ডালনা রেসিপি-কিভাবে ডালনা রেসিপি বানাবেন

ডালনা রেসিপি অন্য সকল রেসিপির থেকে আলাদা এবং স্বুস্বাদু্। ডালনা রেসিটি প্রধানত দুই রকমের হয়ে থাকে। যথা- মিষ্টি আর ঝাল। নানাপ্রকার সবজি দিয়ে ডালনা রান্না করা যায়। যেমন-ফুলকপি, শশা, পটল, পেঁপে, কাঁকুড়, মোচা, কড়াইশুঁটি, এঁচড়, কুমড়া, আলু প্রভৃতি। বিভিন্ন ধরণের ডালনা রেসিপি যেমন- পেঁপের ডালনা, মিষ্টি কুমড়োর ডালনা, পাঁচ-মিশালী ডালনা, চিংড়ির ডালনা ইত্যাদি  কিভাবে বানাতে হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

সুচিপত্রঃ- ডালনা রেসিপি-কিভাবে ডালনা রেসিপি বানাবেন

  • পেঁপের ডালনা
  • মিষ্টি কুমড়োর ডালনা
  • পাঁচ-মিশালী ডালনা
  • চিংড়ির ডালনা
  • কড়াইশুঁটির ডালনা
  • ছানার ডালনা
  • আলুর ডালনা
  • ফুলকপির ডালনা
  • বাঁধাকপির ডালনা
  • লাউয়ের ডালনা

পেঁপের ডালনা

পেঁপের খোসা ও বীচি ছাড়িয়ে চাকা-চাকা করে কুটে সিদ্ধ করে নিন এবং পানিটি ফেলে দিন। চুলায় কড়াই চাপিয়ে তেল দিন। তেল গরম হলে ডালের বড়ি গোটা কয়েক ভেজে তুলে রাখুন এবং ঐ তেলে তেজপাতা ও জিরে ফোড়ন দিয়ে সিদ্ধ পেঁপেগুলি ছেড়ে দিন। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে একটু ভাজা-ভাজা হলে ধনেবাটা দিয়ে চাপা দিয়ে রাখুন। ঝোল ঘন হয়ে এলে একটু চিনি, একটু দুধ ও একটু ময়দা গুলে ঢেলে দেবেন। তারপর আরও একটু ফুটলে ঘি ও বড়িভাজা দিয়ে নামিয়ে রাখবেন। এই হলো মিষ্টি ডালনা।

ঝাল ডালনা রান্না করতে দুধ বা চিনি দেবেন না। ফোড়ন দেবার সময়ে হলুদ, মরিচবাটা ও গোটা মরিচ দেবেন। মনে রাখবেন, ডালনায় ঝোল থাকে না। যেন থকথকে বা গা-মাখা ঝোল থাকে, সেই পরিমাণ পানি দেবেন।

মিষ্টি কুমড়োর ডালনা

উপকরণঃ মিষ্টি কুমড়ো, আলু, পেঁয়াজ, গরমমসলা, ঘি বা তেল ও বড়ি। রুচি অথবা পছন্দ অনুযায়ী চিংড়ি, ভিজানো ছোলা বা কড়াইশুঁটি।
প্রস্তুত প্রণালীঃ মিষ্টি কুমড়ো এবং আলু আন্দাজমত চাকা-চাকা করে কেটে নিন। বড়িগুলো ভেজে তুলে রাখুন। এবার কড়াইতে তেল দিন। কুমড়ো আর আলুগুলি একটু চিনি দিয়ে ঢেলে দিন। সবটা একটু কষে নিন। এবার ছোলা ভিজানো কিংবা কড়াইশুঁটি দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পরে অন্য পাত্রে ঢেলে রেখে আবার কড়াইতে তেল কিংবা ঘি দিয়ে তেজপাতা ও জিরে ফোড়ন দিয়ে তরকারি ঢেলে দিন, পরে বড়িগুলি দিন। তরকারি ফুটে গেলে গরমমসলা দিয়ে নামিয়ে রাখবেন। এই ডালনায় কুঁচো চিংড়ি ভেজে দিলে খুব সুস্বাদু হয়।

পাঁচ-মিশালী ডালনা

উপকরণঃ মিষ্টি-কুমড়ো, কড়াইশুঁটি, আলু, ফুলকপি, জিরে, তেজপাতা, মরিচ, ধনে, হলুদবাটা, চিনি, গরমমসলা, ঘি।
প্রস্তুত প্রণালীঃ কুমড়ো, কপি ও আলু কেটে রাখুন এবং কড়াইশুঁটি ছাড়িয়ে রাখুন। কড়াইতে তেল দিয়ে গরম হলে কড়াইশুঁটি বাদে অন্য সব তরকারি ভেজে তুলে রাখুন। আবার কড়াইতে তেল দিয়ে তেজপাতা, শুকনো মরিচ, জিরে ফোড়ন দিয়ে সামান্য পানিতে বাটা মসলাগুলি ঢেলে দিন ও কষতে থাকুন। তারপর একটু চিনি ও লবণ দিয়ে পরিমাণ মত পানি দিন। তরকারি সিদ্ধ হলে কড়াইশুঁটিগুলি দিয়ে দিন। এবার অল্প একটু ময়দা পানিতে গুলে দিন। ভাল করে ফুটলে ঘি ও গরমমসলা দিয়ে নামিয়ে রাখুন।

চিংড়ির ডালনা

প্রথমে বাগদা চিংড়ি কুটে বেছে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন। তারপর শিল- নোড়ার সাহায্যে ঐ চিংড়িগুলোকে থেতো করে রাখুন। পরে একটি পাত্রে কিছু নারকেল কোরা, বেসন, আদাবাটা বেশ ভালো করে ফেটিয়ে রাখুন। এবার কড়াইতে তেল দিন। তেল গরম হলে ঐ বেসন-গোলায় এক-একটি থেতো করা চিংড়ি চুবিয়ে কড়াইতে ছেড়ে বেশ বাদামী রঙের করে ভেজে তুলুন। পরে কড়াইতে তেল দিয়ে জিরে, ধনে, হলুদ, কাঁচামরিচ বাটা ও তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে পানি দিয়ে দিন। ঝোল ফুটে উঠলে তার মধ্যে ভাজা চিংড়িগুলি দিয়ে দিন। ঝোল গাঢ় হলে গরম মসলা, একটু গাওয়া ঘি দিয়ে নামিয়ে নিন।

কড়াইশুঁটির ডালনা

কড়াইশুঁটিগুলি মিহি করে বেটে নিন। আলুর খোসা ছাড়িয়ে চাকা-চাকা করে কুটে রাখুন। এবার আদাবাটা, কাঁচা মরিচ বাটা, একটু চিনি, সামান্য লবণ এবং কিছুটা বেসন দিয়ে কড়াইশুঁটি বাটার সঙ্গে বেশ করে ফেটিয়ে নিন। এবার কড়াইতে তেল দিয়ে ঐ ফেটানো জিনিসটি ঢেলে দিয়ে নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণের মধ্যে পানি শুকিয়ে গেলে বড় থালায় তেল মাখিয়ে ঢেলে দিন এবং ডালের ধোঁকার মত চ্যাপ্টা করে চেপে-চেপে ছুরি দিয়ে বরফির মত করে আলাদা করে রাখুন। এবার কড়াইতে তেল দিয়ে কড়াইশুঁটির বরফিগুলি লাল করে ভেজে নিন। তারপর আলু ভেজে নিন। এবার কড়াইতে তেল দিয়ে তেজপাতা ও জিরে ফোড়ন দিয়ে টক দই, আদাবাটা, ধনেবাটা, কাঁচামরিচ বাটা দিয়ে পরিমাণ মত পানি ঢেলে দিন। তারপর আলুগুলি ছেড়ে দিন। আলু সিদ্ধ হলে কড়াইশুঁটির বরফিগুলি ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখুন। ঝোল কমে গেলে গরম মসলার গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে নিন।

ছানার ডালনা

টাটকা ছানা চাকা-চাকা করে কেটে নিন। পরে আলু বড়-বড় করে কেটে রাখুন। এবার কড়াইতে তেল দিয়ে গরম হলে ঐ আলু আর ছানার টুকরোগুলি ধীরে ধীরে ভেজে নিন। এবার একটা বড় বাটিতে হলুদবাটা, মরিচবাটা, জিরে, ধনে-বাটা, আদাবাটা এবং খানিকটা টক দই পানি দিয়ে গুলে নিন। কড়াইতে তেল দিয়ে গরম হলে ঐ মসলাগোলা পানিটা ঢেলে দিন। পানিটা শুকিয়ে গেলে ঐ কড়াইতে মসলাটা একটু ভাজা ভাজা করে কষে নিন। এবার পরিমাণ মত পানি দিন ঝোলের জন্য, তারপর ভাজা আলুগুলি দিয়ে চাপা দিন। আলু সিদ্ধ হয়ে গেলে ছানার টুকরোগুলি দিয়ে দিন এবং দশ মিনিট পরে নামিয়ে ঢেলে রাখুন।

আলুর ডালনা

উপকরণঃ আলু, ধনে, জিরে, হলুদ, মরিচ, দই, ঘি, তেল।
প্রস্তুত প্রণালীঃ আস্ত আলু সিদ্ধ করে চাকা-চাকা করে কেটে নেবেন। তারপর কড়াইতে তেল দিয়ে জিরে ফোড়ন দিয়ে ধনে, মরিচ, হলুদবাটা ছেড়ে দিন। এবার কিছুক্ষণ ঐগুলিকে কষে নিন। কষা হলে অল্প পানি দিন এবং পানি ফুটে উঠলে আলুগুলি ছেড়ে দিন। আলুর গায়ে মাখ-মাখা পানি থাকতে নামিয়ে নিন। ইচ্ছে হলে নামিয়ে সামান্য ভাজা জিরের গুঁড়ো ও গরম মসলার গুঁড়ো দিয়ে কিছুক্ষণ চাপা দিয়ে রাখতে পারেন। এতে চমৎকার সুগন্ধ হবে।

ফুলকপির ডালনা

উপকরণঃ আলু, কড়াইশুঁটি, ফুলকপি, মরিচ, হলুদ, ধনেবাটা, তেজপাতা, জিরে, গরম মসলা, চিনি, ঘি।
প্রস্তুত-প্রণালীঃ প্রথমে আলু আর ফুলকপি মাঝারি আকারে কুটে রাখুন এবং কিছু কড়াইশুঁটি ছাড়িয়ে রাখুন। কড়াইতে তেল দিয়ে আলু আর ফুলকপিতে সামান্য লবণ, হলুদবাটা মাখিয়ে ভেজে তুলে নিন। আবার কড়াইতে তেল দিন। তেল গরম হলে ধনেবাটা, মরিচ বাটা ও হলুদবাটা একটু পানিতে গুলে ঢেলে দিন। সামান্য একটু চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন। মসলাগুলি ভাজা হলে কপি, কড়াইশুঁটি ও আলু দিয়ে পরিমাণ মত পানি দিন। সুসিদ্ধ হলে আলাদা পাত্রে ঘি বা তেল দিয়ে তেজপাতা ও জিরে ফোড়ন দিয়ে তরকারিগুলি ঢেলে দিন এবং ফুটে উঠলে নামিয়ে গরম মসলার গুঁড়ো দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন।

বাঁধাকপির ডালনা

উপকরণঃ বাঁধাকপি, কড়াইশুঁটি, আলু, ধনেবাটা, মরিচবাটা, হলুদবাটা, তেজপাতা, ঘি, চিনি, গরম মসলা।
প্রস্তুত-প্রণালীঃ প্রথমে বাঁধাকপি বড় বড় করে কেটে অল্প পানি দিয়ে সিদ্ধ করে নামিয়ে আলাদা পাত্রে রাখুন। কড়াইতে তেল দিয়ে আলুগুলি ভেজে তুলে রাখুন। এবার ঐ কড়াইতে কপিগুলি ছেড়ে দিন। কপি থেকে যে পানি বেরোবে সেই পানি শুকিয়ে গেলে বাটা মসলাগুলি দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে কড়াইশুঁটি দিন এবং সামান্য পানি দিন ও আলু দিয়ে দিন। তরকারিগুলি সিদ্ধ হলে অন্য পাত্রে ঢেলে রেখে। কড়াইতে তেল দিয়ে জিরে, তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে তরকারি ছেড়ে দিন। ফুটে উঠলে নামাবার সময় গরম-মসলার গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে চাপা দিয়ে রাখুন।

লাউয়ের ডালনা

উপকরণঃ লাউ, আলু, কুমড়ো-বড়ি, কড়াইশুঁটি, জিরে, ধনে, মরিচ ও হলুদবাটা, তেজপাতা, ঘি, চিনি, গরম মসলা, ময়দা ও দুধ।
প্রস্তুত-প্রণালীঃ পাতলা অথচ বড় বড় করে লাউ কেটে নিন। আলু আলাদা করে কেটে ভেজে তুলে রেখে দিন। এবার কড়াইতে তেল দিয়ে লাউ দিয়ে দিন। লাউ থেকে আপনা-আপনি পানি বেরোবে। পানি শুকিয়ে গেলে মসলাবাটাগুলি ও একটু চিনি দিয়ে নাড়াচাড়া করে আন্দাজমত পানি দিন এবং আলু, কড়াইশুঁটি ও বড়ি ছেড়ে দিন, ফুটে উঠলে এবং সিদ্ধ হলে নামিয়ে অন্য পাত্রে ঢেলে রাখুন। এবার ঘি বা তেল দিয়ে তেজপাতা ও জিরে ফোড়ন দিয়ে তরকারিগুলি ঢেলে দিন এবং দুধে ময়দা গুলে ঢেলে দিন। ফুটে উঠলে মিনিট পাঁচ-সাত পরে নামিয়ে গরমমসলা দিয়ে চাপা দিয়ে রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url