কালাজ্বর কি-কালাজ্বর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

কালা জ্বরের উয়রেজি হলো (Visceral leishmaniasis, Sahib's disease, Dumdum fever, Black fever) বা ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিস। লিশম্যানিয়াসিস রোগের কয়েকটি প্রকার রয়েছে। ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিস সেই প্রকার গুলোর মধ্যে একটি মারাত্নক রোগ। ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত একটি তথ্য মতে, বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কালাজ্বর নির্মুল করতে সক্ষম হয়েছে।

সূচিপত্রঃ- কালাজ্বর কি-কালাজ্বর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

ভুমিকা

লিশম্যানিয়া গণভুক্ত এক প্রকার প্রোটোজোয়া পরজীবীর মাধ্যমে এই রোগটি হয়ে থাকে। বেলেমাছির কামড়ের মাধ্যমে এই রোগ বিস্তার লাভ করে। পরজীবী দ্বারা সংঘটিত রোগগুলোর মধ্যে কালাজ্বর দ্বিতীয় প্রাণঘাতী রোগ। ম্যালেরিয়ার পরেই এর স্থান। কালাজ্বর বা ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ মৃত্যু বরণ করে।

কালাজ্বর কি? কেন হয়?

কালাজ্বর একটি সংক্রামক রোগ। লিসম্যানিয়া ডনোভানী নামক এক প্রকার পরজীবি প্রটোজোয়া শরীরে প্রবেশের ফলে এই রোগ দেখা দেয়। এই পরজীবি একজন রোগী হতে আর একজন সুস্থ লোকের শরীরে এক প্রকারের স্ত্রী জাতীয় বেলে মাছি (Sand fly) দ্বারা সংক্রমিত হয়। এই জীবাণু পনীহা (Spleen), যকৃত (Liver), অস্থিমজ্জা (Bone marrow) আক্রান্ত করে বংশ বৃদ্ধি করে। এই রোগের সুপ্তিকাল সাধারনত: ১-২ মাস। তবে ১০ দিন ১০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে।

কালাজ্বর রোগের উপসর্গ ও লক্ষণ সমূহ

(ক) উপসর্গ সমূহঃ জ্বর হবে। এই জ্বর প্রথমে স্বল্প মাত্রার থেকে ধীরে ধীরে তীব্রতর হতে পারে। দীর্ঘদিন যাবত জ্বর, বিরাম দিয়ে জ্বর আসে, প্লীহা বৃদ্ধি পায়।
(খ) লক্ষণঃ রক্তস্বল্পতা হতে পারে। পায়ে, পেটে, মুখে বা হাতে কালো লালচে পিগমেনটেশন হতে পারে।
  • প্লীহা ও যকৃত অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া।
  • লসিকা গ্রন্থি সমূহ বড় হওয়া।
  • দীর্ঘমেয়াদী রোগী শুকিয়ে হাড্ডিসার হবে।
  • চুল হালকা পাতলা হয়ে যাওয়া।

কালাজ্বর রোগ সনাক্তকরণ

পূর্বোক্ত উপসর্গ ও লক্ষণ সমূহ কোন রোগীর মধ্যে প্রকাশ পেলে তাকে কালাজ্বর রোগী হিসাবে সনাক্ত করা যেতে পারে।

কালাজ্বর রোগের চিকিৎসা

  • সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
  • পথ্য স্বাভাবিক।
  • জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল।
  • ইনজেকশন সোডিয়াম স্টিবো গ্লুকোনেট (চিকিৎসা ডোজ ও মাত্রা মনিটরিং করবেন)
  • ফ্লোচার্ট অনুযায়ী রোগী সনাক্তকরণের পর রক্ত পরীক্ষার জন্য নিয়মিত ভাবে রোগীকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রেরণ করতে হবে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষার পর সনাক্তকৃত রোগীকে নিয়মিত 'ফলোআপ' বা অনুসরণ করাতে হবে।

কালাজ্বর রোগের প্রতিরোধ

১. কীটনাশক ব্যবহার: ডিডিটি কালাজ্বরের বাহক "বেলে মাছি" নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী কীটনাশক। কালাজ্বরের প্রার্দুভাব এলাকায় বছরে দুইবার গোয়ালঘর, মুরগীর খামার ইত্যাদি জায়গায় ছিটাতে হবে।প্রতি বর্গমিটার জায়গায় ১ গ্রাম মাত্রায় মেঝে এবং মেঝে থেকে ১৫ মিটার (৬ফুট) উচ্চতা পর্যন্ত বসতবাড়ী, গোয়াল ঘর, বাড়ীর দেওয়ালের ফাটল ইত্যাদিতে ডিডিটি ছিটাতে হবে।
২. বংশ বৃদ্ধি রোধ: বাড়ীর আশেপাশে ময়লা আবর্জনা, ঝোপ-ঝাড় এবং ঘরের দেওয়ালের ফাঁক-ফোকড়, গোয়াল ঘর, মুরগীর খোয়াড় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মাঝে মাঝে যেখানে কালাজ্বর রোগের প্রকোপ বেশী সেই লোকালয়ে উপরে উলে-খিত স্থান সমূহে গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে।

বেলে মাছির কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়

১. ঘরের মেঝে যেখানে বেলে মাছি থাকতে পারে সেখানে ঘুমানো বন্ধ করতে হবে।
২. শোবার সময় মশারী ব্যবহার করতে হবে।
৩. মশারী না থাকলে পায়ে মোজা ও মোটা জামা কাপড় পরতে হবে।
তথ্যসুত্রঃ (পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক) সহায়িকা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url