রক্ত কি-রক্ত কত প্রকার ও কি কি-রক্তের কাজ গুলো কি কি
রক্ত হলো জীবনী শক্তির মূল ভিত্তি। মানব শরীরে রক্ত চলাচলের জন্য রক্তনালী রয়েছে। রক্তনালীর মধ্য দিয়ে রক্ত মানবদেহের সর্বত্র প্রবাহিত হয়। মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও খাদ্য উপাদান রক্তের মাধ্যমে সরবরাহ হয়ে থাকে। এর ফলে শরীরের প্রতিটি কোষ সজীব এবং সক্রিয় থাকে। রক্তের মাধ্যমেই খাদ্য উপাদান, অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং রক্তের বর্জ্য পদার্থ শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়।
সূচিপত্রঃ- রক্ত কি-রক্ত কত প্রকার ও কি কি-রক্তের কাজ গুলো কি কি
রক্ত (Blood) কিরক্তের উপাদান কয়টি ও কি কি
রক্ত (Blood) কি বা কাকে বলে
রক্ত হলো এক ধরণের তরল যোজক কলা। রক্ত একটি অস্বচ্ছ, মৃদু ক্ষারীয় এবং লবণাক্ত তরল পদার্থ। রক্ত হৃৎপিণ্ড, শিরা, উপশিরা, ধমনি, শাখা ধমনি এবং কৈশিকনালি পথে আবর্তিত হয়। লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে রক্তের রং লাল দেখায়। হাড়ের লাল অস্থিমজ্জাতে রক্তকণিকার জন্ম হয়।
রক্তের উপাদান কয়টি ও কি কি
রক্তের উপাদান ২ টি। যথা- রক্তরস ও রক্ত কণিকা। রক্তে প্রায় ৫৫% রক্তরস এবং ৪৫% রক্ত কাণকা থাকে।রক্তরস (Plasma):
অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা রক্তের উপাদান। রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা যথাক্রমে লাল, নীল ও কালো রঙের তীর দিয়ে নির্দেশিত রক্তের বর্ণহীন তরল অংশকে রক্তরস বলে। রক্তরসের প্রধান উপাদান হলো পানি। এছাড়া বাকি অংশে কিছু প্রোটিন, জৈবযৌগ ও সামান্য অজৈব লবণ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। এর মধ্যে যে- পদার্থগুলো থাকে তা হলোঃ
(i) প্রোটিন, যথা-অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন ও ফাইব্রিনোজেন(ii) গ্লুকোজ
(iii) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চর্বিকণা
(iv) খনিজ লবণ
(v) ভিটামিন
(vi) হরমোন
(vii) এন্টিবডি
(viii) বর্জ্য পদার্থ যেমনঃ কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), ইউরিয়া বা কার্ব্যামাইড (Carbamide) (NH2)2CO, ইউরিক এসিড (C5H4N4O3) ইত্যাদি।
এগুলো ছাড়াও সামান্য পরিমাণ সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট ও অ্যামাইনো এসিড থাকে। আমরা খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করি তা পরিপাক হয়ে অন্ত্রের গায়ে শোষিত হয় এবং রক্তরসে মিশে দেহের সর্বত্র সঞ্চালিত হয়। এভাবে দেহকোষগুলো পুষ্টিকর উপাদান গ্রহণ করে দেহের পুষ্টির সাধন এবং ক্ষয়পূরণ করে।
রক্তকণিকা (Blood corpuscles):
মানবদেহে তিন ধরনের রক্তকণিকা দেখা যায়। যথা-(১) লোহিত রক্তকণিকা (Red Blood Corpuscles)
(২) শ্বেত রক্তকণিকা (White Blood Corpuscles)
(৩) অণুচক্রিকা (Blood Platelets)
যদিও এগুলো সব এক প্রকার কোষ, তবে রক্তের প্লাজমার মধ্যে ভাসমান কণার সাথে তুলনা করে এদেরকে অনেক দিন আগে রক্তকণিকা নাম দেওয়া হয়েছিল। তখন অণুবীক্ষণ যন্ত্র এখনকার মতো আধুনিক ও উন্নত ছিল না। সেই নাম এখনও প্রচলিত আছে।
লোহিত রক্তকণিকাঃ
মানবদেহে তিন ধরনের রক্তকণিকার মধ্যে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এটি শ্বাসকার্যে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাল অস্থিমজ্জায় লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয়। এর গড় আয়ু ১২০ দিন। মানুষের লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না। লোহিত রক্তকণিকা দেখতে অনেকটা দ্বি-অবতল বৃত্তের মতো। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে প্রায় ৫০ লক্ষ । এটি শ্বেত রক্তকণিকার চেয়ে প্রায় ৫০০ গুণ বেশি। পুরুষের তুলনায় নারীদের রক্তে লোহিত রক্তকণিকা কম থাকে। তুলনামূলকভাবে শিশুদের দেহে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বেশি থাকে। আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়, আবার সমপরিমাণে তৈরিও হয়। লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবাহিত হয়।অক্সিহিমোগ্লোবিনের সাথে অক্সিজেন যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন যৈাগ গঠন করে।
হিমোগ্লোবিনঃহিমোগ্লোবিন এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ। লোহিত রক্তকণিকায় এর উপস্থিতির কারণে রক্ত লাল দেখায়। রক্তে প্রয়োজনীয় পরিমাণ হিমোগ্লোবিন না থাকলে রক্তস্বল্পতা বা রক্তশুন্যতা (anemia) দেখা দেয়। বাংলাদেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী এ রোগে আক্রান্ত।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url