ইন্টারনেট ও বর্তমান বাংলাদেশ - ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব
ইন্টারনেট ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের জীবনের সর্বত্র। অবশ্য বিশ্বের কোনো প্রাণীই
নেটের বাইরে নয়। আমি ইন্টারনেটের কথা বলছি। বর্তমান বিশ্বে যোগাযোগের
সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নাম ইন্টারনেট। ইন্টারনেট তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক
যুগান্তকারী বিপ্লব সাধন করেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের
কম্পিউটার অপর প্রান্তের আর একটি কম্পিউটারে ছবিসহ যাবতীয় তথ্য নিমেষেই সরবরাহ
করতে পারছে। এদিক থেকে ইন্টারনেট একটি বিশাল ‘নেটওয়ার্কিং সিস্টেম’।
ইন্টারনেটের অবদানের ফলে এক যুগ পূর্বে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যা ছিল অসম্ভব তা
এখন চোখের পলকেই সম্ভব হচ্ছে।
সূচিপত্রঃ- ইন্টারনেট ও বর্তমান বাংলাদেশ - ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব
ইন্টারনেটের বিকাশ
দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্যই নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছিল।
১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বপ্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
শুরুতে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের গবেষণার প্রয়োজনে এ
ইন্টারনেট সিস্টেমকে কাজে লাগায়। সে সময় এনএসএফ ইন্টারনেটের দায়িত্ব নেয়।
ইন্টারনেটের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয় এনএসএফ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের
কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা মাত্র চারটি কম্পিউটারের মধ্যে গড়ে তুলেছিলেন প্রথম
অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর তিনটি কম্পিউটার ছিল 'ক্যালিফোর্নিয়া'য় ও একটি
ছিল 'উটাই'তে। এ যোগাযোগ ব্যবস্থার নাম ছিল 'ডাপার্নেট'। এরপর শুধু বিস্ময়কর
সাফল্যের ইতিহাস। তিন বছর যেতে না যেতেই 'ডাপার্নেট'-এর নাম বদল করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা
কম্পিউটারের সংখ্যা তখন চার থেকে তেত্রিশে পৌছায়। এর নাম রাখা হয় আপানেট। যার
উদ্দেশ্য ছিল পারমাণবিক আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বৈজ্ঞানিক তথ্য আদান-প্রদান করা।
সত্তর ও আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এ
নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। ক্রমশ চাহিদা বাড়তে থাকলে ১৯৮৪ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের জন্য এ রকম অন্য একটি
যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেন। এর নাম দেওয়া হয় 'নেম্ফেনেট'। তিন বছরের মধ্যে
'নেস্কেনেট'-এর বিস্তার সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আর তখনই প্রয়োজন পড়ে একটি
কেন্দ্রীয় 'নেটওয়ার্ক' গড়ে তোলার। গত শতকের নব্বই দশকের শুরুতে এ নেটওয়ার্ক গড়ে
তোলা হয়। বিশ্বের মানুষ পরিচিত হয় 'ইন্টারনেট' নামক একটি ধারণার সঙ্গে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থা
বাংলাদেশ ১৯৯৩ সালের ১১ই নভেম্বর ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করে। সে সময়
অফলাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সার্ভিস চালু হয়। এর মধ্যে প্রদেষ্টা, ছক, ট্যাপ,
বিডিমেল, বিডিনেট এবং অরোরা-১ উল্লেখযোগ্য। অফলাইনে যুক্ত থাকায় এসব
প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তথ্যের বিশাল জগতের সকল সম্পদ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।
ই-মেইলের কেবল ডাউনলোড (মেইল গ্রহণ) ও আপলোড (মেইল-প্রেরণ) ছাড়া আর কিছুই করা
সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের কম্পিউটার থেকে যোগাযোগ সফ্টওয়্যারের
মাধ্যমে মডেম ও টেলিফোন লাইনের সাহায্যে সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে
মেইল বিনিময় করত।
আরো পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দিনে কয়েকবার আইএসডি, টেলিসংযোগ তারের সঙ্গে
সংযুক্ত কম্পিউটারে পাঠিয়ে দিত। একই সঙ্গে গ্রাহকদের কাছে আসা মেইলগুলো ডাউনলোড
করা হতো। উল্লিখিত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা না হওয়ায়
একটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক অন্য প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের কাছে সরাসরি 'ই-মেইল'
পাঠাতে পারত না। তাদের একজনের পাঠানো তথ্য সারাবিশ্ব ঘুরে আবার অপর গ্রাহকের
কাছে যেত। কিন্তু অনলাইন সার্ভিস চালু হওয়ার পর যোগাযোগের সকল বাধা দূর হয়।
বাংলাদেশ অনলাইন ইন্টারনেট সার্ভিসের বিশাল জগতে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯৬
সালের ৪ঠা জুন VSAT চালুর মাধ্যমে প্রথম অনলাইন ইন্টারনেট চালু করে ISN
(Information Services Network), এরপর গ্রামীণ সাইবার নেট, ইউ অনলাইন, BRAC,
BDMAIL, PRADESHTA NET ইত্যাদি সংস্থাসহ মোট ১২টি সংস্থা ইন্টারনেট সার্ভিস
প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করছে। সম্প্রতি অপটিক্যাল হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে
বাংলাদেশের মানুষ আরও দ্রুত ও সহজে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে।
ইন্টারনেটের গুরুত্ব
যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আজ অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যাচ্ছে। তথ্য প্রেরণ ও
গ্রহণ থেকে শুরু করে বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষের সঙ্গে আড্ডা, সম্মেলন,
শিক্ষা, বিপণন, অফিস ব্যবস্থাপনা, বিনোদন ইত্যাদি ইন্টারনেটের সাহায্যে করা
যাচ্ছে। মাল্টিমিডিয়ার বিকাশের সাথে সাথে প্রতিদিন এর সম্ভাবনা আরও বাড়ছে।
বাংলাদেশের একজন লোক ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিউইয়র্কের কোনো ওপেন এয়ার কনসার্ট
উপভোগ করতে পারছে। বাংলাদেশের একজন রোগী লন্ডনের একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে
পারেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এক দেশে বসে অন্য দেশের জিনিসপত্র কেনাকাটা
সম্ভব হচ্ছে। মহাকাশ গবেষণায় ইন্টারনেট বিজ্ঞানীদের অধিক সহায়তা দিচ্ছে। এছাড়া
ই-মেইলসহ ইন্টারনেটের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। বাস্তবতা হলো বিশ্বের যোগাযোগ
ব্যবস্থার সঙ্গে ইন্টারনেট আজ নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে।
ইন্টারনেটের অপকারিতা
ইন্টারনেট ব্যবহারে রয়েছে উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা। একশ্রেণির মানুষ
আছে যারা ভালোটা থেকে মন্দটা গ্রহণ করে বেশি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে উঠতি
তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ দৃশ্যাবলি দেখে সময় নষ্ট করছে। এ
যুবসমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য চাই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। যদিও সরকার
তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে আইন তৈরি করেছে। উপসংহার: ইন্টারনেট আধুনিক
মানুষের অন্যতম অবলম্বন। এর মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কম্পিউটারের আমদানি সম্পূর্ণ করমুক্ত করাতে
ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা বেড়েছে অনেক। ইন্টারনেটকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে
বাংলাদেশে ইন্টারনেট কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব ইন্টারনেট প্রযুক্তির
হাত ধরে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url