শরীর সুস্থ রাখার খাবার তালিকা-পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি

যে খাবার খেয়ে আমরা জীবন ধারণ করি সেই খাবারই আবার কখনো-কখনো আমাদের জীবনহানি ঘটায়। তার প্রধান কারণ খাবারের দিকে অমনোযোগিতা। সুতরাং খাবার যাতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রস্তুত হয় সেদিকে সব সময় রাখতে হবে।

সূচিপত্রঃ- শরীর সুস্থ রাখার খাবার তালিকা-পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি

রান্নাঘরের পরিবেশের

সবচেয়ে আগে রান্নাঘরের পরিবেশের দিকে নজর রাখা দরকার। রান্নার জায়গাটি বেশ পরিপাটি ও পরিষ্কার রাখা প্রধান কর্তব্য। রান্না করবার সময়ে চুলার আশপাশ যাতে ছাই, তরি-তরকারির খোসা, ময়লা পানি প্রভৃতিতে নোংরা হয়ে না যায় সেজন্য পাশেই একটা বড় গামলা রাখা ভালো। দরকার মত হাত- ধোওয়া বা কাপ-বাটি প্রভৃতি ধোওয়া পানি ঐ গামলায় ফেললে মেঝে অপরিষ্কার হয় না। রান্নার সময়ে ঘরে দরজা-জানালা খুলে রাখা দরকার। রান্না শেষে রান্নাঘরের মেঝেটা ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে-মুছে রাখতে হবে।

আজকাল রান্নাঘরে আরশোলা-ইঁদুরের উৎপাত অত্যন্ত বেশি। তাছাড়া বিড়াল, মাছি প্রভৃতি রান্নাঘরের শত্রুরাও সর্বদা ওঁৎ পেতে বসে থাকে। সেজন্য প্রত্যেক রান্নাঘরে 'মীটসেফ (Meatsafe) রাখা কর্তব্য। তাছাড়া প্রতি সপ্তাহে অন্ততঃ একবার ফিনাইল বা অন্য কোনো জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে রান্নাঘর পরিষ্কার করা উচিত। আমরা যখন রান্না করতে ভালোবাসি তখন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রকম রান্নাও শিখে রাখা ভাল। তাই এর জন্য কিছু সাজ-সরঞ্জামেরও প্রয়োজন রয়েছে। আর একটি কথা, দৈনন্দিন জীবনে রান্না যত সংক্ষেপে এবং তাড়াতাড়ি করা যায় ততই ভালো। সেই কারণে প্রেসারকুকার বা ইকনমিক কুকার ব্যবহার করা যেতে পারে।

রেফ্রিজারেটার আজকাল আর বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে না। একদিন বেশি পরিমাণে বাজার করে আনলে বা বাড়তি রান্না করা থাকলে ফ্রিজে রাখতে পারবেন। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। কাজেই ইলেকট্রিক বা গ্যাসের চুলা অথবা ধোঁয়াবিহীন চুল্লি কিম্বা আজকাল নানারকমের কেরোসিনের চুলা বেরিয়েছে। তাও "ব্যবহার করা যেতে পারে। রান্নাঘরটি নিজের হাতে সাজিয়ে রাখবেন। নিজের হাতে রান্না করে আত্মীয়-পরিজনকে তৃপ্তি করে খাওয়াতে সব দেশের মেয়েরাই ভালোবাসেন।

পুষ্টি উপাদান কি কি

আধুনিক যুগের সেরা রান্না স্বাস্থ্যের জন্য একান্ত প্রয়োজন। আমাদের শরীর রক্ষা করতে হলে খাদ্যের প্রয়োজন। অর্থাৎ খাবার না খেলে আমরা বাঁচতে পারি না। তেমনি এই খাদ্যে গোলমাল অর্থাৎ অনিয়ম কিছু ঘটলেই আমাদের জীবনহানির আশঙ্কা দেখা দেয়। সেজন্য খাদ্যের দিকে সকলের জাগ্রত দৃষ্টি রাখা একান্ত কর্তব্য। প্রথমে লক্ষ্য রাখা দরকার, শরীর অনুযায়ী গুরুপাক বা লঘুপাক খাদ্যের দিকে। তারপর খাদ্যের তালিকা এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন সেই তালিকার খাদ্যে শরীর রক্ষার সকল উপাদান নিয়মমত থাকে । আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে ছয়টি উপাদান অবশ্য প্রয়োজন। যেমন-(১) আমিষ জাতীয় (প্রোটিন), (২) শ্বেতসার বা শর্করা জাতীয় (কার্বোহাইড্রেট), (৩) স্নেহ বা চর্বি জাতীয় (ফ্যাট), (৪) লবণ জাতীয়, (৫) পানি এবং (৬) ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ ।

প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্য (PROTEIN):

ডিম, মাছ, মাংস, দুধ ও পনির সাধারণতঃ উচ্চশ্রেণীর প্রোটিন জাতীয় খাদ্য। ডাল, বাদাম, সিম, মটরশুঁটি, যব ও গম হলো নিম্নশ্রেণীর প্রোটিন জাতীয় খাদ্য। মানুষ সাধারণতঃ যা খায় তার মধ্যে শতকরা ১৫ ভাগ প্রোটিন থাকে। প্রোটিনে শরীরের গঠন এবং ক্ষয়পূরণ হয়। বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে মাছেই সবচেয়ে বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন প্রকার মাছের মধ্যে আবার এর পরিমাণের কম-বেশি আছে। যেমন—রুই, কাতলা ও ইলিশ মাছে প্রোটিনের ভাগ শতকরা ১০/১৫%। তবে গড়পড়তা মাছ-মাংসে ১৮/২০% ধরা হয়। ডিমের সাদা অংশের চেয়ে হলুদ অংশে আমিষের ভাগ বেশি। এ ছাড়া মাছের মধ্যে কতকগুলি ধাতব গুণ রয়েছে যা মানুষের পক্ষে দূরকারী।

স্নেহ জাতীয় খাদ্য (FAT):

মানুষের শরীরে তাপ উৎপাদন করতে স্নেহ জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন। আমিষ জাতীয় খাদ্যের চেয়ে এর কর্মশক্তি বাড়াবার ক্ষমতা দ্বিগুণ। তেল, ঘি, ননী, মাখন, চর্বি প্রভৃতি স্নেহ জাতীয় খাদ্যে ভিটামিন 'এ'ও 'ডি' থাকার ফলে শরীরের স্নায়ু গঠনে বেশি সাহায্য করে।

শ্বেতসার ও শর্করা জাতীয় খাদ্য (CARBOHYDRATE):

এই জাতীয় খাদ্যে কর্মক্ষমতা বাড়ে ও তাপ সংরক্ষণে সাহায্য করে। অধিক আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খেলে তাতে অম্ল বৃদ্ধি করে। অম্লাধিক্য নষ্ট আধুনিক যুগের সেরা রান্না করবার জন্য দরকার শ্বেতসারযুক্ত খাদ্যের। শ্বেতসারযুক্ত খাদ্যগুলি সাধারণতঃ শর্করা জাতীয় উপাদানের উৎস। চাল, চিড়া, মুড়ি, আটা, ময়দা, সুজি, সাগু, এরারুট, ডাল, আলু, কাঁচকলা, কচু, গুড় প্রভৃতিকে সাধারণতঃ শ্বেতসারযুক্ত খাদ্যের তালিকায় স্থান দেওয়া হয় ।

খনিজ লবণ (Mineral salts):

শরীরের ক্ষয়পূরণে ও শরীর গঠনে খনিজ লবণ জাতীয় উপাদানের প্রয়োজন আছে। আমাদের শরীরের ওজনের প্রায় ছয় ভাগ লবণ। এর মধ্যে নানারকম লবণের ভাগ আছে। প্রতিদিনের পরিশ্রমের ও মলমূত্রের সঙ্গে প্রায় দুই থেকে আড়াই আউন্স লবণের ক্ষয় হয়। সেই অনুপাতে যদি তার পূরণ না হয় তাহলে স্বভাবতঃই শরীর ভেঙে যায় ও পরিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে । এ ছাড়া আমাদের শরীর গঠনে ক্যালসিয়াম, আয়রন বা লৌহ, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়োডিনের দরকার। সোডিয়াম ও পটাসিয়াম এই দু' রকম লবণের অভাব হলে স্নায়ুমণ্ডলী ও পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে, হৃৎপিণ্ডের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয় ও চর্মরোগের সৃষ্টি হয়।

ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ (Vitamins or nutrients):

সকল রকম শাক-সব্জিতে পটাসিয়াম অল্পবিস্তর পাওয়া যায়, আর সোডিয়াম পাওয়া যায় দুধ, মাছ, মাংস ও ডিমে। কমলালেবু, ঘি, মাখন, শাক-সব্জী থেকে আমরা ভিটামিন 'এ' পাই প্রচুর পরিমাণে। এগুলি সংক্রামক রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। ডিমের কুসুম, মাংস, মাছ, পালংশাক, বাদাম, খোসাসুদ্ধ, গম, ঢেঁকি-ছাঁটা চালে ভিটামিন 'বি' থাকে প্রচুর। এগুলি নিয়তই আমাদের শরীরের ক্ষয়পূরণ করে ও জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করে। টমেটো, পালংশাক, শালগম, আলু, বরবটি, লেবু, জাম প্রভৃতিতে আমরা পাই ভিটামিন 'সি'। ডিম, দুধ, ইলিশ মাছ প্রভৃতিতে পাই ভিটামিন 'ডি'। আমাদের হাড় ও দাঁতের পুষ্টিসাধন করে এবং এর অভাবে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের 'রিকেট' নামক রোগ জন্মায়। গম, ভুট্টা, আটা, ডিম প্রভৃতিতে ভিটামিন 'ই' থাকে।

সুবিধামত কতকগুলো বিষয়ে গৃহিণীদের লক্ষ্য রাখা একান্তই দরকার। সেগুলো হচ্ছে—আমরা প্রতিদিন আমাদের রুচি বজায় রাখতে গিয়ে খাদ্যদ্রব্য থেকে যে শক্তির অপচয় করি তা রোধ করা। যেমন—ভাতের ফ্যান, আলু পটলের খোসা, ছানার পানি প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, শ্বেতসার ও লবণ থাকে। সম্ভবমত এই দিকে সু-গৃহিণীরা লক্ষ্য রাখলে প্রকারান্তরে স্বাস্থ্যের দিকেই লক্ষ্য রাখা হয়। এগুলো ব্যবহার করবারও নাম্বা পদ্ধতি প্রচলিত আছে। যেমন – আনাজের খোসাগুলো ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে একসঙ্গে সুক্তো করা যায়। এতে স্বাদ ও স্বাস্থ্য দুই-ই পাওয়া যায়। সামান্য চিনি দিয়ে ছানার পানি খেয়ে নিতে রুচিতে বাধে না। ভাতের মাড়ে একটু লবণ দিয়ে গরম-গরম খেতে বেশ স্বাদ লাগে ।

একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের খাদ্য তালিকা

খাদ্য উপাদান খাদ্যদ্রব্য দৈনিক পরিমাণ ক্যালরি মূল্য
শ্বেতসার চাল ৮ আউন্স ৮৭৩
আটা ৬ আউন্স ৫৯৪
প্রোটিন উৎকৃষ্ট নয় ডাল ৪ আউন্স ৪০০
প্রোটিন উৎকৃষ্ট মাছ ৪ আউন্স ১০০
প্রোটিন দুধ ১২ আউন্স ২১০
স্নেহ পদার্থ তৈল ৩ আউন্স ৭৮৩
ভিটামিন খনিজ লবণ শাক-সব্জি ও ফল ৪ আউন্স ১৬৯
পানি কেজি -- মোট = ৩,১২৯

শরীরের আবশ্যকীয় ক্যালোরি

যাদের জন্য বয়স ক্যালরি
শিশু ৪ - ৫ বছরের বেশি ১,০০০
শিশু ৬ - ৭ বছরের বেশি ১,৩০০
শিশু ৮ - ৯ বছরের বেশি ১,৬০০
বালক ১০ - ১১ বছরের বেশি ১,৮০০
বালক ১২ - ১৩ বছরের বেশি ২,১০০
সাধারণ পুরুষ ১৪ বছরের বেশি ২,৬০০
সাধারণ মহিলা ১৪ বছরের বেশি ২,১০০

সাধারণ খাদ্যের ক্যালরি হিসাব

দ্রব্য আউন্স ক্যালরি মূল্য
ভাত ২০০
রুটি ১.৫ ১০০
ডাল ৯০
দুধ ১৪০
মাখন ১০০
ঘি ২০০
তৈলাক্ত মাছ ১০০
সাধারণ মাছ ৫৬
ছাগলের মাংস ৭০
ভেড়ার মাংস ১০০
আলু ৮০
সরষের তেল ২০০
চিনি ১০০
শাক-সব্জি ও তরকারী ২,১০০
ডিম ১ টি ৭৫

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url