কাটলেট তৈরির রেসিপি-কাটলেট কিভাবে বানাতে হয়

কাটলেট খেতে ভালই লাগে। কাটলেট তৈরি করাও কষ্টকর নয়। কাটলেট হচ্ছে এক প্রকার রান্নার ধরণ। সাধারণত,  মাংস বা সবজি ফেটানো ডিমের মধ্যে ডুবিয়ে রেখে তার উপরে বিস্কুট অথবা পাউরুটির গুঁড়ো মাখিয়ে ডুবো তেলে কড়া করে ভাজে কাটলেট তৈরী করা হয়।। তবে দেশি আলু এবং মাংসের কাটলেট অল্প ভাজা হয়।  এটি ভারতীয় উপমহাদেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় জল খাবার। কয়েকটি কাটলেট সম্বন্ধে এখানে আলোচনা করা হচ্ছে।

সূচিপত্রঃ- কাটলেট তৈরির রেসিপি-কাটলেট কিভাবে বানাতে হয়

  • আলুর কাটলেট
  • চিংড়ির কাটলেট
  • ইটালিয়ান কাটলেট
  • ফ্রেঞ্চ কাটলেট
  • মাংসের কাটলেট
  • ফাউল কাটলেট
  • কবিরাজী কাটলেট
  • ভেজিটেবল কাটলেট

আলুর কাটলেট

আলু সিদ্ধ করে রাখুন। রুই মাছ বড়-বড় টুকরো করে কেটে সিদ্ধ করে কাঁটা ছাড়িয়ে রাখুন। টমেটোর রস করে রাখুন। ডিম, 'বিস্কুটের গুঁড়ো, গোলমরিচের গুঁড়ো মরিচ, লবণ, পাউরুটি, দুধ প্রভৃতি যোগাড় রাখুন। প্রথমে কাঁটা ছাড়ানো সিদ্ধ রুই মাছের সাথে লবণ, মরিচ, জিরে গুঁড়ো ও অল্প পরিমাণ টমেটোর রস মিশিয়ে ভাল করে চটকে মেখে নিন। এবার দুধে ভেজানো পাউরুটির সাথে খোসা ছাড়ানো সিদ্ধ আলু, ভাজা মসলা গুঁড়ো দিয়ে মেখে নিন। পরে মাখা আলু এক একটা লেচি করে হাতের চেটোয় চ্যাপ্টা করে গড়ে রেখে দিন। মাখা-মাছও এই রকম চ্যাপ্টা করে গড়ে রাখুন। একটা পাত্রে ডিম ভেঙে ফেটিয়ে রাখুন এবং একটা বড় থালায় বিস্কুটের গুঁড়ো রাখুন। তারপর একটা চ্যাপ্টা করা আলুর চাকতির উপর একটা মাছের চাকতি রেখে তার উপরে আর একটা আলুর চাকতি চাপা দিয়ে লম্বা টেবিল-ছুরির পিঠ দিয়ে চেপে চেপে কাটলেটের মত গোল করে তাতে ডিম আর বিস্কুটের গুঁড়ো দিন। পরে ছুরির পিঠ চেপে চেপে ডুবো ঘিয়ে ভেজে রাখুন।

চিংড়ির কাটলেট

চিংড়ি, পেঁয়াজ বাটা, আদা, রসুন, মরিচ, টক দই, ডিম, বিস্কুটের গুঁড়ো ঘি বা তেল বা লবণ যোগাড় রাখবেন। বড় চিংড়ির মাথা কেটে বাদ দিয়ে ল্যাজায় একটু খোলা রেখে আর সব খোলা ছাড়িয়ে ফেলে দেবেন। মাছের পিঠ লম্বাভাবে কাটবেন, যেন মাছ দু'টুকরো না হয় অথচ দু'ভাগ হয়। মাছের পিঠ থেকে সুতো বের করে ছুরি দিয়ে আস্তে আস্তে থুড়ে নেবেন। এবার মাছে আদা-পেঁয়াজ মরিচ বাটা, লবণ ও টক দই মাখিয়ে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখবেন। একটা পাত্রে ডিম ভেঙে ফেটিয়ে নিন। এক একটি কাটলেট চ্যাপ্টা করে গড়ে বিস্কুটের গুঁড়োয় এপিঠ-ওপিঠ করে মাখিয়ে নেবেন। বিস্কুটের গুঁড়ো কাটলেটের গায়ে শুইয়ে গেলে ডিমের গোলায় ডুবিয়ে আবার বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে হাত দিয়ে চারদিক সমান করে কাটলেট ঘিয়ে বা তেলে বাদামী রং করে ভেজে তুলবেন।

ইটালিয়ান কাটলেট

কিমা, মাংস, পেঁয়াজ, রসুন, লবণ, চিনি, কিসমিস, ডিম, বিস্কুটের মিহি- গুঁড়ো, ঘি বা তেল যোগাড় রাখুন। কিমা ভাল করে ধুয়ে পেঁয়াজ, মরিচ মিশিয়ে পানি দিয়ে একটা পাত্রে ঢাকা দিয়ে সিদ্ধ করবেন। এর মধ্যে রসুন থেঁতো করে দেবেন। পানি এমন পরিমাণে দেবেন যেন মাংস সিদ্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গে পানি শুকিয়ে যায়। সিদ্ধ হলে নামিয়ে সমস্তটা শিলে থেঁতো করবার মত বেটে নিন, খুব মিহি হবে না। এবার পাত্রে তেল চাপিয়ে ওই বাটা কিমা ছেড়ে লবণ, চিনি, কিসমিস, আদাবাটা দিয়ে ভাজতে থাকুন। ভাজতে ভাজতে যখন কিমা থেকে ভাজা-গন্ধ বেরোবে তখন নামিয়ে রাখুন। একটা পাত্রে ডিম ভেঙে ফেটিয়ে রাখুন এবং বিস্কুট-গুঁড়ো বিছিয়ে রাখুন। তারপর ঐ কিমার পুর কাটলেটের আকারে তৈরি করে ডিমের গোলায় ডুবিয়ে বিস্কুট-গুঁড়ো বেশ করে মাখিয়ে নিন। আবার ডিমের গোলায় ডুবিয়ে ও গুঁড়ো মাখিয়ে শুকনো করে হাত দিয়ে কাটলেট গড়ে কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে ডুবো ঘি বা তেলে অল্প আঁচে লাল করে ভেজে তুলুন।

ফ্রেঞ্চ কাটলেট

কিমা মাংস, আদা, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন বাটা, কাঁচা মরিচ, ডিম, লবণ, বিস্কুটের গুঁড়ো, তেল, জিরে গুঁড়ো, গরমমসলা, পাউরুটি ও দুধ যোগাড় রাখুন। মাংসের কিমা পরিষ্কার করে ধুয়ে বেছে সিদ্ধ করুন। একটি ডেকচিতে তেল, লবণ দিয়ে পেঁয়াজ-বাটা ও অন্যান্য বাটা মসলা ভেজে নিয়ে তাতে সিদ্ধ মাংস ছেড়ে একটু পানি দেবেন, পানি শুকালে মাংস নামিয়ে রাখবেন। দুধে পাউরুটি ভিজিয়ে রাখুন। মাংস ঠাণ্ডা হলে বেটে কাঁচা মরিচ কুঁচি, ভাজা জিরে গুঁড়ো, গরমমসলা গুঁড়ো রাখুন। এই মাখা মাংসের দলা দিয়ে চ্যাপ্টা করে কাটলেট তৈরি করে বিস্কুটের গুঁড়োয় এপিঠ-ওপিঠ করে মাখিয়ে রেখে দেবেন। বিস্কুটের গুঁড়ো কাটলেটের গায়ে শুকোলে একটা পাত্রে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে এক-একটা কাটলেট ডুবিয়ে আবার বিস্কুটের গুঁড়োয় মাখিয়ে লালচে রং করে ভেজে তুলবেন।

মাংসের কাটলেট

মাংস, আদা, পেঁয়াজ, রসুন বাটা, কাঁচামরিচ-কুঁচি, লবণ, ভিনিগার, ডিম, বিস্কুটের গুঁড়ো দুধ, পাউরুটি, তেল বা ঘি যোগাড় রাখুন। এবার মাংস যতটা সম্ভব পাতলা টুকরো করে কেটে নিন। দুধে পাউরুটি 'ভিজিয়ে রাখবেন। মাংসের দুই পিঠই ভাল করে ছুরি দিয়ে থুড়বেন। এই থোড়া মাংস, আদা, রসুন, পেঁয়াজ-বাটা, কাঁচামরিচ কুঁচি, লবণ ও ভিনিগার দিয়ে মেখে বেশ কিছু সময় ভিজিয়ে রাখবেন। তারপর ডিম ফেটিয়ে ও দুধে ভিজানো পাউরুটি চটকে ঐ মাংস মাখিয়ে নেবেন। এবার মসলা মাখানো মাংস দিয়ে এক একটা কাটলেট গড়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে হাত দিয়ে চারিদিকে সমান করে ঘি বা তেল দিয়ে লাল রং করে ভেজে তুলে রাখবেন। এই কাটলেট অল্প আঁচে আস্তে আস্তে ভাজতে হয়।

ফাউল কাটলেট

মুরগির দুই পায়ের চারখানা ও ডানার দু'খানা-এই ছয় টুকরো মাংস কেটে ধুয়ে রাখবেন। আদা, পেঁয়াজ, রসুনবাটা, মরিচবাটা, লবণ, কাঁচা মরিচ- কুঁচি, ডিম, ভিনিগার, বিস্কুটের গুঁড়ো ও ঘি বা তেল যোগাড় রাখুন। প্রথমে পায়ের হাড় থেকে মাংস আস্তে আস্তে চেঁছে বের করবেন। হাড়ের প্রায় শেষ অবধি ছোলা হলে অল্প মাংস হাড়ের সঙ্গে লেগে থাকবে ও যখন নীচের দিকে ঝুলে পড়বে তখন আর ভুলবেন না। এবার হাড়ের খানিকটা কেটে ফেলে দুই আঙ্গুল আন্দাজ হাড় মাংসের সঙ্গে রেখে দেবেন। তারপর ছুরি দিয়ে মাংস কুঁড়ে, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, রসুনবাটা, কাঁচা মরিচ-কুঁচি, ভিনিগার, লবণ মাখিয়ে একঘণ্টা বাদে ডিমের গোলা দিয়ে মসলা ভিজানো মাংস মাখাবেন ও বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে হাত দিয়ে চ্যাপ্টা করে চারিদিক করে কাটলেট গড়ে ঘিয়ে লাল রং করে ভেজে তুলবেন।

কবিরাজী কাটলেট

মাংসের কিমা, ডিম, আদা, পেঁয়াজ, পাউরুটি, কাঁচা মরিচ, রসুন, চিনি, লবণ, ভিনিগার যোগাড় রাখুন।ডিমগুলি ভেঙে ফেটিয়ে রাখুন। মাংসের কিমা ভাল করে পরিষ্কার করে ভিনিগারে ভিজিয়ে রাখুন। আধঘণ্টা পর ভিনিগারে মাংস আর ডিম-গোলা মিশিয়ে নিন এবং তার সাথে আদা, রসুন বাটা, পেঁয়াজ-মরিচ কুঁচি, সামান্য চিনি, আন্দাজমত লবণ ও পাউরটি দিয়ে মেখে পাশে রাখুন। এবার কাটলেটের নিয়মে ঐ মাখা কিমার দলা থেকে খানিকটা নিয়ে চ্যাপ্টা করে কাটলেট তৈরি করুন এবং ডিম-গোলা আর বিস্কুটের গুঁড়ো দিয়ে চেপে নিন এবং পরে তেলে ভেজে রাখুন।

ভেজিটেবল কাটলেট

আলু, বীট, গাজর সাইজ করে কেটে ধুয়ে রাখুন। আদা, পেঁয়াজ কুঁচিয়ে রাখুন। মসলার গুঁড়ো, লবণ, হলুদ, লেবুর রস, ডিম, বিস্কুটের গুঁড়ো যোগাড় রাখুন। প্রথমে কাটা তরকারির সাথে লবণ, হলুদ ও লেবুর রস দিয়ে চটকে মেখে নিন। পরে পাত্রে তেল চাপিয়ে আদা, পেঁয়াজ, মরিচ কুঁচি ও ঐ মাখা তরকারি ঢেলে দিয়ে ভাজতে থাকুন। ভাল করে ভাজা হলে নামিয়ে ঠাণ্ডা হলে খানিকটা নিয়ে আগেকার নিয়মে চ্যাপ্টা করে কাটলেট গড়ে একই নিয়মে ডিম-গোলার প্রলেপ দিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে চেপে-চেপে তেলে ভেজে নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url