রোবটিক্স কি- রোবটিক্স এর গুরুত্ব

রোবটিক্স (Robotics)

কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যে যন্ত্র বা মেশিন মানুষের মত কিছু কাজ করতে পারে তাকে রোবট বলা হয়। New Collegiate ডিকশনারি মতে, " রোবট হচ্ছে কম্পিউটার নিবন্ধিত একটি যন্ত্র। যা স্বভাবে বা কোন ব্যক্তি কর্তৃক নির্দেশিত কাজ করতে পারে। মানুষ যেভাবে কাজ করে রোবট সেভাবে কিছু কাজ করতে পারে অথবা এর কাজের যখন দেখে মনে হবে এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আছে? "রোবট হচ্ছে পুনঃপ্রোগ্রামযোগ্য, বহুমুখী কাজের উপযোগী ম্যানিপুলেটর যা হরেক রকম কার্য সম্পন্ন করার জন্য

১৯৭৯ সালে রোবট ইন্সটিটিউট অফ আমেরিকার (Robot Institute of America) রোবটের একটি সংজ্ঞা প্রদান করে। প্রেমাসকৃত গতিতে বিভিন্ন মালামাল বা সরঞ্জাম, যন্ত্রাংশ, টুলস, বিশেষ ডিভাইস ইত্যাদি সরানো হয়। কাজেই প্রযুক্তির যে শাখায় রোবটের নকশা বা ডিজাইন, গঠন, পরিচালন প্রক্রিয়া, কাজ ও প্রয়োগক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হয় সেই শাখাকে রোবটিক্স বলা হয় এছাড়াও এই শাখায় রোবট নিয়ন্ত্রণে কম্পিউটার সিস্টেম, রোবটের সেনসরি ফিডব্যাক এবং ইনফরমেশন প্রসেসিং সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

'রোবটিক্স' (Robotics) শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে স্লাভিক শব্দ 'robota (রোবটা) থেকে যার ইংরেজি হলো robot (রোবট) এবং আভিধানিক অর্থ হল শ্রমিক, দাস বা কর্মী। চেক (Czech) লেখক ক্যারেল ক্যাপেক (Karel Capek) ১৯২১ সালে Rossumovi Univerzáini Roboti (ইংরেজিতে Rossur's Universal Robots) নামে একটি সাইন্স ফিকশন গল্প লিখেন যাতে তিনি শ্রমিক বা কর্মী অর্থে সর্বপ্রথম 'robota' শব্দের পরিচয় করেন।

১৯৫০ সালে আমেরিকান প্রকৌশলী, গণিতবিদ ও উদ্যোক্তা যোসেফ ফ্রেডরিক এঙ্গেলবার্গার (Joseph Frederick Engelberger) এবং ঐ একই দেশের উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক জর্জ চার্লস ডেভল (George Charles Devol) মিলে সর্বপ্রথম ইউনিমেট (Unimate) নামে শিল্পে ব্যবহার উপযোগী রোবট উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীতে এঙ্গেলবার্গার ইউনিমেশন (Unimation) নামে বিশ্বের প্রথম রোবট কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই প্রযুক্তি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই জন্য যোসেফ ফ্রেডরিক এঙ্গেলবার্গারকে রোবটিক্সের জনক বলা হয়। তবে জর্জ চার্লস ডেভলকেও রোবটিক্সের জনক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। রোবটিক্স প্রযুক্তিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রোবটিক্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশন (Robotics Industries Association- RIA) এঙ্গেলবার্গারের নামে এই বিষয়ের সর্বোচ্চ সম্মাননা পুরস্কার প্রবর্তন করেছে যা উপযুক্তদের নির্বাচিত করে প্রতি বছর প্রদান করা হয়।

রোবটিক্স নিয়ম বা আইন (Law)

যোসেফ ফ্রেডরিক এঙ্গেলবার্গার কর্তৃক রচিত "Robotics in Practice Management and Applications of Industrial Robots" নামক বইয়ে মুখবন্ধ লিখেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই এবং এঙ্গেলবার্গারের সাথী আইজ্যাক অ্যাসিমভ (Isaac Asimov)। আইজ্যাক অ্যাসিড রোবট, সাইন্স-ফিকশন ও বিজ্ঞান বিষয়ক জনপ্রিয় আইনের (Law)কথা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো-

আমেরিকান লেখক এবং বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপক। তিনি ঐ বইয়ের মুখবন্ধে রোবটিক্সের তিনটি নিয়ম, বিধি-বিধান বা


নিয়ম-১: রোবট কখনোই কোন মানুষের ক্ষতি করবে না অথবা ঔদাসীন্য বা অপ্রবৃত্তির মাধ্যমে কাউকে ক্ষতির সুযোগ দিবে না।


নিয়ম-২: প্রথম নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়ে রোবট সব সময় মানুষের নির্দেশ মেনে চলবে।


নিয়ম-৩ : রোবট অবশ্যই তার নিজের অস্থিত্ত্ব টিকিয়ে রাখবে যতক্ষণ না প্রথম ও দ্বিতীয় নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক হয়।


মানব কল্যাণে রোবট তৈরি করা হয়; মানুষের ক্ষতির জন্য নয়। তাই রোবট তৈরির ক্ষেত্রে এই নিয়ম বা আইনগুলো মেনে চলা হয়।


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত


রোবটের অবয়ব বা চেহারা (Appearances)


রোবট দেখতে কেমন? রোবট কী অবিকল মানুষের মত? এ সকল প্রশ্ন অনেকের


মধ্যেই উকি দিতে পারে। আসলে রোবটের অবয়ব বা চেহারা নির্ভর করছে তার


কাজের উপর। যেমন শিল্প-কারখানায় ব্যবহার্য রোবট দেখতে মানুষের মত । কাজের উপর নির্ভর করে শিল্প কারখানায় ব্যবহার্য রোবটের অবয়বের ভিন্নতা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ গাড়ী সংযোজন শিল্পে রোবটিক বাহু (Robotic arm) ব্যবহার করে সহজেই দ্রুততার সাথে গাড়ী তৈরি করা হয়। ১৯৯০ সালে এমআইটি Massachusetts Institute of Technology) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত (Robot নামক প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের কনজ্যুমার রোবট বা হোম রোবট তৈরি করে বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের তৈরি Roomba নামক রোবটটি বাসার মেঝ বা ফ্লোর পরিষ্কারের কাজে অত্যন্ত দক্ষ।


চিত্র-১.৭ হিউমেনয়েড


মানব শরীরের সাথে সদৃশ রেখে যে সকল রোবট তৈরি করা হয় তাদেরকে মানব- সদৃশ রোবট বা হিউমেনওয়ে (Humanoid) বলে। মানুষ দু'পায়ে চলাচল করে। তাঁর একটি মাথা, ধড় (torso), দুটি হাত ইত্যাদির সাথে সামজস্য ও সদৃশ রেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে হিউমেনওয়েড তৈরি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ অ্যানড্রয়েডের (Androids) কথা ধরা যাক। অ্যান্ড্রয়েড একটি মানব-সদৃশ রোবট


চিত্র-১৬ : Roomba রোবট বা হিউমেনয়েড যা সাধারণত সিনেমা বা সাইন্স ফিকশন গল্পে দেখা যায়।


হিউমেনয়েড সাধারণত মানুষের সাথে উভমূখী যোগাযোগ রক্ষা করে নির্দিষ্ট কাজকর্ম করতে পারে। রোবটে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা হয়। কম্পিউটার রোবটের সকল কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। সকল রোবটের কাজের ধারা পূর্ব থেকে ঠিক করে দেওয়া থাকে। রোবট শুধুমাত্র তাকে নির্দেশিত কাজের ধারা অনুযায়ী সাড়া দিয়ে থাকে। প্রত্যেকটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে নির্দেশনা রোবটের মেমরিতে তৈরি করে দিতে হয়।


INPUT


PROCESS


OUTPUT


রোবট অত্যন্ত দ্রুত, ক্লান্তিহীন ও নিখুঁত কর্মক্ষম একটি যন্ত্র। এটা একটি স্বনিয়ন্ত্রিত কম্পিউটার পদ্ধতি। রোবটের সাহায্যে যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করা এবং শিল্প-কারখানায় উৎপাদন স্বয়ংক্রিয় করা যায়। তবে রোবট যে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে তা তৈরি করা ব্যয়বহুল ও শ্রমসাধ্য ব্যাপার। প্রত্যেকটি নতুন কাজ রোবট দ্বারা করার জন্য যে নিদের্শনা তৈরি করতে হয়, তাতে হাজার হাজার কম্পিউটার প্রোগ্রাম কোড ব্যবহার করতে হয়। বিজ্ঞানীরা এ নিদেশনা কীভাবে সহজ করা যায় এবং কীভাবে বেশি পরিমাণ কাজের নিদের্শনা দেওয়া যায় তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।


Computer


রোবট কীভাবে কাজ করে?


কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্যে রোবট নিয়ন্ত্রিত হয়। রোবটের ইনপুট যন্ত্রপাতি (যেমন বিভিন্ন ধরনের সেন্সর) সাহায্যে পরিবেশ থেকে ইনপুট নেয়। অতঃপর প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণের পর অ্যাকচুয়েটরের মাধ্যমে আউটপুট প্রকাশিত বা প্রদর্শিত হয়। একটি সাধারণ রোবটে নিচের উপাদান বা অংশগুলো থাকে। যথা-


প্রোগ্রামকৃত মস্তিষ্ক বা প্রসেসর রোবটের মধ্যে এক বা একাধিক প্রসেসর থাকে যাতে রোবটকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার একটি প্রোগ্রাম সংরক্ষিত থাকে। এটি রোবটের মূল অংশ যা রোবটের চলাচল ও কর্মকান্ডসহ সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে।


পাওয়ার সিস্টেম সাধারণত লেড এসিড ব্যাটারী দিয়ে রোবটের পাওয়ার দেওয়া হয়। এই ব্যাটারী রিচার্জেবল অর্থাৎ


এতে পুনরায় চার্জ করা যায়। তাই কাজ করার পূর্বে রোবটকে চার্জ দেওয়া হবে।


ইলেকট্রিক সার্কিট রোবটের হাইড্রোলিক ও নিউমেট্রিক সিস্টেমকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি


অ্যাকচুয়েটর (Actuator) রোবটের হাত-পা অথবা বিশেষ ভাবে তৈরি কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া করার জন্য কতগুলো বৈদ্যুতিক মটরের সমন্বয়ে তৈরি বিশেষ ব্যবস্থা হলো অ্যাকচুয়েটর। একে রোবটের হাত ও পায়ের পেশী বলেও অভিহিত করা যায়।


অনুভূতি (Sensing) অনুভূতি মানুষের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সেন্সরের মাধ্যমে রোবটেও মানুষের মত অনুভূতি তৈরি করা হয়। কাজেই অনুভূতি রোবটের একটি বিশেষ উপাদান। রোবটের হাত বা পা কোন একটি জায়গায় স্পর্শ করলে সেই জায়গা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। মানুষের চোখের ন্যায় রোবটের ক্যামেরা নিয়ে সামনের পা পিছনের দৃশ্য নেওয়া হয়। কাজের প্রয়োজনে রোবটকে ৩৬০° কোণে ঘুরানো যেতে পারে।


মানিপিউলেশন বা পরিবর্তন করা (Manipulation) রোবটের আশেপাশের বস্তুগুলোর অবস্থান পরিবর্তন বা বস্তুটি পরিবর্তন করার পদ্ধতিকে বলা হয় মানিপিউলেশন। সাধারণত রোবটের হাত-পা এই পরিবর্তনের যাবতীয় কাজ করে থাকে। রোবটের হাতে কতগুলো আঙ্গুল থাকবে যা নড়াচড়া করে কোন বস্তু ধরতে পারবে। পায়ের সাহায্যে সামনে- পিছনে বা ডানে-বামে চলাচল করতে পারবে।


মুভেবল ৰঙি রোবটে ঢাকা, যান্ত্রিক পা এবং স্থানান্তর করা যায় এমন যন্ত্রপাতি যুক্ত থাকে।


রোবটের বৈশিষ্ট্য-


রোবটে সাধারণত নিম্নলিখিত বৈশিষ্টগুলো বিদ্যমান থাকে। যথা-


• রোবট সফটওয়ার নিয়ন্ত্রিত, যা সুনির্দিষ্ট কোন কাজ অত্যন্ত দ্রুত ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে পারে।


• রোবট দিনে ২৪ ঘন্টা এবং প্রতিদিন কোন বিরতি ছাড়াই কাজ করতে পারে।


• রোবট যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ বা অস্বাস্থ্যকর স্থানে কাজ করতে পারে। • রোবট কখনো বিরক্ত হয় না বা কাজকে ঘৃণা করতে পারে না।


• এটি ঘুরতে ও স্থানান্তরিত হতে পারে এবং পরিবেশের বস্তু নিয়ে কাজ করতে পারে। এমনটি পরিবেশ অনুভব


করার ক্ষমতাও আছে। • রোবট পূর্ব থেকে দেওয়া নির্দেশমতো কাজ করে। কিছুটা বুদ্ধিমত্তা আছে যার সাহায্যে পরিবেশ বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে রোবট কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রোগ্রামযোগ্য।


* দুর থেকে লেজার রশ্মি বা রেডিও সিগন্যালের সাহায্যেও রোবট নিয়ন্ত্রত করা যায়।


রোবটিক্স এর গুরুত্ব/প্রয়োগ-


• শিল্প-কারখানায় পণ্য উৎপাদন, সংযোজন, প্যাকিং এবং পরিবহনের জন্য রোবটের ব্যবহার ফলপ্রসু। যেমন- বর্তমানে গাড়ী ও উড়োজাহাজ সংযোজন ইত্যাদি কাজে রোবটের সফল ব্যবহার হচ্ছে।


• যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধযানে পাইলট/ড্রাইভারের বিকল্প হিসেবে রোবটকে ব্যবহার করা যায়। এই সমস্ত রোবট দূর নিয়ন্ত্রিত


(Remote Controlled) হওয়ায় যে কোন মূহুর্তে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। সামরিক কাজে যেমন-বোমা নিষ্ক্রিয় করা,


ভূমি মাইন সনাক্তকরণ, মিলিটারি অপারেশন ইত্যাদি রোবট ব্যবহৃত হয়। যে সব ক্ষেত্রে অতি সূক্ষ্ণ কাজ করা দরকার হয় যেমন ইলেকট্রনিক্স এর IC গুলো বানানোর জন্য এবং PCB (Printed


circuit Board) বানানোর জন্য রোবট ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে হাতে তৈরি জিনিস সঠিক নাও হতে পারে। যেমন- কম্পিউটারের মাদারবোর্ডসহ অন্যান্য সার্কিট বোর্ড তৈরিতে রোবট ব্যবহৃত হয়।


চিকিৎসা ক্ষেত্রে সার্জারির কাজে রোবট সফলভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে।


কয়লা খনি, নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরসহ বিভিন্ন বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে রোবট ব্যবহার করা হয়।


উন্নত বিশ্বে নিরাপত্তার কাজে রোবটের সফল ব্যবহার হচ্ছে। • বাসা-বাড়ীতে কাজের লোকের বিকল্প হিসাবেও রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে।


মহাকাশ গবেষনায় মানুষের পরিবর্তে রোবট ব্যবহৃত হয়, যেমন- নাসার কিউরিসিটি রোবট উল্লেখযোগ্য।


শিল্প-কারখানায় ব্যবহার্য রোবট (Industrial Robot) উৎপাদনমূখী শিল্পে ব্যবহৃত রোবট অনেক ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও তা পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, কারণ-


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি : বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত


. রোবট দিনে ২৪ ঘন্টা এবং প্রতিদিন কোন বিরতি ছাড়াই কাজ করতে পারে। এভাবে কাজ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। • রোবটকে কোন বেতন দিতে হয় না। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী হয়।


• মানুষের তুলনায় রোবট অতি সূক্ষ্ণ ও নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে।


ফলে রোবট ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান অনেক


উন্নত হয়।


মানুষের তুলনায় রোবট অতি দ্রুত কাজ করতে পারে। ফলে রোবট ব্যবহার করে অধিক পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব।


রোবট যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ বা অস্বাস্থ্যকর স্থানে কাজ করতে পারে।


রোবট কখনো বিরক্ত হয় না বা কাজকে ঘৃণা করতে পারে না। রোবট চালিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোন এসি, আলো, বাতাস, খাদ্য বা পানীয়ের কোন প্রয়োজন


হয় না। ফলে প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন খরচ কম হয়।


শিল্প-কারখানায় রোবট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এত সব সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কিছু অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়। • রোবট কোন পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সহজে মানিয়ে নিতে পারে না যা মানুষের পক্ষে সম্ভব। (যেমন-যদি একই লাইনে রাখা কোন উপকরণ সঠিক অবস্থানে না থাকে তাহলে একজন মানব কর্মী তা লক্ষ্য করে সঠিক অবস্থানে রেখে দিতে পারে। প্রোগ্রাম পরিবর্তন না করলে রোবটের দ্বারা এই কাজ করা সম্ভব নয়।)


মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে কারণ তাদের কাজগুলো রোবট দ্বারা সম্পন্ন করা হচ্ছে। (অবশ্য কিছু নতুন কাজের


ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে-রোবটকে রক্ষণাবেক্ষণ করা, কিছু কর্মী নতুন ভাবে প্রশিক্ষিত হতে পারা ইত্যাদি ।)


• মানুষকে অপছন্দ করা হচ্ছে। (যার অর্থ হলো, রোবট জটিল এবং দক্ষতা ও কুশলতা পূর্ণ কাজগুলো করছে যা পূর্বে মানুষ করত, মানুষের করার জন্য রাখা হচ্ছে একঘেয়ে ও সহজ সরল কাজগুলো।) রোবট অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এর মূল্য পরিশোধ করতে কয়েক বছর সময় প্রয়োজন হতে পারে। (মানব কর্মীদের


মজুরী না দেওয়ার ফলে সঞ্চিত অর্থ থেকে এই মূল্য পরিশোধ করা হতে পারে।)


জনপ্রিয় বাণিজ্যিক শিল্প রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান


ফানুক (FANUC): ফানুক আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠান যা ছোট-বড় সকল স্বয়ংক্রিয় রোবট ও রোবটিক যন্ত্রাংশ প্রভুত


করে। এটি শিল্প ক্ষেত্রে রোবট তৈরির ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয়। এই প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারকদের দক্ষতা,


নির্ভরযোগ্যতা, মান এবং ব্যবসায় লাভের পরিমান বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের যোগ্যতা ও উৎকর্ষতা বাড়ানোর


সেবায় নিয়োজিত । ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ যে কোন প্রস্তুতকারীর সুনির্দিষ্ট চাহিদা পূরণে এই প্রতিষ্ঠান রোবট সরবরাহ করে।


ইয়াসকাওয়া (Yaskawa) :


ইয়াসকাওয়া মটোম্যান ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় শিল্প রোবট উৎপাদনকারী কোম্পানী যা ৩,৬০,০০০ টি মটোম্যান শিল্প রোবট, ১০ মিলিয়ন সার্ভো এবং ১৮ মিলিয়ন ইনভার্টার সমৃদ্ধ। যে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও রোবটের প্রায়োগিক ক্ষেত্রে ইয়াসকাওয়া স্বয়ংক্রিয় পণ্য ও সেবা সরবরাহ করে যার অন্তর্ভুক্ত হলো আর্ক ওয়েল্ডিং,


সংযোজন, কোটিং, ডিসপেনসিং, উপকরন প্রক্রিয়াকরণ, কাটিং, প্যাকেজিং, প্যালেটাইজিং এবং স্পট ওয়েল্ডিং।


বোস্টন ডাইনামিকস (Boston Dynamics) : বর্তমানে গুগলের স্বত্বাধিকারী বোস্টন ডাইনামিকস (Boston Dynamics) বিশ্বের সর্বাধুনিক রোবট তৈরি করে। এটি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে তাদের কর্মকান্ড শুরু করে। যেখানে ন্যাশনাল একাডেমী অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এর সদস্য মার্ক রেইবার্ট এবং তার সহকর্মী সর্ব প্রথম রোবট তৈরি করেন যা যে কোন প্রাণীর মতো চলাফেরা করতে এবং দৌড়াতে পারত। তাঁরা ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেন এবং তাঁদের যুগান্তকারী কর্মকান্ড প্রতিষ্ঠানের কাজকে অনুপ্রাণিত করে। বোস্টন ডাইনামিকস চলৎশক্তি, ক্ষিপ্রতা, দক্ষতা ও গতি এবং লক্ষ্যণীয় আচরণ সমৃদ্ধ উন্নত রোবট তৈরি করে যা সেন্সর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং কম্পিউটিং সিস্টেমে এর সক্ষমতা ও জটিল মেকানিজম দ্বারা কার্যকরী হয়।


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি


আইরোবট (iRobot)। ১৯৯০ সালে এমআইটি (Massachusetts Institute of Technology) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত i Robot নামক প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের কনজ্যুমার রোবট বা হোম রোবট তৈরি করে বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের তৈরি Roomba নামক রোবটটি বাসার মেঝ বা ফ্লোর পরিষ্কারের কাজে অত্যন্ত দক্ষ।


মানব-সদৃশ রোবট বা হিউমেনওয়েড (Humanoid) প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জাপানের মুরাতা কোম্পানির "মুরাতা বয় (Murata)", সনি কর্পোরেশনের "কিউরিও (QRIO)", হোন্ডা কোম্পানির আসিমো (ASIMO)", স্যামসাংয়ের "ৱোৰোৱে (Roboray)” ইত্যাদি রোবট প্রায় মানুষের মতই বিশেষ কোন কাজ করতে পারে। যেমন-মুরাতা বয় দক্ষতার সাথে বাইসাইকেল চালাতে পারে। মুরাতা গার্ল এক চাকার সাইকেল চালাতে পারে।


রোবট আজুমা হিকারি (Azuma hikari)


জাপানের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ভিন (Vinclu) আজুমা হিকারি (Azuma hikari) নামে একটি একটি ভার্চুয়্যাল হোম রোবট তৈরি করেছেন যার অবস্থান Gatebox নামক ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অভ্যন্তরে। জাপানি ভাষার হিকারি শব্দের অর্থ হলো যন্ত্রের মধ্যে জীবন বা আলো (Light)। Gatebox এর অভ্যন্তরে লেজার প্রযুক্তির ডিফিউজড অ্যামবিয়েন্ট লাইট প্রক্ষেপনের মাধ্যমে সিলিন্ড্রিক্যাল প্রজেক্টরের মধ্যে হিকারিকে হলোগ্রাফিক মডেলে উপস্থাপন করা হয়। এর উচ্চতা কয়েক ইঞ্চি মাত্র । Gatebox এর বাহিরের দিকে রয়েছে মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, বিভিন্ন ধরনের সেন্সর, কমিউনিকেশন ডিভাইস ইত্যাদি। এগুলোর সাহায্যে হিকারি ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার মনিব বা মালিকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। হিকারির চরিত্রকে এমনভাবে রূপায়িত করা হয়েছে যেন সে ২০ বছরের তরুণী এবং সে তার মনিব বা মালিকের সাথে সঙ্গী বা স্ত্রীর মত ব্যক্তিগত পর্যায়ের যোগাযোগ রক্ষা


করে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগীতা করতে পারে। সকালে ঘুম থেকে ডেকে উঠানো, অফিস কিংবা বাসার কাজের কথা মনে করিয়ে দেওয়া, মেসেজ পাঠিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া ইত্যাদি কাজ সূচারুরূপে করতে পারে। হিকারিকে একটি Tiny Holographic Wife নামে অভিহিত করা হয়েছে।


রোবট সোফিয়া (Sophia)


বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্পে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে মানবসদৃশ রোবট সোফিয়া রোবট সোফিয়া তৈরি করেছে হংকং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হ্যানসন রোবটিকস (Hanson Robotics)। এর মূল নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন (David Hanson)। তাকে নকশা করা হয় হলিউডের ব্রিটিশ অভিনয় শিল্পী অড্রে হেপবার্ন এর মত করে। এই রোবটের নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সে মানুষের ব্যবহারের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ও শিখতে পারে এবং মানুষের সাথে কাজ করতে পারে। রোবট সোফিয়াকে ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে সক্রিয় করা হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে সৌদি আরবের নাগরিকত্ব দেয়া হয় এই রোবটকে এবং এটিই প্রথম রোবট যে কোন দেশের নাগরিকত্ব লাভ করে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি উৎসব ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে অংশ নিয়েছে সিঙ্গাপুরের তৈরি ও সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পাওয়া এই রোবট সোফিয়া।


ডেভিড হ্যানসনের মতে সোফিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা সম্পন্ন এবং মুখে বিন্যাস বা ফেসিয়াল রেকগনাইজেশন (Facial Recognization) করতে পারে। এটি মানুষের অঙ্গভঙ্গি নকল করতে পারে এবং বিভিন্ন বিষয়ের উপর কথোপকোথন চালিয়ে যেতে পারে। এটি প্রায় ৫০ ধরনের ভাবভঙ্গি দেখাতে পারে। সোফিয়াকে তৈরি করা প্রতিষ্ঠান জানায় তার ভেতর এমন সফটওয়্যার দেওয়া হয়েছে যাতে সে কোনো প্রশ্ন শুনলেই কিছু সময়ের মধ্যে উত্তর দিতে

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত


পারে। যেমন-কোনো অঞ্চলের আবহাওয়ার খবর, জানজটের খবর বিংবা সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন। ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশাল তথ্যভান্ডার বা ক্লাউডে যুক্ত থাকে এই রোবট। এর দেহে ক্যামেরা ও আর্টিফিসিয়াল ইনটিলিজেন্স সফটওয়্যার লাগানো আছে। এর মাধ্যমে একবার যার সঙ্গে কথা বলছে পরবর্তীতে তাকে চিনতে পারে এবং যে তার সঙ্গে কথা বলে সোফিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার সঙ্গে আই কন্টাক্ট করতে পারে।


বাংলাদেশে রোবটিক্স গবেষণা


রোবটিক্স গবেষণায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থী বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন রোবটিক্স প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে পুরষ্কার জিতার মাধ্যমে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ ২০১৫ ভারতের মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত International Robotics Challenge (IRC) প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের “আরফাইন্ডার' দল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল ২০১৪ সালে আর্ন্তজাতিক রোবটিকস চ্যালেঞ্জ (আইআরসি) প্রতিযোগীতায় রানার্স আপ শিরোপা অর্জন করেন।


২০১৩ সালে চতুর্থ বার্ষিক লুনাবোটিক্স কম্পিটিশনে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয় বুয়েট, চুয়েট ও এনএসইউ, ব্র্যাক, আইইউটি ও এমআইএসটি এর পৃথক ৬টি দল। এর চূড়ান্ত পর্বে এমআইএসটি (মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি) ৩টি ক্যাটাগরিতে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে। অন্য আরেকটি ক্যাটাগরিতে বুয়েট দল তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ২০১২ সালে তৃতীয় বার্ষিক লুনাবোটিক্স কম্পিটিশনে বাংলাদেশ থেকে তিনটি টিম অংশ নেয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'চন্দ্রবোট-২; আইইউটি থেকে 'লুনাটিয়ান' এবং এমআইএসটি থেকে 'রোবোমিস্ট'। মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বিশ্বের ৮টি দেশ থেকে আসা ৫৫টি দল। নাসার নিয়মানুযায়ী মাত্র ১৩টি দল উত্তীর্ণ হতে পারে যার মধ্যে এশিয়ার মধ্যে সেরা এবং সবগুলো দলের মধ্যে 'চন্দ্রবোট-২' ১২তম স্থান দখল করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url