কুষ্ঠ রোগ কি-কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
কুষ্ঠ পৃথিবীর একটি অতি প্রাচীন রোগ, সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে উন্নত দেশগুলো
থেকে এ রোগ উচ্ছেদ হয়ে গেছে। আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এ রোগ এখনও
এক বিরাট সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। কুষ্ঠ রোগ সম্বন্ধে অজ্ঞতা ও আধুনিক চিকিৎসার
অভাবই এজন্য দায়ী। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ এ রোগ
উচ্ছেদে সহায়ক হবে।
বি.দ্রঃ
এই পোষ্টের সকল তথ্য শুধুমাত্র তথ্য শেয়ারের জন্য। এই পোষ্টে উল্লিখিত ঔষধের
নাম এবং সেবন বিধি শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জনের জন্য। কোন ধরণের চিকিৎসার জন্য
নয়।
সূচিপত্রঃ- কুষ্ঠ রোগ কি-কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- কুষ্ঠ রোগের কারণ
- কুষ্ঠ রোগের বিস্তার
- কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ সমূহ
- কুষ্ঠ রোগের শ্রেণী বিভাগ
- কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা
- কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত ঔষধসমূহ
- ওষুধ গ্রহণ পদ্ধতি
- ওষুধের পার্শ্ব/বিরূপ প্রতিক্রিয়া
- কুষ্ঠ রোগের সঠিক চিকিৎসা না হলে কি হতে পারে
- কুষ্ঠ রোগের প্রতিক্রিয়া
- কুষ্ঠ রোগীর প্রতি করনীয়
- কুষ্ঠ নির্মুল করার প্রধান উপায় হলো
- বিসিসি বার্তা
কুষ্ঠ রোগের কারণ
মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি নামক এক ধরনের জীবানু এ রোগের কারণ।কুষ্ঠ রোগের বিস্তার
কুষ্ঠ রোগের জীবাণু একজন সংক্রামক কুষ্ঠ রোগীর হাচি, কাশি থেকে বাতাসে মিশে গিয়ে
নিঃশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ লোকের দেহে প্রবেশ করে। মোট কুষ্ঠ রোগীর ১৫-২০% মাত্র
সংক্রামক বাকী ৮০-৮৫% অসংক্রামক।
মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা প্রায় ৯৯ ভাগ লোকেরই এ রোগের বিরুদ্ধে প্রকৃতি প্রদত্ত
প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। অন্যান্য সংক্রামক রোগের তুলনায় কুষ্ঠ রোগ সংক্রমণের হার
খুবই সামান্য।
কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ সমূহ
কুষ্ঠ রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি হলো
- কুষ্ঠ রোগের লক্ষণগুলি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারলে পঙ্গুত্ব রোধে ব্যবস্থা নেয়া যায়।
- চামড়ায় ফ্যাকাশে অথবা লাল দাগ দেখা দেয় যেখানে রোগী স্পর্শ, ব্যথা এবং তাপ অনুভব করে না বা খুব কম অনুভব করে এবং চুলকায় না। প্রান্তিক স্নায়ু মোটা হয়ে যাওয়া। হাত বা পায়ের অনুভূতির অভাব।
- কান, মুখ বা শরীরের যে কোন স্থানে গুটি দেখা দেয়া ইত্যাদি।
- কুষ্ঠ যদি সংক্রামক হয় তবে আক্রান্ত স্থানের ত্বক রস বা অন্যান্য কয়েকটি স্থানের ত্বক রস পরীক্ষা করলে সাধারণত কুষ্ঠ জীবাণু পাওয়া যায়।
- ত্বকে অনুভূতি না থাকার কারণে নিজের অজান্তেই কুষ্ঠ রোগী কাটা, পোড়া এবং অন্যান্য আঘাতের শিকার হতে পারে। পরিণতিতে ধীরে ধীরে তার পঙ্গু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- কুষ্ঠ রোগীর দেহে যে ক্ষত এবং ঘা দেখা যায় তা থেকে কুষ্ঠ ছড়ায় না। এই ক্ষত ও ঘা রোগের লক্ষণও নয়।
- কুষ্ঠ রোগীর শরীরে যে ক্ষত এবং ঘা দেখা যায় তা পুঁজ সৃষ্টিকারী রোগ জীবাণু দ্বারা সৃষ্টি হয়। এ সব ক্ষত এবং ঘা থেকে কুষ্ঠ জীবাণু ছড়ায় না।
- আক্রান্ত স্নায়ু তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলায় অনুভূতিহীন স্থানে বার বার আঘাত প্রাপ্ত হয়ে শরীরে ক্ষত দেখা দেয়। কার্যকারীতাহীন স্নায়ুর জায়গাটিতে কোনো ব্যথার অনুভূতি থাকে না বলে কুষ্ঠ রোগী নিজের অজান্তে সে জায়গা কেটে বা পুড়ে ফেলতে পারে।
- কুষ্ঠ রোগের আক্রমণ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এবং চিকিৎসা করালে কুষ্ঠ রোগীদের শারীরিক বিকৃতি রোধ করা যায়।
কুষ্ঠ রোগের প্রধান লক্ষণ সমূহ
১. চামড়ায় ফ্যাকাশে বা লালচে দাগ যাতে কোন অনুভুতি থাকে না এবং চুলকায় না,২. শরীরের কোন স্থানেরুায়ু মোটা হয়ে যাওয়া
৩. হাত বা পায়ে অনুভূতির অভাব
৪. কান মুখ বা শরীরের অন্য কোন স্থানে গুটি দেখা দেয়।
অন্যান্য লক্ষণসমূহ
এছাড়াও অন্য যে সকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে তা হলো-শরীরের কোন অংশের চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া
১. কান বা কানের লতি মোটা হয়ে যাওয়া।
২. আপাতঃ কোন কারণ ছাড়া শরীরের কোন অংশে ফোসকা পড়া।
৩. পায়ের তলায় ঘা, যেখানে কোন ব্যথা থাকে না।
৪. আক্রান্ত হাত/ পায়ের মাংসপেশী অপুষ্ট বা শুকিয়ে যাওয়া।
৫. হাতে বা পায়ের আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যাওয়া বা খসে পড়া।
৬. চোখের ভ্রু উঠে যাওয়া।
৭. চোখের পাতা পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া।
৮. নাক বসে যাওয়া।
৯. কজি হতে হাত বা গোড়ালী থেকে পা ঝুলে পড়া।
২. পসি ব্যাসিলারি- চামড়ায় ১ থেকে ৫ পর্যন্ত অসাড় ফ্যাকাশে অথবা লালচে অসাড় দাগ।
চিকিৎসার উদ্দেশ্যঃ
৮. নাক বসে যাওয়া।
৯. কজি হতে হাত বা গোড়ালী থেকে পা ঝুলে পড়া।
কুষ্ঠ রোগের শ্রেণী বিভাগ
চিকিৎসার সুবিধার্থে রোগীর চামড়া অসাড় ফ্যাকাশে অথবা লালচে অসাড় দাগের সংখ্যার
ভিত্তিতে কুষ্ঠ রোগীকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে-
১. মাল্টি ব্যাসিলারি চামড়ায় ৬ বা ততোধিক অসাড় ফ্যাকাশে অথবা লালচে অসাড় দাগ।২. পসি ব্যাসিলারি- চামড়ায় ১ থেকে ৫ পর্যন্ত অসাড় ফ্যাকাশে অথবা লালচে অসাড় দাগ।
কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা
বর্তমানে প্রচলিত আধুনিক পদ্ধতিতে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করলে কুষ্ঠ রোগ সম্পূর্ণ সেরে যায়।চিকিৎসার উদ্দেশ্যঃ
- রোগ আরোগ্য করা
- সংক্রামক রোগীকে অসংক্রামক করা
- বিকলাঙ্গতা ও পংঙ্গুত্ব রোধ করা
- মাল্টি ব্যাসিলারিঃ নিয়মিত এক বছর (১২ মাস) অথবা দেড় বৎসরের (১৮ মাস) মধ্যে ১২ (বার) মাস চিকিৎসা গ্রহণ।
- পসি ব্যাসিলারিঃ নিয়মিত ছয় মাস অথবা নয় মাসের মধ্যে ছয় মাস চিকিৎসা গ্রহণ।
কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত ঔষধসমূহ
- রিফামপিসিন
- ক্লোফাজিমিন
- ড্যাপসন
- ওফ্লোক্সাসিন
- মিনোসাইক্লিন
কুষ্ঠ রোগের শ্রেনী ও রোগীর বয়স অনুসারে চিকিৎসা ব্যবস্থা
(ছক-৪)
সরাসরি তদারকিতে ওষুধ খাওয়া (মাসে একবার) | বাড়িতে নিজে ওষুধ খাওয়া | |||||
---|---|---|---|---|---|---|
শ্রেণী | বয়স | রিফামপিসিন | ক্রোফাজিমিন | ড্যাপসন | ক্লোফাজিমিন | ড্যাপসন |
ম্যাল্টি ব্যাসি লারি (৬ বা ততোধি ক দাগ) | ১৫+ ১০-১৪ ৬-৯ | ৬০০ মিঃ গ্রাঃ ৪৫০ মিঃ গ্রাঃ ৩০০ মিঃ গ্রাঃ | ৩০০ মিঃ গ্রাঃ ১৫০ মিঃ গ্রাঃ ১০০ মিঃ গ্রাঃ | ১০০ মিঃ গ্রাঃ ৫০ মিঃ গ্রাঃ ২৫ মিঃ গ্রাঃ | ৫০ মিঃ গ্রাঃ প্রতিদিন ৫০ মিঃ গ্রাঃ ১ দিন পর পর ৫০ মিঃ গ্রাঃ সপ্তাহে ২ দিন | ১০০ মিঃ গ্রাঃ প্রতিদিন ৫০ মিঃ গ্রাঃ প্রতিদিন ২৫ মিঃ গ্রাঃ প্রতিদিন |
পসি ব্যাসিলা রী (২-৫ দাগ) | ১৫+ ১০-১৪ ৬-৯ | ৬০০ মিঃ গ্রাঃ ৪৫০ মিঃ গ্রাঃ ৩০০ মিঃ গ্রাঃ | -- | ১০০ মিঃ গ্রাঃ ৫০ মিঃ গ্রাঃ ২৫ মিঃ গ্রাঃ | -- | ১০০ মিঃ গ্রাঃ প্রতিদিন ৫০ মিঃ গ্রাঃ প্রতিদিন ২৫ মিঃ গ্রাঃ প্রতিদিন |
সরাসরি তদারকিতে একবার ওষুধ খাওয়া
শ্রেণী | বয়স | রিফামপিসিন | ওফ্লোক্সাসিন | মিনোসাইরুন |
---|---|---|---|---|
পসিব্যাসিলারি | ১৫+৫-১৫ | ৬০০ মিঃ গ্রাঃ ৩০০ মিঃ গ্রাঃ | ৪০০ মিঃ গ্রাঃ ২০০ মিঃ গ্রাঃ | ১০০ মিঃ গ্রাঃ ৫০ মিঃ গ্রাঃ |
মাল্টি ব্যাসিলারি কুষ্ঠ রোগীর চিকিৎসার মেয়াদ ১২ (বার) মাস এবং পসি ব্যাসিলারী
কুষ্ঠ রোগীর চিকিৎসার মেয়াদ ৬ (ছয়) মাস। এবং এক দাগযুক্ত (চামড়ায়)
পসিব্যাসিলারি কুন্ঠে একক মাত্রার ওষুধ গ্রহণ।
চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর ফলো আপের মেয়াদ
১. পসি ব্যাসিলরি - ২ (দুই) বছর
২. মাল্টি ব্যাসিলারি - ৫ (পাঁচ) বছর
১. পসি ব্যাসিলরি - ২ (দুই) বছর
২. মাল্টি ব্যাসিলারি - ৫ (পাঁচ) বছর
এ সময়ে রোগী যাতে বছরে অন্ততঃ একবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে চিকিৎসক-এর সাথে
দেখা করে অথবা প্রয়োজনে যে কোন সময় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসে তার ব্যবস্থা
গ্রহণ করতে হবে।
ওষুধ গ্রহণ পদ্ধতি
সকল চিকিৎসা কেন্দ্রে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। প্রতি মাসে
নির্দিষ্ট তারিখে রোগীকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে ওষুধ খেতে হবে এবং বাড়িতে
খাবার জন্য ২৭ দিনের ওষুধ সংগ্রহ করতে হবে। সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য একজন পসি
ব্যাসিলারি কুষ্ঠ রোগীকে ৬ (ছয়) মাসে ৬ বার এবং মাল্টি ব্যাসিলারি কুষ্ঠ
রোগীকে ১২ মাসে ১২ বার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হবে। যদি উপরোক্ত পদ্ধতিতে
ঔষধ সংগ্রহ সম্ভব না হয়, তবে অন্ততঃপক্ষে পসি ব্যাসিলারি রোগীর ক্ষেত্রে ৯
(নয়) মাসে ৬ বার এবং মাল্টি ব্যাসিলারি রোগীর ক্ষেত্রে ১৮ (আঠার) মাসে ১২ বার
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
কুষ্ঠ রোগের কারণে সৃষ্ট বিকলাঙ্গতা চিকিৎসা সম্পূর্ণ করার পরও থেকে যেতে
পারে, সেক্ষেত্রে প-াস্টিক সার্জারীর প্রয়োজন হয়। তবে নির্দিষ্ট মেয়াদের
চিকিৎসা সম্পূর্ণ করা রোগীকে সুস্থ বলা হয়। কারণ তার শরীরে কুষ্ঠ রোগের
জীবাণু থাকে না এবং তিনি কোনক্রমেই রোগ সংক্রমণের ক্ষমতা রাখেন না।
ওষুধের পার্শ্ব/বিরূপ প্রতিক্রিয়া
১. রিফামপিসিনঃ- প্রসাবের রং সাময়িকভাবে লাল হতে পারে। এতে চিন্তার কোন কারণ নেই। চিকিৎসা শেষে প্রসাবের রং এমনিতেই স্বাভাবিক হয়ে যায়।
- জন্ডিস হতে পারে। সেজন্য পরবর্তী ডোজ খাবার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- গায়ের রং কালো হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে গায়ের রং স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
কুষ্ঠ রোগের সঠিক চিকিৎসা না হলে কি হতে পারে
১. হাত বা পায়ে সৃষ্ট ক্ষতগুলো শুকায় না
২. হাত বা পায়ের আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যেতে পারে
৩. হাত বা পায়ের আঙ্গুল খসে পড়তে পারে
8. রোগী পঙ্গু হয়ে যেতে পারে
৫. নাকের অগ্রভাগ বসে যেতে পারে
৬. চোখ আক্রান্ত হওয়ার ফলে রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারে
৭. পুরুষত্বহীনতা দেখা দিতে পারে।
২. হাত বা পায়ের আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যেতে পারে
৩. হাত বা পায়ের আঙ্গুল খসে পড়তে পারে
8. রোগী পঙ্গু হয়ে যেতে পারে
৫. নাকের অগ্রভাগ বসে যেতে পারে
৬. চোখ আক্রান্ত হওয়ার ফলে রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারে
৭. পুরুষত্বহীনতা দেখা দিতে পারে।
কুষ্ঠ রোগের প্রতিক্রিয়া
অনেক সময় চিকিৎসা শুরু করার আগে, চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে বা চিকিৎসা পরবর্তী
কালে কুষ্ঠ রোগীর বিশেষ ধরনের কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ওষুধের কারণে নয়,
রোগের কারণেই এ ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়।
প্রতিক্রিয়ার ফলোয় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং পরিণতিতে অন্ধত্ব বা বিকলাঙ্গতাও
হতে পারে। এ ব্যাপারে রোগীকে পূর্বেই সতর্ক করতে হবে, যাতে এ রকম কোন
প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে রোগী অতিসত্বর টিএলসিএ অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ
করে।
কুষ্ঠ রোগের প্রতিক্রিয়া লক্ষণ
১. ফ্যাকাশে বা লালচে দাগ হঠাৎ ফুলে যাওয়া, লাল ভাব বেড়ে যাওয়া বা ব্যথা
হওয়া
২. চামড়ায় গুটি আকার বড় হয়ে যাওয়া
৩. স্নায়ুতে ব্যথা বা স্নায়ু ফুলে যাওয়া।
৪. গায়ে জ্বর ভাব হওয়া
৫. অস্থি সন্ধিতে ব্যথা হওয়া ও ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
২. চামড়ায় গুটি আকার বড় হয়ে যাওয়া
৩. স্নায়ুতে ব্যথা বা স্নায়ু ফুলে যাওয়া।
৪. গায়ে জ্বর ভাব হওয়া
৫. অস্থি সন্ধিতে ব্যথা হওয়া ও ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
কুষ্ঠ রোগীর প্রতি করনীয়
কুষ্ঠ রোগীকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণ
(১) কুষ্ঠ রোগ কোন অভিশাপ বা পাপের ফল নয় এবং এটা কোন বংশগত রোগও নয়, এ রোগ এক
ধরনের জীবাণু দ্বারা হয়।
(২) নিয়মিত ওষুধ খেলে কুষ্ঠ রোগ সম্পূর্ণ সেরে যায়।
(৩) কুষ্ঠ রোগীকে প্রতিমাসে নিয়মিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে ওষুধ খাওয়া/সংগ্রহে
উদ্বুদ্ধ করা।
(৪) নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার গুরুত্ব রোগীকে বুঝিয়ে বলা এবং রোগী নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছে
কিনা তা নিশ্চিত করা।
(৫) কুষ্ঠ রোগীদের প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন মনোভাব প্রদর্শন বা আচরণ করে
বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তার আত্ম-মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করা।
সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ
(১) কুষ্ঠ রোগ সম্বন্ধে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার দূর করার লক্ষ্যে
জনগণের সাথে আলোচনা করা। জনগণকে জানানো যে কুষ্ঠ রোগ কোন অভিশাপ বা পাপের ফল
নয় এবং এটা কোন বংশগত রোগও নয়। অন্যান্য রোগের মতোই একটি রোগ যা নিয়মিত
চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সেরে যায়।
(২) কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে রোগের লক্ষণ, রোগের বিস্তার ও
রোগের চিকিৎসা না নেয়ার পরিণতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা জনগণের কাছে পৌছে দেয়া।
(৩) কুষ্ঠ রোগের সংক্রমণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে সঠিক ধারণা দেয়া।
(৪) কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো যাতে সন্দেহজনক রোগীরা
নিজেরাই পরীক্ষা বা চিকিৎসা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসেন।
হাতের যত্ন
যে চোখ ভালভাবে বন্ধ হয় না সে চোখের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
(১) নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করে দেখতে হবে চোখ লাল হয়েছে কিনা, হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
(২) সব সময় চোখ পরিস্কার রাখতে হবে, পরিস্কার পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে, হাত দিয়ে চোখ ঘষা যাবে না।
(৩) চেষ্টা করে চোখের পাতা বার বার ফেলতে হবে। বারে বারে চোখের পাতা খোলা ও বন্ধ করলে চোখ ভিজা ও পরিস্কার থাকে।
(৪) চোখকে ধুলোবালি ও শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। দিনে কালো চশমা ব্যবহার করতে হবে। চোখ ভালো রাখার জন্য চোখ কাপড় দিয়ে ঢেকে ঘুমাতে হবে।
(১) হাতের যত্ন নেয়ার জন্য প্রতিদিন হাত পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে হাতে কোন
ফোলা, লালচে ভাব, ফোসকা, ক্ষত বা শুকনো শক্ত ফাটা চামড়া আছে কিনা।
(২) যতক্ষণ হাতের শক্ত চামড়া নরম না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত হাত পানিতে ভিজিয়ে
রাখতে হবে।
(৩) একটি ঝামা ইট দিয়ে মরা চামড়া ঘষে তুলে ফেলতে হবে।
(৪) চামড়ার পানি শুকানোর আগেই হাতে তেল লাগাতে হবে। তেল চামড়াকে নরম রাখতে
সাহায্য করে
(৫) ধারালো অথবা অমসৃণ জিনিস থেকে হাত রক্ষা করতে হবে।
(৬) অনেকক্ষণ ধরে একই ধরণের হাতের কাজ করলে হাতে ফোসকা পড়তে পারে। মাঝে মাঝে
অন্য ধরনের কাজ করার চেষ্টা করতে হবে। মাঝে মাঝে কাজ বন্ধ রেখে হাতের বিশ্রাম
দিতে হবে।
(৭) গরম থেকে হাতকে রক্ষা করার জন্য আগুনের কাছ থেকে কিছুটা দূরে বসতে হবে।
(৮) আগুন খুচিয়ে দিতে একটা লাঠি ব্যবহার করতে হবে।
(৯) রান্নার কাজে কাঠের যুস্তি/হাতা ব্যবহার করতে হবে।
পায়ের যত্ন
(১) পায়ের যত্ন নেয়ার জন্য প্রতিদিন পা পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে পায়ে কোন
ফোলা, লালচে ভাব, ফোসকা, ক্ষত বা কোন শুকনো শক্ত ফাটা চামড়া আছে কিনা।
(২) যতক্ষণ পায়ের শক্ত চামড়া নরম না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত পা পানিতে ভিজিয়ে
রাখতে হবে।
(৩) একটি ঝামা ইট দিয়ে মরা চামড়া ঘষে তুলে ফেলতে হবে।
(৪) চামড়ার পানি শুকানোর আগেই পায়ে তেল লাগাতে হবে। তেল লাগাবার সময় পায়ের
আঙ্গুলগুলো সোজা করে দিতে হবে যাতে আঙ্গুলগুলো বাঁকা হয়ে না যায়।
(৫) দুর্বল মাংস পেশীর জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
(৬) অতিরিক্ত হাটা পায়ের তলায় ঘা হবার প্রধান কারণ। সুতরাং পা-কে যথা সম্ভব
বিশ্রাম দিতে হবে।
(৭) যে কোন আঘাত থেকে পা বাঁচাতে সবসময় বিশেষ ধরনের জুতা অথবা রাবারের জুতা
ব্যবহার করতে হবে।
চোখের যত্নযে চোখ ভালভাবে বন্ধ হয় না সে চোখের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
(১) নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করে দেখতে হবে চোখ লাল হয়েছে কিনা, হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
(২) সব সময় চোখ পরিস্কার রাখতে হবে, পরিস্কার পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে, হাত দিয়ে চোখ ঘষা যাবে না।
(৩) চেষ্টা করে চোখের পাতা বার বার ফেলতে হবে। বারে বারে চোখের পাতা খোলা ও বন্ধ করলে চোখ ভিজা ও পরিস্কার থাকে।
(৪) চোখকে ধুলোবালি ও শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। দিনে কালো চশমা ব্যবহার করতে হবে। চোখ ভালো রাখার জন্য চোখ কাপড় দিয়ে ঢেকে ঘুমাতে হবে।
কুষ্ঠ নির্মুল করার প্রধান উপায় হলো
জাতীয় পর্যায় এবং পৃথিবীব্যাপী সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উচ্ছেদ করা
সম্ভব।
- সন্দেহজনক কুষ্ঠ রোগীদের কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র বা হাসপাতালে যোগাযোগ করা। তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় সম্ভব হবে।
- কুষ্ঠ রোগী সনাক্ত করার পর এমডিটি প্রয়োগ করে দ্রুত রোগীর চিকিৎসা বিধান এবং রোগী কর্তৃক নিয়মিত ওষুধ সেবন নিশ্চিত করা। অসংক্রামক কুষ্ঠ সারাতে ৬ মাস এবং সংক্রামক কুষ্ঠ সারাতে ১২ মাসের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
- কুষ্ঠ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ, নিরাময়যোগ্যতা এবং বিনামূল্যে কুষ্ঠচিকিৎসার সুযোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলা।
- কুষ্ঠ উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে সাধারণ মাঠকর্মীদের এবং সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
- সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার সাথে কুষ্ঠ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সমন্বিত করা।
- জাতীয় কুষ্ঠ উচ্ছেদ কার্যক্রমে এনজিও এবং সেবা সংগঠনসমূহকে সম্পৃক্ত করা।
বিসিসি বার্তা
কর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় যে সব কুষ্ঠরোগী চিকিৎসাধীন আছে অথবা চিকিৎসা শেষ
করেছে তাদের হাত, পা ও চোখের যত্ন সম্পর্কে স্বাস্থ্য শিক্ষা দিয়ে বিকলাঙ্গতা
প্রতিরোধ ভূমিকা রাখতে পারে।
তথ্যসুত্রঃ (পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক)
সহায়িকা
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url