এইডস কি-এইডস এর লক্ষণ ও কারণ-এইডস এর প্রতিকার কি
এইডস একটি ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। সারা বিশ্বে এইডস রোগীর সংখ্যা দিন দিন
বাড়ছে। এইডস এমন একটি রোগ এখন পর্যন্ত যে রোগের কোন ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা আবিষ্কার
করা সম্ভব হয়নি।
এইডস এর লক্ষণ ও কারণ-এইডস এর প্রতিকার একমাত্র সচেতনতা এবং প্রতিরোধের মাধ্যমেই
এই প্রানঘাতি রোগ থেকে দুরে থাকা সম্ভব।
সূচিপত্রঃ- এইডস এর কারণ ও লক্ষণ-এইডস এর প্রতিকার
এইডস (AIDS) মানে কি
এইডস (AIDS) এর পূর্ণরূপ হলো (Acquired Immune Deficiency Syndrome)।A - একোয়ার্ড (Acquired)- অর্জিত
।- ইম্যুন (Immune)- শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা
D - ডেফিসিয়েন্সি (Deficiency)- অভাব
S - সিনড্রোম (Syndrome)- অনেকগুলি রোগের চিহ্ন ও লক্ষণের সমষ্টি।
এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা সংক্রিমিত একটি রোগ। একে সিনড্রোম বলা হয়, কেননা এটি
কয়েকটি উপসর্গ ও লক্ষণের সমাহার। এইডস যৌন মিলনের মাধ্যমে বেশী ছড়ায়। এইডস এ
আক্রান্ত ব্যক্তিদের শতকরা ৭৫ জনই অবাধ ও অসতর্ক যৌন মিলনের মাধ্যমে আক্রান্ত
হয়েছে।
এইচআইভি (HIV) কি
এইচআইভি (HIV) এর পূর্ণরূপ হলো (Human Immune deficiency Virus)। এইচআইভি এক
প্রকার ভাইরাস। এই ভাইরাসের মাধ্যমেই এইডস রোগ হয়। এইডস এক প্রকার মারাত্মক
যৌনবাহিত রোগ। এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই। এই রোগের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং সেই কারণে শরীরকে কোন কারণে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা
করা যায় না।
এইডস কেন হয়?
এই রোগ এইচআইভি নামক এক প্রকার ভাইরাস এর কারণে হয়। ভাইরাসটি মানব দেহের রোগ
প্রতিরোধকারী ক্ষমতাকে স্থায়ীভাবে ধংস করে ফেলে, পরিনতি এইডস এবং অকাল
যন্ত্রনাদায়ক মৃত্যু। এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে, পুরুষের বীর্যে এবং
মহিলাদের যৌনাঙ্গের তরল পদার্থের মাঝে পাওয়া যায়।
কে এইডস রোগ বহন করে?
কোন ব্যক্তি এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত হলেই তিনি বাহক হিসাবে থাকেন এবং অন্যদের
সংক্রমণ করতে পারেন। প্রায় ক্ষেত্রেই লোকজন জানে না যে তিনি একজন এইডস রোগের
বাহক। বাহক অবস্থায় কোন প্রকার লক্ষণই অনেক সময় দেখা যায় না। একজন এইডস রোগের
বাহক না জানা অবস্থায় কয়েক বছর যাবৎ থাকতে পারেন। দীর্ঘদিন পর রোগ প্রতিরোধক
ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলেই এইডস রোগী হিসাবে স্পেশাল পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করা
যায়।
এইডস কি ভাবে ছড়ায়?
রোগ সংক্রমণঃ
এইডস রোগ ছড়ায় যখন রোগীর রক্ত বীর্য অথবা যোনীপথের নির্গত তরল পদার্থ আর এক লোকের
রক্ত অথবা মিউকাস পর্দার সংস্পর্শে আসে। এইচআইভি ভাইরাস এবং হেপাটাইটিস 'বি'
ভাইরাস একই পদ্ধতিতে ছড়ায়।
সাধানরতঃ চার ভাবে এইডস রোগ ছড়ায়
১. যৌনমিলনের মাধ্যমেঃ ভাইরাস একজন মহিলা থেকে পুরুষে, পুরুষ থেকে মহিলা এবং
পুরুষ থেকে পুরুষের মাঝে এই রোগ ছড়াতে পারে। যারা অন্যান্য যৌনব্যধিতে ভুগছেন
তাদের এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
২. সংক্রমিত সূচ, সিরিঞ্জ এবং অন্যান্য ধারালো যন্ত্রপাতির মাধ্যমেঃ জীবাণুমুক্ত
নয় এই ধরনের সংক্রমিত সূচ এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে এইচআইভি একজন রোগী থেকে
অন্যজনের নিকট ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন কি কান ও নাক ছিদ্র করার সুঁচও যদি একজন
এইচআইভি রোগীর ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয় এবং সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করে
অন্যজনের জন্য ব্যবহার করা হয় তাহলে অন্যজনের এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাদক দ্রব্যে আসক্ত ব্যক্তিদের জন্য এইচআইভি দ্বারা
আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশী।
৩. রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমেঃ এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত অন্য শরীরে
সঞ্চালন করলে অন্যজনও এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
৪. এইচআইভি আক্রান্ত মা থেকে শিশুতে ছড়ায়, এইডস রোগে আক্রান্ত মায়ের গর্ভে জন্ম
নিলে।
এইডস কিভাবে ছড়ায় না
- এইডস রোগীর সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশা, চলাফেরা ও কাজ কর্মের মাধ্যমে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড়, বিছানাপত্র এবং খালা বাসন ব্যবহার করলে।
- বাতাস পানি, এবং খাদ্যের মাধ্যমে।
- করমর্দনের মাধ্যমে।
- মশা বা অন্য কোন পোকা মাকড়ের কামড়ে।
এইডস রোগের লক্ষণ
- শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
- দীর্ঘদিন বা ১ মাসেরও বেশী সময় ধরে জ্বর হওয়া।
- দীর্ঘদিন বা ১ মাসেরও বেশী সময় ধরে ডায়রিয়া হওয়া।
- দীর্ঘদিন বা ১ মাসেরও বেশী সময় ধরে কাশি বা নিউেিমানিয়ায় ভোগা।
- শরীরের বিভিন্ন স্থানের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
এইডস এর চিকিৎসা
কোন চিকিৎসা নেই। চিকিৎসা শুধুমাত্র উপসর্গ কমানোর জন্য দেওয়া হয়।এইডস এর প্রতিরোধ
প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।১. কমিউনিটির লোকজনকে এইডস রোগ কিভাবে ছড়ায় সে সম্পর্কে সচেতন ও শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
• যৌনব্যধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই কনডম ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
• জনগণকে পতিতালয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
• ইনজেকশন নেওয়ার প্রয়োজন হলে সর্বদা নতুন ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ ও সূঁচ ব্যবহার করার
ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।
২. অপারেশন করার কাজে সর্বদা ক্লোরিন দ্রবনে ডিকন্টামিনেশন এবং জীবাণুমুক্ত করা
যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. হাসপাতালে ব্যবহৃত ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ ও সূঁচ অন্যান্য রক্ত ও দুষিত আবর্জনা
নিয়ম অনুযায়ী ধ্বংস করতে হবে।
৪. রক্তের প্রয়োজন হলে অপরিচিত প্রফেশনাল অসুস্থ অপুষ্টিহীন রক্তদাতাদের থেকে
রক্ত না নিয়ে নিজেদের পরিচিত লোকদের থেকে রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা
করতে হবে।
৫. ভবিষ্যতে সব রক্তদান কেন্দ্রে রক্তদানের আগে পরীক্ষার মাধ্যমে রক্ত এইডস রোগের
জীবাণুমুক্ত কিনা পরীক্ষা করে জেনে নিতে হবে। এইডস প্রতিরোধযোগ্য মরণব্যধি।
একমাত্র সতর্কতা অবলম্বন এর মাধ্যমেই প্রতিরোধ সম্ভব।
মহিলাদের এইডস সম্পর্কে বেশী সচেতন হওয়া দরকার
অনেক মহিলা প্রজননতন্ত্রের লক্ষণবিহীন যৌনরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, যার ফলে
মহিলাদের এইডস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশী। প্রজননতন্ত্রের সমস্যা দেখা দিলে
ডাক্তারী পরীক্ষার মাধ্যমে যৌনরোগ থেকে নিরাপদ থাকা উচিত।
এইডস প্রতিরোধের জন্য গণসচেতনার সৃস্টি করুন
এইডস প্রতিরোধে প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো: এ রোগ সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা
সৃষ্টি করা।
রেডিও, টিভি, সংবাদপত্রসহ অন্যান্য গণমাধ্যমসমূহ এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করতে পারে। তাছাড়া নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে হবে।
১. ধর্মীয় অনুশাসন মেনে অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহে একই সিরিঞ্জ ও সূঁচ বার বার ব্যবহার না
করে Disposable সিরিঞ্জ ও সূঁচ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহে মুমুর্ষ রোগীদের রক্ত সঞ্চালনের পূর্বে
ব্যবহৃত রক্তের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কতকগুলো পরীক্ষা যেমন- (HIV, HbsAG. VDRL)
সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে বন্ধুবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল
বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) হাসপাতাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট মেডিকেল কলেজ সমূহে HIV
সনাক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে।
৪. জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যান্য পদ্ধতির সঙ্গে কনডম ব্যবহারকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত
করা উচিত। কারণ এ পদ্ধতিতে এইডস ছাড়াও অন্যান্য যৌনরোগ, যেমন- সিফিলিস, গনোরিয়া,
ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে থাইল্যান্ডের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যেতে
পারে। দেশটি কথিত অবাধ যৌনাচারের স্বর্গরাজ্য সত্বেও শতকরা একশত ভাগ কনডম ব্যবহার
সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিয়ে নিজেদের এইডস মহামারী থেকে মুক্ত রাখতে পারছে।
এইডস কিভাবে ক্ষতি করে
- এইচআইভি (HIV) ভাইরাসের আক্রমণের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। ফলে শরীরের জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায়।
- আজ পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও এ রোগের কোনো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি।
- এই রোগের সংক্রমণে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য পুরুষ, মহিলা ও শিশু মৃত্যু বরণ করছে।
- বাংলাদেশেও এইডস রোগের লক্ষণ দেখা গেছে এবং ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন মৃত্যু বরণ করেছে।
- এইডস-এর হাত থেকে বাঁচতে হলে এ রোগ সম্পর্কে নিজে সচেতন হউন এবং অন্যকেও সচেতন করতে সাহায্য করুন।
- এইডস প্রতিরোধে সঠিক তথ্য জানুন এবং অপরকে জানান। আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করুন।
এইডস যেভাবে সংক্রমিত হয়ে থাকে
- এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন মিলনের মাধমে-৮০-৯০ % সংক্রমিত হয়
- এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত অন্য কারো শরীরে গেলে- ৫-১০%
- এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ইনজেকশনের সূঁচ পুনরায় অন্য কারোর জন্য ব্যবহার করলে ৫%।
- এ রোগে আক্রান্ত মা থেকে তার গর্ভের সন্তান আক্রান্ত হয়ে থাকে ১%
- সিফিলিস, গনোরিয়া এবং যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের (HIV) এইডস হওয়ার সম্ভাবনা বেশী (আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে কোন তথ্য নেই)।
আফ্রিকার কিছু দেশে যেমন কেনিয়া ও উগান্ডায় প্রতিদিন হাজার হাজার এইডস এ আক্রান্ত
রোগী মারা যাচ্ছে। ফলে ঐ সব দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃস্টি হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত ও
অবাধ যৌন মিলন এর প্রধান কারণ। আমাদেরকে এ বিষয়ে এখনই সচেতন হতে হবে।
তথ্যসুত্রঃ (পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক) সহায়িকা
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url