ডায়রিয়া রোগের লক্ষণ-ডায়রিয়া রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
ডায়েরিয়া বা ডায়রিয়া প্রধানত পেটের এক প্রকার অসুখ বা রোগ। কেউ ডায়রিয়ায়
আক্রান্ত হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়। পায়খানা করার সময়
পাতলা মল, বা কখনো কখনো শ্লেষ্মাযুক্ত মল বের হয়।সেই সাথে পেট ব্যাথা,গা গুলিয়ে
ওঠা ইত্যাদি উপসর্গ গুলি দেখা দেয়। একদিকে যেমন শুধু ডায়েরিয়া হতে পারে আবার
কখনও কখনও তা অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারে।
সূচিপত্রঃ- ডায়রিয়া রোগের লক্ষণ-ডায়রিয়া রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
ডায়রিয়া কি
সাধারণতঃ ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়াকে ডায়রিয়া বলে। এখানে পায়খানা পাতলা বলতে
মলে পানির পরিমান স্বাভাবিকের চাইতে বেশী এবং ঘন ঘন পায়খানা বলতে সাধারণতঃ ২৪
ঘন্টায় তিন বার বা তারও বেশী বার পায়খানা হওয়াকেই বোঝানো হয়েছে।
ডায়রিয়ায় কি ঘটে?
যে কোন কারণেই ডায়রিয়া হোক না কেন তার তাৎক্ষণিক পরিণতি হচ্ছে পানি স্বল্পতা
এবং সময় মত পানি স্বল্পতার সুচিকিৎসা না হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। এ ছাড়াও
ডায়রিয়ার দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি হিসেবে অপুষ্টি ও তার সঙ্গে সংশি-ষ্ট রোগ দেখা
দিতে পারে।
ডায়রিয়ার লক্ষণ
নিম্নে বর্ণিত লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো দেখা দিলে ধরে নেওয়া হয় একজন ব্যক্তি
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
- পেট ফেঁপে থাকা।
- পেটে খিঁচুনি বা ব্যথা অনুভূত হওয়া
- বমি বমি ভাব।
- বমি হওয়া।
- জ্বর হওয়া।
- তরল জলের মত মল।কখনো কখনো ফ্যানা সৃষ্টি হয়।
- মল আঁশটে দূর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
- মলে অনেকসময় রক্ত দেখা যায়।
- মলে শ্লেষ্মা বের হয়ে আসা।
- ঘন ঘন মলত্যাগ।
ডায়রিয়া হওয়ার প্রধান কারণ
ডায়রিয়া অনেক কারণেই হতে পারে যার মধ্যে রয়েছে-- পরজীবীর আক্রমণ যেগুলো খাবার বা জলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ।
- খাদ্য অসহিষ্ণুতা বা ফুড অ্যালার্জির জন্য কিছু খাবারের জিনিস হজম করতে না পারা।
- ভাইরাসের সংক্রমণ।
- খাবারে এলার্জি (যেমন সিলিয়াক ডিজিজ, গ্লুটেন এলার্জি)
- ওষুধের প্রতিক্রিয়া।
- অনেক সময় প্রচন্ড টেনশন থেকেও ডায়রিয়া হতে পারে।
ডায়রিয়ার অন্যান্য কারণ বিস্তারিত
ডায়ারিয়া মূলত প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ। চলুন বিস্তারিত ভাবে এই বিষয়টি নিয়ে
আলোচনা করা যাক।
♦ নরওয়াক ভাইরাস (নরোভাইরাস নামেও
পরিচিত), এন্টারিক অ্যাডেনোভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস, সাইটোমেগালো ভাইরাস এবং
ভাইরাল হেপাটাইটিস- এই ভাইরাস গুলোর দ্বারা শরীর আক্রান্ত হলে ডায়েরিয়া হয়ে থাকে।
♦ শৈশবে
ডায়রিয়ার একটি সাধারণ কারণ হল রোটাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া।
২. পুষ্টিকর বাড়তি খাবার খাওয়ানো
৩. বুকের দুধ খাওয়ানো
৪. নিরাপদ পানি পান করা
৫. হামের টিকা নিশ্চিত করা
৬. স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা
৭. শিশুর মল দ্রুত নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা
♦দূষিত খাবার বা পানীয় জলের মাধ্যমে
প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া যেমন ই-.কোলাই দেহে প্রবেশ করার ফলে ডায়রিয়া হয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ভ্রমণ করার সময়, ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট
ডায়রিয়াকে প্রায়শই ভ্রমণকারীর ডায়রিয়া বলা হয়। কলোরিয়ডস ডিফিসাইল
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ডায়রিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্সের পরে বা
হাসপাতালে ভর্তির সময় ঘটতে পারে।
♦ অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে
ডায়রিয়া হতে পারে। উদাহরণ স্বরুপ অ্যান্টিবায়োটিকের কথা উল্লেখ করা যায়।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে সংক্রমণ আটকানোর পাশাপাশি বেশ কিছু
ভালো ব্যাকটেরিয়াকেও ধ্বংস করে ফেলে। এর দ্বারা অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার
স্বাভাবিক ভারসাম্য ব্যাহত হয়, যার ফলস্বরূপ ডায়রিয়া বা সি. ডিফ-এর মতো
সংক্রমণ হয়। ক্যান্সার বিরোধী ওষুধ এবং ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিডগুলি
অনেকক্ষেত্রে ডায়েরিয়া সৃষ্টি করে।
♦ ল্যাকটোজ হল দুধ এবং অন্যান্য
দুগ্ধজাত দ্রব্যে পাওয়া একপ্রকারের শর্করা। যাদের ল্যাকটোজ হজম করতে অসুবিধা
হয় তাদের দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পর ডায়রিয়া হয়। দেখা যায় বয়স বাড়ার
সঙ্গে সঙ্গে ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা বাড়তে পারে। কারণ হিসাবে বলা যায় যে সমস্ত
এনজাইম ল্যাকটোজ হজম করতে সাহায্য করে,বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের ক্ষরণের
মাত্রা কমতে থাকে।
♦ ফ্রুক্টোজ হল একধরনের শর্করা যা
প্রাকৃতিকভাবে ফল এবং মধুতে পাওয়া যায়। এটি কখনও কখনও পানীয়গুলিতে মিষ্টি
হিসাবে যোগ করা হয়। ফ্রুক্টোজ যাদের হজম করতে সমস্যা হয় তাদের ডায়রিয়া হতে
পারে।
♦ সর্বিটাল, ইরিথ্রিটল এবং
ম্যানিটল এগুলো হল কৃত্রিম সুইটেনার, যেগুলো অশোষণযোগ্য শর্করা। এগুলি সাধারণত
চুইংগাম এবং অন্যান্য চিনি-মুক্ত পণ্যগুলিতে পাওয়া যায়। কিন্তু দেখা গেছে
কিছু মানুষের এগুলো থেকেও ডায়রিয়া হতে পারে।
♦ গলব্লাডার বা অন্ত্রের আংশিক
অস্ত্রোপচার বা অপসারণের পর কখনও কখনও ডায়রিয়া হতে পারে।দীর্ঘস্থায়ী
ডায়রিয়ার অন্যান্য অনেক কারণ রয়েছে, যেমন আইবিএস, মাইক্রোস্কোপিক কোলাইটিস,
ক্রোনস ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, সিলিয়াক ডিজিজ এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের
ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ।
পানিস্বল্পতা কি?
সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি ও লবণ জাতীয় পদার্থ শরীরে না থাকলে
তাকে পানিস্বল্পতা বলে। ডায়রিয়া হলে পায়খানার সঙ্গে পানি এবং লবণ জাতীয় পদার্থ
শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে। শরীরে এই ক্ষতি যথাযথভাবে পূরণ না হলে
স্বাভাবিকভাবেই পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে
রক্তের জলীয় অংশ কমে যায়। সেই সঙ্গে সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় লবণ জাতীয় পদার্থ
কমে গিয়ে রোগীর শরীরে নানা উপসর্গ ও চিহ্ন দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবেই এসব উপসর্গ
ও চিহ্ন নির্ভর করে রোগীর শরীর থেকে কি পরিমাণ পানি ও লবন জাতীয় পদার্থ বেরিয়ে
গেছে তার উপর।
পানিস্বল্পতার একবারে শুরুতে একমাত্র পিপাসা বৃদ্ধি ছাড়া অন্য
কোন উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। পানিস্বল্পতা বৃদ্ধি পেলে পিপাসা, অস্থিরতা,
চামড়া ঢিলে হয়ে যাওয়া, মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া, ছোট শিশুদের
ক্ষেত্রে মাথার তালুর সামনে মধ্যখানের তুলতুলে অংশ বসে যাওয়া ইত্যাদি চিহ্ন
দেখা দিতে পারে। মারাত্মক পানিস্বল্পতার ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ ও চিহ্ন অত্যন্ত
স্পষ্ট হয়ে যায় এবং রোগীর মধ্যে পানির অভাবজনিত শক দেখা দিতে পারে যখন রোগী
প্রায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে, তার প্রস্রাব কমে যায় এবং রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার
কারণে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।
পানিস্বল্পতা দেখা দিলে রোগীর কি হতে পার?
ডায়রিয়া সম্পর্কে যথার্থ ধারণা লাভের জন্য পানিস্বল্পতার উপসর্গ ও চিহ্নগুলি
স্পষ্টভাবে জানা অত্যাবশ্যক। কারণ মূলতঃ এই উপসর্গ ও চিহ্নগুলির ভিত্তিতেই
তীব্রতা ভেদে পানিস্বল্পতাকে কয়েকটি স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে এবং এই স্তরগুলির
ভিত্তিতেই আবার ডায়রিয়ার চিকিৎসা পদ্ধতিও স্থির করা হয়েছে। রোগী পানিস্বল্পতার
কোন স্তরে রয়েছে তা সর্বপ্রথমেই সঠিকভাবে স্থির করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
ব্যাপার।
পানিস্বল্পতার স্তর
পানিস্বল্পতার স্তর তিনটি।
উপসর্গ/চিহ্ন | প্রথম স্তর | দ্বিতীয় স্তর | তৃতীয় স্তর |
---|---|---|---|
রোগীর অবস্থা লক্ষ্য করুন | ভাল, সজাগ | * অস্থির, খিট খিটে | * অবসন্ন, নেতিয়ে পড়া অজ্ঞান কিংবা ঘুম ঘুম ভাব। |
চোখ | স্বাভাবিক | বসে গেছে | বেশী বসে গেছে এবং শুকনা |
চোখের পানি | রয়েছে | নেই | নেই |
মুখ ও জিহ্বা | ভিজা | শুকনা | খুব শুকনা |
পিপাসা | স্বাভাবিকভাবে পানি পান করে, তৃষ্ণার্ত নয় | * তৃষ্ণার্ত, আগ্রহভরে পানি পান করে | * পানি পান করতেও কষ্ট হয় কিংবা একেবারেই পারেনা |
অনুভব করুনঃ পেটের চামড়া টেনে ছেড়ে দিন | দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায় | ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায় | * অত্যন্ত ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায় |
সিদ্ধান্ত | রোগীর দেহে কোন পানিস্বল্পতা নাই। | রোগীর দেহে এসবের মধ্যে দুই বা ততোধিক চিহ্ন আছে এবং তার মধ্যে যে কোন একটি (*) তারকাযুক্ত চিহ্ন আছে | রোগীর দেহে এসবের মধ্যে দুই বা ততোধিক চিহ্ন আছে এবং তার মধ্যে যে কোন একটি (*) তারকাযুক্ত চিহ্ন আছে |
পানি স্বল্পতার স্তর নির্ণয় | পানি স্বল্পতা নাই | কিছু পানিস্বল্পতা | চরম পানিস্বল্পতা |
চিকিৎসক বা হাসপাতালে পৌছানোর আগে রোগীকে যতবেশী সম্ভব খাবার স্যালাইন
খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।
ডায়রিয়ার চিকিৎসা
চিকিৎসা পদ্ধতি “ক”
প্রতিবার পাতলা পায়খানার পরে বয়স অনুপাতে যে পরিমাণ লবণ চিনির শরবত বা খাবার
স্যালাইন খাওয়াতে হবে-
বয়স | প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর কতটুকু দিতে হবে |
---|---|
রদু'বছরের কম | ৫০-১০০ মিলি লিটার (১/২ - ১ কাপ) |
২ বছর থেকে ১০ বছর | ১০০-২০০ মিলি লিটার (১-২ কাপ) |
১০ বছরের উর্দ্ধে | যতটুকু খেতে চায় |
চিকিৎসাপদ্ধতি “খ”
‘কিছু পানিস্বল্পতা’ স্তরের রোগীর চিকিৎসাঃ-
প্রথম চার ঘন্টায় আনুমানিক যে পরিমাণ খাবার স্যালাইন দিতে হবে | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|
বয়স | ৪ মাসের নীচে | ৪-১১ মাস | ১২-২৩ মাস | ২-৪ বছর | ৫-১৪ বছর | ১৪ বছরের উর্ধে |
ওজন | ৫ কেজির নীচে | ৫-৭.৯ কেজি | ৮-১০.৯ কেজি | ১১-১৫.৯ কেজি | ১৬-২৯.৯ কেজি | ৩০ কেজির উর্ধ্বে |
মিলি লিটার | ২০০-৪০০ | ৪০০-৬০০ | ৬০০-৮০০ | ৮০০-১২০০ | ১২০০-২২০০ | ২২০০-৪০০০ |
মনে রাখবেনঃ
- শিশুর ওজন জানা না থাকলেই কেবল বয়স অনুযায়ী দিন। শিশুর কতটুকু পরিমাণ খাবার স্যালাইন দরকার তা নির্ধারণ করার জন্য রোগীর ওজনকে (কেজি) ৭৫ দিয়ে গুণ করুন।
- শিশু যদি খাবার স্যালাইন খেতে চায় তবে তাই দিন।
- শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়ার জন্য মাকে উৎসাহ দিন।
প্রথম ৪ ঘন্টা পর রোগীর পানিস্বল্পতার স্তর পুনরায় নির্ধারণ করুন এবং তার
উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতি স্থির করুন।
পানি স্বল্পতার স্তর | চিকিৎসা পদ্ধতি |
---|---|
পানি স্বল্পতা নাই | চিকিৎসা পদ্ধতি 'ক'। |
কিছু পানি স্বল্পতা | আরও ৪ ঘন্টার জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি 'খ' এবং সেই সঙ্গে পদ্ধতি 'ক' এ উলে-খিত খাবারগুলো চালু রাখা। |
চরম পানি স্বল্পতা | জরুরী ভিত্তিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র অথবা হাসপাতালে নিয়ে যান। ইতিমধ্যে রোগীকে মুখে যতটা সম্ভব খাবার স্যালাইন চালিয়ে যেতে হবে। |
ডায়রিয়া একটি স্বনিয়ন্ত্রিত রোগ অর্থাৎ কোন ঔষধ ব্যবহার না করলেও তা এক সময়
আপনি আপনি ভাল হয়ে যায়, আর ডায়রিয়া বন্ধের জন্য কোন কার্যকরী এবং নিরাপদ
ঔষধও নেই। তাই প্রায় সকল ডায়রিয়াতেই প্রকৃত পক্ষে স্যালাইন ছাড়া ঔষধের
প্রয়োজন হয় না।
ডায়রিয়াতে ঔষধ ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ
কিছু কিছু নির্বাচিত ক্ষেত্রে রোগীর অসুস্থতার মেয়াদ কমানোর উদ্দেশ্যে ও
রোগ বিস্তার রোধ করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ব্যবহার করা হয়। তবে তখনও
মনে রাখতে হবে যে স্যালাইন (খাবার বা শিরার)-ই ডায়রিয়ার প্রধান ঔষধ।
মলে রক্ত থাকলে | কলেরা মনে হলে |
---|---|
যখন খালি চোখে মলে রক্ত দেখা যাবে তখন ধরে নিতে হবে যে রোগী ডিসেনট্রি বা আমাশয়ে আক্রান্ত হয়েছে। অন্য কথায় সিগেলা জীবাণু দ্বারা এই ডায়রিয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোগীর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করলে চলবে না, পায়খানায় সত্যি রক্ত আছে কিনা তা নিজ চোখে দেখতে হবে। এই সমস্ত রোগীর মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া ছাড়াও গায়ে জ্বর থাকে, পেটে ব্যথা থাকে, পায়খানা করার সময় প্রচন্ড কোঁৎ দেয়ার ইচ্ছা থাকে এবং এর ফলে মলদ্বার প্রায়ই নীচে আসে। |
যখন অস্ত্রে ভিবরিও কলেরা জীবাণু প্রবেশ করে ডায়রিয়ার সৃষ্টি হয়
তখন তাকে কলেরা বলে। কোন রোগীর পাতলা পায়খানা শুরু হওয়ার পর খুব
অল্প সময়ের মধ্যে যদি-
|
উপরোক্ত উপসর্গ ও রোগ লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে
যেতে হবে।ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে মায়েরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখতে পারেন। এইজন্য যে সকল মা ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু প্রাথমিক চিকিৎসার
জন্য নিম্নলিখিত তিনটি নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন।
১. পানিস্বল্পতা প্রতিরোধের জন্য শিশুকে স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশী পরিমাণ তরল
খাবার খেতে দিনঃ
- সুপারিশকৃত তরল খাবার খেতে দিন যেমন, ডাবের পানি, চিড়ার পানি, ভাতের মাড় ও লবণ চিনির শরবত। যদি সম্ভব না হয় তবে শুধু পানি দিন। প্যাকেট স্যালাইন (ওআরএস) থাকলে, ১ প্যাকেট ওআরএস আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে শিশুকে খাওয়ানো শুরু করুন।
- শিশু এইসব তরল খাবার যতটুকু খেতে চায় ততটুকু খেতে দিন। কতটুকু পরিমাণ ওআরএস খেতে দিতে হবে তা নিচের বিধিমতে দিন।
- ডায়রিয়া বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই সকল তরল পদার্থ খাওয়ানো অব্যাহত রাখুন।
- বুকের দুধ বার বার খাওয়াতে থাকুন। যদি শিশু বুকের দুধে অভ্যস্ত না হয় তবে যে দুধ খায় তাই খেতে দিন।
- শিশুকে আমিষ জাতীয় এবং অন্যান্য শক্ত খাবার দিন, টাটকা খাবার খেতে দিন, উপযোগী খাদ্য হলো ভাত, ডাল, শাকসবজি, মাছ, মাংস অথবা এসবের খিচুড়ি খেতে দিন। প্রতিবার রান্নায় ১ অথবা ২ চামচ তেল মিশাবেন।
- টাটকা ফলের রস, কলা, পেঁপে, চটকিয়ে দিন।
- শিশুকে টাটকা রান্না করা খাবার দিন, ভালভাবে সিদ্ধ এবং চটকানো খাবার দিন।
- শিশুকে বার বার খাবার জন্য উৎসাহিত করুন, দিনে অন্ততঃ ৬ বার খাবার দিন।
- একই খাবার ডায়রিয়া বন্ধ হবার পরও দিতে থাকুন এবং অন্ততঃ ২ সপ্তাহের জন্য দিনে ১ বার অতিরিক্ত খাবার দিন।
যদি ৩ দিনের মধ্যে তার অবস্থার মধ্যে কোন উন্নতি না হয় অথবা নিম্নলিখিত
লক্ষ্যণসমূহের যে কোন একটি দেখা দেয় তবে শিশুকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র
অথবা হাসপাতালে নিয়ে যান।
- ঘন ঘন বা অধিক পরিমানে পাতলা পায়খানা করলে
- ঘন ঘন বমি করলে
- চোখ বসে গেলে
- খুব তৃষ্ণার্ত থাকলে
- স্বাভাবিকভাবে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ না করলে, জ্বর থাকলে
- পায়খানার সঙ্গে রক্ত থাকলে
- জ্বর থাকলে
ডায়রিয়া রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ডায়রিয়া সংক্রমিত হয়। পানি ও খাবার দূষিত হওয়া
রোধ করাই ডায়রিয়া প্রতিরোধের মূল কথা। ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন
ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখা গেছে যে, নিবের্ণিত ৭ (সাত) টি
প্রতিরোধ ব্যবস্থা দৈনন্দিন জীবনে পালন করলে শিশুদের জন্য ডায়রিয়া অনেকাংশে
প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১. হাত ধোয়া ও অন্যান্য ব্যক্তিগত পরিস্কার- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা২. পুষ্টিকর বাড়তি খাবার খাওয়ানো
৩. বুকের দুধ খাওয়ানো
৪. নিরাপদ পানি পান করা
৫. হামের টিকা নিশ্চিত করা
৬. স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা
৭. শিশুর মল দ্রুত নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা
এই প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলি অত্যন্ত কার্যকর এবং সাধারণতঃ সকলের কাছে
গ্রহণযোগ্য।
তথ্যসুত্রঃ (পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক)
সহায়িকা
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url