ই-লার্নিং কি - ই-লার্নিং এর সুবিধা ও অসুবিধা

বর্তমানে সারা পৃথিবীতেই ই-লার্নিংয়ের জন্য নানা উপকরণ তৈরি হতে শুরু করেছে। পৃথিবীর বড় বড় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য কোর্স অনলাইনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং যে কেউ সেই কোর্সটি গ্রহণ করতে পারে। ই-লার্নিং নিয়ে এখনও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান রয়েছে। একজন প্রশিক্ষনার্থী কোর্সটি গ্রহন করার পর তার হোমওয়ার্ক জমা দিয়ে কিংবা অনলাইনে পরীক্ষা দিয়ে সেই কোর্সটির প্রয়োজনীয় ক্রেডিট অর্জন করতে পাচ্ছে।

সূচিপত্রঃ ই-লার্নিং কি || ই-লার্নিং এর সুবিধা ও অসুবিধা

  • ই-লার্নিং কি
  • ই-লার্নিং ও বাংলাদেশ
  • ই-লার্নিং এর সুবিধা ও অসুবিধা
  • দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ই-লার্নিং এর ভূমিকা
  • সনাতন পদ্ধতি ও ই-লার্নিং এর মধ্যে তুলনা

ই-লার্নিং কি

ই-লার্নিং শব্দটির পূর্ণ রুপ হলো ইলেকট্রিক লার্নিং (Electronic Learning)। ই-লার্নিং এ সিডি রম, ইন্টারনেট, ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক কিংবা টেলিভিশন চ্যানেল ব্যবহার করে শিক্ষা প্রদান ও গ্রহন করা হয়। তবে এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে ই-লার্নিং সনাতন পদ্ধতিতে পাঠদানের বিকল্প নয়, এটা সনাতন পদ্ধতির পরিপূরক।

ই-লার্নিং ও বাংলাদেশ

এক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশও পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। বাংলা ভাষায় বাংলা কোর্স সর্বারহ করার জন্য বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদরা বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল তৈরি করেছেন। পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ বাংলা ভাষায় কোর্সগুলো গ্রহণ করতে পারেন। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ফলে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করার উপযোগী এই ধরনের ওয়েবসাইট গুলো দেশে-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

ই-লার্নিং এর সুবিধা ও অসুবিধা

বর্তমানে আমাদের সকলেরই ইন্টারনেটে অ্যাক্সেস রয়েছে। আমরা যে কোন তথ্য, গবেষণা, গান, ছবি, ওয়ালপেপার এবং স্ক্রিন-সেভার ডাউনলোড করা এবং বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর আপডেট পেতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইমেল, তাত্ক্ষণিক বার্তা, চ্যাট, প্রিয়জনের সাথে ভিডিও কল সহ অনেক কিছু করে থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন ইন্টারনেটের আরও একটি বড় সুবিধা আছে, আর সেটি হলো শিক্ষা প্রদান করা ও গ্রহন করা? হ্যাঁ! আপনি আপনার নিজের বাড়িতে বসেই নিজেকে শিক্ষিত করতে পারেন, এমনকি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিগ্রিও অর্জন করতে পারেন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন অনেক অসম্ভবও সম্ভব হয়েছে।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ই-লার্নিং এর ভূমিকা

বাংলাদেশ একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ। যার ফলে প্রায় সকল স্কুলেই শিক্ষার্থী সংখ্যাও অনেক।অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব সহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে আমাদের স্কুল গুলোতে দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। গুনগত শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাবরেটরি না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদেরকে হাতে কলমে বিজ্ঞানের এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ নেই। এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ই-লার্নিং অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে।

দক্ষ শিক্ষকদের পাঠদানের ভিডিও ধারণ করে সেই ভিডিও অন্য সকল স্কুলে বিতরণ করা যেতে পারে। একটি জটিল বিষয়কে সহজ ভাবে বোঝানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সহায়ক উপকরণ ও প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদেরকে প্রদান করা যেতে পারে। পাঠদানকে সহজ ও সহায়তা প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ শিক্ষক নিজেই তৈরি করতে পারেন এবং সেটি বারবার ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের দেশে উত্তম পাঠদানের সীমাবদ্ধতা দূর করার ব্যাপারে ই-লার্নিং অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারলেও এক্ষেত্রে আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, এটি কোনোভাবেই প্রচলিত পাঠদানের বিকল্প নয়।

প্রচলিত পদ্ধতিতে পাঠদানের সময় একজন শিক্ষক সরাসরি শিক্ষার্থীদের দেখতে পারেন, তাদের সাথে কথা বলতে পারেন, ভাব বিনিময় করতে পারেন। কিন্তু ই-লার্নিংয়ের বেলায় এই বিষয়গুলো প্রায়ই অনুপস্থিত থাকে বলে এই পদ্ধতিটাকে অনেকের কাছে যান্ত্রিক মনে হতে পারে। তাই এই পদ্ধতিতে সফল করতে শিক্ষার্থীদের অনেক উদ্যোগী হতে হবে। ইন্টারনেটের স্পিড বৃদ্ধি করতে হবে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং শিখন সামগ্রী তৈরি করতে হবে।

সনাতন পদ্ধতি ও ই-লার্নিং এর মধ্যে তুলনা

পৃথিবীতে পাঠদানের সনাতন পদ্ধতিটি দীর্ঘদিন ধরে মোটামুটি একই রকমভাবে কাজ করে আসছিল। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সেই পদ্ধতিতে এক ধরনের পরিবর্তন হতে শুরু করেছে এবং ই-লার্নিং কিংবা উরংঃধহপব খবধৎহরহম নামে নতুন কিছু শব্দের সাথে আমরা পরিচিত হতে শুরু করেছি। ই-লার্নিং হচ্ছে ইলেকট্রনিক লার্নিং কথাটির সংক্ষিপ্ত রূপ এবং এটা বলতে আমরা পাঠদান করার জন্য সিডি রম ইন্টারনেট, ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক কিংবা টেলিভিশন চ্যানেল ব্যবহার করার পদ্ধতিকে বুঝে থাকি।

তবে এই পদ্ধতিটি সনাতন পদ্ধতিতে পাঠদানের বিকল্প নয়, বরং এটি সনাতন পদ্ধতির পরিপূরক। সনাতন পদ্ধতিতে পাঠদানের সময় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের পক্ষে অনেক বিষয় হাতে কলমে করে দেখানো সম্ভব হয় না। কিন্তু ই-লার্র্র্নিং পদ্ধতিতে শ্রেণিকক্ষে পাঠ দিতে দিতে শিক্ষক ইচ্ছে করলেই মাল্টিমিডিয়ার সাহায্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের একটা এক্সপেরিমেন্ট করিয়ে দেখাতে পারেন। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নিজেরা প্রায় হাতে কলমে এক্সপেরিমেন্ট করার অভিজ্ঞতা পেতে পারে।

সনাতন পদ্ধতিতে পাঠদানের সময় একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের সরাসরি দেখতে পারেন, তাদের সাথে কথা বলতে পারেন, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের সাথে নানাভাবে ভাববিনিময় করতে পারে, প্রশ্ন করতে পারে। শুধু তাই নয়, তারা পাশাপাশি একে অন্যকে সাহায্য করতে পারে, একে অন্যের সহযোগী হয়ে শিখতে পারে। কিন্তু ই-লার্নিংয়ের বেলায় এই বিষয়গুলো প্রায়ই অনুপস্থিত থাকে। পুরো প্রক্রিয়ায় মানবিক অংশটুকু না থাকায় ই-লার্নিং পদ্ধতিটাকে অনেকের কাছে যান্ত্রিক মনে হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url