ইপিআই টিকা কি-ইপিআই টিকা কয়টি
ইপিআই কার্যক্রমের মাধ্যমে টিকা দিয়ে সাতটি রোগ প্রতিরোধ করা যায় সেগুলো হলো:
ধনুষ্টংকার, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হাম, হুপিংকাশি, পোলিও এবং হেপাটাইটিস বি। এই
সবকটি রোগই সংক্রামক এবং বাংলাদেশে বিদ্যমান। এক বৎসরের কম বয়সের শিশুদের এগুলো
অত্যন্ত মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করে। এই সবকটি রোগই টিকাদানের মাধ্যমে প্রতিরোধ
করা সম্ভব। এক বৎসরের কম বয়সের শিশুরা এবং সন্তান ধারণক্ষম (১৫-৪৯ বৎসর) মহিলারাই
হচ্ছে টিকাদানের প্রধান লক্ষ্য (উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী)।
সূচিপত্রঃ- ইপিআই টিকা কি-ইপিআই টিকা কয়টি
- ইপিআই টিকা কি?
- ইপিআই টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ যোগ্য ৭টি রোগ
- বাংলাদেশ সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীতে ব্যবহৃত টিকার নাম ও সময়সূচী
- মহিলাদের টিটি টিকার সময়সূচী
- মহিলাদের টিটি টিকা দেয়ার কিছু সতর্কবাণী
- কখন টিকা দেয়া যাবে
- কখন টিকা দেয়া যাবে না
- টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা, জটিলতা ও ব্যবস্থাপনা
- টিকাদান নীতিমালা
ইপিআই টিকা কি?
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির ইংরেজি হচ্ছে Expanded Program on Immunization.
যার সংক্ষিপ্ত রুপ হচ্ছে EPI বা ইপিআই। ইপিআই হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা World
Health Organization (WHO) কর্তৃক পরিচালিত টিকাদান কর্মসূচি যার লক্ষ্য সমগ্রহ
পৃথিবীর সকল শিশুকে এ কর্মসূচির অধীন নিয়ে আসা।
জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র গুলোর শিশুদের সংক্রামক রোগ গুলোর বিরুদ্ধে টিকাদানের
মাধ্যমে শিশু মৃত্যুহার কমানোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত একটি চলমান
কর্মসূচি।
৭ এপ্রিল ১৯৭৯ বাংলাদেশে ১ বছরের কম বয়সী সকল শিশুদের বহুল পরিচালিত সংক্রামক
রোগ যক্ষ্মা,ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, হাম, পোলিও-মাইটিস এবং মা ও নবজাতকের
ধনুষ্টংকার বিষয়ে কাজ শুরুকরে। পরবর্তীকালে এই টিকাদান কর্মসূচির অধীনে ২০০৩ সাল
থেকে হেপাটাইটিস রোগের টিকা, ২০০৯ সাল থেকে হিমোফাইলাস রোগের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
২০১৫ সাল থেকে নিউমোনিয়ার (ফুসফুস প্রদাহ) টিকা দেওয়া হচ্ছে।
ইপিআই টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ যোগ্য ৭টি রোগ
এই সাতটি রোগের প্রত্যেকটির লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধের তথ্যাদি নিচে বর্ণিত হলো।
একজন টিকাদানকারী হিসাবে কর্মীকে এই সাতটি রোগ চিনতে হবে, তাহলেই কর্মী রোগগুলো
সম্বন্ধে জনগণকে বুঝাতে পারবেন।
নবজাতকের ধনুষ্টংকার (৩ থেকে ২৮ দিন)
কারণঃ পশুর মলের মাধ্যমে নির্গত এই রোগের জীবাণু মাটির সাথে মিশে থাকে। এই
রোগের জীবাণু কাটা স্থান দিয়ে শরীরে ঢোকে। শিশুর জন্মের পর অপরিস্কার
(জীবাণুযুক্ত) ছুরি, কাঁচি বা বে-ড দিয়ে নাড়ী কাটলে অথবা কাঁচা নাড়ীতে গোবর, ময়লা
কাপড় ব্যবহার করলে নবজাত শিশুর (৩ থেকে ২৮ দিন) ধনুষ্টংকার হয়ে থাকে।
রোগ জীবাণুর নামঃ কৃষ্টিডিয়াম টিটানী (Clostidium Tetani)
লক্ষণঃ জন্মের ১ম ও ২য় দিন শিশু স্বাভাবিকভাবে কাঁদতে পারে এবং বুকের দুধ
টেনে খেতে পারে। জন্মের ৩-২৮ দিনের মধ্যে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং বুকের দুধ
খাওয়া বন্ধ করে দেয়, শিশুর মুখ ও চোয়াল শক্ত হয়ে যায় এবং জোরে কাঁদতে পারে না।
শিশুর খিচুনী হয় এবং শরীর পেছনের দিকে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যায়।
ভয়াবহতাঃ নবজাতকের ধনুষ্টংকার শিশুমৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। এই রোগের
চিকিৎসা করা অত্যন্ত কষ্টকর। এই রোগে আক্রান্ত নবজাতক প্রায়ই মারা যায়।
প্রতিরোধঃ গর্ভবতী ও সন্তান ধারণক্ষম সকল মহিলাকে যথাশীঘ্র সম্ভব ৫ ডোজ
টিটি টিকা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দিয়ে নবজাতকের ধনুষ্টংকার মৃত্যু রোধ করা
যায়। এ ছাড়া নিরাপদ প্রসব পদ্ধতি অভ্যাস করা ও নাভী কাটার জন্য জীবাণুমুক্ত বেড
ব্যবহার করতে হবে।
ডিপথেরিয়া
কারণঃ ক্ষুদ্র এক প্রকার জীবাণু ডিপথেরিয়া রোগাক্রান্ত শিশুর হাঁচি কাশির
মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ রোগ জীবাণু যদি সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে তখন এই
রোগ দেখা যায়। জীবাণুর নাম করনিব্যাকটেরিযাম ডিপথেরিয়া (Corynebacterium
diptherae) ব্যাকটেরিয়া।
লক্ষণঃ- ১-৩ দিনঃ শিশু খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ঠিকমতো খায় না এবং খেলাধূলা করে না। শিশুর স্বর, সর্দি ও কাশি দেখা দেয়। গলা ফুলে যায় এবং কণ্ঠনালী বা গলদেশের ভিতরে সরের মত সাদা আস্তরণ পড়ে।
আরো পড়ুনঃ
গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্ব
- ৪-৬ দিনঃ শিশু খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে, কণ্ঠনালীর গ্রন্থিগুলি খুব বেশী ফুলে যায়। কণ্ঠনালীতে ধূসর রং এর সুস্পষ্ট আস্তরন পড়ে। এটা শ্বাসনালীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে।
প্রতিরোধঃ শিশুর জন্মের এক বৎসরের মধ্যে ২৮ দিন বা একমাস পর পর তিন ডোজ
ডিপিটি টিকা দিলে তা শিশুকে ডিপথেরিয়া থেকে রক্ষা করে। প্রথম ডোজ ডিপিটি টিকা
দেয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হল শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়সে।
হুপিং কাশি (পারটুসিস)
কারণঃ হুপিংকাশিতে আক্রান্ত শিশু হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় বাতাসের মাধ্যমে
এই রোগ ছড়ায় এবং আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শেও এই রোগ ছড়ায়। জীবাণুর নাম বড়ডেটেলা
পারটুসি (Bordetela pertusis) নামক ব্যাকটেরিয়া।
লক্ষণঃ- ১ম সপ্তাহঃ শিশুর জ্বর হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, চোখ মুখ লাল হয়ে যায়, কাশি দেখা দেয়।
- ২য় সপ্তাহঃ কাশি মারাত্মক আকার ধারণ করে। শিশু যখন কাশে তখন তার খুব কষ্ট হয় এবং চোখ স্ফীত ও লাল হয়ে যায়। কাশির পর শিশু" হুপ" শব্দ করে শ্বাস নেয়। অনেক সময় বমিও হয়। ছয় মাসের কম বয়স্ক শিশু" হুপ" শব্দ ছাড়াও কাশতে পারে এবং বমি করতে পারে। যদি কাশি তিন সপ্তাহের বেশী সময় ধরে চলে তাহলে হুপিং কাশি বলে অনুমান করা যেতে পারে।
- ৩-৬ সপ্তাহঃ কাশি ধীরে ধীরে কমে যায়।
ভয়াবহতাঃ হুপিং কাশির ফলে শিশু দুর্বল হয়ে যায় এবং অপুষ্টিতে ভোগে। শিশুর
নিউমোনিয়া হতে পারে। শিশুর চোখে রক্ত জমাট বেঁধে অন্ধ হয়ে যেতে পারে। শিশুর
মস্তিস্কের ক্ষতি হতে পারে।
হাম বা রুবিওলা
হাম এর ইংরেজি হলো Rubeola. হাম হচ্ছে ভাইরাসঘটিত ও অত্যন্ত ছোয়াঁচে রোগ।
প্যারামক্সিভাইরাস গোত্রের মর্বিলিভাইরাস গণের অন্তর্গত একটি ভাইরাসের কারণে হাম
হয়ে থাকে। ভাইরাসটির পূর্ণ বৈজ্ঞানিক নাম মিজল্স মর্বিলিভাইরাস (Measles
morbillivirus)। ভাইরাসটি প্রথমে শ্বাসনালিতে সংক্রমিত হয়, এরপর রক্তের মাধ্যমে
দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
ভয়াবহতাঃ হামের ফলে শিশু নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও পুষ্টিহীনতায় ভোগে। কান
পাকা রোগ হতে পারে, শিশুর রাতকানা রোগ দেখা দিতে পারে, এমনকি চোখ বন্ধ হয়ে যেতে
পারে। হামের নানা জটিলতার কারণে অনেক শিশু মারাও যায়।
প্রতিরোধঃ শিশুর ৯ মাস বয়স পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে তাকে এক ডোজ হামের টিকা
দিলে সে হাম রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে এই টিকা অবশ্যই এক বৎসর বয়স পূর্ণ
হওয়ার আগেই দেওয়া উচিত। পুষ্টিহীন শিশুরা হামের ফলে মারাত্মক রোগ পরবর্তী জটিলতার
সম্মুখীন হয়। পুষ্টিহীন শিশুদের পুষ্টিকর পরিপুরক খাবার দিলে তা তাদেরকে হাম
পরবর্তী অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। হামে আক্রান্ত শিশুকে অবশ্যই এক ডোজ
ভিটামিন এ খাওয়াতে হবে।
যক্ষ্মা (Tuberculosis)
“যক্ষ্মা” শব্দটা এসেছে “রাজক্ষয়” থেকে। ক্ষয় বলার কারণ এতে রোগীরা খুব শীর্ণ
(রোগা) হয়ে পড়েন ।
যক্ষ্মা শরীরের যেকোন অঙ্গে হতে পারে (ব্যতিক্রম কেবল হৃৎপিণ্ড, অগ্ন্যাশয়,
ঐচ্ছিক পেশী ও থাইরয়েড গ্রন্থি)। যক্ষ্মা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ফুসফুসে। গরুর
দুধ পাস্তুরায়ণ প্রচলনের আগে অন্ত্রেও অনেক বেশি হত। ২০১৮ সালে সারা বিশ্বে
যক্ষায় আক্রান্ত হয়েছিলো প্রায় এক কোটি মানুষ এবং মারা গিয়েছিলো প্রায় ১৫ লাখ
মানুষ ৷ একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগটি মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামের
এক প্রকার জীবাণুর মাধ্যমে হয়ে থাকে। টিকা বা ভ্যাকসিনেশনের মধ্যে দিয়ে যক্ষ্মা
প্রতিরোধ করা যায়।
যক্ষ্মা রোগের কারণঃ
যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত লোকের সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এবং আক্রান্ত লোক যখন তখন তার
কফ/ থুথুর মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। জীবাণুর নাম মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস
(Mycobacterium Tuberculosis)
যক্ষ্মা রোগের উপসর্গ বা লক্ষণঃ
- সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি সময় কাশি থাকে।
- অল্প অল্প জ্বর ও কাশি, ক্ষুধা কমে যায়, দুর্বলতা, গ্রন্থি ফুলে যায়, পরে পেকে গিয়ে গ্রন্থি- বগল বা ঘাড়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে। কখনো কখনো কাশির সাথে রক্ত যায়।
- অনেক দিন ধরে ধীরে ধীরে ওজন কমে যায় ও আস্তে আস্তে শরীর দুর্বল হতে থাকে।
- যে কোন হাড়ের জোড়া ফুলে যায় এবং অচল হয়ে যায়।
- যক্ষ্মার ফলে মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে যায়, ব্যথা হয়।
- মস্তিস্ক (টিবি মেনিনজাইটিস): এর ফলে মারাত্মক মাথা ব্যথা, অচেতনতা, ঘাড় শক্ত ও খিচুনী হয়।
- রাতে ঘাম হয়, বিকেলের দিকে জ্বর আসে, দেহের তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়ে না।
- বুকে পিঠে ব্যথা হয়।
ভয়াবহতাঃ সময়মত সঠিক চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু হতে পারে এবং
রোগ ছড়াতে পারে।
প্রতিরোধঃ জন্মের পরপরই যত শীঘ্র সম্ভব বিসিজি টিকা দিলে তা শিশুর দেহে
যক্ষ্মার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জন্মের পর পর বিসিজি দেয়া না হলে, শিশুর এক
বৎসর বয়সের মধ্যেই এই টিকা গ্রহণ করা উচিত।
হেপাটাইটিস B
হেপাটাইটিস ‘বি’ একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এই রোগ যকৃত বা লিভার কে আক্রমণ
করে। হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস (HBV) এর আক্রমণে এ রোগ হয়। অনেক সময় সংক্রমণের
প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগের কোন লক্ষন প্রকাশ পায় না। তবে অনেক ক্ষেত্রে বমি বমি
ভাব, চামড়া হলুদ হওয়া, ক্লান্তি, পেট ব্যাথা, প্রস্রাব হলুদ হওয়া প্রভৃতি
লক্ষন দেখা যায়। অন্যান্য ৬ (ছয়) টি রোগের মত হেপাটাইটিস ‘বি’ একটি
প্রতিরোধযোগ্য রোগ।
জন্ডিসঃ শরীরের চামড়া ও চোখের উপরের সাদা অংশ হলুদ বর্ণ ধারণ করাকে জন্ডিস
বলে।রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যাবার কারণে শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে। সিরাম বিলিরুবিনের স্বাভবিক মাত্রা ০২-০৮ মিগ্রা/১০০ মিলি সিরাম। বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০৩ মি.গ্রা/১০০ মিলি এর বেশী হলে ক্লিনিক্যালি জন্ডিস ধরা হয়।
হেপাটাইটিস বি এর কারণঃ সাধারণত যকৃতের (Liver) সমস্যার (হেপাটাইটিসের)
কারনে জন্ডিস হয়। এ ছাড়া আরও অনেক কারণে জন্ডিস হতে পারে। হেপাটাইটিস A,B,C,D,E
ভাইরাস সংক্রমনের কারনে হেপাটাইটিস হয়। এর মধ্যে B ও C অত্যন্ত মারাত্মক।
হেপাটাইটিস “বি” থেকে সিরোসিস লিভার, লিভার ক্যানসার এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
হেপাটাইটিস ‘এ’ সাধারনতঃ আপনা আপনি ভাল হয়ে যায়। এটি কম মারাত্মক।
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণঃ
- খাওয়ায় অরুচি
- বমি বমি ভাব
- প্রস্রাবের রং হলুদ
- মাংসপেশি এবং হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা হয়।
- আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় অস্বস্তি অনুভব করে।
- গায়ের চামরার উজ্জলতা নষ্ট হয়ে যায়।
- চোখের উপরের সাদা অংশে, জিহ্বার নীচে, গায়ের চামড়া, হাতের তালুর রেখা সমুহে হলদে ভাব।
হেপাটাইটিস ‘এ’ কিভাবে ছড়ায়ঃ হেপাটাইটিস ‘এ’ সাধারনতঃ সংক্রমিত পানি ও
খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ছড়ায়।
হেপাটাইটিস-বি কিভাবে ছড়ায়ঃ
- আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত অন্যের শরীরে পরিসঞ্চালন করা হলে
- সংক্রমিত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, সুঁচ অপারেশনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হলে
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনের মাধ্যমে
- সংক্রমিত খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে
- আক্রান্ত মায়ের গর্ভের সন্তান আক্রান্ত হতে পারে
- বুকের দুধের মাধ্যমে আক্রান্ত মা থেকে সন্তানে ছড়াতে পারে
- মশার মাধ্যমে
- সাধারনত বিশ্রামে থাকলে আপনা আপনি ভাল হয়ে যায়। কোন ঔষধের প্রয়োজন হয় না।
- বেশী করে তরল খাবার ও গড়ুকোজ দিতে হবে।
- কোন ঘুমের ঔষধ (যেমন ডায়াজিপাম) বমির ঔষধ (যেমন-ষ্টেমিটিল, মটিলন ও এজেমিন), ব্যথার ঔষধ (যেমন-প্যারাসিটামল) খাওয়া যাবেনা।
- জন্ডিসের লক্ষণ দেখা মাত্রই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
- হেপাটাইটিস ‘বি’ প্রতিরোধের উপায়ঃ
- ডিসপোজেবল ইনজেকশনের সুঁচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করা।
- একজনের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, সুঁচ অন্যজনে ব্যবহার না করা।
- শরীরে রক্ত সঞ্চালনের পূর্বে পরীক্ষা করে জানতে হবে ঐ রক্ত হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস মুক্ত কিনা।
- ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশার ঔষধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
- যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করা।
- ব্যবহৃত সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি গ-াভস ০.৫% ক্লোরিন দ্রবনে ১০ মিনিট ডুবিয়ে বিশোধিত করা।
বাংলাদেশ সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীতে ব্যবহৃত টিকার নাম ও সময়সূচী
শিশুদের টিকার নাম ও সময়সূচী | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
রোগের নাম | টিকার নাম | টিকার ডোজ | ডোজের সংখ্যা | ডোজের মধ্যে বিরতি | টিকা শুরু করার সঠিক সময় | কোন বয়সে টিকা শেয় করতে হবে | টিকাদানের স্থান | টিকার প্রয়োগ পথ |
যক্ষা | বিসিজি | ০.০৫ ml | ১ | - | জন্মের পর | ১ বৎসর | বাম বাহুর উপরের অংশে | চামড়ার মধ্যে |
ডিপথেরিয়া হুপিংকাশি টিটেনাস | ডিপিটি | ০.৫ ml | ৩ | ৪ সপ্তাহ | ৬ সপ্তাহ | ১ বৎসর | উরুর মধ্যভাগের বহিরাংশে | মাংশপেশী |
পোলিও | ওপিভি | ২ ফোঁটা (নির্দেশ অনুসারে) | ৪ | ৪ সপ্তাহ | ৬ সপ্তাহ | ১ বৎসর | মুখে | মুখে |
হাম | হামের টিকা | ০.৫ ml | ১ | - | ৯ মাস পূর্ণ হয়ে ১০ মাসে পড়লে | ১ বৎসর | উরুর মধ্যভাগের বহিরাংশে | চামড়ার নীচে |
হেপাটাইটিস | হেপাটাইটিস ‘বি’ টিকা | ১০mg | ৪ | ১ মাস (৪র্থ ডোজ ১ম ডোজের ১২ বছর পর দিতে হবে) | জন্মের পর থেকে | ১ বৎসর | উরুর মধ্যভাগের বহিরাংশে | মাংসপেশী |
ওপিভি টিকা মোট ৪ ডোজ দিতে হবে। ৪র্থ ডোজটি হামের টিকার সাথে নিতে হবে। হামের
টিকার সাথে ভিটামিন-এ ১ লাখ IU খাওয়াতে হবে।
মহিলাদের টিটি টিকার সময়সূচী
মহিলাদেরকে ৫ ডোজ টিটি টিকার সম্পন্ন করতে হবে। যাদের বয়স ১৫ - ৪৯ বৎসর তারা এই টিকা নিতে পারবেন।টিকার ডোজ | মাত্রার মধ্যে বিরতি | মন্তব্য / রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা |
---|---|---|
টিটি- ১ | ১৫ বৎসর বয়স হওয়া থেকে যথাশীঘ্র | গর্ভবতী মহিলাকে প্রথম ডোজ দিতে হবে গর্ভের ১৪ সপ্তাহ পর টিটি-১ টিকায় কোন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সৃষ্টি হয় না। |
টিটি- ২ | টিটি-১ পাওয়ার কম পক্ষে ১ মাস পর | গর্ভবতী মহিলাকে টিটি-২ বাচ্চা প্রসবের অন্ততঃ ১ মাস আগে দিতে হবে। টিটি-২ গ্রহনের পর ৩ বছর পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান থাকে। |
টিটি- ৩ | টিটি ২ পাওয়ার কম পক্ষে ৬ মাস পর | টিটি ৩ গ্রহণের পর ৫ বৎসর পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান থাকে। |
টিটি- ৪ | টিটি- ৩ পাওয়ার কমপক্ষে ১ বৎসর পর | টিটি ৪ গ্রহনের পর ১০ বৎসর পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান থাকে। |
টিটি- ৫ | টিটি- ৪ পাওয়ার কমপক্ষে ১ বৎসর পর | টিটি ৫ গ্রহণের পর মহিলাদের গর্ভধারণ সক্ষম বয়স পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান থাকে। |
মহিলাদের টিটি টিকা দেয়ার কিছু সতর্কবাণী
১. সর্বনিম্ন বিরতির আগে টিকা দিলে কার্যকরী হবে না এবং এই ডোজটি বাতিল বলে গণ্য
হবে।
২. মাত্রার মধ্যে বিরতির কোন সর্বোচ্চ সীমা নেই।
৩. যত দেরী করেই পরবর্তী নির্ধারিত টিকা নিতে আনুক না কেন তাকে ৫ ডোজ টিটি টিকা
টিকার সময়সূচী মত নির্ধারিত টিকা দিন।
৪. ডোজের অধিক টিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
৫. টিটি টিকার সময়সূচী মেনে টিকা দেওয়া হলে গর্ভাবস্থায় কোন অতিরিক্ত টিটি টিকা
দেওয়ার দরকার নেই।
উদাহরণ স্বরুপঃ
প্রশ্নঃ একজন মহিলা আজকে ১ম ডোজ টিটি টিকা দিলেন। তার ২য় ডোজ টিটি টিকা
পাওয়ার কথা ১ মাস পর। কিন্তু ঐ মহিলা যদি ৬ মাস পর আপনার কাছে টিটি টিকা নেওয়ার
জন্য আসেন তাহলে তাকে টিকা দেবেন?
উত্তরঃ দ্বিতীয় ডোজ টিটি টিকা দেব। কারণ, টিকার ডোজের মধ্যে বিরতির কোন
সর্বোচ্চ সীমা নেই।
প্রশ্নঃ কোন মহিলা ৩য় ডোজ টিটি টিকা পাওয়ার ১ বৎসর পর ৪র্থ ডোজ পাওয়ার
কথা। কিন্তু সে ১ বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগেই ৪র্থ ডোজ টিকা নিলো। তাহলে ঐ টিকা কি
কার্যকরী হবে?
উত্তরঃ না। কারণ সে নুন্যতম বিরতির আগেই ৪র্থ ডোজ টিকা নেওয়ায় তা বাতিল
ডোজ হিসাবে বিবেচিত হবে। তাই তাকে সময়মত ৪র্থ ডোজ টিকা দিতে হবে।
কখন টিকা দেয়া যাবে
প্রায় সকল অবস্থায়ই টিকা দেয়া যায় এবং টিকাদানের যোগ্য সকল মহিলা ও শিশুদের টিকা
গ্রহণ করার সুযোগ দেয়া উচিত। রোগাক্রান্ত হওয়ার চেয়ে টিকা দিয়ে যে সামান্য জটিলতা
হতে পারে তার ঝুঁকি অনেক কম। সুতরাং একটি শিশুকে টিকা না দিলে শিশুর এবং জনগণের
কি ক্ষতি হতে পারে তা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কাদের টিকা দেয়া যাবে না।
অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুকে টিকা দিতে হবে। এই সকল শিশুর দেহে রোগ প্রতিরোধ করার
ক্ষমতা কম থাকে। সুতরাং তার ভালো প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করার জন্যই টিকা দেওয়া
বেশী জরুরী। সামান্য জ্বর, শ্বাসনালীর মৃদু প্রদাহ (সর্দি, কাশি) পাতলা পায়খানা
অথবা সামান্য দুর্বলতায় টিকাদান বন্ধ করা উচিত নয়। টিকার কার্যকারিতা
সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করার জন্য তাকে ৪টি ডোজ খাওয়ানোর পর আরও একটি ডোজ খাওয়াতে
হবে। পূর্বে শরীরে কোন দানা উঠে থাকলেও সকল যোগ্য শিশুকে হামের টিকা দিতে হবে।
অতীতে হাম হয়ে থাকলেও সেই শিশুকে হামের টিকা দিতে হবে।
কখন টিকা দেয়া যাবে না
একমাত্র নিম্নলিখিত কারন গুলোতেই শিশুকে টিকা দেয়া যাবে না-- খুব বেশী জ্বর থাকলে (১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা ৩৮.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর বেশী)
- শিশু এত অসুস্থ যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার।
পূর্ববর্তী ডিপিটি টিকার যদি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়ে থাকে, অর্থাৎ টিকা
দেয়ার পর খিচুনী বা অজ্ঞান হলে পরবর্তী ডিপিটির ডোজ দেয়া যাবে না। এই ক্ষেত্রে
ডিপিটি টিকার বদলে টিটি টিকা দিতে হবে এবং এর সাথে শিশুকে অন্যান্য সকল টিকা
(বিসিজি, হাম, পোলিও) নিয়ম অনুযায়ী দিতে হবে। এই ধরনের সকল শিশুকেই তালিকাভুক্ত
করতে হবে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। মা যদি বাধা দেন তবে অসুস্থ
শিশুকে টিকা দেবেন না। এক্ষেত্রে বরং মাকে সাহস দিন, কিন্তু জোর করবেন না। যদি তা
করেন তবে পরবর্তীতে মা শিশুকে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে নাও আসতে পারেন।
টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা, জটিলতা ও ব্যবস্থাপনা
মাঝে মাঝে সামান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও তা খুব কম ক্ষেত্রেই মারাত্মক
হয়ে থাকে। নিচের চার্টে বিভিন্ন টিকার সম্ভাব্য কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে
পারে এবং সেজন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তা দেখানো হোলঃ
টিকা | সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা | জটিলতা ও ব্যবস্থাপনা |
---|---|---|
ডিপিটি | ২-৩ দিন সামান্য জ্বর এবং টিকার স্থানে সামান্য ফোলা এবং ব্যথা এইগুলি কিছুদিনের মধ্যে চলে যাবে। শিশুকে প্রচুর পরিমাণ তরল খাদ্য দিতে হবে এবং মায়ের বুকের দুধও খাওয়াতে হবে। | কোন শিশুর খিচুনি হতে পারে। ডিপিটি ইনজেকশন দেওয়ার ফলে যদি খিচুনি হয় বা অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে: চিকিৎসার জন্য শিশুকে শীঘ্র একজন ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দিন। |
হাম | টিকা দেয়ার পর সামান্য জ্বর ও সামান্য দানা দেখা দিতে পারে। শিশুকে প্রচুর পরিমাণ তরল খাদ্য দিতে হবে। মায়ের বুকের দুধও খাওয়াতে হবে। | যদি যন্ত্রপাতি যথাযথ জীবাণুমুক্ত না হয় বা ইনজেকশন প্রয়োগ কৌশল ত্রুটিপূর্ণ হয় তাহলে টিকা দেওয়ার ফলে ক্ষত বা ফোঁড়া হতে পারে অথবা চামড়া লাল এবং ফুলে যেতে পারে। তাকে চিকিৎসার জন্য শীঘ্র ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দিন। |
ওপিভি | কিছুই হয় না | - |
বিসিজি | টিকা দেয়ার ২ সপ্তাহ পরে টিকারস্থান লাল হয়ে যায়, ২-৩ সপ্তাহ পরে সামান্য ক্ষত বা ঘা হয় ঘা এমনিতেই সেরে যায় এবং ছোট দাগ থেকে যায়। কোন ওষুধ বা তেল খেতে দেয়া যাবে না টিকার স্থান খোলা রাখতে হবে। নিজ থেকেই ক্ষত শুকিয়ে যাবে। | বিসিজি টিকা দেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে টিকা দেওয়ার স্থান লাল হয়ে ফুলে যায় বা ক্ষত হয় তাহলে অবিলম্বে তাকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দিন। |
টিটি | টিকাস্থানে ব্যথা, সামান্য ফোলা কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, ব্যথা সেরে যাবে। | যদি যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত না করা হয় বা ইনজেকশন প্রয়োগ কৌশল ত্রুটিপূর্ণ হয়, তাহলে টিকা দেয়ার ফলে ক্ষত বা ফোঁড়া হতে পারে। চামড়া লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। তাকে চিকিৎসার জন্য শীঘ্র ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দিন। |
টিকাদান নীতিমালা
(১) জন্মের পর পরই এক ডোজ পোলিও টিকা খাওয়ানো যায়। যদি তা জন্মের পর থেকে ৬
সপ্তাহ বয়সের আগে খাওয়ানো হয় তবে এই ডোজ অতিরিক্ত হিসাবে গণ্য করতে হবে এবং ৬
সপ্তাহ বয়স থেকে নিয়ম মত আরো ৪ ডোজ পোলিও টিকা খাওয়াতে হবে। যদি ৬ সপ্তাহ বয়স
থেকে পোলিও টিকা খাওয়ানো হয় তবে ৪টি ডোজই যথেষ্ট।
(২) যে সকল শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বা হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করবে তাদেরকে ছাড়পত্র
দেয়ার আগে বিসিজি এবং পোলিও টিকা দিতে হবে।
(৩) যদি কোন শিশু কোন টিকা না নিয়ে থাকে তবে ছয় সপ্তাহ বয়স থেকে শুরু করে নয় মাস
বয়সের আগে যখনই সে টিকা নিতে আসবে তাকে ডিপিটি, পোলিও এবং বিসিজি টিকা দিতে হবে।
নয় মাস বয়সের পর আসলে হামের টিকাও একই সাথে দিতে হবে।
(৪) পোলিও, ডিপিটি ও টিটি টিকার ডোজের বিরতির কোন সর্বোচ্চ সীমা নেই। দুটি ডোজের
মধ্যের সময় যদি ১২ মাসেরও বেশী হয় তবুও পুনরায় প্রথম থেকে টিকা দেয়া শুরু করবেন
না। নুন্যতম বিরতি পার হয়েছে মনে করে পরবর্তী ডোজের টিকা দিন। অর্থাৎ প্রথম ডোজ
দেয়ার পর চার সপ্তাহের পরিবর্তে ১২ মাসেরও পরে উপস্থিত হলেও শিশুকে দ্বিতীয় ডোজ
দিতে হবে।
(৫) উপরে উলি-খিত যে কোন বা সকল টিকাই একই সময়ে দেয়া যায়, এতে টিকার প্রতিরোধক
ক্ষমতা তৈরী করতে কোন অসুবিধা হয় না এবং কোন খারাপ প্রতিক্রিয়াও হয় না। তবে
প্রতিটি টিকা অবশ্যই আলাদা আলাদা স্থানে দিতে হবে।
(৬) গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই নিরাপদের জন্য টিটি টিকা দেয়া যেতে পাবে, তবে প্রথম
টিকা সাধারণতঃ গর্ভের ১৪ সপ্তাহের পরে অথবা মায়ের গর্ভে শিশু যখন নড়াচড়া করে তখনই
দেয়া উচিত। কারণ এই সময়ের আগে টিকা দিলে কোন কারণে গর্ভাবস্থায় কোন জটিলতা হলে
টিকার উপর দোষ বর্তাতে পারে। ২য় ডোজ প্রথম ডোজের কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ পরে দিতে হবে
তবে ২য় ডোজ যেন শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার অন্ততঃ ৪ সপ্তাহ আগে দেয়া হয় সেদিকে লক্ষ্য
রাখতে হবে।
(৭) সংশি-ষ্ট সকলকে ৫ ডোজ টিটি টিকা দেওয়ার সময়সূচী মেনে টিকা দিতে অনুরোধ করা
হচ্ছে। ইপিআই নীতিমালা ১৫-৪৯ বৎসরের মহিলা এবং গর্ভবতী মহিলা ছাড়া অন্য কোন
মহিলা, পুরুষ বা শিশুকে টিটি টিকা দেয়া যাবে না। এর ব্যতিক্রম হচ্ছে, যে শিশুর
ডিপিটি দেয়ার পর খিচুনী হয়েছে তাকে টিটি টিকা দিতে হবে।
(৮) বিসিজি দেয়ার পর পরবর্তী সময়ে অন্য টিকা দিতে আসলে শিশুর বাম বাহু পরীক্ষা
করে দেখতে হবে কোন দাগ বা ক্ষত চিহ্ন আছে কিনা। দাগ বা ক্ষত চিহ্ন থাকলে বুঝতে
হবে বিসিজি টিকা সফলভাবে কাজ করেছে। যদি টিকা দেওয়ার ৩ মাসের মধ্যে কোন ক্ষত
চিহ্ন (scar) না হয় তাহলে পুনরায় বিসিজি টিকা দিতে হবে।
(৯) জন্মের এক বৎসরের মধ্যেই কোন শিশুকে সব গুলি টিকার সবকয়টি ডোজ সম্পূর্ণ করতে
হবে।
(১০) শূন্য থেকে-১ বছর বয়সের শিশুদের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। বেশীর ভাগ
রোগ এই বয়সেই হয়ে থাকে। তাই শিশুকে রোগ প্রতিরোধক সব কয়টি টিকা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
দেয়া উচিৎ। তদুপরি যত তাড়াতাড়ি টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা যাবে তত তাড়াতাড়ি শিশুর
শরীরে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে।
তথ্যসুত্রঃ (পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক)
সহায়িকা
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url