আর্সেনিকোসিস কি-আর্সেনিকোসিস এর লক্ষণ ও চিকিৎসা

আর্সেনিক বাহিত রোগকে আর্সেনিক বিষক্রিয়া বলে। মানুষের শরীরে যখন আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পায় তখন সেই অবস্থাকে আর্সেনিক বিষক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অনকে দিন ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে মানব শরীরে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এই রোগ হলে শরীরে অস্বাভাবিক ব্যথা, জ্বর, বমি, মাথা ব্যথা, রক্ত আমাশয় এবং উদরাময় ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সূচিপত্রঃ- আর্সেনিকোসিস কি-আর্সেনিকোসিস এর লক্ষণ ও চিকিৎসা

আর্সেনিকোসিস কি

আর্সেনিক বিষক্রিয়া (বা আর্সেনিকোসিস ) বলতে একটি চিকিৎসা অবস্থাকে বোঝানো হয়। শরীরে আর্সেনিকের মাত্রার আধিক্যের কারণে এই রোগ হয়। যদি আর্সেনিকের বিষক্রিয়া অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে থাকে তবে লক্ষণগুলির মধ্যে বমি , পেটে ব্যথা , এনসেফালোপ্যাথি এবং জলযুক্ত ডায়রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যাতে রক্ত থাকে। আর্সোনিকোসিস দূষিত পানি পানের ফলে মানব দেহে যে রোগের উৎপত্তি হয় তাকে আর্সেনিকোসিস বলে।

আর্সেনিক দূষণ প্রতিক্রিয়ায় মানবদেহে লক্ষণসমূহ

আর্সেনিক দূষণের প্রতিক্রিয়ার ফলে মানবদেহের উপসর্গগুলো সকল দেশে একই রূপ হলেও স্থান ও মানবগোষ্ঠী অনুযায়ী তার কিছুটা তারতম্য হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মানুষের দেহে ত্বক বা চামড়ার উপসর্গগুলোই প্রধানত: দেখা যাচ্ছে। তবে তা থেকে দেহের যে কোন অঙ্গ জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারে।

আর্সেনিক দূষণের ফলে মানবদেহে প্রতিক্রিয়ার লক্ষণসমূহ

আর্সেনিক দূষণের ফলে মানবদেহে প্রতিক্রিয়ার যে লক্ষণসমূহ দেখা যায় সেগুলো ৩ টি পর্যায়ে বিভক্ত।
১. প্রাথমিক পর্যায়
(ক) চামড়ার রঙ কালো হয়ে যাওয়া (ছোট ছোট কালো দাগ অথবা সম্পূর্ণ কালো হয়ে যাওয়া- মেলানোসিস)
(খ) চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে যাওয়া (বিশেষ করে হাত ও পায়ের তালু কেরাটোসিস)
(গ) চোখ লাল হয়ে যাওয়া (কনজাংটিভাইটিস)
(ঘ) শ্বাস তন্ত্রের প্রদাহ (ব্রংকাইটিস)
(ঙ) বমি বমি ভাব, বমি ও পাতলা পায়খানা (গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিস)
২. দ্বিতীয় পর্যায়
(ক) ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা কালো দাগ (লিউকোমেলানোসিস)
(খ) হাতে ও পায়ের তালুতে শক্ত গুটি ওঠা (হাইপার কেরাটোসিস)
(গ) পা ফুলে যাওয়া (নন পিটিং ইডিমা)
(ঘ) প্রান্তীয় স্নায়ুরোগ (পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি)
(ঙ) কিডনী ও লিভারের জটিলতা (কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া)
৩. তৃতীয় পর্যায়
(ক) দেহের প্রান্তদেশীয় অঙ্গনের পচন (গ্যাংগ্রিন)
(খ) ত্বক, মূত্রনালী ও ফুসফুসের ক্যান্সার
(গ) লিভারের কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ লোপ পাওয়া
(ঘ) কিডনীর কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ লোপ পাওয়া
বাংলাদেশের বেশীর ভাগ রোগীদের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের রোগীদের আর্সেনিক দূষণযুক্ত পানি গ্রহণ করা বন্ধ করলে ও সহায়ক চিকিৎসা দিলে রোগীরা ধীরে ধীরে আরোগ্যলাভ করে থাকে।

চিকিৎসা ব্যবস্থা

আর্সেনিকোসিসের কোন সঠিক চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয় নাই। নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নিলে কিছু উপশম হতে পারে।
১. আর্সেনিকোসিসের উপসর্গ/লক্ষণ দেখা মাত্র সংশি-ষ্ট টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং পরীক্ষিত আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েলের পানি পান করতে হবে। সারফেস ওয়াটার (নদী, পুকুরের পানি) ফুটিয়ে পান করতে হবে।
২. ভিটামিন, এ, ই, ও সি সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাদ্য খাবার পরামর্শ দিতে হবে। মেলনোসিস পর্যায়ে এ ব্যবস্থা ত্বকের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে পারে। শাকসবজি, ফল, রসুন, কলিজা, ডিম খেলে উপরোক্ত ভিটামিন পাওয়া যায়।
৩. অধিকতর জটিল রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার করতে হবে।
৪. অনতি বিলম্বে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে-ক্সে এ ধরনের রোগীর ব্যাপারে চিঠি দিয়ে অফিসিয়ালি অবহিত করতে হবে।

আর্সেনিক সমস্যা নতুন চ্যালেঞ্জ

১. আর্সেনিক একধরনের রাসায়নিক পদার্থ। এটি অতি অল্পমাত্রায় খাবার পানিতে থাকতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক নয়। কিন্তু যদি এর মাত্রা ০.০৫ মিলিগ্রাম/লিটার এর বেশী হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলের টিউবওয়েলের পানিতে মারাত্মক আর্সেনিক দূষণ দেখা দিয়েছে।

আর্সেনিক সমস্যা নিরসনে সরকারের কর্মসূচী

পর্ব - ১
  • আর্সেনিক দূষিত টিউবওয়েল লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা এবং দূষণ মুক্ত টিউবওয়েল সবুজ রং দিয়ে চিহ্নিত করা।
  • আর্সেনিকোসিসের রোগীর সংখ্যা জরীপ করা।
  • জনগণের মধ্যে আর্সেনিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
পর্ব - ২
  • মারাত্মক আর্সেনিক উপদ্রুত এলাকায় ডিপটিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা (দেখা গেছে ৮০০ ফুটের নীচের পানি আর্সেনিক মুক্ত)।
পর্ব - ৩
  • প্রতিক্রিয়াজাত আর্সেনিক মুক্ত পানি পাইপের মাধ্যমে সরবরাহের ব্যবস্থা করা।
উপরোক্ত আলোচনা শেষে প্রশিক্ষণার্থীগণ গ্রুপ বিভক্ত হয়ে আর্সিনিক সমস্যার উপর স্বাস্থ্য শিক্ষার উদ্দেশ্যে বার্তা প্রস্তুত করবেন।

বিসিসি বার্তা

১. আর্সেনিক যুক্ত পানি খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
২. আর্সেনিক দূষণ ঘটিত রোগ ছোঁয়াচে নয়। রোগীদের আলাদা রাখার প্রয়োজন নেই।
৩. লাল রং চিহ্নিত টিউবওয়েলের পানি পান নিষেধ।
৪. সবুজ রং চিহ্নিত টিউবওয়েলের পানি পান করা যাবে।
তথ্যসুত্রঃ (পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক) সহায়িকা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url