বাংলাদেশের কৃষিজ সম্পদ

বাংলাদেশের কৃষিজ সম্পদ


সূচিপত্রঃ- বাংলাদেশের কৃষিজ সম্পদ

বাংলাদেশের কৃষিজ সম্পদ সম্পর্কে কিছু তথ্য

  • বাংলাদেশে মোট জমির পরিমাণ ৩ কোটি ৩৮ লক্ষ ৩৪ হাজার একর যার মধ্যে ২ কোটি ১ লক্ষ ৫৭ হাজার একর আবাদযোগ্য জমি এবং ২৫ লক্ষ ৮০ হাজার একর চাষের অযোগ্য জমি, মাথাপিছু আবাদী জমির পরিমাণ ০.২৮ একর।
  • ফসল উৎপাদনের সুবিধার্থে বাংলাদেশের ঋতুকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
  • (ক) রবি ঋতু (এ সময় শীতকালীন শস্য উৎপাদন করা হয় যেমন- ফুলকপি, মূলা, বাধাকপি, সীম, টমেটো, গাজর লাউ ইত্যাদি।)
  • (খ) খরিপ ঋতু (এ সময় শস্য উৎপাদন করা হয়, যেমন- আউস ধান, পাট, ঢেড়স, আম, জাম, কাঁঠাল, তাল, আমলকী জলপাই ইত্যাদি ।)
  • পাহাড়ের ঢালে চাষাবাদ করার পদ্ধতিকে বলে জুম, জুম চাষের বিকল্প পদ্ধতি সল্ট।
  • বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কৃষিশুমারি হয়-৪টি। প্রথমটি-১৯৭৭, দ্বিতীয়টি ১৯৮৬, তৃতীয়টি-১৯৯৭ এবং চতুর্থত ও সর্বশেষ কৃষিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়-১১-২৫ মে, ২০০৮।
  • কৃষিকার্যের মাধ্যমে উৎপাদিত সম্পদকে কৃষিজ সম্পদ বলে। কৃষিজ সম্পদগুলো হচ্ছে ভূমিতে উৎপাদিত ফসলসমূহ। যেমন: ধান, ইক্ষু, চা, পাট ইত্যাদি
  • কৃষি ফসলসমূহকে সাধারণত ব্যবহারের ধরন ও প্রকৃতি অনুসারে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথাঃ ক. খাদ্য শস্য এবং খ. অর্থকরী শস্য।
  • যেসব শস্য সরাসরি খাদ্যের চাহিদা পুরণের জন্য চাষাবাদ করা হয় তাকে খাদ্যশস্য বলা হয়। যেমন- ধান, গম প্রভৃতি।
  • যেসব শস্য সরাসরি বিক্রির উদ্দেশ্যেই চাষাবাদ করা হয় তাকে অর্থকরী শস্য বলে। যেমন পাট, তুলা, চা প্রভৃতি।
  • বাংলাদেশের ৮০ ভাগ জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয় এবং বাকী ২০ ভাগ জমিতে অর্থকরী শস্য উৎপাদিত হয়।
  • বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান চাষ করা হয় আবাদী জমির প্রায় ৭০ ভাগ জমিতে।
  • বাংলাদেশে উৎপন্ন ধানকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা হয়- ক. আমন, খ. আউস গ. বোরো ও ঘ. ইরি।
  • আউস ধান উঁচু জমিতে, আমন ধান অপেক্ষাকৃত নীচু জমিতে এবং বোরো ও ইরি ধান শীতকালীন ফসল হিসেবে বিভিন্ন নিচু জলাশয় সহ অন্যান্য জমিতে সেচ দিয়ে উৎপাদন করা হয়।
  • জয়দেবপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বিরি (BRRI) প্রতিষ্ঠিত হয়— ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে।
  • বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউ কর্তৃক উদ্ভাবিত ধান বিনা-৮ যা লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে।
  • বাংলাদেশের উৎকৃষ্ট মানের ধান হিসেবে বরিশাল ও পটুখালী অঞ্চলের বালাম, দিনাজপুরের কাটারী ভোগ, ময়মনসিংহের বিরই এবং নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলের কালিজিরা ও চিনিগুড়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
  • বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গম যা শীতকালে চাষ করা হয়। রংপুর, কুমিল্লা, যশোর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও পাবনায় গম বেশি চাষ করা হয়।
  • বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্য শস্যের মধ্যে ডাল জাতীয় শস্য অন্যতম। ডাল জাতীয় শস্যের মধ্যে মুগ, মসুর, ছোলা, খেসারী, অড়হর ইত্যাদি অন্যতম।
  • বাংলাদেশে উৎপন্ন তৈলবীজের মধ্যে সরিষা, তিল, তিসি, রেড়ি ইত্যাদি প্রধান।
  • বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে ভুট্টার চাষ হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে আনারসের চাষ হয় এবং বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলে আলু চাষ হয় সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশের কৃষিজ সম্পদ
  • পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। পাট উৎপাদনে ভারত বিশ্বের শীর্ষ দেশ এবং
  • বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়
  • বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন: সাদা, তোসা ও মেসতা পাট । পাটের জিন বিন্যাস আবিষ্কার করেন – বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম ।
  • বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদন করা হয় – ফরিদপুর অঞ্চলে।
  • পাট ও তুলার সংমিশ্রণে এক ধরনের কাপড়কে জুটন বলে। যেখানে ৭০ ভাগ পাট ও ৩০ ভাগ
  • তুলা থাকে। এটি আবিষ্কার করেন ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুল্লাহ। চা বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকরী ফসল যার আদি বাস হলো— চীন ।
  • বাংলাদেশে মোট চা বাগানের সংখ্যা ১৬৬টি, এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯০টি।
  • বাংলাদেশে প্রথম চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়— ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে এবং বাণিজ্যিকভাবে
  • চায়ের চাষ শুরু হয়— ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে। [সূত্র : বাংলাদেশ চা বোর্ড]
  • বাংলাদেশে অর্গানিক চা উৎপাদন শুরু হয়েছে— পঞ্চগড়ে।
  • ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের প্রথম রাবার বাগান করা হয়— কক্সবাজারের রামুতে।
  • বাংলাদেশে তামাক চাষ বেশি হয়— রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে। বাংলাদেশে আখ চাষ বেশি হয়— রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, ঢাকা ও ময়মনসিংহ
  • অঞ্চলে। বাংলাদেশে তুলা উৎপাদিত হয়— যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, রংপুর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে। তবে
  • সবচেয়ে বেশি তুলা উৎপাদিত হয় যশোর অঞ্চলে।
  • বাংলাদেশে রেশম উৎপাদিত হয়—— রাজশাহী ও বগুড়া অঞ্চলে।
  • সোনার বাংলা-১, সুপার রাইস, হাইব্রীড হীরা, ব্রিশাইল, ময়না, হরিধান, চান্দিনাম, মালাইরি ইত্যাদি— উন্নত জাতের ধান।
  • অগ্রণী, সোনালিকা, বলাকা, দোয়েল, আনন্দ, আকবর, কাঞ্চন, বরকত, উন্নত জাতের গম। উত্তরণ, বর্নালী ও শুভ্র উন্নত জাতে এটার নাম
  • সফল, অগ্রণী উন্নত জাতের সরিষা A রূপালী ও 1.জ উন্নত জাতের তুলা। মিন্টু (বাংলাদেশে উদ্ভাবিত প্রথম হাইব্রিড টমেটো, বাহার, মানিক, রতন, ঝুমকা, সিদুর,
  • শ্রাবণী ইত্যাদি— উন্নত জাতের টমেটো।
  • ডায়মন্ড, কার্ডিনেল, কুফরী, সিন্দুরী— উন্নত জাতের আলু।
  • মহানন্দা, মোহনভোগ, লেংড়া, গোপালভোগ — আমের উন্নত জাত ।
  • অগ্নিশ্বর, কানাইবাণী, মোহনবাণী, বীট জবা, অমৃতসাগর, সিংগাপুর, কলার উন্নত জাত। ইওরা, শুকতারা ও তারাপুরী— উন্নত জাতের বেগুন।
  • মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে- - বায়ুর নাইট্রোজেন ।
  • বাতাসের নাইট্রোজেন মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে —— পানিতে মিশে মাটিতে শোষিত হওয়ার ফলে।
  • ইউরিয়া সার উৎপাদন করার প্রধান কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাস।
  • উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য — নাইট্রোজেন সার।
  • ফসলের মূল বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য — ফসফরাস সার ।
  • স্বর্ণা এক ধরনের জৈব সার যার বৈজ্ঞানিক নাম ফাইটা হরমোন ইনডিউসার, এটি আবিষ্কার করেন— ড. সৈয়দ আব্দুল খালেক।

বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান/ইনস্টিটিউট/গবেষণা কেন্দ্রেন নাম ও অবস্থান

১. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
জয়দেবপুর, গাজীপুর
২. বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট
জয়দেবপুর, গাজীপুর
৩. বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
ময়মনসিংহ
৪. বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট
মানিক মিয়া এভিনিউ, ফার্মগেট, ঢাকা
৫. বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট
ঈশ্বরদী, পাবনা
৬. বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট
শ্রীমঙ্গল, সিলেট
৭. বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট
সাভার, ঢাকা
৮. বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট
রাজশাহী
৯. বাংলাদেশ মৌমাছি পালন ইনস্টিটিউট
ঢাকা
১০. বাংলাদেশ আম গবেষণা কেন্দ্ৰ
চাপাইনবাবগঞ্জ
১১. বাংলাদেশ মসলা গবেষণা কেন্দ্র
শিবগঞ্জ, বগুড়া
১২. বাংলাদেশ ডাল গবেষণা কেন্দ্র
ঈশ্বরদী, পাবনা
১৩. তুলা উন্নয়ন বোর্ড
ফার্মগেট, ঢাকা
১৪. বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট
ময়মনসিংহ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url