ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ - ম্যালেরিয়া জ্বরের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

ম্যালেরিয়া একটি ইংরেজি শব্দ। ম্যালেরিয়া একটি মশা-বাহিত সংক্রামক রোগ। প্লাজমোডিয়াম গোত্রের প্রোটিস্টা দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে। প্রোটিস্টা এক ধরনের অণুজীব। ১৭৫১ সালে ফ্রান্সেসকো টর্টি (Francesco Torti) ম‍্যলেরিয়া শব্দটি সর্বপ্রথম ব‍্যবহার করেন। ফ্রান্সেস্কো টর্টি ছিলেন একজন ইতালীয় চিকিৎসক। ম্যালেরিয়া শব্দটি ইতালিয় শব্দ ‘Mal’ এবং ‘aria’ থেকে এসেছে। ‘Mal’ শব্দের অর্থ- ‘দূষিত’। ‘aria’ শব্দের অর্থ- ‘বায়ু’। সে সময় মানুষ ভাবতো দূষিত বায়ু সেবনের ফলে এ রোগ হয়ে থাকে।

সূচিপত্রঃ- ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ - ম্যালেরিয়া জ্বরের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

EDPT কি

EDPT (Early Diagnosis and Prompt Treatment): তাৎক্ষনিক রোগ নির্ণয় এবং দ্রুত চিকিৎসা দেয়াকেই EDPT বলে। ম্যালেরিয়া রোগীর বেলায় রক্তকাঁচ পরীক্ষা ও ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।

ম্যালেরিয়া কিভাবে ছড়ায়

ম্যালেরিয়া জ্বর প্রধানত স্ত্রী-অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে হয়ে থাকে। ম্যালেরিয়ার পরজীবী মানব শরীরে প্রবেশের পর লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে। ম্যালেরিয়া জীবানু সংক্রমনের ফলে রোগীর শরীরে রক্তসল্পতার লক্ষণ দেখা দেয়। অন্যান্য লক্ষণ গুলো হলো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, শীতশীত ভাব এবং বমি-বমি ভাব। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগীর কোমা এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

World Health Organization (WHO) / বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ২০ কোটির বেশি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি লক্ষ করা যায়। ঢাকাসহ অন্যান্য জেলাও এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বছরের যে কোন সময় ম্যালেরিয়া দেখা দিতে পারে তবে বর্ষাকালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি রয়েছে।

ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রকারভেদ

অতিসত্ত্বর রোগ নির্ণয় ও তাৎক্ষনিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য ক্লিনিক্যাল ম্যালেরিয়াকে তিন শ্রেনীতে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১. UM (Uncomplicated Malaria)
২. TFM (Treatment Failure Malaria)
৩. SM (Severe Malaria) বা মারাত্মক ম্যালেরিয়া
ক্লিনিক্যাল ম্যালেরিয়াকে সত্ত্বর নির্ণয় এবং চিকিৎসা প্রদান করতে পারলে মারাত্মক ম্যালেরিয়ার হার কমে যাবে এবং সঙ্গে সঙ্গে ম্যালেরিয়া জনিত মৃত্যুর হারও কমে যাবে।
UM (Uncomplicated Malaria)
ম্যালেরিয়া উপদ্রুত এলাকায় কোন জ্বরের রোগীর অন্য কোন রোগের উপসর্গ না থাকলে তাকে আনকমপ্লিকেটেড ম্যালেরিয়া হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে ট্রিটমেন্ট চার্ট অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়। সব সময়ই মনে রাখতে হবে যে এ সব ক্ষেত্রে রক্তকাঁচ নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
TEM (Treatment Failure Malaria)
কোন ম্যালেরিয়া রোগীকে সঠিকভাবে ক্লোরোকুইন অথবা ফ্যানসিডার দ্বারা চিকিৎসা করার এক মাসের মধ্যে যদি আবার ম্যালেরিয়া জনিত জ্বরে আক্রান্ত হয় তবে তাকে ট্রিটমেন্ট ফেইলুর ম্যালেরিয়া হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। রোগীকে ট্রিটমেন্ট চার্ট অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক রক্তঝাঁচ সংগ্রহ ও পরীক্ষা করার প্রয়োজন বিধায় রোগীকে হাসপাতালে রেফার করতে হবে।
SM (Severe Malaria)
ম্যালেরিয়া উপদ্রুত এলাকায় কোন রোগীর জ্বর অথবা জ্বরের ইতিহাসের সাথে নিচে উলে-খিত উপসর্গ সমূহের যে কোন এক বা একাধিক লক্ষণ উপস্থিত থাকলে তাকে মারাত্মক ম্যালেরিয়া হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে।

ম্যালেরিয়া জ্বরের উপসর্গ সমূহ

ম্যালেরিয়া রোগের প্রধান লক্ষণ নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। শরীরের তাপমাত্র ১০৪-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঁঠা-নামা করতে পারে। এ সময় জ্বর ১ দিন পর পর আসতে পারে ৩, ৪ দিন জ্বর থাকার পরে শরীর ঘেমে জ্বর কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জ্বর ছাড়াও অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-
  • রোগী অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • অস্বাভাবিক আচরণ করা
  • গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভুত হয়।
  • মাথাব্যথা হতে পারে।
  • মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত অনুভব করা
  • দ্রুত হাঁটতে পারছে না
  • ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা
  • বমি হওয়া
  • খিঁচুনি
  • অনিদ্রা ও অত্যধিক ঘাম হওয়া
  • ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা
  • মারাত্মক অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

ম্যালেরিয়া জ্বরের চিকিৎসা

ম্যালেরিয়ার উপসর্গ গুলো দেখা দেয়া মাত্রই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ম্যালেরিয়ার রোগী সপ্তাহ খানিকের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যান। তবে কোনো জটিলতা থাকলে কিংবা ম্যালেরিয়া তীব্র আকার ধারণ করলে অনেক সময় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। ম্যালেরিয়া চিকিৎসা ম্যালেরিয়ার ধরণ ও সংক্রমণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। ম্যালেরিয়া সংক্রমণের তীব্রতা কম হলে সাধারণত চিকিৎসকরা মুখে খাওয়ার ঔষধ দিয়ে থাকেন। তবে সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং ডাক্তাররা ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। মনে রাখা উচিৎ, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই কোনো ঔষধ খাওয়া যাবে না।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য এখনও কোনো কার্যকর টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। সুতরাং সচেতনতা সৃষ্টি ও সতর্ক থাকার মাধ্যমেই কেবল রোগ সম্পূর্ণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কী কী সচেতনতা মেনে চলা উচিত।
  • ম্যালেরিয়ার মৌসুমে বা ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় লম্বা হাতার কাপড় পরতে হবে।
  • মশা প্রতিরোধক ক্রিম এবং স্প্রে ব্যবহার করুন।
  • সন্ধ্যার আগে ঘরের জানালা বন্ধ করুন। প্রয়োজনে জানালায় মশা নিরোধক নেট লাগাতে পারেন।
  • ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করুন।
  • ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  • মশা বংশবিস্তার রোধে ঘরের আশপাশে, বাগানে বা ছাদে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন। পানি যেন জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
তথ্যসুত্রঃ
উইকিপিডিয়া
(পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক) সহায়িকা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url