সুন্দরবনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

সুন্দরবনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবঃ

১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ বনাঞ্চল সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগ গঠিত করে। এবং বন রক্ষার জন্য বিভিন্ন কর্মকর্তা নিযুক্ত করা। উভয় দেশের সরকারি সুন্দরবন সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেয়। তারপরেও সুন্দরবন প্রাকৃতিক এবং মানবকৃষ্ট কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানার প্রভাবে ভূমিধসের কারণে সুন্দরবনের প্রায় ৪০% ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সুন্দরবনের সাধু পানির সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে বর্তমানে বনটি অতিরিক্ত লোনা পানিতে ভুগছে।এবং পুনরায় ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলা সুন্দরবনের ওপর ব্যাপক খারাপ প্রভাব ফেলেছিল। ঘূর্ণিঝড় হায়লার প্রকোপে প্রায় ১,০০,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বর্তমানে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় অবস্থিত। এবং এই উপজেলাটি সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ২০১৬ সালের ইউনেস্কো কর্তৃক এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছিল কয়লা চালিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার এই ম্যানগ্রোভ অঞ্চল আরো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

উপকূল বরাবর সুন্দরবনের গঠন প্রকৃতি বহুমাত্রিক উপাদানসমূহ দ্বারা প্রভাবিত, যাদের মধ্যে রয়েছে স্রোতের গতি, ব্যষ্টিক ও সমষ্টিক স্রোত চক্র এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী দীর্ঘ সমুদ্রতটের স্রোত। বিভিন্ন মৌসুমে সমুদ্রতটের স্রোত যথেষ্ট পরিবর্তনশীল। এরা অনেক সময় ঘূর্ণীঝড়ের কারণেও পরিবর্তিত হয়।এসবের মধ্য দিয়ে যে ক্ষয় ও সঞ্চয় হয়, যদিও এখনো সঠিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি, তা ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনে মাত্রাগত পার্থক্য তৈরি করে। অবশ্য ম্যানগ্রোভ বনটি নিজেই এর পুরো ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। প্রত্যেক মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ঋতুতে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের পুরোটিই পানিতে ডুবে যায়, যার অধিকাংশই ডুবে থাকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জুড়ে। অববাহিকার নিম্নানঞ্চলের পলি প্রাথমিকভাবে আসে মৌসুমী বৃষ্টিপাতকালীন সময় সমুদ্রের চরিত্র এবং ঘূর্ণিঝড়ের মত ঘটনাগুলোর ফলে। অনাগত বছরগুলোতে গঙ্গা অববাহিকায় বসবাসকারীদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে তা হলো সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি। উঁচু অঞ্চলে স্বাদুপানির গতিপথ পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় ম্যানগ্রোভ আর্দ্রভূমিগুলোর অনেকগুলোতে স্বাদু পানির প্রবাহ ১৯ শতকের শেষের দিক থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। একই সাথে নিও-টেকটনিক গতির কারণে বেঙ্গল বেসিনও পূর্বের দিকে সামান্য ঢালু হয়ে গিয়েছে, যার ফলে স্বাদু পানির বৃহত্তর অংশ চলে আসছে বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে। ফলশ্রতিতে বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে লবণাক্ততার পরিমাণ ভারতীয় অংশের তুলনায় অনেক কম। ১৯৯০ সালের এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, “হিমালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি বা “গ্রিন হাউস” এর কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতিকে আশঙ্কাজনক করে তুলেছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে -“জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের পাঠ” শীর্ষক ইউনেস্কোর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মনুষ্যসৃষ্ট অন্যান্য কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের যে ৪৫ সে.মি. উচ্চতা বৃদ্ধি হয়েছে, তা সহ মনুষ্যসৃষ্ট আরও নানাবিধ কারণে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে (জলবায়ু পরিবর্তনের উপর আলোচনায় প্রাকাশিত আন্তঃসরকার পরিষদের মত অনুযায়ী ২১ শতকের মধ্যেই)। সামুদ্রিক ঝড়ঝঞ্ঝার বিরুদ্ধে ম্যানগ্রোভের যে-অরণ্য সুন্দরবন-সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রাকৃতিক প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে বাঁচানোর যথেষ্ট উদ্যোগ না-থাকায় জাতীয় পরিবেশ আদালতও উদ্বিগ্ন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url