ইন্টারনেট কি - ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা গুলো কি কি
ইন্টারনেট শব্দটি এসেছে International Network থেকে। ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে Net
বলা হয়। ইন্টারনেটকে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক বা
ইন্টারনেটওয়ার্কও বলা হয়।
এক কথায়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেকগুলো নেটওয়ার্কের
সমন্বিত ব্যবস্থাই ইন্টারনেট।
সূচিপত্রঃ- ইন্টারনেট কি - ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা গুলো কি কি
ইন্টারনেট কি
ইন্টারনেটকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে, "ইন্টারনেট হলো সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত,
পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি, যাতে ইন্টারনেট
প্রোটোকল নামক ব্যবস্থার মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করা যায়।" ইন্টারনেটে সংযুক্ত
কমপিউটারগুলোর কাজই হলো একে অন্যের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করা। এ কারণে বর্তমানে
ডেটা আদান-প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কাজেই ইন্টারনেটের সুবিধা নেয়া হয়ে থাকে।
যেমন- চিঠি বা বার্তা আদান-প্রদানের জন্য ইন্টারনেট নির্ভর ব্যবস্থা হিসেবে
আবিষ্কৃত হয়েছে ই-মেইল, টেলিফোনে কথা বলাকে ইন্টারনেটের সাহায্যে আধুনিক করতে
এসেছে টেলিকনফারেন্সিং বা ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি। ইন্টারনেটে এখন পৃথিবীর
প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেদের পরিচিতি সবার সামনে তুলে ধরে।
ইন্টারনেটভিত্তিক এই পদ্ধতিগুলোর ব্যাপক জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ হলো সময় ও
অর্থের সাশ্রয়। ইন্টারনেটের উপাদানগুলো হলো এর ব্যবহারকারী, ডেটা ও তথ্য,
টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, কম্পিউটার প্রভৃতি। ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের
অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ARPANET (Advance Research
Project Agency Network) নামক প্রজেক্টের মাধ্যমে ইন্টারনেটের পত্তন ঘটে। আরপানেট
পরবর্তীতে আশির দশকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সীমিতভাবে উন্মুক্ত ছিল। ১৯৮২ সালে বিভিন্ন কমপিউটারের
মধ্যে নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপনে উপযোগী টিসিপি/আইপি প্রটোকল (TCP/IP-Transmission
Control Protocol/Internet Protocol) উদ্ভাবিত হলে প্রথম আধুনিক ইন্টারনেটের
ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইন্টারনেটের সুবিধাসমূহ
ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ
কিছু বিষয় নিম্নরূপ-
বিশাল তথ্যসম্ভারঃ ইন্টারনেট তথ্যের এক বিশাল ভাণ্ডার। ইন্টারনেট দিয়ে
পৃথিবীব্যাপী ছড়ানো- ছিটানো অসংখ্য অনলাইন ডেটাবেস থেকে নানা রকম তথ্য আহরণ
সম্ভব। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য এসব ডেটাবেসে সংরক্ষিত আছে জার্নাল,
ম্যাগাজিন, পুস্তক, খবরের কাগজ, নানা রকম পণ্যের বিজ্ঞাপন, বিমান, রেল ইত্যাদির
সময়সূচি, আবহাওয়ার খবর, খেলার খবর, স্টক রিপোর্ট এবং আরো অনেক কিছু যা সংক্ষেপে
বর্ণনা প্রায় অসম্ভব। অবস্থা এমন যে, যে কোনো প্রকার তথ্যের জন্য ইন্টারনেট
যোগাযোগ করে নিরাশ হবার কোনো কারণই নেই। আর দিন দিন এ তথ্যের সমারোহ বেড়েই চলেছে।
ইলেক্ট্রনিক মেইল (e-mail): যে কোনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তার যে কোনো
তথ্য অন্য কোনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে পাঠাতে পারে। ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য
পাঠানোর কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রথমত এর দ্রুতগতি, এটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে
পৃথিবীর অন্য প্রান্তে তথ্য পৌঁছে দিতে পারে এবং তথ্য গ্রহীতা সে তথ্য গ্রহণ করতে
পারে।
গবেষণা (Research): অনেক সময় একজন গবেষকের এমন কোনো তথ্যের প্রয়োজন হতে
পারে যা খুঁজে পাওয়া তার জন্য হতে পারে অত্যন্ত জটিল, সময় সাপেক্ষ ও কষ্টকর।
কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই ব্যাপারটি অতি সহজে মাউস ক্লিক করে উদ্ধার করা
যায়।
সফটওয়্যারঃ ইন্টারনেট থেকে অজস্র সফটওয়্যার ডাউন-লোড করা যায় বিনা খরচে।
ই কমার্স মার্কেটিংঃ অনলাইনে কেনাকাটা ইন্টারনেট এখন ব্যবসা-বাণিজ্যের এক
বিশাল বিপণী। একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নানা ধরনের পণ্যদ্রব্য ইন্টারনেটের
মাধ্যমে অতি সহজে কেনা-কাটা করতে পারেন। অনলাইনের এই বাণিজ্যকে E-Commerce বলে।
ইন্টারনেটের অন্যান্য সুবিধা
- মুহূর্তেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ই-মেইল বা মেসেজিং করে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়।
- বিনা খরচে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কথা বলা যায়।
- ঘরে বসেই কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায়।
- বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার, ফ্রিওয়্যার, বিনোদন উপকরণ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে সংগ্রহ করা যায়।
- ঘরে বসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্র-পত্রিকা পড়া যায়।
- ঘরে বসেই বিশ্বের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
- তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা যেকোনো ব্যক্তির সাথে টেক্সট ও ভিডিও শেয়ার করা যায়।
- অনলাইনে চিকিৎসা সেবা নেয়া যায়।
- গুগল ম্যাপস-এর মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থানের স্যাটেলাইট মানচিত্র দেখে ওই স্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। একই সাথে বিশ্বের যেকোনো স্থানের সাথে নিজের অবস্থান শেয়ার করা যায়।
আরো পড়ুনঃ
সাইবার ক্রাইম কি-সাইবার ক্রাইমের ধরণ
- শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের পাঠ্যক্রমের বিষয়ে সহযোগিতা নিতে পারে।
- ইন্টারনেট চাকরিজীবীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, অধিক উপার্জন, সময় সাশ্রয়ী যোগাযোগ প্রভৃতি সুফল প্রদান করে। বিপণন, সরবরাহ, প্রচার প্রভৃতি বিষয়কে সাশ্রয়ী ও গতিশীল করে তোলে।
- ব্যবসায়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাণিজ্যিক ১৬. বর্তমানে যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ইন্টারনেটের ব্যবহার অপরিহার্য।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে অর্থ উপার্জন করা যায়।
এছাড়া ইন্টারনেটে অনেক ধরনের সেবা পাওয়া যায়। সেগুলো হলো Telnet, FTP, IRC, WWW
Video Conferencing, Iphone, Usenet, Archie, Gofer, Veronica & WAIS সহ আরো
অনেক কিছু। তাছাড়াও নিত্য নতুন উদ্ভাবনের ফলে ইন্টারনেট সুযোগ-সুবিধা দিন দিন
বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইন্টারনেটের অসুবিধা
- ইন্টারনেটে অনলাইন গেমস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাত্রাহীন আড্ডা, কুরুচিপূর্ণ বিষয়ের চর্চা প্রভৃতি বিষয় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মনোযোগ ও সময় নষ্ট করে বলে তাদের ফলাফলে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
- অনলাইনে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্য বা সেবার মান সর্বদা সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। ফলে অনেকের প্রতারণা বা ক্ষতির শিকার হবার সম্ভাবনা থাকে।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে কমপিউটারে হ্যাকিং, ভাইরাস বা মেলওয়্যার সংক্রমণ, স্প্যামিং প্রভৃতি আক্রমণের ঝুঁকি থাকে। ৪. দীর্ঘসময় ইন্টারনেট ব্যবহারে ইন্টারনেট আসক্তির সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে ব্যবহারকারী নানা ধরনের স্বাস্থ্যহানির
- শিকার হয়ে থাকে এবং মানুষের পারিবারিক জীবনে ব্যাপক দূরত্বের সৃষ্টি হতে পারে।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো সংবাদ খুব দ্রুত ভাইরাল আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে কোনো ভুয়া বা ভুল সংবাদ ভাইরাল হবার ফলে তা সামাজিক অস্থিরতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ব্যক্তিগত হয়রানির মতো বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url