুন দূরবর্তী স্থান বা বাড়িতে থেকে কাজের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে ওয়েব কনফারেন্সিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে সভার সংখ্যা অনেকগুণ বাড়িয়েছে। স্মার্ট ফোন, ট্যাব ও আধুনিক ল্যাপটপে ইন্টারনেট, ওয়েব ক্যামেরা, মাইক, স্পীকার ইত্যাদি বিল্ট ইন অবস্থায় থাকার ফলে এতে সহজেই ওয়েব কনফারেন্সিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়। তবে ডেস্কটপ কম্পিউটারে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করার জন্য ওয়েবক্যাম, মাইক্রোফোন, হেডসেট, অডিও স্পিকার ইত্যাদি হার্ডওয়্যার প্রয়োজন
ওয়ের কনফারেন্সিং সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্য
• ভিডিও কনফারেন্সিং ভিডিও কনফারেন্সিং সফটওয়্যার উপযুক্ত হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে ভিন্ন ভৌগলিক দূরত্বে অবস্থানকারী ব্যক্তিদেরকে মিটিং চলাকালীন সময়ে ভার্চুয়ালভাবে মুখোমুখি থাকার অভিজ্ঞতা দেয়। এই সফ্টওয়্যার একটি ভার্চুয়াল সভাঘর স্থাপন করে যেখানে দু'জন ব্যক্তি বা কয়েক হাজার অংশগ্রহণকারী একত্র হতে পারে। এক্ষেত্রে সভার মডারেটর বা উপস্থাপক সভার নিয়ন্ত্রণ করেন।
• অডিও কনফারেন্সিং ওয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (ভিওআইপি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওয়েব কনফারেন্সিং সফ্টওয়্যারে যে কোনও জায়গা থেকে ফোন কল এবং কনফারেন্স কল করার জন্য সহজ ও তুলনামূলক সস্তা আইপি টেলিফোনি ব্যবস্থা সংযুক্ত থাকে। অডিও কনফারেন্সিং সফ্টওয়্যার প্রায়শই কোনও ভিডিও কনফারেন্সিং সফটওয়্যারের সাথে অন্তর্ভুক্ত থাকে কারণ ব্যবহারকারি যাতে তার ক্যামেরা ফাংশন চালু না করেও সভায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
• ভিডিও স্ট্রিমিং: মডারেটর বা সভার উপস্থাপক তার কম্পিউটার থেকে অন্য সবার কাছে ভিডিও বা অন্যান্য মিডিয়া। ফাইল প্রদর্শন ও করতে বা শেয়ার করতে পারেন।
• স্লাইডশো উপস্থাপনা: উপস্থাপক কোন স্লাইড উপস্থাপনার আলোচনা এবং ব্যাখ্যা করার সময় সকল
অংশগ্রহণকারীরা স্লাইড শোটি দেখতে পারেন। • ফাইল, স্ক্রিন এবং অ্যাপ্লিকেশন শেয়ার করে নেওয়া: সভার মডারেটরের দ্বারা শেয়ার করা কোন ফাইল, স্ক্রিন এবং অ্যাপ্লিকেশন অংশগ্রহণকারীরা ব্যবহার করতে পারে। উপস্থাপক তার উপস্থাপনা চলাকালীন সময় কী দেখছেন এবং কী করছেন তাও তিনি দেখতে পারেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
অভ্যন্তরীণ বার্তা বা টেক্সট মেসেজ চ্যাট। সভায় অংশগ্রহণকারীরা "নিঃশব্দ বা Muted" হওয়া সত্ত্বেও মডারেটরের জন্য প্রশ্ন বা অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের কাছে মন্তব্য বা অভ্যন্তরীণ বার্তা প্রেরণ এবং প্রশ্ন-উত্তর ইত্যাদি চ্যাট করতে পারেন।
হোয়াইট বোর্ড। ভার্চুয়াল (বা বাস্তব) সাদা বোর্ড কোন সভায় অংশগ্রহণকারীর মন্তব্য, চিত্র আকা এবং তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যার করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
• তফসিলযুক্ত সভা এবং ক্যালেন্ডার একীকরণ ওয়েব কনফারেন্সিং অ্যাপ্লিকেশনে মিটিং পরিকল্পনা করা যায়। সভায় অংশগ্রহণকারীদের সাথে মিটিং লিঙ্ক বিতরণ কাজে সহায়তা করতে প্রায়ই ব্যবহারকারীর বিদ্যমান ক্যালেন্ডারের সাথে নির্ধারিত সভা অন্তর্ভুক্ত করে দেয়। ফলে ক্যালেন্ডারের আমন্ত্রণ থেকে সরাসরি মিটিং সফটওয়্যারটি চালু করা যায়। ব্যবহারকারী ইমেলের মাধ্যমে সভার আমন্ত্রণ প্রেরণ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওয়েবিনারের জন্য উন্মুক্ত সভার লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন।
সভার গোপনীয়তা রক্ষা করা বা এনক্রিপ্ট করা: নিরাপদ ওয়েব কনফারেন্সিং সফটওয়্যার সভার গোপনীয়তা রক্ষা করে থাকে যাতে ওয়েব অনুপ্রবেশকারীরা বাণিজ্য গোপনীয়তা চুরি করতে না পারে। সভায় নতুন উপস্থিতদের পরিচয় যাচাই করার জন্য ভার্চুয়্যাল ওয়েটিং রুম বা অনুমতি সেটিংসের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাছাড়া তথ্য চুরি ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের এনক্রিপশন পদ্ধতিরও প্রয়োগ করা হয়। সভা রেকর্ডিং সুবিধা: ওয়েব কনফারেন্সিং সফ্টওয়্যারে এমপি ৩ বা এমপি ৪ ফাইল ফরমেটে সম্পূর্ণ সভা অথবা সভার প্রয়োজনীয় অংশের ভিডিও বা অডিও রেকর্ড করার সুবিধা থাকে। ফলে সভার কার্যপত্র তৈরি অথবা কনফারেন্সটি বারবার ব্যবহার করার সুবিধা পাওয়া যায়।
জনপ্রিয় ওয়ের কনফারেন্সিং সফটওয়্যারের মধ্যে জুম (Zoom), ফেসটাইম (FaceTime ), ফেসবুক মেসেঞ্জার রুম (Facebook Messenger Room), মাইক্রোসফট টিম (Microsoft Team) সিসকো ওয়েবএক্স (Cisco Webex), স্কাইপ (Skype) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ওয়ের কনফারেন্সিং সফটওয়্যারের প্রয়োগ/ব্যবহার: ভিন্ন ভৌগলিক দূরত্বে অবস্থান করে রাজনৈতিক সভা বা সম্মেলন করা, বৈজ্ঞানিক সেমিনার বা ওয়েবাইনার আয়োজন করা, শিক্ষা ক্ষেত্রে ভার্চুয়্যাল ক্লাশরুম তৈরি করা, ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে সভা করা, টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্রে ডাক্তার, রোগী ও হসপিটালের সাথে সভা করা, সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে কমিউনিটির মধ্যে ভার্চুয়্যাল গেট-টুগেদার আয়োজন করা ইত্যাদি কাজে বর্তমানে ওয়েব কনফারেন্সিং প্রযুক্তি ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url