বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জায়গা

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জায়গা

মহাস্থানগড়

বাংলার প্রাচীনতম জনপদ ছিল পুঞ্জ বা পৌণ্ড্র। পুঞ্জ রাজ্যের রাজধানী ছিল পুঞ্জনগর। পুণ্ড্রনগরের বর্তমান নাম মহাস্থানগড়। এটি মৌর্য ও গুপ্ত রাজবংশের প্রাদেশিক রাজধানী ছিল। করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত শীলাদেবীর ঘাট। এখা নে রয়েছে অশোক নির্মিত বৌদ্ধ স্তম্ভ যা বেহুলার বাসর ঘর নামে পরিচিত। মহাস্থানগড়ের দর্শনীয় স্থান শাহ সুলতান বলখীর মাজার, পরশুরামের প্রাসাদ, খোদার পাথর ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, লক্ষ্মীন্দরের মেধ, কালীদাহ সাগর প্রভৃতি।

সোনারগাঁও

মুঘল সম্রাট আকবরের সময় বার ভূঁইয়া নেতা ঈসা খাঁ সোনারগাঁও বাংলার রাজধানী স্থাপন করেন। সোনারগাঁও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। সোনারগাঁও পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী এবং উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত একটি বিস্তৃত জনপদ ছিল। এর পূর্ব নাম সুবর্ণগ্রাম। ঈসা খাঁর স্ত্রী সোনা বিবির নামানুসারে সোনারগাঁও এর নামকরণ করা হয়। সোনা বিবির মাজার, পাঁচবিবির মাজার, পাঁচ পীরের মাজার, গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মাজার, হোসেন শাহ নির্মিত একটি সুদৃশ্য মসজিদ, ঈসা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, গ্রান্ড- ট্রাঙ্ক রোড ইত্যাদি সোনারগাঁর দর্শনীয় স্থান। সোনারগাঁও এর পানাম নগরী উনিশ শতকের উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ছিল।

লালবাগের কেল্লা

লালবাগের কেল্লা মুঘল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি পুরোনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত একটি দূর্গ। এই কেল্লার পূর্ব নাম আওরঙ্গবাদ দূর্গ। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে তার তৃতীয় পুত্র শাহজাদা মোহম্মদ আযম শাহ ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে এর নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকে। এর মধ্যে তার কন্যা পরিবিবি (প্রকৃত নাম ইরান দুখত) সমাধি অবস্থিত। কেল্লার উত্তর-পশ্চিমাংশের বিখ্যাত শাহী মসজিদ অবস্থিত। এটি মুঘল আমলের সর্বচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন।

হোসেনি দালান

হোসেনি দালান বা ইমাম বাড়া ঢাকা শহরের বকশিবাজার এলাকার একটি শিয়া উপাসনালয়। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে এটি নির্মিত হয়। হিজরী ১০৫২ সনে সৈয়দ মীর মুরাদ এটি নির্মাণ করেন।

উত্তরা গণভবন

দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী (উত্তরা গণভবন) নাটোর জেলায় অবস্থিত। এককালে দিঘাপতিয়া মহারাজাদের বাসস্থান ছিল। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের উত্তরাঞ্চলীয় সচিবালয়। ১৯৪৩ সালে রাজা দয়ারাম রায় এটি নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালে প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। পরে রাজা প্রমদা নাথ রায় এটি পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন গভর্নর মোনায়েম খান একে গভর্নরের বাসভবন হিসাবে উদ্বোধন করেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই রাজবাড়ীর নামকরণ করেন 'উত্তরা গণভবন' (Uttara Ganobhaban)।

আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল (Ahsan Manzil) পুরানো ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের প্রাসাদ। এর প্রতিষ্ঠাতা নবাব আব্দুল গণি। তিনি তাঁর পুত্র খাজা আহসানউল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন। এর নির্মাণকাল ১৮৫৯-১৮৬২ সাল। ১৮৯৭ সালে ঢাকায় ভূমিকম্প আঘাত হানলে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীকালে নবাব আহসানউল্লাহ তা পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯০৬ সালে আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এক সভায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে আহসান মঞ্জিলকে 'আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে' রূপান্তর করা হয়।

গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

  • বাংলাদেশের প্রাচীনতম শহরের নাম পুণ্ড্রবর্ধন।
  • প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন জনপদটির বর্তমান নাম মহাস্থানগড়।
  • মহাস্থানগড় অবস্থিত বগুড়া জেলার করতোয়া নদীর তীরে।
  • খোদার পাথর ভিটা অবস্থিত মহাস্থানগড়ে।
  • বৈরাগীর ভিটা অবস্থিত বগুড়া জেলা মহাস্থানগড়ে।
  • সোনারগাঁও বাংলাদেশের রাজধানী ছিল মোঘল আমলে।
  • সোনরগাঁওয়ের পূর্বে বাংলার রাজধানী ছিল মহাস্থানগড়ে।
  • বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ে স্থাপন করেন- ঈসা খাঁ।
  • ময়নামতি অবস্থিত – কুমিল্লায়।
  • ময়নামতিতে নিদর্শন পাওয়া যায় বৌদ্ধ সভ্যতার।
  • ময়নামতির অপর দুটি নাম রোহিতগিরি ও লালমাই।
  • আহসান মঞ্জিল অবস্থিত ঢাকার ইসলামপুরে।
  • লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তরে কবর রয়েছে শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরী বিবির (মৃত্যু ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে)।
  • লালবাগ দুর্গের অভ্যন্তরে সমাহিত শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরী বিবির আসল নাম - ইরান দুগ্ধ।
  • বড় কাটরা অবস্থিত ঢাকার চকবাজারে।
  • ঢাকার ঐতিহাসিক বড় কাটরা নির্মাণ করেন শাহ সুজা।
  • ছোট কাটরা অবস্থিত রাজধানী ঢাকার চকবাজারে।
  • ছোট কাটরা নির্মাণ করেন শায়েস্তা খাঁন।
  • হোসনি দালান অবস্থিত পুরান ঢাকার বকশিবাজারে।

■ ঐতিহাসিক স্থানের পুরনো নাম

বর্তমান নাম পুরনো নাম
বাংলাদেশ বং, বঙ্গ, বাঙালা, পূর্ব পাকিস্তান
ঢাকা জাহাঙ্গীরনগর/ঢাবেকা/চুক্কা
চট্টগ্রাম ইসলামাবাদ/পোট্রো গ্রানডে/শাতিলগঞ্জ
খুলনা জাহানাবাদ
বরিশাল চন্দ্রদ্বীপ/বাকলা/ইসমাইলপুর
সিলেট শ্রীহট্ট, জালালাবাদ (মুঘল আমলে)
কুষ্টিয়া নদীয়া
সাভার সাভাউর
মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুর
ফেনী শমশেরনগর
ময়নামতি রোহিতগিরি
রাজবাড়ী গোয়ালন্দ
গজারিয়া দোয়ার
গাইবান্ধা ভবানীগঞ্জ
উত্তরবঙ্গ বরেন্দ্রভূমি
দিনাজপুর গণ্ডোয়ানাল্যান্ড
রাঙ্গামাটি হরিকেল
শরীয়তপুর ইদ্রাকপুর পরগনা
সাতক্ষীরা সাতঘরিয়া
বাগেরহাট খলিফাতাবাদ
সোনারগাঁও সুবর্ণগ্রাম
ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ
নোয়াখালী সুধারাম/ভুলুয়া
শাহবাগ বাগ-ই-শাহেনশাহ (মুঘল আমলে)
জামালপুর সিংহজানী
কুমিল্লা ত্রিপুরা পরগনা
কক্সবাজার ফালকিং
টঙ্গী টঙ্গী
মহাস্থানগড় পুণ্ড্রবর্ধন
গাজীপুর জয়দেবপুর
ফরিদপুর ফতেহাবাদ

প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

বৌদ্ধ বিহার অবস্থান
সোমপুর বিহার নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত। বৌদ্ধ সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন
শালবন বিহার কুমিল্লা জেলার ময়নামতিতে অবস্থিত। রাজাধিরাজ ভবদেব দ্বারা তৈরি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার ৭ম- ৮ম শতক।
আনন্দ বিহার কুমিল্লা জেলার ময়নামতিতে লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে রাজা আনন্দ দেব কর্তৃক নির্মিত প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার
মহামুনি বিহার চট্টগ্রামের রাউজানে অবস্থিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহার
সীতাকোট বিহার দিনাজপুরে অবস্থিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। ৫ম-৬ষ্ঠ শতক (দেশের সবচেয়ে প্রাচীন)
রাজবন বৌদ্ধ বিহার রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই হ্রদের তীরে অবস্থিত প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী স্থান।
জগদ্দল বিহার নওগাঁ জেলায় অবস্থিত। পাল রাজাদের শাসনামলে নির্মিত একটি বৌদ্ধ বিহার।
ভাসু বিহার বগুড়ার মহাস্থানগড়ে অবস্থিত। প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার বিখ্যাত স্থান।
সীমা বৌদ্ধ বিহার পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। বৌদ্ধ সভ্যতার বিখ্যাত স্থান।
  • বাংলাদেশের প্রাচীনতম বৌদ্ধ বিহার শালবন বিহার।
  • শালবন বিহারের স্রষ্টা ভবদেব।
  • শালবন বিহার অবস্থিত কুমিল্লা জেলার ময়নামতি ও লালমাই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে।
  • শালবন বিহার নির্মাণ করা হয় ৮ম শতকের শেষ দিকে।
  • আনন্দ বিহার অবস্থিত শালবন বিহারের দুই মাইল উত্তরে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়র পাদদেশে।
  • জগদ্দল বিহার অবস্থিত- নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল গ্রামে।

জাদুঘর

জাদুঘর অবস্থান প্রতিষ্ঠাকাল
বরেন্দ্র জাদুঘর রাজশাহী এপ্রিল, ১৯১০
ঢাকা জাদুঘর (জাতীয় জাদুঘর করা হয় ১৯৮৩) শাহবাগ, ঢাকা ১৯১৩ (উদ্বোধন ৭ আগস্ট, ১৯১৩)
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর আগারগাঁও, ঢাকা ২৬ এপ্রিল, ১৯৬৫
ময়নামতি জাদুঘর কুমিল্লা ১৯৬৫
মহাস্থানগড় জাদুঘর বগুড়া ১৯৬৭
কুঠিবাড়ি জাদুঘর শিলাইদহ, কুষ্টিয়া ১৯৭১
উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি জাদুঘর বিরিশিরি, নেত্রকোনা ১৬ আগস্ট, ১৯৭৭
লালন জাদুঘর ছেউড়িয়া, কুষ্টিয়া ১৯৭৯
লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ ১৯৮১
সামরিক জাদুঘর বিজয় সরণি, তেজগাঁও ২৬ নভেম্বর, ১৯৮৭
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আগারগাঁও ২২ মার্চ, ১৯৯৬
গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী ১০ অক্টোবর, ২০০০

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url