আলু চাষের পদ্ধতি-আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষ

আলু বাাংলাদেদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। সাধারণত ধান ও গমের পরই আলুর স্থান। চাষযোগ্য জমি ও ফলনের হিসেব করলে বলা যায় ধানের পরেই আলুর অবস্থান। বাংলাদেশে শীতকালে প্রায় সকল জেলাতেই ব্যপকভাবে আলুর চাষ হয়। তবে আলু চাষের উপযুক্ত সময় নভেম্বরের শুরুর দিকে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু জেলায় কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ার জন্য আগাম আলু চাষ করে থাকেন। আলু চষের জন্য আদ্রতা সম্পন্ন ওি রোদ্রৌজ্জল জমি সব চেয়ে উপযুক্ত।

সূচিপত্রঃ- আলু চাষের পদ্ধতি-আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষ

  • প্রাথমিক কথা
  • আলুর পরিচিতি
  • আলুর পুষ্টি মূল্য
  • আলু ব্যবহার
  • আলুর জাত
  • আলু বীজ শোধন

প্রাথমিক কথা

আলু চাষে প্রচুর আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে উচ্চ মানের আলু বেশী পরিমানে উৎপাদন করা চ্যালেঞ্জের বিষয়। আলুর প্রাক-রোপণ থেকে শুরু করে ফসল তোলা পর্যন্ত ও আলু জন্মানোর প্রক্রিয়ার জন্য ফসলের প্রয়োজনীয়তার প্রতি গভীর দেখাশোনা ও যত্নের প্রয়োজন এবং প্রতিযোগিতামূলক অগ্রগতি ও ভালো ফলন অর্জনের জন্য উদ্ভাবনী কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন। আলু চাষের জন্য কুষকেরা ভালো জাতের উপর নির্ভরশীল। আলু চাষের জন্য বীজ রোপনের আদর্শ গভীরতা, মাটির তাপমাত্র ও আর্দ্রতা, রোপনের পরবর্তী সময়ে আবহাওয়ার সম্ভাব্য অবস্থা ও জমির পরিচর্যা পরিচালোনার উপর নির্ভর করে। যথার্থ কৃষি ব্যবস্থা আলু রোপণ, সেচ এবং সার প্রয়োগে সহায়তা করে। সমন্বিত আগাছা এবং কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত আলুর চারা হিলিং, এবং সঠিক ভাবে ফসল আহরণ করে, আলু চাষিরা ভাল ফলন এবং উচ্চ মুনাফা অর্জন করতে পারে।

আলুর পরিচিতি

আলুর ইংরেজি হলো Potato। Potato শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ শব্দ ‘Petata’ (স্পেনে ব্যবহৃত নাম) থেকে। বাংলাদেশসহ আশেপাশের দেশগুলো তে এই সব্জি আলু নামেই পরিচিত। আলু এক ধরণের Roots & Tubers জাতীয় খাদ্য। আলু হল Solanum Tuberosum উদ্ভিদের একটি শ্বেতসারসমৃদ্ধ কন্দ। আলু আমেরিকার স্থানীয় একটি মূল সবজি । এই উদ্ভিদটি সোলানেসি (Solanaceae) নামক নাইটশেড পরিবার অন্তর্ভুক্ত বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ । বিশ্বব্যাপী জন্মানো প্রধান প্রজাতি হল Solanum tuberosum। এই প্রজাতিটির আধুনিক জাতগুলোই সর্বাধিক ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। সারা বিশ্বে প্রায় ৫,০০০ আলুর জাত রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩,০০০ শুধুমাত্র আন্দিজ অঞ্চলে পাওয়া যায়, প্রধানত পেরু, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, চিলি এবং কলম্বিয়াতে।

আলুর পুষ্টি মূল্য

পুষ্টির দিক দিয়ে আলুকে ভাত ও গমের সাথে তুলনা করা যায়। এছাড়া খাদ্য হিসাবে আলু সহজেই হজম হয়। আলুতে যথেষ্ঠ পরিমানে শর্করা বা খাদ্য শক্তি রয়েছে। তাছাড়াও প্রচুন পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ লবণও পাওয়া যায়।

আলু ব্যবহার

আলু এমন একটি সবজি যা অন্যান্য যে কোন সবজির সাধে তরকারি হিসেবে রান্না করা যায়। আলু দিয়ে মিষ্টি, সেমাই, নানা রকম ভর্তাসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। তরকারি হিসাবে খাওয়া ছাড়াও প্রক্রিয়াজাত করে চিপস ও ক্রাকার্স হিসেবেও খাওয়া যায়।

আলুর জাত

বিএআরআই ও কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র এখন পর্যন্ত ৮৩ টি আলুর জাত আবিষ্কার করেছে। তার মধ্যে ৭৭টি বারি জাত। আবিষ্কৃত জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে খাবার আলু, প্রক্রিয়াজাতকরণ যোগ্য আলু, রপ্তানিযোগ্য আলু, রোগ প্রতিরোধী আলু, আগাম আলু ও সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় এমন জাতের আলু। এ সকল জাতগুলোর মধ্যে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী জাত নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশের শতকরা ৮০ শতাংসেরও বেশী জমিতে ডায়মন্ড, এস্টেরিক্স, কার্ডিনাল, গ্রানোলা সহ বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করা হয়।
ডায়মন্ডঃ এই আলু প্রধানত খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডায়মন্ড আলুর উপাদন মেয়াদকাল ৮০-৯০ দিন। প্রতি একরে প্রায় ১০-১২ টন ফলন হয়ে থাকে।
কার্ডিনালঃ কার্ডিনাল আলুও খাদ্য হিসেবে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। কার্ডিনাল আলু ৮০-৯০দিনের মধ্যে উৎপাদন সম্পন্ন হয়। প্রতি একরে প্রায় ১০-১২ মেট্রিক টন ফলন হয়ে থাকে।
এস্টারিক্সঃ এস্টারিক্স জাতের আলু খেতে খুব সুস্বাদু এবং এর উৎপাদনও বেশী। ফলন প্রতিে একরে
১২-১৪ মেট্রিক টন। এস্টারিক্স খাদ্য ও রপ্তানি যোগ্য জাতের আলু ।
গ্রেনোলাঃ গ্রেনোলা জাতের আলু উৎপাদনে খুব কম সময় লাগে। প্রতি একরে প্রায় ১০-১২ মেট্রিক টন ফলন হয়ে থাকে। আগাম আপলু এবং রপ্তানি যোগ্য আলু হিসেবে এই জাতটি চাষ হচ্ছে।
কারেজঃ এই জাতের আলু খাবার হিসেবে এবয় রপ্তানির জন্য খুব ভালো। প্রতি একরে প্রায় ১০-১২ মেট্রিক টন ফলন হয়ে থাকে। এই জচাতের আলু বেশ লাভজনক।
লেডি রোসেটাঃ এই জাতের আলুর জীবন কাল ৮০-৯০ দিন। প্রতি একরে প্রায় ১০-১২ মেট্রিক টন ফলন হয়ে থাকে। এই জাতটি খাবার ও রপ্তানিযোগ্য আলু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বেলিনিঃ বেলিনি অধিক ফলনশীল একটি জাত। খাবার হিসেবে ও রপ্তানির জন্যও এই জাতটি বেশ ভালো। এই জাতের আলুর জীবন কাল ৮০-৯০ দিন। প্রতি একরে প্রায় ১২-১৪ মেট্রিক টন ফলন হয়ে থাকে।
সগিতাঃ সগিতা জাতটিও অধিক ফলনশীল। প্রতি একরে প্রায় ১২-১৪ মেট্রিক টন ফলন হয়ে থাকে। এই জাতের আলুর জীবন কাল ৮০-৯০ দিন।

আলু বীজ শোধন

অধিক ফলন পেতে হলে আলু বীজ রোপনের পূর্বে অবশ্যই বীজ শোধন করে নিতে হবে। আলুর বীজ কোল্ড স্টোরেজ থেকে বের করার পর ৪৮ ঘন্টা প্রি-হিটিং রুমে রাখতে হবে। আলুর বীজ বাড়িতে আনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে বস্তা থেকে বের করে খোলা আবহাওয়ায় রাখতে হবে। স্বাভাবিক বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে, এজন্য ছায়াযুক্ত স্থানে আলুর বীজ রাখতে হবে। কারণ আলুর বীজ কোল্ড স্টোর থেকে বের করার পরে বস্তার মুখ খুলে না দিলে বা আলু বের না করলে আলু ঘেমে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আলু বীজকে দুই ভাবে শোধন করা যায়।
প্রথম শোধন পদ্ধতিঃ
বীজ বপণের পূর্বে প্রত্যায়িত হলে বীজ শোধন করার প্রয়োজন হয় না। অন্যথায় অবশ্যই বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ শোধন করার জন্য মারকিউরিক ক্লোরাইড (Mercuric chloride), ফরমালডিহাইড (Formaldehyde) অথবা ইয়োলো অক্সাইড অফ মার্কারি (Yellow oxide of mercury) ব্যবহার করা যেতে পারে। আলু বীজ শোধনের জন্য এ সকল কেমিক্যাল এর মধ্যে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে উঠিয়ে নিলেই বীজ শোধন হয়ে যায়। তবে আলোর বীজ কাটা হলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোল্ড স্টোরে যে রাখার পূর্বে আলুর বীজ শোধন করা না থাকলে অংকুর গজানোর আগে আলু বীজের দাদ বা স্ক্যাব এবং বস্ন্যাক স্কার্ফ রোগ প্রতিরোধের জন্য ৩% বরিক এসিড দিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
 এ জন্য ১ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম হারে বরিক এসিড মিশিয়ে বীজআলু ১০-১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে এবং পরে ছায়ায় শুকাতে হবে। অথবা পলিথিন এর ওপরে আলু বিছিয়ে এই মিশ্রণ স্প্রে করেও বীজ শোধন করা যায়। আলু বীজের সকল অংশ যেন ভালোভাবে ভিজে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত প্রতি বিঘায় অর্থাৎ ৩৩ শতকে ২০০ থেকে ২১০ কেজি আলু বীজ প্রয়োজন হয়।
দ্বিতীয় শোধন পদ্ধতিঃ
আলুর বীজ রোপনের পূর্বে বীজ শোধন করার জন্য কার্বেন্ডাজিম+থিরাম গ্রুপের অথবা শুধু কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের যেকোনো ছত্রাক নাশক ব্যবহার করে বীজ শোধন করতে হবে। বীজ শোধনের জন্য কীটনাশকের দোকান থেকে প্রভেক্স, ভিটাভেক্স, ভিটাফো-২০০, এফ হাদাক পাউডার কিনে প্রতি ১০ কেজি আলুর বীজের জন্য ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম পাউডার ১০ লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে আলু বীজ ৫ থেকে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপরে কীটনাশক মেশানো পানি থেকে তুলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে রোপন করতে হবে। এইভাবে বীজ শোধন করলে আলুর গাছ বীজ বাহিত রোগ থেকে রক্ষা পাবে এবং আলুর ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url