ডাল রান্না করার নিয়ম-ডাল রান্না করার পদ্ধতি
ডাল রান্না হয় প্রায় সব বাড়িতেই। কিন্তু এই রান্না যদি উপযুক্ত উপকরণ দিয়ে করা হয় তবেই সুস্বাদু ও মুখরোচক হবে।
মটর ডাল
ডালগুলি ভাল করে ঝেড়ে এবং ধুয়ে ডেকচিতে ফুটন্ত পানিতে ছেড়ে দেবেন। তার মধ্যে কাঁচা মরিচ চিরে, তেজপাতা ও হলুদ দিয়ে দেবেন। আধসিদ্ধ হলে লবণ ও সামান্য একটু চিনি দিয়ে দেবেন। তারপর ডাল সিদ্ধ হলে নামিয়ে রাখুন। এবার কড়াইতে তেল দিয়ে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিয়ে ডালটা নামিয়ে নিন। নামাবার সময় একটু গাওয়া ঘি দিলে ভাল হয়।
মটর ডালের তরকারি
উপকরণঃ মিষ্টি কুমড়ো, থোড়, আলু, পটল, মুলো, ডাঁটা, কাঁঠাল-বীচি, কাঁচা মরিচ, শুকনো মরিচ, তেজপাতা চিনি, মেথি, ঘি ও তেল।
প্রস্তুত প্রণালীঃ তরকারিগুলি চাকা-চাকা করে কুটে নিন। পরে ডাল ধুয়ে ফুটন্ত পানিতে দিন। আধসিদ্ধ হলে কাঁঠাল বীচি, মুলো, থোড় দিয়ে দিন। তারপর প্রায়-সিদ্ধ হলে বাকি তরকারী, কাঁচা মরিচ, হলুদ, লবণ, সামান্য চিনি দিয়ে দেবেন। ডাল সিদ্ধ হলে নামিয়ে রাখুন। এবার কড়াইতে তেল দিয়ে মেথি, তেজপাতা, শুকনো মরিচ ফোড়ন দিয়ে ডাল ঢেলে নিন। তারপর কিছুক্ষণ ফুটলে একটু ঘি দিয়ে নামিয়ে রাখুন।
মুগের ডাল
মুগের ডাল কাঁচা ও ভাজা দু'রকম হয়। কাঁচা ডাল কড়াইতে ভেজে নিয়ে রান্না করা যায়। প্রথমে কাঁচা ডাল ভাল করে ধুয়ে নিতে হয়। ভাজার দরকার হলে কড়াইতে ভেজে নেবেন। প্রথমে কড়াইতে পানি দিয়ে চুলায় বসাতে হয়। পরে পানি ফুটে উঠলে হলুদ বাটা বা গুঁড়ো দেবেন। (হাতা দিয়ে ফেনাগুলো ফেলে দেবেন)। ভালভাবে সিদ্ধ হলে হাতায় করে ঘুঁটে দেবেন। তারপর পরিমাণ মত লবণ দিয়ে নামিয়ে নেবেন। এবার কড়াইতে ঘি দিয়ে চুলায় চাপিয়ে দিন এবং তেজপাতা, পাঁচফোড়ন ও জিরে দিয়ে একটু ভেজে নেবেন। তারপর ডাল ঢেলে দেবেন। নামাবার সময় লবণ ও সামান্য গুড় দিয়ে নামাবেন।
মুগের ডালে মাছের মুড়ো
রুই মাছের মাথাটা কেটে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে, পরে লবণ ও হলুদ মাখিয়ে ভাল করে ভেজে নিতে হবে। ডাল উথলে উঠলে ভাজা মাথা ডালে দিয়ে ভাল করে হাতা দিয়ে ভেঙে দিতে হবে-তাহলে ডালের স্বাদ আরও ভাল হবে। কিছুক্ষণ ফোটার পর মরিচ, হলুদ, আদা, তেজপাতা, জিরে, মরিচবাটা ও লবণ দিয়ে নামাবার আগে কিছুটা গরম মসলা বাটা -ডালের উপর ছড়িয়ে দিয়ে চাপা দিতে পারলে আরও ভাল হয়। এই ডাল একটু ঘন রান্না করাই ভাল।
মুগের টক ডাল
টক ডাল সাধারণত মুগ, মুসুর বা খেসারির হয়। ডাল ফুটে উঠলে কাঁচা আম, আমচুর, চালতা, তেঁতুল, যে-কোন একটা দিলেই ভাল হয়। নামাবার সময় একটু গুড় বা চিনি দিয়ে নামাতে হয়। সরষে, শুকনো মরিচ, তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে নামাতে হবে।
মুসুর ডাল
পানি ভাল গরম হলে ডাল দিতে হবে। ভাল করে সিদ্ধ হলে নামিয়ে রাখুন। এখন কড়াইতে তেল দিয়ে তেজপাতা, জিরে, পেঁয়াজ শুকনো মরিচ ফোড়ন দিয়ে মরিচবাটা, সামান্য আদাবাটা দিয়ে ডাল ঢেলে দিন। এবার হলুদবাটা এবং. কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিয়ে ঘুঁটে লবণ দিন।
খাঁড়ি মুসুর ডাল
উপকরণঃ ডাল আড়াইশো গ্রাম, ঘি কিছুটা, একটু দই ও জিরে-মরিচ, তেজপাতা, মরিচ, লবণ, বাটা গরমমসলা দরকার মত।
প্রস্তুত-প্রণালীঃ প্রথমে ডাল ভাল করে ধুয়ে নিয়ে গরম পানি সিদ্ধ করে নেবেন। ডাল গলে গেলে মরিচবাটা, হলুদবাটা, লবণ দিয়ে যখন বেশ গাঢ় হয়ে যাবে তখন নামিয়ে অন্য পাত্রে ঢেলে রেখে পেঁয়াজ, তেজপাতা, জিরে, শুকনো মরিচ ফোড়ন দিয়ে ডালটা ঢেলে দিন এবং ফুটে উঠলে পরিমাণ মত ঘি, এলাচ, গরম মসলা দিয়ে নামিয়ে রাখুন।
ছোলার ডাল
ছোলার ডাল ভাল করে বেছে ধুয়ে পরিষ্কার হাঁড়ি বা কড়াইতে আগে সিদ্ধ করে নেবেন। একটা পাত্রে আলাদা করে গরম পানি রেখে দেবেন। এবার চুলায় কড়াই চাপিয়ে তেল দিন। তেল গরম হলে তেজপাতা, জিরে, শুকনো মরিচ ফোড়ন দিন। এই সময়ে চাকা-চাকা করে নারকেল কেটে দিতে পারেন। পরে সিদ্ধ ডালটি ছেড়ে দিন। এবার হলুদ, লবণ, সামান্য চিনি দিয়ে চাপা দিয়ে দিন। বেশ করে ফুটে ডাল গলে গেলে নামাবার সময় গরমমসলার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে কিছুক্ষণ চাপা দিয়ে রাখুন।
খেসারির তেতো ডাল
তেতো ডালের মধ্যে রুচি অনুযায়ী করলা, উচ্ছে, ঝিঙ্গে বা মুলো দেওয়া যায়। প্রথমে তরকারিগুলি সাইজমত কেটে ধুয়ে রাখবেন। ডেকচিতে পানি চাপিয়ে দেবেন। পানি ফুটে উঠলে খেসারির ডাল ছেড়ে দেবেন। ভাল সিদ্ধ হলে যে তরকারি তৈরি আছে সেটা তার মধ্যে ছেড়ে দিয়ে দশ মিনিট ফুটতে দিন। এবার সবটা নামিয়ে রাখুন। পরে কড়াইতে তেল চাপান। তেল গরম হলে তেজপাতা, শুকনো মরিচ, জিরে ফোড়ন দিন। গোটা কয়েক পাঁচফোড়নও দিতে পারেন। এবার কড়াইতে ডাল ঢেলে দিন। তারপর একটু আদাবাটা দিয়ে আন্দাজমত পানি থাকতে নামিয়ে নিন।
কলাইয়ের ডাল
কাঁচা কলাইয়ের ডাল বেচে পরিষ্কার ফুটন্ত পানি দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। ফুটে উঠলে তেজপাতা, হলুদবাটা, সামান্য মরিচবাটা দেবেন। আলু সিদ্ধ হলে নামিয়ে রাখবেন। এবার কড়াইতে তেল দিয়ে শুকনো মরিচ আর মৌলি ফোড়ন দিয়ে ডাল ঢেলে দেবেন। নামাবার সময় একটু আদাবাটা দেবেন।
ভাজা কলাইয়ের ডাল
ভাজা কলাইয়ের ডাল রাঁধতে হলে প্রথমে ডালগুলিকে ভেজে নেবেন এবং তারপর ফুটন্ত পানি দিয়ে সিদ্ধ করবেন। এর পরের নিয়ম একই প্রকার। তবে ভাজা কলাইয়ের ডালে আদা ও ঘি একটু বেশি দিতে হয়। রুচি অনুযায়ী নামাবার দশ মিনিট আগে কুঁচো চিংড়ি ভেজে দিতে পারেন।
পাঁচ-মিশালি ডাল
সব রকম ডাল কিছু কিছু নিয়ে বেছে পরিষ্কার করে ডেকচিতে পর পর ফুটন্ত পানিত ছেড়ে দিন। সবচেয়ে আগে ছোলার ডাল, পাঁচ মিনিট পরে মটর ডাল, তার পাঁচ মিনিট পরে অড়হর- এমনি করে পাঁচ মিনিট পর পর ডালগুলি দিয়ে দিলে ভাল হয়। ভাল সিদ্ধ হয়ে গেলে কাঁচা মরিচ, হলুদ, তেজপাতা দিয়ে দশ মিনিট পরে নামিয়ে রাখুন। পরে কড়াইতে তেল দিয়ে শুকনো মরিচ, তেজপাতা, জিরে ফোড়ন দিন। কিছু আদার কুচি দিয়ে নেড়েচেড়ে ডাল ঢেলে দিয়ে ফুটে উঠলে নামিয়ে রাখুন।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url