মাইক্রোপ্রসেসর কি-মাইক্রোপ্রসেসর এর কাজ কি
মাইক্রোপ্রসেসর বা “অণুপ্রক্রিয়াজাতকারক” হলো এক ধরণের অতিক্ষুদ্র ইলেকট্রনীয় যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ, যার মাধ্যমে ডিজিটাল কম্পিউটার তথা ইলেকট্রনীয় গণনাকারী যন্ত্রের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ অংশের কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় গাণিতিক, যুক্তিভিত্তিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক ইলেকট্রনীয় বর্তনী ধারণ করে রাখে।
মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocessor)
মাইক্রোপ্রসেসর হলাে একক ভিএলএসআই (VLSI-Very Large Scale Integration) সিলিকন চিপ (Chip)।
প্রত্যেকটি কম্পিউটার সিস্টেমের একটি অংশ থাকে যার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো ডাটা প্রসেস করা। এই অংশটি পুরো কম্পিউটার সিস্টেমের কন্ট্রোল সেন্টার। এটি একটি ধারণকৃত প্রোগ্রামের অধীনে ইনপুট ডিভাইস থেকে ডাটা গ্রহণ করে, ডাটা প্রসেস করে এবং প্রিন্টার বা অন্য কোন আউটপুট ডিভাইসে ফলাফল প্রেরণ করে। এই অংশটি মাইক্রোকম্পিউটারে মাইক্রোপ্রসেসর এবং বৃহৎ আকৃতির কম্পিউটার সিস্টেমে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (Central Processing Unit CPU) হিসেবে বিবেচনা করা হয় । উভয় ইউনিটই মূলত একই কার্য সম্পাদন করে।
মাইক্রোপ্রসেসরের প্রকারভেদ
বর্তমানে প্রচলিত মাইক্রোপ্রসেসরকে সাধারণভাবে নিমােক্ত তিনভাগে ভাগ করা যায়-
১. সিস্ক প্রসেসর (CISC Processor)
২. রিস্ক প্রসেসর (RISC Processor)
৩. বিশেষ ব্যবহার কার্যের প্রসেসর (Special Purpose Processor)
মাইক্রোপ্রসেসরের কার্যপ্রণালী (Functions of Microprocessors)
মাইক্রোপ্রসেসর একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস। এটি প্রত্যেক মাইক্রোকম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ হৃদপিন্ড এবং মস্তিষ্ক (Heart and Brain) স্বরূপ। এই ছোট সিলিকনের চিপ (Chip of Silicon) মাইক্রোকম্পিউটারের প্রায় সমস্ত প্রসেসিং পরিচালনার মাধ্যমে গতি এবং ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে । মাইক্রোপ্রসেসরের কার্যক্রম নিচে উল্লেখ করা হল।
প্রসেসর প্রথমে প্রধান মেমোরি থেকে একটি ইন্সট্রাকশন/ নির্দেশনা ফেস (Fetch) করে বা তুলে আনে এরপর ইন্সট্রাকশনটি ডিকোড (Decode) করে কী কাজ করতে হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়
→ ইন্সট্রাকশনের উপর ভিত্তি করে প্রসেসর প্রয়োজনানুসারে প্রধান মেমোরি কিংবা I/O মডিউল থেকে ডাটা ফেস (Fetch) করে বা তুলে আনে। তারপর ইন্সট্রাকশনটি নির্বাহ করা হয় যেখানে ডাটার উপর গাণিতিক অথবা লজিক্যাল কার্যক্রমের প্রয়োজন পড়তে পারে। নির্বাহের ক্ষেত্রে, সিপিইউ ও I/O ডিভাইস দেখাশুনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে। যদি 1/0 ডিভাইস থেকে কোন রিকোয়েস্ট বা অনুরোধ আসে, যাকে ইন্টারন্ট (Interrupt) বলে, তখন সিপিইউ চলমান প্রোগ্রামের নির্বাহ বন্ধ করে দেয় এবং ইন্টারন্ট হ্যান্ডেলিং প্রোগ্রাম (Interrupt Handling Program) এর কাছে নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করে।
* সবশেষে নির্বাহকৃত ফলাফলটি ডাটা হিসেবে মেমোরি বা কোন I / O মডিউলে স্থানান্তরের প্রয়োজন পড়ে
মাইক্রোপ্রসেসরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কম্পিউটার যে কাজ করে থাকে তার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যার সেটি হলো প্রসেসর। প্রসেসরের ভূমিকার কারণেই একটি কম্পিউটার আরেকটি কম্পিউটারের চাইতে বেশি গতি সম্পন্ন। বিগত অল্প সময়ের ভিতরে প্রসেসর জগতে যে পরিমাণ উন্নতি হয়েছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। নিত্য নতুন প্রজন্মের প্রসেসর এখন জায়গা করে নিচ্ছে কম্পিউটারের ইতিহাসে। নিম্নে মাইক্রোপ্রসেসরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হলো-
প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর ছিল ইন্টেল ৪০০৪ যা ১৯৭১ সালে প্রথম ব্যবহৃত হয়। এটি খুব একটা শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর ছিল না। এটি শুধু যোগ বিয়োগ ছাড়া তেমন কিছু করতে পারতো না। এই মাইক্রোপ্রসেসরের বিশেষত্ব ছিল, কেবল একটি চিপেই এটি সমন্বিত ছিল। ইন্টেল ৪০০৪ এর পূর্বে বেশ কিছু চিপ এবং ট্রানজিস্টর সমন্বয়ে কম্পিউটার তৈরি হতো। ১৯৭৪ সালে হোম পিসিতে ব্যবহৃত প্রথম মাইক্রোপ্রসেসরটি ছিল ৮ বিট অপারেশন সম্পন্ন একটি স্বয়ংক্রিয় চিপ। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে ইন্টেল ৮০৮৮ মাইক্রোপ্রসেসরের ইতিহাসকে আরো একটি ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। ১৯৮২ সালে ইন্টেল ৮০৮৮ প্রসেসরটি আইবিএম পিসিতে প্রথম ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে ইন্টেল ৮০৮৮ থেকে ইন্টেল ৮০২৮৬, ইন্টেল ৮০২৮৬ হতে ইন্টেল ৮০৩৮৬ তারপর ইন্টেল ৮০৪৮৬, পেন্টিয়াম-১, পেন্টিয়াম-২, পেন্টিয়াম-৩ এবং বহুল আলোচিত পেন্টিয়াম-৪ কম্পিউটার জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ধারাকে অব্যাহত রাখে। ইন্টেল-এর পাশাপাশি এএমডি, সাইরিক্স-এর কিছু মাইক্রোপ্রসেসর কম্পিউটার-এ নতুন মাত্রা যোগ করে। ইন্টেল-এর সমস্ত আধুনিক মাইক্রোপ্রসেসর আসলে ইন্টেল ৮০৮৮ এর পরিবর্ধিত সংস্করণ মাত্র। যদিও পেন্টিয়াম-৪ মাইক্রোপ্রসেসর ইন্টেল ৮০৮৮ এর চেয়ে প্রায় ৫০০০ গুণ দ্রুতগতিসম্পন্ন ।
মাইক্রোকম্পিউটার ও মাইক্রোপ্রসেসর কি
মাইক্রোকম্পিউটার ও একটি সিপিইউ সিপিইউ হল কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বা মূল চালিকাশক্তি। আর মাইক্রোপ্রসেসর হলো মাইক্রোকম্পিউটার-এর হৃৎপিন্ড। বর্তমানে যা সিপিইউ নামে পরিচিত মূলত তাই মাইক্রোপ্রসেসর। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নতির ফলে ক্রমশঃ কম্পিউটারের সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশকে একটি মাত্র চিপের মাঝে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় । এই চিপই হলো মাইক্রোপ্রসেসর। মাইক্রোকম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণ অংশ ছোট ধরণের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের মাধ্যমে কার্যাবলী সম্পাদন করে। মাইক্রো (Micro) শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাকৃতির মাইক্রোপ্রসেসর চিপ দিয়ে তৈরি ক্ষুদ্রাকারের কম্পিউটারকে মাইক্রোকম্পিউটার বলা হয়। মাইক্রোপ্রসেসরই মাইক্রোকম্পিউটাররের অভ্যন্তরীণ সকল কাজ সমাধা করে। থাকে। তাই মাইক্রোকম্পিউটারকে একটি সিপিইউ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় ।
মাইক্রোকম্পিউটার ও মাইক্রোপ্রসেসর এর মধ্যে পার্থক্য
সিপিইউ এর সমস্ত অংশ যদি একটি আইসি চিপের মধ্যে মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে যে কম্পিউটার তৈরি হয় তাকে মাইক্রোকম্পিউটার বলে।
থাকে তবে তাকে মাইক্রোপ্রসেসর বলে । ইহা মাইক্রোকম্পিউটারের প্রোগ্রাম নির্বাহের প্রধান অংশ ।
মাইক্রোকম্পিউটার প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রিত একটি যন্ত্র ।
মাইক্রোপ্রসেসর গাণিতিক ও যুক্তি ইউনিট, কন্ট্রোল ইউনিট, মাইক্রোপ্রসেসরের সাথে মেমোরি, ইনপুট-আউটপুট মেমোরি ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত।
যন্ত্রাংশ ইত্যাদির সমন্বয়ে মাইক্রোকম্পিউটার গঠিত । মানুষের মস্তিষ্কের সাথে মাইক্রোপ্রসেসরের তুলনা করা হয় । মানুষের সাথে মাইক্রোকম্পিউটারের তুলনা করা হয় ।
Pentium, Pentium প্রসেসরের উদাহরণ ।
II, III, IV ইত্যাদি মাইক্রো IBM-PC, POWER-PC ইত্যাদি হলো মাইক্রো- কম্পিউটার
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url